চায়ের সবুজ বাগানে গাছ থেকে পাতা কুঁড়ি তোলার কাজ সবচেয়ে বেশি করেন নারী শ্রমিকরা। রোদে পুড়ে এবং বৃষ্টিতে ভিজে চায়ের বাগানের টিলায় পাতা কুঁড়ি সংগ্রহ করতে হয় তাদের।

ক্লান্ত দুপুরে নিজ হাতে তৈরি ‘পাতিচখা’ বা কাঁচা চা পাতির ভর্তা খেয়ে দুর্বল স্নায়ুকে আবার সবল করেন তারা। এরপর আবারো শুরু করেন কর্মযজ্ঞ। পড়ন্ত বিকেলে ওজন ধারের কাছে তোলা পাতার হিসাব দিয়ে ঘরে ফেরেন এই নারীরা।

চা সংশ্লিষ্টরা জানান, চায়ের কাঁচা পাতায় রয়েছে ক্যাফেইন নামক উপাদান। হাতের মলায় ক্যাফেইন তৈরি হয়। যা খেলে শরীরে উদ্দীপনা সৃষ্টি হয়। পাতিচখা বা চা পাতির ভর্তা চা শ্রমিকদের প্রিয় খাবার। দুপুর হলেই তারা গাছের ছায়ায় গোল হয়ে বসে চানাচুর, সিদ্ধ করা আলু, মরিচ, রসুনসহ অন্যান্য উপাদানের সঙ্গে চা পাতার কচি কুঁড়ি দিয়ে হাতের তালুতে ডলে তৈরি করেন পাতিচখা।

আরো পড়ুন:

পিয়াইন নদীতে ‍নিখোঁজ বালু শ্রমিকের মরদেহ উদ্ধার

গাজীপুরে বকেয়া বেতনের দাবিতে শ্রমিকদের মহাসড়ক অবরোধ

বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) মৌলভীবাজারের বিভিন্ন চা বাগান গিয়ে শ্রমিকদের পাতিচখা খাওয়ার দৃশ্য চোখে পড়ে। 

কথা হলে চা শ্রমিকরা জানান, নারী শ্রমিকদের সর্দারনি সবার কাছ থেকে রুটি, পেঁয়াজ, মুড়ি, রসুন, চানাচুর, সিদ্ধ আলুসহ পাতিচখার উপকরণ সংগ্রহ করেন। একটি পাত্রে সব উপকরণ জমা করে সব শেষে চা পাতার কচি কুঁড়ি হাতের তালুতে ডলে সবাই মিলে তৈরি করেন পাতিচখা। সর্দারনি আবার সকলের হাতে হাতে তা বন্টন করেন।

মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলার করিমপুর চা বাগানের নারী শ্রমিক বাসন্তি মুন্ডার বলেন, “আমরা ক্লান্তি দূর করার জন্য পাতিচখা খাই। এটা আমাদের নিজস্ব খাবার।”

বসন্তি মুন্ডার কাছে বসে থাকা অপর নারী শ্রমিক সুমা কর্মকার বলেন, “ক্লান্ত দুপুরে গাছের শান্ত ছায়ায় বসে আমরা পাতিচখা খেয়ে কাজে যায়। আমরা এ থেকে শক্তি পাই।”

বাগানের শ্রমিক উর্মিলা তাপসী বলেন, “আমাদের দুপুরের নাস্তা পাতিচখা খেলে শক্তি আসে।”

বিশেষজ্ঞদের মতে, চা জনগোষ্ঠীর আদি পেশা হলো কৃষি। কৃষি কাজ করে তাদের জীবন চলত। ১৮৪০ সালের দিকে ভারতবর্ষের বিভিন্ন অঞ্চলে চায়ের চাষ বৃদ্ধি পায়। কর্মক্ষেত্র ক্লান্তি দূর করায় চায়ের কদর বাড়তে থাকে।

বাংলাদেশের চট্টগ্রামে প্রথম কর্ণফুলী চা বাগানের মাধ্যমে চায়ের চাষাবাদ শুরু হয়। মাটি, আবহাওয়া ও জলবায়ু অনুকূলে থাকায় সিলেট ও চট্টগ্রামে চা বাগান গড়ে ওঠে। ভারতের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে চা গাছ পরিচর্যার জন্য এখানে শ্রমিক আনা হয়। কাজের ক্লান্তি দূর করার জন্য মধ্যাহ্ন বিরতিতে রুটি খাওয়া ছিল তাদের পুরানো প্রথা। মনের খেয়ালে চা-গাছের কচি পাতা হাতের তালুতে ডলে রুটির সঙ্গে খেতে শুরু করেন তারা।

শরীরে উদ্দীপনা সৃষ্টি হওয়ার পর থেকে তারা দুপুরে রুটির সঙ্গে চায়ের কচি পাতা খাওয়ার প্রথা শুরু করেন। এর সঙ্গে যোগ হয় চানাচুর, সিদ্ধ করা আলু, মরিচ, রসুনসহ অন্যান্য উপাদান। শ্রমিকদের ভাষায় চাপাতি ভর্তা। এর বর্তমান নাম পাতিচখা।

চা বাগানের শ্রমিকদের সকাল থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত বাগানে কাজ করতে হয়। দুপুরে ঘরে ফেরার সুযোগ নেই তাদের। 

কথা হলে করিমপুর চা বাগানের শ্রমিক নেতা জাবেদ খান বলেন, “নারী শ্রমিকরা দুপুরে খাবার জন্য দুইটি রুটি সঙ্গে নিয়ে যান। এর সঙ্গে যোগ হয় চানাচুর, সিদ্ধ করা আলু, মরিচ, চায়ের কচি পাতা রসুন, পেঁয়াজসহ অন্যান্য উপাদান। ভর্তা খাওয়ার প্রথা আদিকাল থেকে চলে আসছে।”

ওই চা বাগানের সাবেক পঞ্চায়েত সভাপতি ৮০ বছর বয়সী কতুব আলী বলেন, “পাতিচখা এটি আদিকাল থেকে চলে আসছে। নাস্তা খাওয়ার পর শরীরে এনার্জি আসে, সেটি খেয়ে আবার কাজে মন দেন শ্রমিকরা।”

ঢাকা/মাসুদ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর উপ দ ন দ র কর র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

নির্বাচনী উপকরণ সংগ্রহ শুরু করেছে ইসি

আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে নির্বাচনী উপকরণ সংগ্রহের প্রক্রিয়া শুরু করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনের গুদামে ইতোমধ্যেই এসব নির্বাচনী সরঞ্জাম পৌঁছানো শুরু হয়েছে।

সোমবার বিকেলে ইসি সচিবালয়ের সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ, অতিরিক্ত সচিব কে এম আলী নেওয়াজসহ ইসির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা নির্বাচন ভবনের বেসমেন্টে অবস্থিত ইসির গুদামে নির্বাচনী সরঞ্জাম দেখতে যান। এ সময় তারা সংগৃহীত ভোটগ্রহণের বিভিন্ন সরঞ্জাম পরীক্ষা করে দেখেন।

এসব নির্বাচনী সরঞ্জামের মধ্যে রয়েছে ব্যালট বাক্স, লক, ঢাকনা, গানি ব্যাগ, সিল, বিভিন্ন ধরনের ফরম, প্যাকেট ইত্যাদি।

ইসি ঘোষিত কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী ১৬ সেপ্টেম্বর থেকে ১৬ নভেম্বরের মধ্যে মাঠ পর্যায়ের নির্বাচনী দ্রব্য, ফরম, প্যাকেট বিতরণের পরিকল্পনা রয়েছে।

নির্বাচনী সরঞ্জাম সংগ্রহের বিষয়ে জানতে চাইলে ইসি সচিবালয়ের সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ বাসসকে বলেন, ‘আজ বার্ষিক দ্রব্য সংগ্রহের পরিকল্পনা সংক্রান্ত মিটিং করেছি। ইতিমধ্যে নির্বাচনী সরঞ্জাম আসা শুরু হয়েছে।’

ইসি সচিবালয়ের অতিরিক্ত সচিব কে এম আলী নেওয়াজ বাসসকে বলেন, ‘ইতোমধ্যেই আমরা কোনো কোনো নির্বাচনী উপকরণ প্রায় অর্ধেক পেয়েছি। আবার কোনো কোনো উপকরণ এখনো আসেনি। আশা করছি, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই নির্বাচনী দ্রব্য সামগ্রী পেয়ে যাব।’

ইসি সচিব আখতার আহমেদ জানান, বর্তমানে দেশের ১০টি অঞ্চলের আওতায় ৬৪ জেলায় ৩০০ আসনে মোট ভোটার সংখ্যা ১২ কোটি ৬১ লাখ ৬১ হাজার ২০১ জন। এবার গড়ে প্রতি ৩ হাজার ভোটারের জন্য একটি ভোটকেন্দ্র করার ভিত্তিতে মোট ৪২ হাজার ৬১৮টি ভোটকেন্দ্র প্রস্তাব করা হয়েছে। এছাড়া সব মিলিয়ে ভোটকক্ষ হবে ২ লাখ ৪৪ হাজার ৪৬টি। আগামী ২০ অক্টোবর চূড়ান্ত ভোটকেন্দ্রের তালিকা প্রকাশ করা হবে।

নির্বাচনী উপকরণ সংগ্রহের বিষয়ে সম্প্রতি ইসি সচিব সাংবাদিকদের বলেন, ‘এ পর্যন্ত ব্রাস সিল ও সিলগালা বাদে অন্যান্য উপকরণগুলো আমরা পাচ্ছি। সময়সীমা দেওয়া আছে, নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই উপকরণগুলো পাচ্ছি। সেপ্টেম্বরের মধ্যেই সকল দ্রব্য পাওয়া যাবে বলে আমরা আশাবাদী।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • নির্বাচনী উপকরণ সংগ্রহ শুরু করেছে ইসি