রংপুরের গঙ্গাচড়ায় প্রশাসনের উদ্যোগে হামলার ও ভাঙচুরের শিকার সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বসতবাড়ি মেরামত করা হচ্ছে। তবে এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কোনো মামলা হয়নি। আটকও করা হয়নি কাউকে। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিরা।

আজ মঙ্গলবার সকাল ৯টার দিকে উপজেলার আলদাদপুর গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, বসতঘরগুলোর ভাঙা টিনের বেড়া খোলা হচ্ছে। সেগুলোতে নতুন টিন লাগানো হচ্ছে। স্থানীয় ইউপি সদস্য পরেশ চন্দ্র প্রথম আলোকে বলেন, গতকাল রাত ১২টার দিকে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রবিউল ফয়সাল, পুলিশ সুপার আবু সাইম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। তাঁরা ক্ষতিগ্রস্ত বসতঘরে মেরামতের জন্য আজ সকালে টিন ও কাঠ পাঠিয়েছেন। সকাল থেকে ৩০ জন কাঠমিস্ত্রি মেরামতের কাজ করছেন।

গঙ্গাচড়া উপজেলার আলদাদপুর গ্রামটি হিন্দু অধ্যুষিত। এটি নীলফামারী উপজেলার কিশোরগঞ্জের সীমানা লাগোয়া। গঙ্গাচড়া থানা সূত্রে জানা যায়, গত শনিবার এই গ্রামের এক কিশোর ফেসবুকে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.

)-কে নিয়ে অবমাননাকর লেখা ও ছবি দিয়েছে, এমন অভিযোগ পায় পুলিশ। পরে অভিযোগের সত্যতা পেয়ে তাৎক্ষণিকভাবে তাকে আটক করে শনিবার রাত সাড়ে আটটার দিকে থানায় আনা হয়। পরে সাইবার সুরক্ষা আইনে মামলা করে দুপুরে আদালতের মাধ্যমে সম্মিলিত শিশু পুনর্বাসন কেন্দ্রে পাঠানো হয়।

পুলিশ ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ওই কিশোরকে থানায় নেওয়ার পর তার বিচারের দাবিতে মিছিলসহ উত্তেজিত লোকজন শনিবার তার বাড়ির সামনে যায়। রাত ১০টার দিকে দ্বিতীয়বার আরেকটি মিছিল এসে কিশোরের এক স্বজনের বাড়িতে হামলা ও ভাঙচুর করে। পরে রাতে থানা-পুলিশ ও সেনাবাহিনী গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

স্থানীয় বাসিন্দাদের ভাষ্য, রোববার বেলা সাড়ে তিনটার দিকে উত্তেজিত জনতা বাড়িঘরে হামলা শুরু করলে পুলিশ তাঁদের বাধা দেওয়ার চেষ্টা করে। এ সময় কয়েকটি বাড়িঘর ভাঙচুর করা হয়। এতে পুলিশের একজন কনস্টেবলকে গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গঙ্গাচড়া উপজেলা প্রশাসনের হিসাবে ১৫টি বসতঘরে ভাংচুর ও লুটপাট করা হয়েছে।

গঙ্গাচড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও ) আজ সকাল ১০টার দিকে ঘটনাস্থলে যান। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ঘরগুলো দ্রুত মেরামত করা হচ্ছে। ৩টি ছাড়া সব কটি পরিবার ফিরে এসেছে। প্রশাসন থেকে টিন, কাঠ, নলকূপ, চুলাসহ যার যা প্রয়োজন তা নিয়ে সহায়তা করা হবে।

এখনো আতঙ্ক কাটেনি

তবে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাঁদের মধ্যে এখনো আতঙ্ক কাটেনি। হিরনবালা রানী নামের এক নারী বলেন, ‘কাপড়চোপড়, জিনিসপত্র সব নিয়ে গেছে, কিচ্ছু নেই ঘরোত। এল্যা ঘরের বেড়া ভালো করে দিলে কী হবে?’

আজো বালা নামের আরেকজন বলেন, ‘কাজ করি ভাত খাই। আতঙ্কে কাজ করবার পাই নাই। নিন (ঘুম) পাড়বার পাই না। দুটা মেয়ে বড় হয়েছে। ওদের নিয়ে ভয়ে থাকি।’

আলদাদপুর দ্বিমুখী উচ্চবিদ্যালয় ও আলদাদপুর নতুন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাশেই এ হামলার ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। এই দুই বিদ্যালয়ের সামনে অবস্থান নিয়েছে সেনাবাহিনী ও পুলিশ সদস্যরা। ওই ঘটনার পর থেকে বিদ্যালয় শিক্ষার্থী আসছে না। আলদাদপুর দ্বিমুখী উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষক ইন্দ্রজিৎ অধিকারী বলেন, এ রকম পরিস্থিতিতে বাচ্চারা ভয় পায়। তাঁরা স্কুলে আসছে না।

আলদাতপুর নতুন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কালী রঞ্জন রায় বলেন, প্রতিষ্ঠানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা অবস্থান করছেন। গতকাল সোমবার থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সব একাডেমিক কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে। এলাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির স্বাভাবিক হলে পুনরায় একাডেমিক কার্যক্রম শুরু হবে।

আবারও মিছিল করার চেষ্টা

পুলিশ ও আলদাদপুরের স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, গতকাল সোমবার রাত ১০টার দিকে আলদাদপুর গ্রামের পার্শ্ববর্তী নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলার মাগুরা চেকপোস্ট এলাকা থেকে একটি মিছিল নিয়ে আসার চেষ্টা করা হয়েছিল।

এ বিষয়ে গঙ্গাচড়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আল এমরান প্রথম আলোকে বলেন, ‘গতকাল রাত ৯টা–১০টার দিকে নীলফামারীর কিশোরগঞ্জের মাগুরায় কিছু লোকজন জমায়েত হয়েছিলেন, এ তথ্য আমরা পেয়েছিলাম। তাঁরা ওখানে বিক্ষোভ করে চলে গেছেন। প্রশাসন যেকোনো অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে তৎপর আছে। বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।’

আরও পড়ুনরংপুরে হামলার শিকার পরিবারগুলো আতঙ্কে, বাড়ির মালামাল সরিয়ে নিচ্ছে২৮ জুলাই ২০২৫

ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনার দুই দিন পার হলেও এখনো কোনো মামলা হয়নি। এ বিষয়ে ওসি আল এমরান আজ দুপুর ১২টার দিকে বলেন, এখন পর্যন্ত মামলা হয়নি বা কাউকে আটক করা হয়নি। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো মামলা করতে সময় নিচ্ছে; তাই দেরি হচ্ছে।

তবে গঙ্গাচড়া উপজেলা হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান কল্যাণ ফ্রন্টের আহ্বায়ক তপন কুমার বলেন, ‘পরিকল্পিতভাবে এ ঘটনা ঘটানো হয়েছে। প্রশাসন যা করছে, আপাতত আমরা তাঁদের ওপর আস্থা রাখছি। আমাদের লোকজন বাইরে পলাতক অবস্থায় আছেন। তাঁদের ফিরিয়ে এনে আলোচনার মাধ্যমে আমরা মামলার দিকে এগোব।’

আরও পড়ুন২২টির মধ্যে ১৯টি পরিবার বর্তমানে নিজেদের বাড়িতে আছে: জেলা প্রশাসক১ ঘণ্টা আগে

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ১০ট র দ ক পর স থ ত উপজ ল র পর ব র ম র মত আতঙ ক অবস থ গতক ল

এছাড়াও পড়ুন:

রংপুরে হামলার দুই দিন পরও মামলা হয়নি, প্রশাসনের উদ্যোগে বসতবাড়ি মেরামত

রংপুরের গঙ্গাচড়ায় প্রশাসনের উদ্যোগে হামলার ও ভাঙচুরের শিকার সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বসতবাড়ি মেরামত করা হচ্ছে। তবে এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কোনো মামলা হয়নি। আটকও করা হয়নি কাউকে। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিরা।

আজ মঙ্গলবার সকাল ৯টার দিকে উপজেলার আলদাদপুর গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, বসতঘরগুলোর ভাঙা টিনের বেড়া খোলা হচ্ছে। সেগুলোতে নতুন টিন লাগানো হচ্ছে। স্থানীয় ইউপি সদস্য পরেশ চন্দ্র প্রথম আলোকে বলেন, গতকাল রাত ১২টার দিকে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রবিউল ফয়সাল, পুলিশ সুপার আবু সাইম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। তাঁরা ক্ষতিগ্রস্ত বসতঘরে মেরামতের জন্য আজ সকালে টিন ও কাঠ পাঠিয়েছেন। সকাল থেকে ৩০ জন কাঠমিস্ত্রি মেরামতের কাজ করছেন।

গঙ্গাচড়া উপজেলার আলদাদপুর গ্রামটি হিন্দু অধ্যুষিত। এটি নীলফামারী উপজেলার কিশোরগঞ্জের সীমানা লাগোয়া। গঙ্গাচড়া থানা সূত্রে জানা যায়, গত শনিবার এই গ্রামের এক কিশোর ফেসবুকে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-কে নিয়ে অবমাননাকর লেখা ও ছবি দিয়েছে, এমন অভিযোগ পায় পুলিশ। পরে অভিযোগের সত্যতা পেয়ে তাৎক্ষণিকভাবে তাকে আটক করে শনিবার রাত সাড়ে আটটার দিকে থানায় আনা হয়। পরে সাইবার সুরক্ষা আইনে মামলা করে দুপুরে আদালতের মাধ্যমে সম্মিলিত শিশু পুনর্বাসন কেন্দ্রে পাঠানো হয়।

পুলিশ ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ওই কিশোরকে থানায় নেওয়ার পর তার বিচারের দাবিতে মিছিলসহ উত্তেজিত লোকজন শনিবার তার বাড়ির সামনে যায়। রাত ১০টার দিকে দ্বিতীয়বার আরেকটি মিছিল এসে কিশোরের এক স্বজনের বাড়িতে হামলা ও ভাঙচুর করে। পরে রাতে থানা-পুলিশ ও সেনাবাহিনী গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

স্থানীয় বাসিন্দাদের ভাষ্য, রোববার বেলা সাড়ে তিনটার দিকে উত্তেজিত জনতা বাড়িঘরে হামলা শুরু করলে পুলিশ তাঁদের বাধা দেওয়ার চেষ্টা করে। এ সময় কয়েকটি বাড়িঘর ভাঙচুর করা হয়। এতে পুলিশের একজন কনস্টেবলকে গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গঙ্গাচড়া উপজেলা প্রশাসনের হিসাবে ১৫টি বসতঘরে ভাংচুর ও লুটপাট করা হয়েছে।

গঙ্গাচড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও ) আজ সকাল ১০টার দিকে ঘটনাস্থলে যান। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ঘরগুলো দ্রুত মেরামত করা হচ্ছে। ৩টি ছাড়া সব কটি পরিবার ফিরে এসেছে। প্রশাসন থেকে টিন, কাঠ, নলকূপ, চুলাসহ যার যা প্রয়োজন তা নিয়ে সহায়তা করা হবে।

এখনো আতঙ্ক কাটেনি

তবে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাঁদের মধ্যে এখনো আতঙ্ক কাটেনি। হিরনবালা রানী নামের এক নারী বলেন, ‘কাপড়চোপড়, জিনিসপত্র সব নিয়ে গেছে, কিচ্ছু নেই ঘরোত। এল্যা ঘরের বেড়া ভালো করে দিলে কী হবে?’

আজো বালা নামের আরেকজন বলেন, ‘কাজ করি ভাত খাই। আতঙ্কে কাজ করবার পাই নাই। নিন (ঘুম) পাড়বার পাই না। দুটা মেয়ে বড় হয়েছে। ওদের নিয়ে ভয়ে থাকি।’

আলদাদপুর দ্বিমুখী উচ্চবিদ্যালয় ও আলদাদপুর নতুন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাশেই এ হামলার ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। এই দুই বিদ্যালয়ের সামনে অবস্থান নিয়েছে সেনাবাহিনী ও পুলিশ সদস্যরা। ওই ঘটনার পর থেকে বিদ্যালয় শিক্ষার্থী আসছে না। আলদাদপুর দ্বিমুখী উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষক ইন্দ্রজিৎ অধিকারী বলেন, এ রকম পরিস্থিতিতে বাচ্চারা ভয় পায়। তাঁরা স্কুলে আসছে না।

আলদাতপুর নতুন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কালী রঞ্জন রায় বলেন, প্রতিষ্ঠানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা অবস্থান করছেন। গতকাল সোমবার থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সব একাডেমিক কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে। এলাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির স্বাভাবিক হলে পুনরায় একাডেমিক কার্যক্রম শুরু হবে।

আবারও মিছিল করার চেষ্টা

পুলিশ ও আলদাদপুরের স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, গতকাল সোমবার রাত ১০টার দিকে আলদাদপুর গ্রামের পার্শ্ববর্তী নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলার মাগুরা চেকপোস্ট এলাকা থেকে একটি মিছিল নিয়ে আসার চেষ্টা করা হয়েছিল।

এ বিষয়ে গঙ্গাচড়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আল এমরান প্রথম আলোকে বলেন, ‘গতকাল রাত ৯টা–১০টার দিকে নীলফামারীর কিশোরগঞ্জের মাগুরায় কিছু লোকজন জমায়েত হয়েছিলেন, এ তথ্য আমরা পেয়েছিলাম। তাঁরা ওখানে বিক্ষোভ করে চলে গেছেন। প্রশাসন যেকোনো অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে তৎপর আছে। বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।’

আরও পড়ুনরংপুরে হামলার শিকার পরিবারগুলো আতঙ্কে, বাড়ির মালামাল সরিয়ে নিচ্ছে২৮ জুলাই ২০২৫

ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনার দুই দিন পার হলেও এখনো কোনো মামলা হয়নি। এ বিষয়ে ওসি আল এমরান আজ দুপুর ১২টার দিকে বলেন, এখন পর্যন্ত মামলা হয়নি বা কাউকে আটক করা হয়নি। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো মামলা করতে সময় নিচ্ছে; তাই দেরি হচ্ছে।

তবে গঙ্গাচড়া উপজেলা হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান কল্যাণ ফ্রন্টের আহ্বায়ক তপন কুমার বলেন, ‘পরিকল্পিতভাবে এ ঘটনা ঘটানো হয়েছে। প্রশাসন যা করছে, আপাতত আমরা তাঁদের ওপর আস্থা রাখছি। আমাদের লোকজন বাইরে পলাতক অবস্থায় আছেন। তাঁদের ফিরিয়ে এনে আলোচনার মাধ্যমে আমরা মামলার দিকে এগোব।’

আরও পড়ুন২২টির মধ্যে ১৯টি পরিবার বর্তমানে নিজেদের বাড়িতে আছে: জেলা প্রশাসক১ ঘণ্টা আগে

সম্পর্কিত নিবন্ধ