১৯৩০-এর দশকে ইউরোপে যেভাবে ফ্যাসিবাদের উত্থান ঘটেছিল, সেভাবে আজ ডানপন্থী জনতুষ্টিবাদও ভাইরাসের মতো দেশে দেশে ছড়িয়ে পড়ছে। এই লোকরঞ্জনবাদী রাজনীতির প্রতিটি ধরন একেক দেশের সংস্কৃতি ও ইতিহাস অনুযায়ী একেক চেহারা নিয়ে হাজির হচ্ছে।

এর ধারাবাহিকতায় জাপানেও এখন তাদের নিজস্ব ঘরানার ডানপন্থী জনতুষ্টিবাদের বাড়বাড়ন্ত দেখা যাচ্ছে। সানসেইতো নামে একটি রাজনৈতিক দলের মাধ্যমে এর প্রকাশ লক্ষ করা যাচ্ছে। সম্প্রতি জাপানের পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষে নির্বাচনের আগে দলটি ট্রাম্পের ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ বা ‘আমেরিকার স্বার্থ আগে’ স্লোগানটির মতো ‘জাপানিজ ফার্স্ট’ বা ‘জাপানি স্বার্থ আগে’ বলে একটি স্লোগানে প্রচার চালায়।

সানসেইতো প্রতিষ্ঠিত হয় ২০২০ সালে। এর প্রতিষ্ঠাতা কামিয়া সোহেই নামের এক তরুণ রাজনীতিক। তিনি একবার বলেছিলেন, তিনি ‘জাপানকে ইহুদি পুঁজির কাছে বিক্রি’ করবেন না। তিনি লিঙ্গসমতার ধারণাকে কমিউনিজমের রূপ হিসেবে বর্ণনা করেন। একেবারে নবীন ও কট্টর রক্ষণশীল ডানপন্থী দল হওয়া সত্ত্বেও দলটি ২৪৮ আসনের উচ্চকক্ষে ১৪টি আসন পায়। ফলে জাপানের পার্লামেন্টে এখন তাদের মোট আসনের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৫টিতে। এ সংখ্যা খুব বড় না হলেও এটি জাপানের মূলধারার রক্ষণশীল রাজনীতিকদের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি করেছে। কারণ, তাঁরা আশঙ্কা করছেন, আরও ভোট ডানপন্থী চরমপন্থার দিকে চলে যেতে পারে।

সানসেইতো প্রতিষ্ঠিত হয় ২০২০ সালে। এর প্রতিষ্ঠাতা কামিয়া সোহেই নামের এক তরুণ রাজনীতিক। তিনি একবার বলেছিলেন, তিনি ‘জাপানকে ইহুদি পুঁজির কাছে বিক্রি’ করবেন না। তিনি লিঙ্গ সমতার ধারণাকে কমিউনিজমের রূপ হিসেবে বর্ণনা করেন। এই দলের আরেক সদস্য মাতসুদা মনাবু কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনকে ‘হত্যার অস্ত্র’ বলে আখ্যা দিয়েছেন।

এই নির্বাচনে সানসেইতোকে অন্যতম বিজয়ী দল বলা যেতে পারে। একেবারে নবীন ও কট্টর রক্ষণশীল ডানপন্থী দল হওয়া সত্ত্বেও তারা ২৪৮ আসনের উচ্চকক্ষে ১৪টি আসন পায়। ফলে জাপানের পার্লামেন্টে এখন তাদের মোট আসনের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৫টিতে। এ সংখ্যাটি খুব বড় না হলেও এটি জাপানের মূলধারার রক্ষণশীল রাজনীতিকদের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি করেছে। কারণ তাঁরা আশঙ্কা করছেন, আরও ভোট ডানপন্থী চরমপন্থার দিকে চলে যেতে পারে।

উল্লেখ করার মতো বিষয় হলো, শাসক দল লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি এই নির্বাচনে উচ্চকক্ষে তার সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারিয়েছে।

সানসেইতো যদিও ভ্যাকসিন, অভিবাসী, বৈচিত্র্য, লিঙ্গ ও জাতীয়তাবাদের মতো সাধারণ কিছু বিষয় নিয়ে কথা বলে, তবে জাপানের এই জনতুষ্টিবাদীরা অন্যান্য দেশের চরম ডানপন্থীদের থেকে কিছুটা আলাদা। এমনকি জাপানের পুরোনো চরম ডানপন্থীদের থেকেও তারা আলাদা।

জাপানের বিভিন্ন শহরে বহু বছর ধরে আমরা চরমপন্থী গোষ্ঠীগুলোর এমনসব সাউন্ড সিস্টেম বহনকারী ট্রাক দেখেছি, যেগুলোতে চড়ে সামরিক পোশাক পরা জাতীয়তাবাদী যুবকেরা ঘোরেন। সেসব ট্রাক থেকে দেশাত্মবোধক রণসংগীত বাজানো হয়।

মূলত জাপানের সাম্রাজ্যবাদী অতীতকে গৌরবময় সময় হিসেবে দেখানোর জন্য ট্রাকগুলো পথে পথে নামানো হয়। তাঁরা জাপানিদের সেই সাম্রাজ্যবাদী শক্তি ফিরিয়ে আনতে চান। তাঁরা বিশ্বাস করেন, জাপান দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে কোনো অন্যায় করেনি; বরং তারা ‘বীরের মতো’ যুদ্ধ করেছিল। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র, জাপানের বামপন্থীরা এবং কমিউনিস্ট চীন মিলে জাপানকে ‘দোষী’ বানিয়েছে। ফলে আজকের জাপানিরা তাঁদের অতীত নিয়ে গর্ব করার বদলে লজ্জা পাচ্ছেন। এই চরমপন্থীরা এ অবস্থা পরিবর্তন করতে চান।

এই প্রান্তবর্তী কিন্তু প্রচণ্ড উচ্চকিত গোষ্ঠীগুলোর অনেক দৃষ্টিভঙ্গি ক্রমশ মূলধারার রক্ষণশীল রাজনীতিতেও ঢুকে পড়েছে। এদের মূল আপত্তি ছিল যুদ্ধ-পরবর্তী শান্তিপূর্ণ সংবিধান নিয়ে। এদের বক্তব্য হলো, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর জাপানের ‘শান্তিপূর্ণ’ সংবিধান আমেরিকানরা লিখে দিয়েছিলেন। আমেরিকানদের লিখে দেওয়া সেই সংবিধানের মাধ্যমে বিদেশে জাপানের সামরিক হস্তক্ষেপ নিষিদ্ধ করা হয়।

জাপানের অনেক পর্যটক ও নতুন বাসিন্দাই চীনা। এটি একটি বড় পরিবর্তন। বিংশ শতকের শুরু থেকে জাপানের ডানপন্থী জাতীয়তাবাদ মূলত ছিল পশ্চিমবিরোধী। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগে তারা আমেরিকানদের দোষারোপ করত। কারণ, তারা জাপানি সংস্কৃতিকে বাণিজ্যিকভাবে দূষিত করছে এবং এশিয়ায় জাপানের প্রাধান্যের পথে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। যুদ্ধের পর তাদের বিরাগভাজন ছিল সেই ‘শান্তি সংবিধান’।

সানসেইতোর প্রতিষ্ঠাতা কামিয়া নিজেও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপানের কোনো ভুল স্বীকার করেন না। তবে সানসেইতো ও ‘জাপানি ফার্স্ট’ সমর্থকদের সবচেয়ে বড় উদ্বেগ হলো—জাপানে বিদেশিদের বাড়তি উপস্থিতি। অভিবাসী, শ্রমিক, এমনকি পর্যটক—সবাই এই ‘বিদেশি’র অন্তর্ভুক্ত।

অন্য অনেক দেশের তুলনায় জাপানে বরাবরই বিদেশিদের সংখ্যা ছিল খুব কম। যেসব বিদেশি ছিলেন, তাঁদের অধিকাংশই জাতিগত কোরিয়ান। তাঁরা শুধুই জাপানি ভাষায় কথা বলতেন। আশ্রয়প্রার্থীদের প্রায় সব সময়ই ফিরিয়ে দেওয়া হতো। আশির দশকে যাঁরা এসেছিলেন (যেমন ইরান-ইরাক যুদ্ধের সময় পালিয়ে আসা ইরানিরা), তাঁরা পরে আবার নিজেদের দেশে চলে যান।

কিন্তু পরিস্থিতি বদলাচ্ছে। এখন জাপানে ৩৮ লাখ বিদেশি বাসিন্দা রয়েছেন এবং ২০২৫ সালের প্রথমার্ধে ২ কোটির বেশি পর্যটক সস্তা ইয়েনের সুবিধা নিয়ে জাপান ভ্রমণ করেছেন। এই সংখ্যাকে বিপুল বলা যাবে না। কারণ, বিদেশিরা জাপানের জনসংখ্যার মাত্র ৩ শতাংশ, যেখানে ফ্রান্সে আছে ১০ শতাংশ। ২০২৪ সালে ইতালিতে ৬ দশমিক ৫ কোটি আন্তর্জাতিক পর্যটক এসেছিলেন।

জাপান সরকার রাজস্ব বৃদ্ধির জন্য ও দ্রুত বুড়ো হয়ে যাওয়া সমাজে শ্রমিক ঘাটতি পূরণের লক্ষ্যে পর্যটন ও অভিবাসন উৎসাহিত করছে। কিন্তু এর ফলে অনেকে অসন্তুষ্ট হয়েছেন। আর সেই ক্ষোভ কাজে লাগিয়েই সানসেইতো জনপ্রিয়তা পেয়েছে। তারা মূল্যস্ফীতি, খরচ বেড়ে যাওয়া, মজুরি স্থবির হয়ে থাকা, এমনকি চালের সংকটের জন্যও বিদেশিদের দোষারোপ করছে।

জাপানের অনেক পর্যটক ও নতুন বাসিন্দাই চীনা। এটি একটি বড় পরিবর্তন। বিংশ শতকের শুরু থেকে জাপানের ডানপন্থী জাতীয়তাবাদ মূলত ছিল পশ্চিমবিরোধী। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগে তারা আমেরিকানদের দোষারোপ করত। কারণ, তারা জাপানি সংস্কৃতিকে বাণিজ্যিকভাবে দূষিত করছে এবং এশিয়ায় জাপানের প্রাধান্যের পথে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। যুদ্ধের পর তাদের বিরাগভাজন ছিল সেই ‘শান্তি সংবিধান’।

এখন অবশ্য চীনের শক্তি বৃদ্ধিকে জাপানের মানুষ ভয় পাচ্ছে। ইউরোপীয়রা ১৯৫০-এর দশকে ‘কুৎসিত আমেরিকান’ পর্যটকদের যে চোখে দেখতেন, এখন অনেক জাপানি ধনী চীনা পর্যটকদের ঠিক সেই চোখে দেখেন। ধনী চীনাদের উদ্ধত আচরণ, স্থানীয় নিয়ম মানতে অনীহা এবং নতুন নতুন বড়লোক হয়ে বড়াই করা দেখে জাপানিদের একটি বড় অংশ বিরক্ত।

জাপানের স্থানীয় মানুষ যখন নিজেরা অর্থনৈতিক কষ্টে থাকেন, তখন তাঁদের আরও বেশি খারাপ লাগে। আগে এশীয় শ্রমিক ও শিক্ষার্থীরা, বিশেষ করে চীনারা, তুলনামূলকভাবে দরিদ্র ছিলেন। এখন ধনী চীনারা জাপানকে নিরাপদ ও আরামদায়ক ভেবে এখানে বসতি গড়ছেন। তাঁরা টোকিওর অভিজাত সম্পত্তিগুলো কিনে নিচ্ছেন।

এসবেও তেমন সমস্যা হতো না, যদি চীনকে শান্তিপ্রিয় ও নিরীহ শক্তি হিসেবে দেখা হতো। কিন্তু বাস্তবতা হলো, জাপানিদের আশঙ্কা, চীন তার সামরিক ক্ষমতা বাড়াতে চায় এবং প্রাচীন সাম্রাজ্যবাদী চেহারা ফেরাতে চায়।

আজকের পরিস্থিতিতে একটি বড় রকমের পরিহাস বা ‘বিপরীতমুখী ফলাফল’ তৈরি হয়েছে। কারণ, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর যুক্তরাষ্ট্রই জাপানকে ‘শান্তি সংবিধান’ দিয়েছিল এবং সামরিক শক্তি সীমিত রেখেছিল, যাতে চীনের মতো কমিউনিস্ট শক্তির হুমকি থেকে জাপানকে রক্ষা করা যায়।

কিন্তু আজ ট্রাম্প (যিনি ‘জাপানি ফার্স্ট’দের কাছে একধরনের নায়ক) এমন এক আমেরিকা সৃষ্টি করেছেন, যার ওপর আর জাপানের নিরাপত্তা নির্ভর করতে পারে না।

স্বত্ব: প্রজেক্ট সিন্ডিকেট অনুবাদ: সারফুদ্দিন আহমেদ

ইয়ান বুরুমা বিখ্যাত ডাচ লেখক, ইতিহাসবিদ ও রাজনৈতিক ভাষ্যকার।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: জনত ষ ট ব দ য দ ধ র পর চরমপন থ আম র ক ন র জন ত ক ড নপন থ পর যটক আসন র

এছাড়াও পড়ুন:

নাইজেরিয়ায় কেন হামলা চালানোর হুমকি দিলেন ট্রাম্প

পশ্চিম আফ্রিকার দেশ নাইজেরিয়া যদি সেখানে খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের লোকজনকে হত্যা বন্ধে ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হয়, তবে দেশটির বিরুদ্ধে সামরিক পদক্ষেপ গ্রহণের হুমকি দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।

এ প্রসঙ্গে গতকাল শনিবার ট্রাম্প বলেন, তিনি তাঁর প্রতিরক্ষা বিভাগকে দ্রুত সামরিক পদক্ষেপের প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।

আফ্রিকার সবচেয়ে জনবহুল ও প্রধান তেল উত্তোলনকারী দেশ নাইজেরিয়া। ট্রাম্প তাঁর মালিকানাধীন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে দেওয়া এক পোস্টে নাইজেরিয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সব ধরনের সহায়তাও অবিলম্বে বন্ধ করে দেওয়ার কথা বলেন।

ট্রাম্প লেখেন, যদি যুক্তরাষ্ট্র সামরিক বাহিনী পাঠায়, তবে তারা পূর্ণ সামরিক শক্তি নিয়ে অভিযান চালাবে এবং যারা এ নৃশংস ঘটনা ঘটাচ্ছে, সেই “ইসলামপন্থী” সশস্ত্র দলকে সম্পূর্ণরূপে মুছে ফেলবে।

তবে নাইজেরিয়ায় খ্রিষ্টানদের সঙ্গে কোন ধরনের নৃশংস আচরণ করা হচ্ছে, সে বিষয়ে ট্রাম্প নির্দিষ্ট কোনো প্রমাণ বা বিবরণ দেননি। নাইজেরিয়াকে তিনি ‘নিন্দিত রাষ্ট্র’ বলে বর্ণনা করেন এবং দেশটির সরকারকে হুঁশিয়ার করে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে বলেন।

নাইজেরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, তারা সহিংস চরমপন্থার বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাবে এবং আশা করছে, এ লড়াইয়ে ওয়াশিংটন তাদের ঘনিষ্ঠ মিত্র হিসেবে থাকবে।

ট্রাম্প লেখেন, ‘যদি আমরা আক্রমণ করি, তা হবে দ্রুত ও ভয়ানক; ঠিক যেমন অস্ত্রধারীরা আমাদের প্রিয় খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের লোকজনের ওপর আক্রমণ করছে।’

ট্রাম্পের সামরিক পদক্ষেপ গ্রহণের হুমকির বিষয়ে আবুজা থেকে তাৎক্ষণিক কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। সামরিক পদক্ষেপের সম্ভাব্য সময়সূচি নিয়ে হোয়াইট হাউসও কিছু জানায়নি।

যদি আমরা আক্রমণ করি, তা হবে দ্রুত, ভয়ানক; ঠিক যেমন অস্ত্রধারীরা আমাদের প্রিয় খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের ওপর আক্রমণ করছে।ডোনাল্ড ট্রাম্প, মার্কিন প্রেসিডেন্ট

ট্রাম্পের এ হুঁশিয়ারি দেওয়া বিষয়ে মন্তব্য করার জন্য বার্তা সংস্থা রয়টার্স থেকে মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগে যোগাযোগ করা হয়েছিল। তারা এ বিষয়ে হোয়াইট হাউসের সঙ্গে কথা বলতে বলেছে।

তবে রয়টার্সের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা না বললেও মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে এক পোস্টে লেখেন, ‘মার্কিন ওয়ার ডিপার্টমেন্ট (পেন্টাগন) সামরিক পদক্ষেপের প্রস্তুতি নিচ্ছে। হয় নাইজেরিয়া সরকার খ্রিষ্টানদের রক্ষা করবে, না হয় আমরা ওই সব অস্ত্রধারীকে হত্যা করব, যারা ভয়াবহ নির্যাতন চলাচ্ছে।’

ট্রাম্পের ওই পোস্টের এক দিন আগে তাঁর প্রশাসন নাইজেরিয়াকে আবারও ‘কান্ট্রিজ অব পার্টিকুলার কনসার্ন’ (বিশেষ উদ্বেগের দেশ)–এর তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছে।

যুক্তরাষ্ট্র এ তালিকায় এমন দেশগুলোকে রাখে, যেখানে ধর্ম পালনের স্বাধীনতা নেই বলে তারা মনে করে। তালিকায় অন্য দেশগুলোর মধ্যে আছে চীন, মিয়ানমার, উত্তর কোরিয়া, রাশিয়া ও পাকিস্তান।

আরও পড়ুননাইজেরিয়ায় সম্প্রদায়গত দ্বন্দ্ব নিরসনে গিয়ে ১৬ সেনা নিহত ১৭ মার্চ ২০২৪

সামরিক পদক্ষেপের হুমকি দিয়ে ট্রাম্পের ওই পোস্টের আগে গতকাল শনিবার ভোরে নাইজেরিয়ার প্রেসিডেন্ট বোলা আহমেদ তিনুবু তাঁর দেশে ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা–সংক্রান্ত অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি ধর্ম পালনের স্বাধীনতার সুরক্ষায় তাঁর দেশের প্রচেষ্টার পক্ষেও কথা বলেন।

তিনুবু বলেন, ‘নাইজেরিয়াকে ধর্মীয়ভাবে অসহিষ্ণু দেশ হিসেবে চিহ্নিত করা আমাদের জাতীয় বাস্তবতার সঙ্গে মেলে না এবং এটি সরকারের সব নাইজেরীয়র ধর্ম পালনের স্বাধীনতা রক্ষা করার ধারাবাহিক ও আন্তরিক প্রচেষ্টাকেও বিবেচনায় আনে না।’

গত বছর নাইজার থেকে প্রায় এক হাজার সেনা প্রত্যাহার করে নেওয়ায় পশ্চিম আফ্রিকায় মার্কিন সামরিক উপস্থিতি উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে।

নাইজেরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকেও এ নিয়ে আলাদা বিবৃতি দেওয়া হয়েছে। বিবৃতিতে জোর দিয়ে বলা হয়, তারা সহিংস চরমপন্থার বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাবে এবং আশা করছে, এ লড়াইয়ে ওয়াশিংটন তাদের ঘনিষ্ঠ মিত্র হিসেবে থাকবে।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘আমরা জাতি, ধর্ম–বর্ণনির্বিশেষে সব নাগরিককে রক্ষা করব। যুক্তরাষ্ট্রের মতো নাইজেরিয়াতেও (নানা ধর্মের মানুষের) বৈচিত্র্য উদ্‌যাপন করা ছাড়া আর কোনো বিকল্প নেই। কারণ, এটাই আমাদের সবচেয়ে বড় শক্তি।’

গত বছর নাইজার থেকে প্রায় এক হাজার সেনা প্রত্যাহার করে নেয় যুক্তরাষ্ট্র। ফলে পশ্চিম আফ্রিকায় মার্কিন সামরিক উপস্থিতি উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে। যদিও যুক্তরাষ্ট্র মাঝেমধ্যে প্রশিক্ষণ ও মহড়ায় অংশ নিতে আফ্রিকায় ছোট ছোট সেনা দল পাঠায়। বর্তমানে আফ্রিকা মহাদেশে সবচেয়ে বড় মার্কিন ঘাঁটি পূর্ব আফ্রিকার দেশ জিবুতিতে। সেখানে পাঁচ হাজারের বেশি মার্কিন সেনা অবস্থান করছেন। ওই অঞ্চলে সামরিক অভিযান চালাতে এ সামরিক ঘাঁটি ব্যবহার করা হয়।

আরও পড়ুননাইজেরিয়ায় বন্দুকধারীদের হামলায় নিহত ৬০৭ মে ২০২৫নাইজেরিয়াকে ‘উদ্বেগের তালিকা’য় অন্তর্ভুক্ত করা

ট্রাম্প তাঁর প্রথম মেয়াদে নাইজেরিয়াকে ‘উদ্বেগের দেশ’ হিসেবে তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছিলেন। পরে জো বাইডেন ক্ষমতায় এসে ২০২১ সালে নাইজেরিয়াকে মার্কিন পররাষ্ট্র বিভাগের এ তালিকা থেকে সরিয়ে নেন।

তবে মানবাধিকার বিশেষজ্ঞদের মতে, অধিকাংশ ক্ষেত্রে মুসলমানরাই বোকো হারামের নৃশংসতার শিকার হন।

নাইজেরিয়ায় প্রায় ২০০ জাতিগত গোষ্ঠীর মানুষ বসবাস করেন। তাঁরা ইসলাম, খ্রিষ্টান ও স্থানীয় প্রথাগত ধর্ম পালন করেন। দেশটিতে সব ধর্মের মানুষের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। তবে কখনো কখনো বিভিন্ন গোষ্ঠীর মধ্যে সহিংসতা বেড়ে যায়।

চরমপন্থী সশস্ত্র গোষ্ঠী বোকো হারাম উত্তর-পূর্ব নাইজেরিয়াতে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। গত ১৫ বছরে এ বিদ্রোহী গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে বহু মানুষকে হত্যার অভিযোগ রয়েছে।

তবে মানবাধিকার বিশেষজ্ঞদের মতে, অধিকাংশ ক্ষেত্রে মুসলমানরাই বোকো হারামের নৃশংসতার শিকার হন।

আরও পড়ুননাইজেরিয়ায় পশুপালক ও কৃষকদের সংঘর্ষে নিহত ৮৫১৮ মে ২০২৩

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • নাইজেরিয়ায় কেন হামলা চালানোর হুমকি দিলেন ট্রাম্প