দ্বিরাষ্ট্রীয় সমাধানের লক্ষ্যে জাতিসংঘে সম্মেলন শুরু আজ
Published: 28th, July 2025 GMT
ফিলিস্তিন ও ইসরায়েলের মধ্যে দ্বিরাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানের আলোচনা পুনরায় চালুর লক্ষ্যে জাতিসংঘে সম্মেলন শুরু হচ্ছে। আজ সোমবার যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক শহরে তিন দিনব্যাপী এ সম্মেলন শুরু হবে। সম্মেলনের নেতৃত্ব দিচ্ছে ফ্রান্স ও সৌদি আরব। সম্প্রতি ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার পরিকল্পনার কথা জানিয়েছে প্যারিস।
১৯৪৭ সালে জাতিসংঘে ফিলিস্তিন বিভক্ত করার প্রস্তাব তোলা হয়। পরে ইহুদিদের জন্য ইসরায়েল এবং আরবদের জন্য ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত হয়। সে অনুযায়ী ১৯৪৮ সালে ইসরায়েলকে রাষ্ট্র ঘোষণা করা হয়। দশকের পর দশক ধরে জাতিসংঘের অধিকাংশ সদস্য ইসরায়েল-ফিলিস্তিন দ্বিরাষ্ট্রীয় সমাধানের সমর্থন জানিয়ে আসছে। তবে স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র কখনো আলোর মুখ দেখেনি।
এএফপির তথ্য অনুযায়ী, জাতিসংঘের ১৯৩ সদস্যদেশের মধ্যে ফ্রান্সসহ ১৪২টিই ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। এ তালিকায় যুক্তরাজ্যও যোগ দেবে বলে আশা ফ্রান্সের। কারণ, ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়ার দাবি জানিয়ে সম্প্রতি যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারকে চিঠি দিয়েছেন ২২১ ব্রিটিশ আইনপ্রণেতা। জবাবে স্টারমার বলেছেন, এই স্বীকৃতি অবশ্যই বৃহৎ পরিকল্পনার অংশ হতে হবে।
জাতিসংঘের সম্মেলনে ইউরোপের আরও দেশ যে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিতে পারে, তার ইঙ্গিত দিয়েছেন ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জ্যঁ নোয়েল ব্যারটও। এ বিষয়ে ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের গবেষক রিচার্ড গোয়ান বলেন, দ্বিরাষ্ট্রীয় সমাধানের বিষয় গুরুত্বহীন হয়ে পড়ার পথে ছিল। তবে ফিলিস্তিনকে ফ্রান্সের স্বীকৃতি দেওয়ার ঘোষণার পর জাতিসংঘের এ সম্মেলনে প্রাণসঞ্চার হবে।
তবে ফিলিস্তিনের গাজায় ২১ মাস ধরে চলা ইসরায়েলের হামলা, দখলকৃত পশ্চিম তীরে ইসরায়েলের নতুন নতুন বসতি স্থাপন এবং দখল করা এলাকাগুলো ইসরায়েলের সঙ্গে যুক্ত করার যে পরিকল্পনা কথা দেশটির কর্মকর্তারা তুলে ধরছেন, তাতে দ্বিরাষ্ট্রীয় সমাধান শেষ পর্যন্ত ভৌগলিকভাবে সম্ভব হবে কি না, তা নিয়েও আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
‘গাজায় অপুষ্টি উদ্বেগজনক পর্যায়ে’জাতিসংঘের সম্মেলন যখন শুরু হয়েছে, তখনো গাজায় নৃশংসতা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। উপত্যকাটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দেওয়া হিসাব অনুযায়ী, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে ইসরায়েলের হামলায় অন্তত ৫৯ হাজার ৭৩৩ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এ সময় আহত হয়েছেন ১ লাখ ৪৪ হাজারের বেশি মানুষ। হতাহত ব্যক্তিদের অধিকাংশই নারী ও শিশু।
ইসরায়েলের অবরোধের কারণে গাজায় চরম আকার ধারণ করেছে খাদ্যসংকট। তবে রোববার থেকে অবরোধ কিছুটা শিথিল করেছে ইসরায়েলি বাহিনী। গাজার কিছু অংশে প্রতিদিন ১০ ঘণ্টা করে হামলা স্থগিত রাখার ঘোষণা দিয়েছে তারা। জাতিসংঘের ত্রাণবহরের জন্য করিডর তৈরি করে দেওয়ার কথাও জানিয়েছে। উড়োজাহাজে করে গাজায় ত্রাণসামগ্রী ফেলেছে জর্ডান ও সংযুক্ত আরব আমিরাত।
তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সতর্ক করে বলেছে, ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় অপুষ্টির মাত্রা উদ্বেগজনক পর্যায়ে পৌঁছেছে। না খেতে পেয়ে আজও ১৪ ফিলিস্তিনির মৃত্যু হয়েছে। তাঁদের একজন শিশু।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ইসর য় ল র
এছাড়াও পড়ুন:
গাজায় অপুষ্টি উদ্বেগজনক পর্যায়ে, সতর্ক করল ডব্লিউএইচও
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) সতর্ক করে বলেছে, ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় অপুষ্টির মাত্রা উদ্বেগজনক পর্যায়ে পৌঁছেছে, তা বিপজ্জনক গতিপথে রয়েছে।
দীর্ঘ বিরতির পর গাজায় উড়োজাহাজ থেকে ত্রাণসামগ্রী ফেলার কার্যক্রম আবার শুরুর পর ডব্লিউএইচওর কাছ থেকে এ সতর্কবার্তা এল।
গতকাল রোববার জর্ডান ও সংযুক্ত আরব আমিরাত গাজায় উড়োজাহাজ থেকে ত্রাণসামগ্রী ফেলে। এর আগে ইসরায়েল জানায়, তারা গাজার কিছু অংশে প্রতিদিন ১০ ঘণ্টা করে যুদ্ধ বন্ধ রাখবে। যাকে তারা বলছে, ‘কৌশলগত বিরতি’। এ বিরতির আওতায় জাতিসংঘের ত্রাণবহরের জন্য করিডর তৈরি করে দেওয়ার কথাও জানায় তারা।
ইসরায়েলের দাবি, গাজাবাসীকে ইচ্ছাকৃতভাবে অনাহারে রাখার যে ‘মিথ্যা অভিযোগ’ উঠেছে, তা খণ্ডন করতেই এ বিশেষ ব্যবস্থাগুলো নেওয়া হয়েছে। ইসরায়েলের ভাষ্য, হামাস ইচ্ছাকৃতভাবে এমন অভিযোগ তুলে বিশ্বের সামনে ইসরায়েলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার চেষ্টা করছে।
জর্ডানের সামরিক বাহিনী বলেছে, গাজাবাসীর জন্য ত্রাণসামগ্রী পৌঁছে দিতে তারা সংযুক্ত আরব আমিরাতের সঙ্গে কাজ করছে। ইতিমধ্যে তারা উড়োজাহাজ দিয়ে তিন দফায় গাজায় ২৫ টন ত্রাণসামগ্রী ফেলেছে। এ ছাড়া মিসর হয়ে ত্রাণবাহী লরির একটি বহর গাজায় প্রবেশ করেছে। আরেকটি বহর ঢোকার কথা রয়েছে জর্ডান থেকে।
তবে গাজার মধ্যাঞ্চলে একটি ত্রাণবহর যে পথে অগ্রসর হচ্ছিল, তার পাশেই ইসরায়েলি বাহিনীর গুলিতে অন্তত ৯ জন নিহত ও ৫৪ জন আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা। এমনকি গত শনিবার যুদ্ধ সাময়িক বন্ধের বিষয়টি কার্যকরের এক ঘণ্টার মাথায় গাজার একটি আবাসিক এলাকায় বিমান হামলা চালায় ইসরায়েল।
ফিলিস্তিনের গাজায় আকাশ থেকে ত্রাণ ফেলা হচ্ছে