ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাসের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগে উপকূলীয় মানুষের জীবন ও সম্পদ রক্ষায় ঢাল হিসেবে দাঁড়িয়ে যায় শ্বাসমূলীয় (ম্যানগ্রোভ) বন। সেই রক্ষাঢাল ধ্বংস করে গুটিকয় ব্যক্তি যখন গোটা জনগোষ্ঠীকে হুমকির মুখে ফেলে দেয়, এর থেকে ভয়াবহ নৈরাজ্যের বার্তা আর কী হতে পারে। কেননা প্রভাবশালী নামে পরিচিত এসব ব্যক্তি এই অপরাধ যে সরকারি সব কর্তৃপক্ষের অজান্তে করেছেন, তা তো নয়। সবার চোখের সামনেই খননযন্ত্র এনে বন সাবাড় করে মাটি খুঁড়ে মাছ চাষের ঘের তৈরি করছেন।

প্রথম আলোর খবর জানাচ্ছে, বরগুনার তালতলী উপজেলায় আন্ধারমানিক নদের দুই তীরে প্রায় ২০ কিলোমিটার বাঁধের ঢালে ৫০টির বেশি ঘের গড়ে তোলা হয়েছে। নতুন করে আরও কিছু ঘের তৈরি করা হচ্ছে। এতে শুধু ম্যানগ্রোভ বনই উজাড় হচ্ছে না, সঙ্গে বাঁধও হুমকির মুখে পড়েছে। অথচ আইনে সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে, বাঁধের ২০ ফুটের মধ্যে পুকুর, দিঘি বা ঘের নির্মাণ করা যাবে না।

প্রশ্ন হচ্ছে, এই আইন বাস্তবায়নে বন বিভাগ, পাউবো ও স্থানীয় উপজেলা প্রশাসন কার্যকর কী পদক্ষেপ নিয়েছে? তাহলে কি আমরা ধরে নেব, ভূতটা শর্ষের ভেতরেই বিদ্যমান? ঘের তৈরির সঙ্গে প্রভাবশালী ব্যক্তিরা জড়িত থাকায় স্থানীয় মানুষেরা কিছু বলতে পারেন না। তাঁদের অভিযোগ, নেপথ্যে সহযোগিতা করে যাচ্ছেন বন বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

যদিও বন বিভাগ যথারীতি দায় অস্বীকার করে বলেছে, তারা জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে। কিন্তু বন বিভাগের তথ্যই প্রমাণ করছে যে তারা যে শম্বুকগতিতে ব্যবস্থা নিচ্ছে, তাতে প্রক্রিয়াটা শেষ হতে অনন্তকালও লেগে যেতে পারে! কেননা, ছয়জন ঘেরমালিকের বিরুদ্ধে তারা মামলা করেছে আর কয়েকজনকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে।

বন উজাড় করে ঘের কেটে যাঁরা ভয়াবহ বিপর্যয়ের ঝুঁকি তৈরি করেছেন, তাঁদের যুক্তি হলো জমি তাঁদের ব্যক্তিমালিকানাধীন। আবার কেউ যুক্তি দিয়েছেন, সরকারের কাছ থেকে তাঁরা বন্দোবস্ত পেয়েছেন। কিন্তু নদীর চরের জমি কীভাবে ব্যক্তিমালিকানাধীন হয়? সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হলো, লাখ লাখ মানুষের জীবন ও সম্পদের নিরাপত্তা যেখানে জড়িত, সেখানে আইনি যুক্তির বাইরে আর কোনো যুক্তিতর্ক কতটা গ্রহণযোগ্য হতে পারে।

আমরা মনে করি, বন বিভাগ, পাউবো ও স্থানীয় উপজেলা প্রশাসনের নিষ্ক্রিয় ভূমিকার কারণেই তালতলীর উপকূলীয় এলাকায় ভয়াবহ বিপর্যয়ের ঝুঁকি তৈরি করেছে। প্রভাবশালীরা যে দলের হোক না কেন, তাঁদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে। আন্ধারমানিক নদের ঢালের অবৈধ ঘেরগুলো দ্রুত উচ্ছেদ করে সেখানকার ভূগঠনকে আগের জায়গায় ফিরিয়ে নেওয়া জরুরি। মানুষের জানমালের নিরাপত্তার প্রশ্নে কোনো আপস নয়।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: বন ব ভ গ

এছাড়াও পড়ুন:

শাবিপ্রবির ভর্তি পরীক্ষা ১৩ ও ১৪ জানুয়ারি

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) ২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষের প্রথম সেমিস্টারের ভর্তি পরীক্ষা আগামী ১৩ ও ১৪ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে।

সোমবার (৩ নভেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার সৈয়দ ছলিম মোহাম্মদ আব্দুল কাদির স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

আরো পড়ুন:

শাবিতে জুলাই গণঅভ্যুত্থান নিয়ে জাতিসংঘের তদন্ত প্রতিবেদনের ওপর সেমিনার

শাকসুর নির্বাচন কমিশন ঘোষণা

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ভর্তি কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সংশ্লিষ্ট সবার সহযোগিতা কামনা করছে।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য সাজেদুল করিম বলেন, “গুচ্ছ প্রক্রিয়া না থেকে স্বতন্ত্র ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার জন্য আমাদের শিক্ষকরা আজ উপাচার্যের কাছে একটা স্মারকলিপি জমা দিয়েছে। শিক্ষকরা গুচ্ছ পদ্ধতিতে থাকতে চায় না। আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এককভাবে ভর্তি পরীক্ষার নেওয়ার জন্য সামনের দিকে কাজ এগোচ্ছি। অতিদ্রুত ভর্তি পরীক্ষার পূর্ণাঙ্গ সময়সূচি নির্ধারণ করে প্রকাশ করা হবে।”

২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষ থেকে শাবিপ্রবি গুচ্ছ পদ্ধতি থেকে বেরিয়ে স্বতন্ত্রভাবে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া শুরু করে। এবারো একইভাবে ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।

এর আগে, গুচ্ছ পদ্ধতিতে অংশ নিতে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) থেকে চিঠি পেলেও শেষ পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় ভর্তি পরীক্ষা আয়োজনের সিদ্ধান্ত নেয়।

ঢাকা/ইকবাল/মেহেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ