Prothomalo:
2025-11-04@05:48:15 GMT

টেকসই সংস্কারে মনোযোগ দিন

Published: 3rd, August 2025 GMT

পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর দক্ষিণাঞ্চলের সঙ্গে দেশের অন্যান্য অংশের যোগাযোগব্যবস্থায় বড় ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে। কুয়াকাটার মতো পর্যটনকেন্দ্রগুলোতে পর্যটকের আগমন বেড়েছে বহুগুণ। কিন্তু বরিশাল-কুয়াকাটা আঞ্চলিক মহাসড়কটি বেহাল হওয়ায় পর্যটনের সম্ভাবনা ম্লান করে দিচ্ছে। পটুয়াখালী থেকে কুয়াকাটা পর্যন্ত ৭১ কিলোমিটার সড়কের বর্তমান অবস্থা দেখে মনে হয় না এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ আঞ্চলিক মহাসড়ক। বেহাল এ সড়ক জননিরাপত্তার জন্যও হুমকি তৈরি করেছে। বিষয়টি সত্যিই উদ্বেগজনক।

টানা বর্ষণ ও যানবাহনের অতিরিক্ত চাপের কারণে সড়কের পিচ উঠে অসংখ্য ছোট-বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। বৃষ্টিতে গর্তে পানি জমে তা আরও গভীর হচ্ছে, যা এক মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে। বাসচালক ও যাত্রীদের বর্ণনায় উঠে এসেছে এই করুণ চিত্র—আগে যেখানে এই পথে যেতে সময় লাগত দুই ঘণ্টা, এখন সেখানে লাগছে সাড়ে তিন ঘণ্টা। এই দীর্ঘ সময় ধরে ঝাঁকুনি, শারীরিক কষ্ট ও দুর্ঘটনার ঝুঁকি—সব মিলিয়ে যাত্রীরা প্রতিদিন চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন।

বেহাল মহাসড়কটির কারণে শুধু যাত্রীরাই ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন না, ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে পর্যটন ব্যবসাও। দূরদূরান্ত থেকে আসা পর্যটকেরা এই সড়কের দুরবস্থা দেখে হতাশ হচ্ছেন। পর্যটকের সংখ্যাও কমে যাচ্ছে, যা স্থানীয় অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। বাস মালিক সমিতি জানিয়েছে, সড়কের কারণে বাসের যন্ত্রাংশ ভেঙে যাচ্ছে এবং যাত্রী কমে যাওয়ায় তঁাদের ব্যবসাও লোকসানের মুখে।

সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তর কর্তৃপক্ষ বলছে, অতিরিক্ত বৃষ্টি ও যানবাহনের চাপ বেড়ে যাওয়ায় এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। তারা জরুরি সংস্কারকাজ করছে ও বরাদ্দ পেলে পূর্ণাঙ্গ সংস্কার করা হবে। কিন্তু এই ধরনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সড়কের জন্য পর্যাপ্ত ও টেকসই বরাদ্দ আগে থেকেই নিশ্চিত করা উচিত ছিল। পদ্মা সেতু চালুর পর যানবাহনের চাপ যে বাড়বে, তা অনুমান করা কঠিন ছিল না। তাই সে অনুযায়ী সড়কের অবকাঠামো উন্নত করার পরিকল্পনা আগে থেকেই নেওয়া জরুরি ছিল। কিন্তু বিগত সরকার উন্নয়নের ক্ষেত্রে এসব বিষয়ের দিকে মনোযোগ দেয়নি।

দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের যাতায়াতের প্রধান মাধ্যম এই মহাসড়ক। দ্রুততম সময়ের মধ্যে এই সড়কের কার্যকর ও টেকসই সংস্কার করা এখন সময়ের দাবি। শুধু দায়সারা গোছের মেরামতি নয়, বরং এমনভাবে সংস্কার করতে হবে, যাতে তা দীর্ঘস্থায়ী হয় ও ভবিষ্যতে একই সমস্যা বারবার না ঘটে। পর্যটকদের নিরবচ্ছিন্ন ও নিরাপদ যাত্রা নিশ্চিত করার জন্য সরকারের উচিত এ বিষয়ে জরুরি পদক্ষেপ নেওয়া। এর সঙ্গে স্থানীয় ব্যবসা–বাণিজ্য ও অনেক মানুষের কর্মসংস্থানও যুক্ত। ফলে সড়কটির টেকসই সংস্কারের প্রতি অধিক মনোযোগ কাম্য।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: সড়ক র ব যবস ট কসই

এছাড়াও পড়ুন:

ঘুঘুডাঙ্গার মনোরম তালসড়ক

অক্টোবরের প্রথম দিকে লম্বা এক ছুটিতে বেড়াতে গেলাম বগুড়া। দেশের উত্তরের জনপদ বরাবরই আমার পছন্দ। মানুষ কম, হালকা বসতি। পথে বা হাটবাজারে ততটা ভিড়ভাট্টা নেই। বাজারে কম দামে টাটকা শাকসবজি মেলে। এসব কেনার চেয়ে দেখেই তুমুল আনন্দ পাই। নিঝুম গ্রামের ভেতর ফসলের মাঠে ছড়িয়ে থাকা বৈচিত্র্য দেখতে দেখতে উদ্দেশ্যহীন ঘোরাঘুরি বেশ উপভোগ করি। যত দূর চোখ যায়Ñ গ্রামের পর গ্রাম। মুঠো মুঠো সবুজের ভেতর এঁকেবেঁকে ছুটে চলা মেঠো পথ মাড়িয়ে আমরা প্রতিদিন দূরে কোথাও হারিয়ে যাই। দিনের মুহূর্তগুলো মানুষের জীবনাচারের সঙ্গে তাল মিলিয়ে কতটা নিপুণভাবে ক্ষণে ক্ষণে বদলে যেতে পারে,Ñ এসব গ্রামে না এলে তা বোঝার উপায় নেই। কৃষিনির্ভর এই জনপদে প্রতিমুহূর্তের ব্যস্ততা যেন অনিবার্য নিয়তি।

বগুড়ার গ্রামীণ জনপদ ঘুরে, দর্শনীয় স্থানগুলো দেখে মনে হলো যথেষ্ট নয়! চোখের তৃষ্ণা মেটেনি। মনের ক্ষুধাও যায়নি! তখনই মনে পড়ল নওগাঁর ঘুঘুডাঙ্গার বিখ্যাত তালসড়কটির কথা। এত কাছে এসে তালসড়কটি দেখতে যাব না, তা কি হয়? স্থানীয় সাংবাদিক আনোয়ার পারভেজ বললেন, ‘বগুড়া থেকে মাত্র ৩ ঘণ্টারই তো জার্নি। ঘুরে আসুন।’ আমারও মনে হলো, এমন একটি অসাধারণ দৃশ্যের জন্য এই দূরত্ব কিছুই না।

সকালে তুমুল বৃষ্টির শব্দে ঘুম ভাঙল। কিছুক্ষণের মধ্যে আবার থেমেও গেল। গাড়িতে ওঠার সময় স্থলপদ্মের গাছটি চোখে পড়ল। গাছভর্তি ফুলগুলো বৃষ্টির দাপটে একেবারে নেতিয়ে পড়েছে। অথচ বিকেলে ভেবে রেখেছিলাম, সকালে শরতের মধুর আলোয় স্থলপদ্মের ছবি তুলব। তা আর হলো না। দ্রুত বেরিয়ে পড়ি। প্রথমে গেলাম নওগাঁর সাপাহারের কৃষি উদ্যোক্তা সোহেল রানার বাগানে। তাঁকে সঙ্গে নিয়ে আমরা যখন স্বপ্নমণ্ডিত সেই তালসড়কে পৌঁছাই, তখন ঠিক দুপুরবেলা।

কিন্তু দুপুর হলেও দর্শনার্থীদের পদচারণে মুখর তালসড়ক। শুধু বৃহত্তর রাজশাহী নয়, দূরদূরান্ত থেকেও পর্যটকেরা এখানে আসেন। নওগাঁ জেলার নিয়ামতপুর উপজেলার হাজীনগর ইউনিয়নে এই তালসড়কের অবস্থান। মূলত ঘুঘুডাঙ্গা-শিবপুর সড়কের দুপাশজুড়ে থাকা বীথিবদ্ধ তালগাছের জন্যই সড়কটি ‘তালসড়ক’ বা ‘তালতলী’ নামে পরিচিত হয়ে উঠেছে। হাজীনগর গ্রামের মজুমদার মোড় থেকে ঘুঘুডাঙ্গা পর্যন্ত প্রায় ২ কিলোমিটার সড়কজুড়ে এই তালসড়কের অবস্থান।

বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের তথ্যমতে, ২০০৮ সাল থেকে বিভিন্ন রাস্তা ও খালপাড়ে ৭২০ কিলোমিটারের বেশি জায়গাজুড়ে লাগানো হয়েছে কয়েক লাখ তালগাছ। তখন বরেন্দ্র অঞ্চল হিসেবে পরিচিত নওগাঁর নিয়ামতপুর, পোরশা, পত্নীতলা ও ধামইরহাট, রাজশাহীর তানোর, গোদাগাড়ী, চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল, রহনপুর উপজেলার রাস্তার দুপাশে রোপণ করা হয়েছে অনেক তালগাছ। সঠিক রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচর্যার অভাবে অনেক গাছই হারিয়ে গেছে। কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্তভাবে বেঁচে আছে কিছু। তবে নওগাঁর নিয়ামতপুর উপজেলার ঘুঘুডাঙ্গার এই গাছগুলো এখনো কালের সাক্ষী হয়ে টিকে আছে। বর্তমানে গাছগুলো ৫০ থেকে ৬০ ফুট উঁচু হওয়ায় রাস্তার দুপাশে শোভাবর্ধন করছে।

একসময় নিয়ামতপুর উপজেলার হাজীনগর ইউনিয়নের ঘুঘুডাঙা-শিবপুর সড়কটি ছিল একটি মেঠো পথ। ২০১২ সালের দিকে সড়কটি পাকা করা হয়। বর্তমানে তালসড়কের দুপাশে দিগন্তবিস্তৃত ফসলের মাঠ থাকায় সড়কটি বেশ আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে।

ভাদ্র মাসে তাল পাকার মৌসুমে তালসড়ক ঘিরে উৎসবেরও আয়োজন করা হয়। নানা স্বাদের তালের পিঠা এই উৎসবের প্রধান আকর্ষণ। তবে বেড়াতে আসা পর্যটকদের উদ্বুদ্ধ করার জন্য এখানে মানসম্পন্ন পর্যটনসেবা থাকা প্রয়োজন।

শুধু বরেন্দ্র অঞ্চলই নয়, বৃহত্তর ফরিদপুরের বিভিন্ন স্থানেও প্রচুর পরিমাণে তালগাছ চোখে পড়ে। খেতের আলপথ, বাড়ির সীমানা, খালপাড়, পুকুরপাড় বা পথের ধারে এসব সুদৃশ্য তালগাছ প্রকৃতিতে ভিন্ন এক ব্যঞ্জনা তৈরি করেছে। দেশের বিভিন্ন জনপদে ছড়িয়ে থাকা এসব তালগাছের অর্থনৈতিক সম্ভাবনাও আছে। দক্ষিণ ভারতের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে দৃশ্যমান তালগাছের রস থেকে ভালো মানের সুস্বাদু গুড় ও মিছরি তৈরি করা হয়। বাজারে এসব গুড়-মিছরির চাহিদাও ব্যাপক। আমাদের দেশেও এসব গাছ থেকে বাণিজ্যিকভাবে তালের গুড় তৈরি করা সম্ভব। প্রয়োজন যথাযথ উদ্যোগ ও পৃষ্ঠপোষকতার।

 মোকারম হোসেন, প্রকৃতি ও পরিবেশবিষয়ক লেখক

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ঘুঘুডাঙ্গার মনোরম তালসড়ক
  • চলন্ত অবস্থায় বৈদ্যুতিক গাড়ি চার্জ করতে সক্ষম সড়ক চালু ফ্রান্সে