জানমালের নিরাপত্তার প্রশ্নে আপস নয়
Published: 31st, July 2025 GMT
ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাসের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগে উপকূলীয় মানুষের জীবন ও সম্পদ রক্ষায় ঢাল হিসেবে দাঁড়িয়ে যায় শ্বাসমূলীয় (ম্যানগ্রোভ) বন। সেই রক্ষাঢাল ধ্বংস করে গুটিকয় ব্যক্তি যখন গোটা জনগোষ্ঠীকে হুমকির মুখে ফেলে দেয়, এর থেকে ভয়াবহ নৈরাজ্যের বার্তা আর কী হতে পারে। কেননা প্রভাবশালী নামে পরিচিত এসব ব্যক্তি এই অপরাধ যে সরকারি সব কর্তৃপক্ষের অজান্তে করেছেন, তা তো নয়। সবার চোখের সামনেই খননযন্ত্র এনে বন সাবাড় করে মাটি খুঁড়ে মাছ চাষের ঘের তৈরি করছেন।
প্রথম আলোর খবর জানাচ্ছে, বরগুনার তালতলী উপজেলায় আন্ধারমানিক নদের দুই তীরে প্রায় ২০ কিলোমিটার বাঁধের ঢালে ৫০টির বেশি ঘের গড়ে তোলা হয়েছে। নতুন করে আরও কিছু ঘের তৈরি করা হচ্ছে। এতে শুধু ম্যানগ্রোভ বনই উজাড় হচ্ছে না, সঙ্গে বাঁধও হুমকির মুখে পড়েছে। অথচ আইনে সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে, বাঁধের ২০ ফুটের মধ্যে পুকুর, দিঘি বা ঘের নির্মাণ করা যাবে না।
প্রশ্ন হচ্ছে, এই আইন বাস্তবায়নে বন বিভাগ, পাউবো ও স্থানীয় উপজেলা প্রশাসন কার্যকর কী পদক্ষেপ নিয়েছে? তাহলে কি আমরা ধরে নেব, ভূতটা শর্ষের ভেতরেই বিদ্যমান? ঘের তৈরির সঙ্গে প্রভাবশালী ব্যক্তিরা জড়িত থাকায় স্থানীয় মানুষেরা কিছু বলতে পারেন না। তাঁদের অভিযোগ, নেপথ্যে সহযোগিতা করে যাচ্ছেন বন বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
যদিও বন বিভাগ যথারীতি দায় অস্বীকার করে বলেছে, তারা জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে। কিন্তু বন বিভাগের তথ্যই প্রমাণ করছে যে তারা যে শম্বুকগতিতে ব্যবস্থা নিচ্ছে, তাতে প্রক্রিয়াটা শেষ হতে অনন্তকালও লেগে যেতে পারে! কেননা, ছয়জন ঘেরমালিকের বিরুদ্ধে তারা মামলা করেছে আর কয়েকজনকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে।
বন উজাড় করে ঘের কেটে যাঁরা ভয়াবহ বিপর্যয়ের ঝুঁকি তৈরি করেছেন, তাঁদের যুক্তি হলো জমি তাঁদের ব্যক্তিমালিকানাধীন। আবার কেউ যুক্তি দিয়েছেন, সরকারের কাছ থেকে তাঁরা বন্দোবস্ত পেয়েছেন। কিন্তু নদীর চরের জমি কীভাবে ব্যক্তিমালিকানাধীন হয়? সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হলো, লাখ লাখ মানুষের জীবন ও সম্পদের নিরাপত্তা যেখানে জড়িত, সেখানে আইনি যুক্তির বাইরে আর কোনো যুক্তিতর্ক কতটা গ্রহণযোগ্য হতে পারে।
আমরা মনে করি, বন বিভাগ, পাউবো ও স্থানীয় উপজেলা প্রশাসনের নিষ্ক্রিয় ভূমিকার কারণেই তালতলীর উপকূলীয় এলাকায় ভয়াবহ বিপর্যয়ের ঝুঁকি তৈরি করেছে। প্রভাবশালীরা যে দলের হোক না কেন, তাঁদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে। আন্ধারমানিক নদের ঢালের অবৈধ ঘেরগুলো দ্রুত উচ্ছেদ করে সেখানকার ভূগঠনকে আগের জায়গায় ফিরিয়ে নেওয়া জরুরি। মানুষের জানমালের নিরাপত্তার প্রশ্নে কোনো আপস নয়।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: বন ব ভ গ
এছাড়াও পড়ুন:
সারা দেশে সাত দিনে যৌথ বাহিনীর অভিযানে আটক ২৮৮
ঢাকাসহ সারা দেশে বিগত সাত দিনে অভিযান চালিয়ে ২৮৮ জনকে আটক করেছে যৌথ বাহিনী। বিভিন্ন অপরাধের ঘটনায় তাঁদের আটক করা হয়েছে। আটক ব্যক্তিদের কাছ থেকে অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র, গোলাবারুদ, ককটেলসহ বিভিন্ন জিনিস উদ্ধার করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ২৪ থেকে ৩১ জুলাই পর্যন্ত সেনাবাহিনীর বিভিন্ন পদাতিক ডিভিশন ও স্বতন্ত্র ব্রিগেডের অধীনের ইউনিট এবং অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সমন্বয়ে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় কিছু যৌথ অভিযান পরিচালনা করা হয়। এসব অভিযানে চিহ্নিত শীর্ষ সন্ত্রাসী, অবৈধ অস্ত্রধারী, ছিনতাইকারী, মাদক ব্যবসায়ী এবং মাদকাসক্তসহ ২৮৮ জনকে আটক করা হয়।
আইএসপিআর জানিয়েছে, আটক ব্যক্তিদের কাছ থেকে ১৪টি অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র, ১৫৬টি বিভিন্ন ধরনের গোলাবারুদ, ২টি ককটেল, ৩টি ম্যাগাজিন, মাদকদ্রব্য, বিভিন্ন ধরনের দেশীয় অস্ত্র, চোরাই মালামাল ও নগদ অর্থ উদ্ধার করা হয়। প্রয়োজনীয় জিজ্ঞাসাবাদ এবং আইনি কার্যক্রম পরিচালনার জন্য তাঁদের সংশ্লিষ্ট এলাকার থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, দেশের সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সেনাবাহিনীর এ ধরনের অভিযান অব্যাহত থাকবে। সাধারণ জনগণকে যেকোনো সন্দেহজনক কার্যকলাপের বিষয়ে নিকটস্থ সেনা ক্যাম্পে তথ্য দিতে অনুরোধ জানানো হচ্ছে।