বিজ্ঞানীরা প্রায় দুই হাজারের বছরের পুরোনো প্রাচীন বীজ থেকে চারা গাছ জন্মাতে সক্ষম হয়েছেন। সেই চারা গাছ থেকে রীতিমতো গাছ বিকশিত হচ্ছে। বিজ্ঞানীদের তথ্যমতে, দুই হাজার বছর আগে ব্যবসায়ীরা জেরুজালেমে জুডিয়ার ধুলোময় রাস্তা ধরে ঝুড়িতে খেজুর টেনে নিয়ে যেতেন। সেই পথের গর্তে পড়ে থাকা খেজুর বীজ থেকে নতুন করে চারা উৎপাদন করে দক্ষিণ ইসরায়েলের আরাভা মরুভূমিতে খেজুর গাছ রোপণ করা হচ্ছে।

বর্তমানে প্রাচীন বীজের অঙ্কুরোদগমের বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। উৎপাদিত গাছের জিনগত সূত্র দীর্ঘদিন ধরে হারিয়ে যাওয়া জুডিয়ান খেজুরগাছের জাতের সঙ্গে মিলে যাচ্ছে বলে বিজ্ঞানীরা মনে করছেন। জেরুজালেমের হাদাসা মেডিকেল সেন্টারের বিজ্ঞানী সারাহ স্যালন ও আরাভা ইনস্টিটিউটের এলাইন সলোয়ে ২০০৫ সালে প্রথম প্রাচীন বীজ অঙ্কুরিত করার কাজ শুরু করেন। এসব বীজের নাম দেওয়া হয় মেথুসেলাহ।

মধ্যপ্রাচ্যের মাসাদা ও কাছাকাছি মরুভূমির গুহাতে প্রত্নতাত্ত্বিক খননের সময় এই বীজ পাওয়া যায়। শুষ্ক বাতাসের কারণে হাজার বছর ধরে খেজুর বীজ সুরক্ষিত ছিল। বীজ সংগ্রহের জন্য বিজ্ঞানীরা প্রথমে বিভিন্ন গর্তকে উষ্ণ জলে ভিজিয়ে রাখেন। তারপর জীবাণুমুক্ত মাটিতে রোপণের আগে পুষ্টি ও হরমোন দ্রবণে ভিজিয়ে নেন। কিছু বীজ আট সপ্তাহের মধ্যে অঙ্কুরিত হয়। আবার কিছু বীজ আরও সময় নেয়। সব বীজের খোসাকে কার্বন পরীক্ষার মাধ্যমে বিশ্লেষণ করা হয়। বিশ্লেষণে দেখা যায়, বিভিন্ন বীজ খ্রিষ্টপূর্ব চতুর্থ শতাব্দী থেকে খ্রিষ্টপূর্ব দ্বিতীয় শতাব্দীর পুরোনো। বীজ থেকে সবুজ অঙ্কুর আসার পর বিভিন্ন চারাকে একটি পৃথক গ্রিনহাউসে স্থানান্তরিত হয়। গ্রিনহাউসে মরুভূমির সূর্যালোক ও লবণাক্ত পানির প্রাচীন প্লাবনভূমির অবস্থার তৈরি করা হয়।

শুধু রেডিও কার্বনের ফলাফল নিয়ে বিতর্ক হতে পারে। এ জন্য বিজ্ঞানীরা ১০০টি আধুনিক খেজুর জাতের বীজের আকার ও আকৃতির সঙ্গে তুলনা করেছেন। মেথুসেলাহ বীজ থেকে প্রথম পাতা বের হলে মানুষের যত্নে অঙ্কুরিত হওয়া প্রাচীনতম বীজের খেতাব পায়। পাতা বড় হলে গবেষকেরা সম্পূর্ণ জিনোম তৈরি করতে ডিএনএ সিকোয়েন্স ব্যবহার করেন। বিজ্ঞানীরা এত পুরোনো বীজ থেকে আধুনিক সময়ে ফসলের খরা সহনশীলতা, রোগ প্রতিরোধক্ষমতার মতো বিষয়কে কাজের লাগানোর তথ্য জানতে কাজ করছেন। গবেষণার ফলাফল প্রসিডিংস অব দ্য ন্যাশনাল একাডেমি অব সায়েন্সেসে প্রকাশিত হয়েছে।

প্রসঙ্গত, জুডিয়ান খেজুরই একমাত্র প্রাচীন বীজ নয়, যা চাষ করা হয়েছে। ২০১২ সালে রাশিয়ান বিজ্ঞানীরা ৩২ হাজার বছর ধরে মাটিতে জমাট বাঁধা ফল থেকে একটি ফুল জন্মানোর পরীক্ষায় সাফল্য লাভ করেন। ১৯৯০ দশকে আমেরিকান উদ্ভিদবিজ্ঞানী জেন শেন মিলার একটি শুকনা চীনা হ্রদের তলদেশে প্রায় ১ হাজার ৩০০ বছরের পুরোনো পদ্মের বীজ অঙ্কুরিত করেছিলেন।

সূত্র: আর্থ ডটকম

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: হ জ র বছর

এছাড়াও পড়ুন:

‘শরিয়াহ ও সরকারি নীতিবিরোধী’: নারী ও ইরানি লেখকদের ১৪০টিসহ ৬৭৯ বই নিষিদ্ধ করল তালেবান

আফগানিস্তানের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পাঠ্যসূচি থেকে নারীদের লেখা বই নিষিদ্ধ করেছে তালেবান সরকার। মানবাধিকার ও যৌন হয়রানি–সম্পর্কিত বিষয়ে পাঠদানের ওপর একটি নতুন নিষেধাজ্ঞার অংশ হিসেবে এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

শরিয়াহবিরোধী ও সরকারি নীতির পরিপন্থী বলে মনে হওয়ায় ৬৭৯টি বইকে ‘উদ্বেগজনক’ বলে চিহ্নিত করেছে তালেবান। নিষিদ্ধ এসব বইয়ের মধ্যে ১৪০টি নারীদের লেখা ও ৩১০টি ইরানি লেখকদের লেখা বা ইরানে প্রকাশিত।

নিষিদ্ধ বইয়ের ৫০ পৃষ্ঠার একটি তালিকা আফগানিস্তানের সব বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠানো হয়েছে।

আফগান সরকারের পক্ষ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে বলা হয়েছে, তারা এখন থেকে ১৮টি বিষয়ে পাঠদান করতে পারবে না। তালেবানের এক কর্মকর্তা বলেন, এসব বিষয় মূলত ইসলামি শরিয়তের মূলনীতি ও সরকারের নীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক।

চার বছর আগে ক্ষমতায় আসার পর থেকে এ ধরনের নানা নিয়মকানুন জারি করেছে তালেবান সরকার। চলতি সপ্তাহেই তালেবানের সর্বোচ্চ নেতার নির্দেশে অন্তত ১০ প্রদেশে ‘ফাইবার অপটিক ইন্টারনেট’ বন্ধ করে দেওয়া হয়। কর্মকর্তারা বলেছেন, অনৈতিক কর্মকাণ্ড প্রতিরোধে এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

আফগান সরকারের পক্ষ থেকে দেশটির বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে বলা হয়েছে, তারা এখন থেকে ১৮টি বিষয়ে পাঠদান করতে পারবে না। তালেবানের এক কর্মকর্তা বলেছেন, এসব বিষয় মূলত ইসলামি শরিয়তের মূলনীতি ও সরকারের নীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক।

অনেকের মতে, এসব নিয়মকানুন আফগানিস্তানের মানুষের দৈনন্দিন জীবনে নানাভাবে প্রভাব ফেলছে। বিশেষ করে কিশোরী ও নারীরা এসব নিয়মের কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। ষষ্ঠ শ্রেণির পর থেকে তাদের শিক্ষা গ্রহণ নিষিদ্ধ। ২০২৪ সালের শেষ দিকে ধাত্রীবিদ্যা বা মিডওয়াইফারি কোর্সও বন্ধ করে দেওয়া হয়।

এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ে যে ১৮ বিষয়ে পাঠদান নিষিদ্ধ করা হয়েছে, তার ৬টিই নারীদের নিয়ে, যেমন ‘জেন্ডার অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট’, ‘দ্য রোল অব উইমেন ইন কমিউনিকেশন’ ও ‘উইমেনস সোসিওলজি’।

আরও পড়ুনআফগানিস্তানের তালেবান সরকারকে কী কারণে স্বীকৃতি দিল রাশিয়া ১৪ জুলাই ২০২৫

তালেবান সরকার বলেছে, তারা আফগান সংস্কৃতি ও ইসলামিক আইনের ভিত্তিতে নারী অধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল।

তালেবানের এসব নিয়মকানুন দেশটির মানুষের দৈনন্দিন জীবনে নানাভাবে প্রভাব ফেলছে। বিশেষ করে কিশোরী ও নারীরা এসব নিয়মের কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।

তবে আফগানিস্তানের বই পর্যালোচনা কমিটির একজন সদস্য বিবিসিকে বলেন, নারী লেখকদের সব বই পড়ানো নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

নিষিদ্ধ বইগুলোর তালিকায় আফগানিস্তানের সাবেক সরকারের বিচার মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী জাকিয়া আদেলির বইও রয়েছে। তিনি বলেন, ‘চার বছরে তালেবান যা করেছে, তাতে পাঠ্যসূচিতে এমন পরিবর্তনে অবাক হইনি। নারীরা পড়াশোনা করতে পারছেন না। তাদের মতামত ও লেখালিখির অধিকারও দমন করা হবে, এটাই স্বাভাবিক।’

আরও পড়ুনরাশিয়ার পর আর কোন কোন দেশ তালেবানকে স্বীকৃতি দিতে পারে০৫ জুলাই ২০২৫

গত আগস্টের শেষ দিকে বই নিষিদ্ধের অধ্যাদেশে স্বাক্ষর করেন তালেবান সরকারের উচ্চশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপপরিচালক জিয়াউর রহমান আরিয়ুবি। তিনি বলেন, আলেম ও বিশেষজ্ঞদের একটি কমিটি এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

শুধু নারী লেখকই নয়, নিষিদ্ধ বইয়ের তালিকায় ইরানি লেখক ও প্রকাশকদের বইও রয়েছে। বই পর্যালোচনা কমিটির এক সদস্য বলেন, আফগান পাঠ্যসূচিতে ইরানি বিষয়বস্তুর প্রবেশ ঠেকাতে এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

আরও পড়ুনতালেবান শাসনের তিন বছর, কেমন আছে আফগানিস্তান১৫ আগস্ট ২০২৪

সম্পর্কিত নিবন্ধ