টেকসই উন্নয়ন মানে শুধু মুনাফা নয়। সামাজিক দায়িত্ব, পরিবেশের প্রতি সম্মান এবং কর্মীদের নিরাপত্তাও গুরুত্বপূর্ণ। ভবিষ্যতের প্রস্তুতির জন্য সাহসিকতার সঙ্গে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। দলগত কাজ ও সম্মিলিত লক্ষ্য অর্জনের ওপর জোর দিতে হবে।

‘ফিউচার অব সাসটেইনেবিলিটি অ্যান্ড ইনোভেশন’ শীর্ষক সেমিনারে বক্তারা এ কথা বলেন। ‘ইন্ডাস্ট্রি-একাডেমিক উইকে’র অংশ হিসেবে বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটির ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের উদ্যোগে গতকাল শনিবার এই সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাসের অডিটরিয়ামে আয়োজিত সেমিনারটি সঞ্চালনা করেন পরিবেশবিষয়ক তরুণ লেখক ও গবেষক ফারাজ ইসলাম।

আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ইউনিলিভার বাংলাদেশের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাভেদ আখতার, আইএফসির দক্ষিণ এশিয়ার ইএসজি প্রজেক্ট লিড লোপা রহমান এবং উর্মি গ্রুপের পরিচালক শামরুখ ফখরুদ্দিন।

মূল বক্তব্যে জাভেদ আখতার বলেন, ‘সাসটেইনেবিলিটি এখন আর শুধু একটি বিভাগ বা প্রকল্পের বিষয় নয়, এটি প্রতিটি ব্যবসায়িক কার্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। আমাদের ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত থাকতে হলে সাহসিকতার সঙ্গে সিদ্ধান্ত নিতে হবে, নিজের জীবন ও কর্মের দায় নিতে হবে।’ তিনি ভবিষ্যতের ব্যবস্থাপকদের জন্য ব্যক্তিগত স্থিতিশীলতা ও আজীবন শেখার গুরুত্ব তুলে ধরেন।

লোপা রহমান বলেন, ‘টেকসই উন্নয়ন মানেই শুধু মুনাফা নয়। সামাজিক দায়িত্ব, পরিবেশের প্রতি সম্মান এবং কর্মীদের নিরাপত্তা—এই বিষয়গুলোও সমান গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশের তরুণেরা প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনে দুর্দান্ত। তাই সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি ও স্বচ্ছতা বজায় রেখে আমরা এগিয়ে যেতে পারি।’

স্বাচ্ছন্দ্যের গণ্ডি থেকে বের হয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার সাহস থাকতে হবে বলে উল্লেখ করেন শামরুখ ফখরুদ্দিন। তিনি বলেন, ‘আমি যখন ইউনিলিভার ছেড়েছিলাম, অনেকে ভুল বলেছিল। কিন্তু আজ মনে করি, সেটাই আমাকে নতুন অভিজ্ঞতা ও দক্ষতায় সমৃদ্ধ করেছে।’ তিনি দলগত কাজ ও সম্মিলিত লক্ষ্য অর্জনের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

ফারাজ ইসলাম বলেন, ‘বিশ্বব্যাপী সাসটেইনেবিলিটির জন্য প্রতিবছর চার ট্রিলিয়নের বেশি ডলার প্রয়োজন, অথচ আমরা তার এক-চতুর্থাংশের প্রতিশ্রুতি দিতে পারিনি। কিন্তু আমরা এই সংকটকে অর্থ দিয়ে নয়, উদ্ভাবনের মাধ্যমে জয় করতে পারি।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সদস্য ও ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের উপদেষ্টা শাহনীলা আজহার বলেন, সাসটেইনেবিলিটি ও ইনোভেশন আজকের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুগুলোর একটি। বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি শিক্ষার্থীদের শুধু কর্মজীবনের জন্য নয়, সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন আনার সক্ষমতা অর্জনের জন্য প্রস্তুত করতে চায়।

শুভেচ্ছা বক্তব্যে ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের প্রধান মো.

মুজাক্কীরুল হুদা বলেন, ‘সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট হচ্ছে এমন একটি ভারসাম্যপূর্ণ পথ, যেখানে অর্থনীতি, পরিবেশ ও সমাজ একে অপরের পরিপূরক।

অনুষ্ঠানের শেষে বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটির উপাচার্য মো. জাহাঙ্গীর আলম ‘সেন্টার ফর সাসটেইনেবিলিটি অ্যান্ড ইনোভেশন’-এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ঘোষণা করেন। পরিবেশবান্ধব, অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং উদ্ভাবনকে একত্রে এগিয়ে নেওয়ার লক্ষ্যে শিক্ষার্থীদের উদ্যোগে এই কেন্দ্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব যবস য় পর ব শ র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

মুসলমান বলেই রোহিঙ্গারা ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার

রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের দুরবস্থা বর্তমান সময়ে অন্যতম করুণ মানবিক সংকট বলে উল্লেখ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, শুধু মুসলমান হওয়ার কারণেই রোহিঙ্গারা এই ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার।

গতকাল সোমবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় তুরস্কের একটি সংসদীয় প্রতিনিধিদলের সঙ্গে সাক্ষাতের সময় এ কথা বলেন প্রধান উপদেষ্টা। পাঁচ সদস্যের ওই প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিয়েছেন তুরস্ক-বাংলাদেশ সংসদীয় মৈত্রী গ্রুপের সভাপতি ও তুর্কি পার্লামেন্ট সদস্য মেহমেত আকিফ ইয়িলমাজ।

সাক্ষাতে দুই পক্ষ বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও মানবিক সহায়তার ক্ষেত্রগুলোতে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা আরও জোরদার করার উপায় নিয়ে আলোচনা করে। এ সময় মেহমেত আকিফ ইয়িলমাজ বলেন, তুরস্ক ও বাংলাদেশের মধ্যে গভীর সাংস্কৃতিক ও ঐতিহাসিক সম্পর্ক রয়েছে। দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান দৃঢ় বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের ওপর আলোকপাত করেন তিনি।

ইয়িলমাজ বলেন, তাঁদের প্রতিনিধিদল রোববার কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন করেছে এবং তুর্কি বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা, বিশেষ করে তুর্কি ফিল্ড হাসপাতালের মানবিক কার্যক্রম সম্পর্কে অবহিত হয়েছে। এ সময় রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের প্রতি তুরস্কের অবিচল সমর্থনের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন প্রধান উপদেষ্টা। তুর্কি উদ্যোক্তাদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানান তিনি।

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের দুরবস্থা আমাদের সময়ের অন্যতম করুণ মানবিক সংকট। তারা শুধু মুসলমান বলেই এই ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার এবং তাদের নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়া হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আট বছর ধরে আশ্রয়শিবিরে থাকায় রোহিঙ্গা শিশুদের শিক্ষা ও ভবিষ্যৎ সুযোগ একেবারেই সীমিত হয়ে পড়েছে। এই অবস্থা হতাশা ও অস্থিতিশীলতার জন্ম দিতে পারে।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ