Prothomalo:
2025-11-03@06:14:13 GMT

একটি মাল্টার দাম এখন ১০০ টাকা

Published: 4th, August 2025 GMT

ফলের দোকানে থরে থরে সাজানো মাল্টা। মাঝারি আকারের একটি মাল্টা ওজন মেশিনে রাখার পর দেখা গেল ওজন ২৩০ গ্রাম। বিক্রেতা ৪৪০ টাকা কেজি দরে ওজন মেশিনে তথ্য দিলেন। মুহূর্তেই ওজন মেশিনের ছোট পর্দায় ভেসে উঠল ১০০ টাকা। বড়টি সরিয়ে আরেকটু ছোট আকারের মাল্টার ওজন মেশিনে দিতেই দাম উঠল ৮৮ টাকা।

হ্যাঁ, ঠিকই পড়েছেন। একটি মাল্টার দাম এখন ১০০ টাকাই। সপ্তাহ দুয়েক আগেও এই একটি মাল্টার দাম পড়ত ৫৮ টাকা। কারণ, তখন প্রতি কেজির দাম ছিল ২৮০ টাকা। সপ্তাহের ব্যবধানে বেড়েছে দাম।

মাল্টার দাম কেন এভাবে বেড়ে গেল, তা জানতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের তথ্যভান্ডার বিশ্লেষণ করেছে প্রথম আলো। তাতে দেখা যায়, গত অর্থবছরে প্রতি মাসে গড়ে মাল্টা আমদানি হয়েছে ১ কোটি ৪০ লাখ কেজি করে। তবে জুলাই মাসে মাল্টা আমদানি হয় ২৭ লাখ ৫৭ হাজার কেজি। অর্থাৎ স্বাভাবিক গড় চাহিদার মাত্র ২০ শতাংশ আমদানি হয়েছে। অন্যদিকে আমদানিকারক, পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে ভাষ্য পাওয়া গেছে। তারা বলছেন, ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া ও জ্বরের প্রকোপ বাড়ায় মাল্টার চাহিদা অনেক বেড়েছে। চাহিদা যখন খুবই বাড়তি, সে সময় মাল্টা আমদানি হয়েছে কম। তাতে বাজারে দাম বেড়ে গেছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে জনস্বাস্থ্য অধিকার রক্ষা কমিটির চট্টগ্রামের সদস্যসচিব ও চিকিৎসক সুশান্ত বড়ুয়া প্রথম আলোকে বলেন, সাধারণত চিকিৎসকেরা এ ধরনের রোগীদের পুষ্টিকর ও ভিটামিনসমৃদ্ধ খাবার গ্রহণের পরামর্শ দেন। বিশেষ করে লেবুজাতীয় ফল খাওয়ার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়। তবে আমাদের এখানে যেকোনো রোগের প্রকোপ হলে রোগীর পথ্য হিসেবে মাল্টা-কমলাজাতীয় ফল খাওয়ার ঝোঁক বেড়ে যায়।

যেভাবে বাড়ছে দাম

ঢাকার বাদামতলী ফল মার্কেটের ‘ফলবাজার’ নামে পাইকারি ফল বিক্রির প্রতিষ্ঠান নিয়মিত ফেসবুক পেজে ফলের পাইকারি দরদামের হালনাগাদ তথ্য প্রকাশ করে। সেখানে ২৪ জুলাই এক পোস্টে মাল্টার পাইকারি মূল্য দেওয়া হয় ৩ হাজার ৯০০ থেকে ৪ হাজার ৩৫০ টাকা (সাড়ে ১৫ থেকে ১৬ কেজির কার্টন)। প্রতি কেজির দাম পড়ে ২৫১ থেকে ২৮০ টাকা। গত কয়েক মাসে এই কাছাকাছির দরই দেখাচ্ছিল তাদের পোস্টে। ১০ দিনের ব্যবধানে রোববার আরেক হালনাগাদ পোস্টে দেখানো হয়, প্রতি কার্টন মাল্টার দাম ৬ হাজার টাকা ছাড়িয়ে গেছে। অবশ্য আমদানিকারকেরা বলছেন, রোববার চট্টগ্রামের বাজারে ১৫ কেজির প্রতি কার্টন মাল্টা সাড়ে ৫ হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে।

ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া ও জ্বরের প্রকোপ বাড়ায় মাল্টার চাহিদা অনেক বেড়েছে। চাহিদা যখন খুবই বাড়তি, সে সময় মাল্টা আমদানি হয়েছে কম। তাতে বাজারে দাম বেড়ে গেছে।

খুচরা বাজার ঘুরে আসা যাক। ১০ দিন আগে চট্টগ্রামের ফলের দোকানগুলোতে ১ কেজি মাল্টা বিক্রি হচ্ছিল ২৮০ থেকে ৩০০ টাকায়। এক সপ্তাহের মধ্যে তা ৪০০ টাকা ছাড়িয়ে যায়। গতকাল রোববার চট্টগ্রামের হালিশহরে প্রতি কেজি মাল্টা বিক্রি হচ্ছিল ৪৪০ টাকায়। আবার চট্টগ্রামের সুপারশপে এই মাল্টা প্রতি কেজি ৪৮৫ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে।

আরও পড়ুনএক বছরে ১০ হাজার কোটি টাকার আপেল-মাল্টা খেল বাংলাদেশের মানুষ১৫ জুলাই ২০২৫মাল্টায় আমদানি খরচ কত

বিদেশি ফলের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আমদানি হয় মাল্টা। গত বছর এই ফল আমদানি হয়েছে ১৬ কোটি ৮৩ লাখ কেজি। বাংলাদেশে মাল্টা আমদানি হয় সাত দেশ থেকে। তবে বড় অংশই আসে মিসর, দক্ষিণ আফ্রিকা ও ভারত থেকে। গত বছর এই তিন দেশ থেকে মোট আমদানির ৮২ শতাংশ এসেছে। এ ছাড়া চীন, ভুটান, অস্ট্রেলিয়া ও থাইল্যান্ড থেকেও আমদানি হয়।

দক্ষিণ আফ্রিকার নতুন মৌসুমের মাল্টা বাজারজাত হওয়ার আগেই ঘাটতি শুরু হয়। তবে ১০-১৫ দিনের মধ্যে বিপুল পরিমাণ মাল্টা চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছাবে। ফলে সংকট আর থাকবে না। দামও কমে যাবে।—মোহাম্মদ কামাল, জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি, ফল আমদানিকারক সমিতি

এই মাল্টা আমদানিতে কত খরচ, তা দেখা যাক। গত মাসে গড়ে প্রতি কেজি মাল্টা আমদানি হয়েছে ৭০ সেন্ট বা ৮৬ টাকায়। দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে আমদানি হওয়া মাল্টায় কেজিপ্রতি শুল্ক–কর দিতে হয় প্রায় ১০৬ টাকা। শুল্ক–কর, দামসহ পড়ছে ১৯২ টাকা। এই হিসাব নথিপত্রের। এর বাইরে পরিবহন ও সংরক্ষণ খরচ আছে। পণ্য খালাসের এজেন্টের বিল আছে। সব মিলিয়ে প্রতি কেজিতে খরচ ২০০ টাকা হওয়ার কথা। এর মানে হলো, আমদানি খরচের দ্বিগুণের বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে মাল্টা।

তবে নথিপত্রের এই খরচের সঙ্গে বাস্তবের মিল নেই বলে জানিয়ে একজন আমদানিকারক প্রথম আলোকে বলেন, দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে আমদানি হওয়া প্রতি কেজি মাল্টায় সর্বোচ্চ ২৫১ টাকা খরচ পড়ে। আমদানিকারকের খরচ হিসাব ধরে শুরুতে ফেরা যাক। প্রতি ২৩০ গ্রাম ওজনের একটি মাল্টার খরচ পড়ে ৫৮ টাকা। খুচরায় যা আপনাকে ১০০ টাকায় কিনতে হচ্ছে।

আরও পড়ুন৩৮ বিদেশি ফল আমদানির খরচ ১৬ হাজার কোটি টাকা, বেশি আসে মাল্টা২৯ জুলাই ২০২৪ব্যবসায়ীরা যা বলছেন

গত অর্থবছর ৩৭৬টি প্রতিষ্ঠান মাল্টা আমদানি করেছে। জুলাই মাসে ৩০ জন ব্যবসায়ী মাল্টা আমদানি করেন। ব্যবসায়ীরা বলছেন, বাংলাদেশে মাল্টার বড় উৎস মিসর ও দক্ষিণ আফ্রিকা। মিসরে মাল্টার মৌসুম শেষ হয় মে মাসে। দক্ষিণ আফ্রিকার মৌসুম শুরু হয় জুলাই মাসে। প্রতিবছর মিসরের মৌসুম শেষ হওয়ার আগে বিপুল পরিমাণ মাল্টা আমদানি করেন ব্যবসায়ীরা। দক্ষিণ আফ্রিকার মাল্টা আমদানি শুরুর আগে যাতে এক মাস চাহিদা মেটানো যায়, সে জন্যই এ সময় আমদানি বাড়ে। তবে গত বছর মাল্টা আমদানি করে লোকসান গুনেছেন অনেক আমদানিকারক। দেশি ফল আমের মৌসুমে বিদেশি ফলের বিক্রি কমায় দামও পড়ে যায়।

ব্যবসায়ীরা জানান, গতবারের লোকসানের কারণে এবার অনেকেই বাড়তি আমদানি করেননি। আবার গত বাজেটে মাল্টার শুল্ক আরও বাড়বে কি না, এমন শঙ্কাও ছিল। তাতে এবার মে মাসে মিসরের মৌসুম শেষে আমদানি হয়েছে কম। সাধারণত মিসর-দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে আমদানিতে এক মাস সময় লাগে। এই এক মাস পর অর্থাৎ জুলাই মাসে এবার স্বাভাবিক আমদানির মাত্র ২০ শতাংশ মাল্টা এসেছে। এই ঘাটতির কারণে বাজারে দাম বেড়ে গেছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ফল আমদানিকারক সমিতির জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি মোহাম্মদ কামাল প্রথম আলোকে বলেন, দক্ষিণ আফ্রিকার নতুন মৌসুমের মাল্টা বাজারজাত হওয়ার আগেই ঘাটতি শুরু হয়। তবে ১০-১৫ দিনের মধ্যে বিপুল পরিমাণ মাল্টা চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছাবে। ফলে সংকট আর থাকবে না। দামও কমে যাবে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব যবস য় র ওজন ম শ ন প রথম আল ফল আমদ ন ১০০ ট ক বলছ ন হওয় র

এছাড়াও পড়ুন:

রাজশাহীতে বইমেলায় বিক্রি কম, এখনো আশায় আছেন প্রকাশকেরা

রাজশাহী বিভাগীয় বইমেলার প্রথম তিন দিনে লোকজনের ভিড় থাকলেও বেচাকেনা তেমন হয়নি। এতে অনেক প্রকাশকের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে। তবে আগামী কয়েক দিনে বেচাকেনা বাড়বে বলে আশা করছেন প্রকাশকেরা ও আয়োজক কর্তৃপক্ষ।

গত শুক্রবার রাজশাহী জেলা কালেক্টরেট মাঠে ৯ দিনব্যাপী এই বইমেলার উদ্বোধন করা হয়। সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পৃষ্ঠপোষকতায়, জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের উদ্যোগে এবং রাজশাহী বিভাগীয় প্রশাসনের ব্যবস্থাপনায় আয়োজিত এ মেলা চলবে ৮ নভেম্বর পর্যন্ত। মেলায় ঢাকা ও চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তের ৭০টি বেসরকারি প্রকাশনাসহ মোট ৮১টি প্রতিষ্ঠান অংশ নিয়েছে। সাপ্তাহিক ছুটির দিন বাদে মেলা চলছে বেলা ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত। আর ছুটির দিনে মেলা শুরু হয় বেলা ১১টায়।

উদ্বোধনের আগের দিন বৃষ্টিতে মেলার মাঠ কাদাপানিতে একাকার হয়ে যায়। সেই কর্দমাক্ত পরিবেশেই মেলার উদ্বোধন হয়। দর্শনার্থীদের ভোগান্তি কমাতে পরে প্রতিটি স্টলের সামনে ইট বিছিয়ে দেওয়া হয়। এতে কিছুটা স্বস্তি ফিরলেও বিক্রির খরা কাটেনি বলে জানালেন বিক্রেতারা।

গতকাল রোববার সন্ধ্যায় মেলা প্রাঙ্গণে গিয়ে দেখা যায়, মাঠের বিভিন্ন অংশে তখনো পানি জমে আছে। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের জন্য নির্ধারিত মঞ্চের সামনের প্যান্ডেলেও কাদা। সেখানেই কাজী নজরুল ইসলামের জীবন ও সাহিত্য নিয়ে আলোচনা চলছিল, তবে দর্শক-শ্রোতার উপস্থিতি ছিল নগণ্য। স্টলের সামনে ইটের সলিংয়ের তৈরি রাস্তা দিয়ে হাঁটছেন অনেকে। অনেকে বই দেখছেন।

সূর্যোদয় প্রকাশনীর বিক্রেতা রিপন আলী বলেন, প্রথম দিন তো কাদাপানির মধ্যেই দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছে। তখনো মানুষ ছিলেন। এখন ইট বিছানোর পর আরও বেশি মানুষ আসছেন, ভিড়ও করছেন, কিন্তু বই কিনছেন খুব কম।

ঐতিহ্য প্রকাশনীর স্টলে কাদার ওপর চেয়ার পেতে বসে থাকতে দেখা গেল বিক্রয়কর্মী ও চিত্রশিল্পী অর্ণব পাল সন্তুকে। তিনি বলেন, মানুষ আসছেন, ঘুরে দেখছেন, কিন্তু বিক্রি নেই বললেই চলে। মেলার ব্যবস্থাপনা আরও ভালো হতে পারত। আরেক বিক্রেতা আবদুল্লাহ হীল বাকি জানালেন, এমনও স্টল আছে, যেখানে সারা দিনে ২০০ থেকে ৩০০ টাকার বইও বিক্রি হচ্ছে না।

তবে হতাশার ভিড়ে আশার কথাও শোনালেন কেউ কেউ। চট্টগ্রাম থেকে আসা নন্দন বইঘর প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী সুব্রত কান্তি চৌধুরী বলেন, বেচাবিক্রি আজ না হোক কাল হবে। মানুষ যে মেলায় এসে বই হাতে নিয়ে দেখছেন, এটাই বড় পাওয়া। এতে তাঁদের মধ্যে বই কেনার আগ্রহ তৈরি হবে।

মেলায় আসা পাঠকদের মধ্যে অবশ্য ভিন্ন চিত্র। দুই সন্তানের জন্য শিশুতোষ বই কিনে এক অভিভাবক বলেন, বাচ্চাদের হাতে বই তুলে দেওয়ার আনন্দটাই অন্য রকম।
মেলা থেকে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম ও তারাশঙ্কর বন্দ্যোপ্যাধ্যায়ের বই কিনেছেন মনির হোসেন। তিনি বলেন, মেলায় একসঙ্গে অনেক বই পাওয়া যায়, যা বই কেনার জন্য দারুণ সুযোগ।

রাজশাহী কালেক্টরেট মাঠে বইমেলা উপলক্ষে আয়োজন করা হয়েছে আলোচনা সভা। গতকাল রোববার সন্ধ্যায়

সম্পর্কিত নিবন্ধ