যুক্তরাষ্ট্র ও দক্ষিণ কোরিয়ার মধ্যে একটি বাণিজ্য চুক্তি হয়েছে। সে অনুযায়ী দক্ষিণ কোরিয়া থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর ১৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে ওয়াশিংটন। এই চুক্তির আগে আলোচনার জন্য কম কাঠখড় পোড়াতে হয়নি সিউলের প্রতিনিধিদলকে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে আলোচনার প্রস্তুতি নিতে তাঁর ভূমিকায় অভিনয়ও করেছেন তাঁরা।

ট্রাম্প কী করতে চাচ্ছেন বা যাচ্ছেন, সে সম্পর্কে আগেভাগে অনুমান করা কঠিন। এমন একজন নেতার সঙ্গে আলোচনা কীভাবে চালিয়ে নেওয়া যায়, সে সম্পর্কে পরামর্শও নিয়েছেন দক্ষিণ কোরিয়ার প্রতিনিধিদলের সদস্য হিসেবে থাকা মন্ত্রীরা। সে পরামর্শগুলো কী ছিল, তা বুধবার বাণিজ্য চুক্তি ঘোষণার পর সাংবাদিকদের জানিয়েছেন দেশটির শিল্পমন্ত্রী কিম জুং–কওয়ান।

ওয়াশিংটনে এই মন্ত্রী বলেন, তাঁরা যেসব উপদেশ পেয়েছিলেন, সেগুলোর মধ্যে ছিল ট্রাম্পকে ‘মহান ব্যক্তি’ বলে প্রশংসা করতে হবে এবং যতটা সম্ভব সহজ ভাষায় কথা বলতে হবে। আলোচক দলে অন্যদের মধ্যে ছিলেন দক্ষিণ কোরিয়ার অর্থমন্ত্রী কু ইউন-চেওল ও বাণিজ্যমন্ত্রী ইয়ো হান-কু। তাঁরাসহ দলের সবাই আলোচনার প্রস্তুতির জন্য ট্রাম্পের ভূমিকায় অভিনয় করে নিয়েছিলেন।

ট্রাম্পকে দর-কষাকষির ওস্তাদ বলে সম্বোধন করেছেন শিল্পমন্ত্রী কিম। আলোচনার আগে প্রস্তুতি সম্পর্কে তিনি বলেন, প্রস্তুতির জন্য অভিনয়ের সময় তাঁরা ট্রাম্পের মতো করে কথা বলার চেষ্টা করেছেন। কারণ, তাঁর কথা বলার ধরন খুব চাঁছাছোলা এবং সরাসরি। বিভিন্ন ধরনের প্রশ্নের জবাব তাঁরা কীভাবে দেবেন, সে জন্য নানা রকম পরিস্থিতির প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছিলেন।

সাংবাদিকদের অর্থমন্ত্রী কু ইউন-চেওল জানান, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট দেখার পরই তাঁরা ট্রাম্পের সঙ্গে নিজেদের বৈঠকের বিষয়ে নিশ্চিত হতে পেরেছিলেন। তিনি বলেন, ট্রাম্পের সঙ্গে তাঁদের প্রায় আধা ঘণ্টা বৈঠক হয়েছে। দুই পক্ষের মধ্যে মূলত বিনিয়োগ তহবিলের পরিমাণ নিয়েই আলোচনা হয়েছে। শেষ পর্যন্ত তা ৩৫ হাজার কোটি ডলার (৩৫০ বিলিয়ন) চূড়ান্ত হয়েছে।

কু ইউন-চেওল বলেন, ‘অপর পক্ষের (মার্কিন আলোচকদের) ব্যবহার করা অনেক ধরনের কৌশল আমরা আগেভাগেই বিশ্লেষণ করে দেখেছিলাম এবং কীভাবে প্রতিক্রিয়া জানাতে হবে, তা নিয়ে অনেক চিন্তাভাবনা করেছিলাম। ফলে আমাদের আলোচনা বেশ সাবলীলভাবেই হয়েছে।’

বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে দক্ষিণ কোরিয়ার ঝুঁকিটা ছিল অনেক বেশি। কারণ, দেশটির অর্থনীতি অনেক বেশি রপ্তানিনির্ভর। অন্যদিকে সবে গত জুনে দেশটির প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন লি জে মিয়ং। তা ছাড়া কিম জং-কওয়ানসহ আলোচক দলের অন্য সদস্যরা মাত্র কয়েক সপ্তাহ আগে দায়িত্ব নিয়েছেন।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র প রস ত ত

এছাড়াও পড়ুন:

একাত্তরে প্রথম স্বাধীনতা অর্জনের পরে চব্বিশে দ্বিতীয়বার স্বাধীন হয়েছি

জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির মুজিবুর রহমান বলেছেন, ‘১৯৭১ সালে প্রথম স্বাধীনতা অর্জনের পরে আমরা ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে দ্বিতীয়বার স্বাধীন হয়েছি। মানুষের ওপর মানুষের গোলামি খতম করে আল্লাহর গোলামি কায়েম করার জন্য আমাদের আবার তৃতীয়বার স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধ করতে হবে। জাতীয় সংসদে আল্লাহর আইন পাস করতে হবে।’

আজ শুক্রবার জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে ‘জুলাই ২৪-এর গণ-অভ্যুত্থান: প্রত্যাশা, প্রাপ্তি ও করণীয়’ শীর্ষক জাতীয় সেমিনারের আয়োজন করে জামায়াতে ইসলামী। সেখানে দলের নায়েবে আমির মুজিবুর রহমান সভাপতিত্ব করেন।

মানুষের রচিত কোনো মতবাদ দিয়ে মানুষের মুক্তি আসবে না উল্লেখ করে মুজিবুর রহমান বলেন, ‘এ জন্য এ দেশে আল্লাহর আইন চালু করতে হবে। আমাদের ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, রাষ্ট্রীয় ও আন্তর্জাতিক সব ক্ষেত্রে আল্লাহর আইন মেনে চলতে হবে।’

সেমিনারে জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান বলেন, জামায়াত ও ছাত্রশিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধ করেছিল আওয়ামী লীগ। কিন্তু আজকে শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের রাজনীতি বাংলাদেশে নিষিদ্ধ হয়ে গেছে। তিনি বলেন, হাসিনার আমলে সংঘটিত সব হত্যার বিচার করতে হবে। এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের সবাইকে বিচারের আওতায় আনতে হবে।

অনুষ্ঠানে ‘দ্বিতীয় স্বাধীনতার শহীদ ও আহত যাঁরা’ বইয়ের ইংরেজি ও আরবি সংস্করণের মোড়ক উন্মোচন এবং শহীদদের স্মৃতি-তথ্যসংবলিত ওয়েবসাইটের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়। জুলাই অভ্যুত্থানের শহীদ পরিবারের সদস্য, আহত জুলাই যোদ্ধা ও তাঁদের পরিবারের সদস্যরা এতে উপস্থিত ছিলেন।

জামায়াতের এই সেমিনারে আরও কয়েকটি দলের নেতারাও বক্তব্য দেন। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রেসিডিয়াম সদস্য আশরাফ আলী আকন বলেন, ‘ইসলাম কায়েম করা ছাড়া লুটপাট, চাঁদাবাজি, দুর্নীতি বন্ধ হবে না। দেশে দুর্নীতিমুক্ত সত্যিকারের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হলে পিআর (সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব) পদ্ধতিতে নির্বাচন চালু করতে হবে। তা না হলে ভোট ডাকাতি, কারচুপি, ঘুষ, দুর্নীতি বন্ধ হবে না।’

শহীদদের তালিকা করার জন্য জামায়াতকে ধন্যবাদ জানান জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী। এ সময় তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগের শাসনামলে মুসলমানদের জঙ্গি হিসেবে অভিহিত করে তাঁদের ওপর জুলুম করা হয়েছে। বর্তমানে একটি দলের মহাসচিব বলেছেন, দেশে দক্ষিণপন্থার উদ্ভব হয়েছে। দক্ষিণপন্থার উদ্ভব হলে তাতে তাঁদের সমস্যা কী? দক্ষিণপন্থার ভয় দেখিয়ে আবার জুলুম-নির্যাতন চালানোর ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে।’

অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার। জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এইচ এম হামিদুর রহমান আযাদ, দলের ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমির নূরুল ইসলাম বুলবুল ও মহানগরী উত্তরের আমির সেলিম উদ্দিন, গণ অধিকার পরিষদের মুখপাত্র ফারুক হাসান, দৈনিক সংগ্রামের সম্পাদক আযম মীর শাহীদুল আহসান, অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা হাসিনুর রহমান, ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি জাহিদুল ইসলাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি এস এম ফরহাদ প্রমুখ এতে বক্তব্য দেন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন জামায়াত নেতা এহসানুল মাহবুব জুবায়ের, শফিকুল ইসলাম মাসুদ ও রেজাউল করিম।

সম্পর্কিত নিবন্ধ