Prothomalo:
2025-08-03@04:46:37 GMT

টেকসই সংস্কারে মনোযোগ দিন

Published: 3rd, August 2025 GMT

পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর দক্ষিণাঞ্চলের সঙ্গে দেশের অন্যান্য অংশের যোগাযোগব্যবস্থায় বড় ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে। কুয়াকাটার মতো পর্যটনকেন্দ্রগুলোতে পর্যটকের আগমন বেড়েছে বহুগুণ। কিন্তু বরিশাল-কুয়াকাটা আঞ্চলিক মহাসড়কটি বেহাল হওয়ায় পর্যটনের সম্ভাবনা ম্লান করে দিচ্ছে। পটুয়াখালী থেকে কুয়াকাটা পর্যন্ত ৭১ কিলোমিটার সড়কের বর্তমান অবস্থা দেখে মনে হয় না এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ আঞ্চলিক মহাসড়ক। বেহাল এ সড়ক জননিরাপত্তার জন্যও হুমকি তৈরি করেছে। বিষয়টি সত্যিই উদ্বেগজনক।

টানা বর্ষণ ও যানবাহনের অতিরিক্ত চাপের কারণে সড়কের পিচ উঠে অসংখ্য ছোট-বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। বৃষ্টিতে গর্তে পানি জমে তা আরও গভীর হচ্ছে, যা এক মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে। বাসচালক ও যাত্রীদের বর্ণনায় উঠে এসেছে এই করুণ চিত্র—আগে যেখানে এই পথে যেতে সময় লাগত দুই ঘণ্টা, এখন সেখানে লাগছে সাড়ে তিন ঘণ্টা। এই দীর্ঘ সময় ধরে ঝাঁকুনি, শারীরিক কষ্ট ও দুর্ঘটনার ঝুঁকি—সব মিলিয়ে যাত্রীরা প্রতিদিন চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন।

বেহাল মহাসড়কটির কারণে শুধু যাত্রীরাই ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন না, ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে পর্যটন ব্যবসাও। দূরদূরান্ত থেকে আসা পর্যটকেরা এই সড়কের দুরবস্থা দেখে হতাশ হচ্ছেন। পর্যটকের সংখ্যাও কমে যাচ্ছে, যা স্থানীয় অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। বাস মালিক সমিতি জানিয়েছে, সড়কের কারণে বাসের যন্ত্রাংশ ভেঙে যাচ্ছে এবং যাত্রী কমে যাওয়ায় তঁাদের ব্যবসাও লোকসানের মুখে।

সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তর কর্তৃপক্ষ বলছে, অতিরিক্ত বৃষ্টি ও যানবাহনের চাপ বেড়ে যাওয়ায় এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। তারা জরুরি সংস্কারকাজ করছে ও বরাদ্দ পেলে পূর্ণাঙ্গ সংস্কার করা হবে। কিন্তু এই ধরনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সড়কের জন্য পর্যাপ্ত ও টেকসই বরাদ্দ আগে থেকেই নিশ্চিত করা উচিত ছিল। পদ্মা সেতু চালুর পর যানবাহনের চাপ যে বাড়বে, তা অনুমান করা কঠিন ছিল না। তাই সে অনুযায়ী সড়কের অবকাঠামো উন্নত করার পরিকল্পনা আগে থেকেই নেওয়া জরুরি ছিল। কিন্তু বিগত সরকার উন্নয়নের ক্ষেত্রে এসব বিষয়ের দিকে মনোযোগ দেয়নি।

দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের যাতায়াতের প্রধান মাধ্যম এই মহাসড়ক। দ্রুততম সময়ের মধ্যে এই সড়কের কার্যকর ও টেকসই সংস্কার করা এখন সময়ের দাবি। শুধু দায়সারা গোছের মেরামতি নয়, বরং এমনভাবে সংস্কার করতে হবে, যাতে তা দীর্ঘস্থায়ী হয় ও ভবিষ্যতে একই সমস্যা বারবার না ঘটে। পর্যটকদের নিরবচ্ছিন্ন ও নিরাপদ যাত্রা নিশ্চিত করার জন্য সরকারের উচিত এ বিষয়ে জরুরি পদক্ষেপ নেওয়া। এর সঙ্গে স্থানীয় ব্যবসা–বাণিজ্য ও অনেক মানুষের কর্মসংস্থানও যুক্ত। ফলে সড়কটির টেকসই সংস্কারের প্রতি অধিক মনোযোগ কাম্য।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: সড়ক র ব যবস ট কসই

এছাড়াও পড়ুন:

নিজস্ব অর্থ-শ্রমে সড়ক সংস্কার তরুণদের, দুই গ্রামের মানুষের দুর্ভোগ লাঘব

বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলার রহমতপুর ইউনিয়নের দোয়ারিকা গ্রামে ধসে পড়া একটি গুরুত্বপূর্ণ পাকা সড়ক নিজস্ব অর্থ ও স্বেচ্ছাশ্রমে মেরামত করেছেন গ্রামের ৫০ জন তরুণ। আজ শনিবার সকাল থেকে শুরু করে দিনভর চলে এই মেরামতকাজ। ফলে দীর্ঘদিনের দুর্ভোগ থেকে রক্ষা পেল দোয়ারিকা ও মানিককাঠি গ্রামের অন্তত ৫০ হাজার মানুষ।

স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা জানান, এবার জুন মাস থেকেই বরিশাল অঞ্চলে বৃষ্টিপাতের প্রবণতা শুরু হয়। জুলাই মাসজুড়ে ধারাবাহিক প্রবল বর্ষণের ফলে রহমতপুর-দোয়ারিকা পুরাতন ফেরিঘাট সড়কের মানিককাঠি অংশে প্রায় ৫০০ মিটার পাকা সড়ক হঠাৎ করেই ধসে পড়ে। এর ফলে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে দুই গ্রামের বাসিন্দারা। মানুষের যাতায়াত ও যানবাহন চলাচল—সবই বন্ধ হয়ে যায়। দুর্ভোগে পড়েন দুই গ্রামের অন্তত ৫০ হাজার মানুষ।

দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয়রা সড়কটি মেরামতের জন্য জনপ্রতিনিধি, প্রশাসন ও স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের (এলজিইডি) দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করেন। কিন্তু কোনো কার্যকর উদ্যোগ না নেওয়ায় দোয়ারিকার একদল তরুণ ও যুবকেরা এগিয়ে আসেন এই দুর্ভোগ লাগবে। তাঁরা নিজেদের অর্থায়নে স্বেচ্ছাশ্রমের সড়কের এই অংশ মেরামতের উদ্যোগ নেন।

দোয়ারিকা গ্রামের কলেজশিক্ষার্থী পারভেজ হাওলাদার বলেন, ‘আমরা দীর্ঘদিন ধরে রাস্তার সমস্যা নিয়ে ভুগছি। নানা জায়গায় ধরণা কাজ হয়নি। তাই নিজেরাই সিদ্ধান্ত নিই রাস্তা সংস্কার করে দুর্ভোগ লাঘবের। ইটের খোয়া, বালু কিনে এনে ধসে পড়া অংশে ফেলি। এতে অন্তত সড়কটি মানুষের চলাচল উপযোগী হয়েছে।’

এই স্বেচ্ছাশ্রমে অংশ নেওয়া তরুণদের মধ্যে ছিলেন ছাত্র, কৃষক, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও বেকার যুবকেরাও। কেউ টাকা দিয়ে সাহায্য করেছেন, কেউবা কাঁধে মাটি, কেউবা কোদাল চালিয়ে ঘাম ঝরিয়ে শ্রম দিয়ে এই কাজ সফল করেছেন। স্থানীয় ইউপি সদস্য জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘আমি সত্যিই গর্বিত যে আমাদের ছেলেরা নিজের গ্রামে চলাচল অনুপযোগী সড়ক নিজেদের অর্থ-শ্রম দিয়ে সংস্কার করেছে। এটা আমাদের নতুন প্রজন্মের সচেতনতার জন্য দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। তবে আমরা চাই, সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের পক্ষ থেকে সড়কটি টেকসইভাবে পুনর্গঠনের উদ্যোগ নিক।’

দোয়ারিকা ও মানিককাঠি বাবুগঞ্জের জনবহুল দুটি গ্রাম। কৃষিকাজ, স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা ও বাজারে যাতায়াতের জন্য এই একটি সড়কের ওপর পুরো অঞ্চলের মানুষ নির্ভরশীল। সড়ক ধসে পড়ার কারণে অনেকে বাধ্য হয়ে দুই কিলোমিটার ঘুরে বিকল্প পথ ব্যবহার করে স্কুল–কলেজ ও উপজেলা সদরে যেতে হতো, যা অনেক সময় রোগী বা স্কুলপড়ুয়া শিশুদের জন্য হয়ে উঠেছিল বিপজ্জনক ও কষ্টকর।

স্থানীয় বাসিন্দা রশিদা বেগম বলেন, ‘আমার ছোট ছেলেটা স্কুলে যেতে পারে না তিন দিন ধরে। যে রাস্তা দিয়ে যেতে হতো, সেটা একেবারে গর্ত হয়ে গেছে। আবার বর্ষাকাল, হাঁটুপানি। সরকার যদি আমাদের কষ্ট বুঝত, তাহলে এত দিনেও রাস্তা ঠিক হতো।’

চর সাধুকাঠি ফাজিল মাদ্রাসার শিক্ষক মনিরুজ্জামান বলেন, ‘সড়কটির প্রায় ৫০০ ফুট ধরে ধসে পড়ে খানাখন্দ হয়ে তাতে পানি জমে যাওয়ায় চলাচলের সম্পূর্ণ অনুপযোগী হয়ে পড়েছিল। এতে আমাদের শিক্ষার্থীরা মাদ্রাসায় আসতে কাদাপানিতে একাকার হয়ে যেত।’ তিনি বলেন, ‘এ ছাড়া উপজেলা সদরে যেতে আমাদের দুই গ্রামের বাসিন্দাদের একমাত্র সড়কপথ এটা। ধসে গিয়ে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হওয়ায় এর ওপর দিয়ে কোনো যানবাহন চলাচল করতে পারত না। স্থানীয় তরুণ-যুবকেরা নিজেদের অর্থায়নে ও স্বেচ্ছাশ্রমে সড়কের এই অংশ মেরামত করায় এখন সাময়িক দুর্ভোগ লাঘব হবে। এটা অবশ্যই তাঁদের প্রশংসনীয় উদ্যোগ।’

এ বিষয়ে এলজিইডির বাবুগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলী কাজী এমামুল হকের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সড়কের কাজে অনিয়ম, অস্বীকার করায় এলজিইডি কর্মচারীকে মারধর
  • নিজস্ব অর্থ-শ্রমে সড়ক সংস্কার তরুণদের, দুই গ্রামের মানুষের দুর্ভোগ লাঘব
  • টানা বর্ষণে বেহাল বরিশাল-কুয়াকাটা মহাসড়ক, খানাখন্দে ভোগান্তি
  • বেহাল সড়ক