দীর্ঘমেয়াদে এন্টাসিড ওষুধ খেলে পাকস্থলীর পিএইচ পরিবর্তিত হয়ে যেতে পারে। এই ওষুধের প্রভাবে পাকস্থলীর ক্যান্সারও দেখা দিতে পারে। সুতরাং গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দেখা দিলেই এন্টাসিড সিরাপ বা সঠিক চিকিৎসা না করে ওমিপ্রাজল গোত্রের ওষুধ সেবন করবেন না। 

ডা. মোহাম্মদ জাকির হোসেন, সহযোগী অধ্যাপক, পরিপাকতন্ত্র, লিভার ও প্যানক্রিয়াস রোগ বিভাগ, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও মিটফোর্ড হাসপাতাল বলেন, ‘‘দীর্ঘ মেয়াদে গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ খাওয়ার ফলে টাইফয়েডের মতো কিছু সংক্রমণ হতে পারে। দেখা দিতে পারে রক্তশূন্যতা ও হাড়ক্ষয় রোগ। এ ছাড়া কিডনি রোগীদের এন্টাসিড–জাতীয় ওষুধে মারাত্মক সমস্যা হতে পারে।’’

দীর্ঘমেয়াদে এন্টাসিড খেলে আরও যেসব সমস্যা দেখা দিতে পারে

আরো পড়ুন:

যেসব রোগ থাকলে ডাবের পানি পান করা উচিত নয়

বিশেষজ্ঞের পরামর্শ: মুখের দুর্গন্ধ দূর করার উপায়

১.

দীর্ঘমেয়াদে এন্টাসিড খেলে হাড়েরও ক্ষতি হয়। এই ওষুধ শরীরে ক্যালশিয়াম শোষণে বাধা দেয়। সেজন্য অস্টিয়োপোরেসিস বা বাতের অসুখের ঝুঁকিও বাড়িয়ে দিতে পারে এই অভ্যাস।

২. নিয়মিত এন্টাসিড খেলে পাকস্থলীর উপকারী ব্যাক্টেরিয়াগুলো নষ্ট হতে থাকে। আর উপকারী ব্যাক্টেরিয়ার ক্ষতি মানেই দেখা দিতে পারে স্থূলতা এবং ডায়াবেটিস দেখা দেওয়া। এ ছাড়া ফলিক অ্যাসিড, ক্যালশিয়াম, আয়রন হজমে সমস্যা হবে। 

যেসব নিয়ম মানতে হবে

এক. রাতের খাবার অবশ্যই শোয়ার অন্তত দুই থেকে তিন ঘণ্টা আগে খেতে হবে। এটি খাবার হজম হতে ও পাকস্থলী খালি হতে সময় দেবে এবং গ্যাস্ট্রিক ও অ্যাসিডের মাত্রা ততক্ষণে কমে আসবে।

দুই. অল্প অল্প করে খাবেন। একবারে অনেক বেশি পরিমাণে কখনো খাবেন না।তিনটি মূল খাবারের যেমন-প্রাতরাশ, মধ্যাহ্নভোজ ও নৈশভোজ এর মাঝে আরও চার থেকে পাঁচবার হালকা খাবার খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে পারেন।

তিন. ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। ওজনাধিক্য এ সমস্যার একটি প্রধান কারণ।

চার. যে খাবার খেলে বুক জ্বালাপোড়ার সৃষ্টি করে, তা শনাক্ত করুন এবং এড়িয়ে চলার চেষ্টা করুন।

ঢাকা/লিপি

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর স ব স থ যকর জ বন এন ট স ড খ সমস য

এছাড়াও পড়ুন:

পরাবাস্তবতার আবেদন কি ফুরিয়েছে

অবচেতনের মানচিত্র ধরে এক অন্তহীন অভিযাত্রা কবি–সাহিত্যিকেরা যুগ যুগ ধরে করে আসছেন। সাহিত্যের দীর্ঘ যাত্রাপথে এমন কিছু বাঁক আসে, যা তার গতিপথকে চিরতরে বদলে দেয়। পরাবাস্তবতা বা সুররিয়ালিজম ছিল এমনই এক যুগান্তকারী আন্দোলন, যা কেবল শিল্পের আঙ্গিক নয়; বরং শিল্পীর বিশ্ববীক্ষা এবং আত্মবীক্ষণকে সম্পূর্ণ নতুন এক দর্শন দান করেছিল। এটি ছিল বিংশ শতাব্দীর ইউরোপের এক ক্ষতবিক্ষত সময়ের সন্তান। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের নারকীয় ধ্বংসযজ্ঞ, ভিক্টোরীয় যুগের শুষ্ক নৈতিকতা এবং বুদ্ধিবৃত্তিক জগতের অতিনিয়ন্ত্রিত যুক্তিবাদ—এই সবকিছুর বিরুদ্ধে পরাবাস্তবতা ছিল এক শৈল্পিক ও দার্শনিক বিদ্রোহ। এর মূল লক্ষ্য ছিল মানব মনের সেই গভীরে প্রবেশ করা, যেখানে যুক্তির আলো পৌঁছায় না; সেই অবচেতনের অন্ধকার মহাসাগর থেকে তুলে আনা বিস্মৃত স্বপ্ন, অবদমিত ইচ্ছা আর আদিম প্রবৃত্তির মণি–মুক্তা। পরাবাস্তবতা তাই কেবল একটি শিল্পরীতি নয়, এটি চেতনার শৃঙ্খলমুক্তির এক দুঃসাহসী ইশতেহার।

১৯২৪ সালে ফরাসি কবি ও লেখক আঁদ্রে ব্রেটন তাঁর ‘পরাবাস্তবতার প্রথম ইশতেহার’ (ম্যানিফেস্টো অব সুররিয়ালিজম) প্রকাশের মাধ্যমে এই আন্দোলনের আনুষ্ঠানিক সূচনা করেন। ব্রেটনের সংজ্ঞায়, পরাবাস্তবতা হলো, ‘বিশুদ্ধ মানসিক স্বয়ংক্রিয়তা, যার মাধ্যমে মুখ বা লেখনী দিয়ে অথবা অন্য যেকোনো উপায়ে চিন্তার আসল কার্যকারিতাকে প্রকাশ করার ইচ্ছা পোষণ করা হয়। এটি যুক্তির সমস্ত নিয়ন্ত্রণ থেকে এবং সকল প্রকার নান্দনিক ও নৈতিক উদ্দেশ্য থেকে বিযুক্ত চিন্তার এক শ্রুতলিখন।’

এই দর্শনের প্রধান পাথেয় ছিল ভিয়েনার মনোবিজ্ঞানী সিগমুন্ড ফ্রয়েডের যুগান্তকারী মনঃসমীক্ষণ তত্ত্ব। ফ্রয়েড দেখিয়েছিলেন যে মানুষের সচেতন মনের আড়ালে লুকিয়ে আছে এক বিশাল অবচেতন জগৎ, যা তার আচরণ, স্বপ্ন ও ব্যক্তিত্বকে নিয়ন্ত্রণ করে। পরাবাস্তববাদীরা ফ্রয়েডের এই তত্ত্বকে লুফে নিয়েছিলেন। তাঁদের কাছে শিল্পসৃষ্টির উদ্দেশ্যই ছিল যুক্তির সেন্সরশিপকে ফাঁকি দিয়ে অবচেতন মনের এই লুকানো জগৎকে উন্মোচিত করা। তাঁরা চেয়েছিলেন, স্বপ্ন ও বাস্তবতাকে একীভূত করে এক ‘পরম বাস্তবতা’ বা ‘সুররিয়ালিটি’ তৈরি করতে।

পরাবাস্তবতা ছিল বিংশ শতাব্দীর ইউরোপের এক ক্ষতবিক্ষত সময়ের সন্তান। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের নারকীয় ধ্বংসযজ্ঞ, ভিক্টোরীয় যুগের শুষ্ক নৈতিকতা এবং বুদ্ধিবৃত্তিক জগতের অতিনিয়ন্ত্রিত যুক্তিবাদ—এই সবকিছুর বিরুদ্ধে পরাবাস্তবতা ছিল এক শৈল্পিক ও দার্শনিক বিদ্রোহ।

পরাবাস্তবতার পদযাত্রা প্যারিসের শৈল্পিক পরিমণ্ডল থেকে শুরু হলেও এর ঢেউ খুব দ্রুতই বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। আঁদ্রে ব্রেটন ছিলেন এই আন্দোলনের অবিসংবাদিত নেতা, কিন্তু তাঁর ছত্রচ্ছায়ায় সমবেত হয়েছিলেন বহু প্রতিভাবান স্রষ্টা, যাঁরা নিজ নিজ ভাষায় ও সংস্কৃতিতে পরাবাস্তবতার নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছেন।

আঁদ্রে ব্রেটন (জন্ম: ১৮ ফেব্রুয়ারি ১৮৯৬—মৃত্যু: ২৮ সেপ্টেম্বর ১৯৬৬)

সম্পর্কিত নিবন্ধ