গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক আবদুল কাদের বলেছেন, যে যা-ই বলুক, সত্য প্রকাশে তিনি একচুলও পিছপা হবেন না। সত্য আজ নয় কাল প্রতিষ্ঠা হবেই। সত্য প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে পিছপা হওয়া যাবে না। যে যা বলার বলুক।

গতকাল সোমবার রাতে নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে দেওয়া এক পোস্টে এ কথা বলেন আবদুল কাদের।

আগের দিন রোববার রাতে এক ফেসবুক পোস্টে আবদুল কাদের বলেছিলেন, আওয়ামী লীগের শাসনামলে হলে থাকার কারণে ছাত্রশিবিরের যাঁরা সক্রিয়ভাবে ছাত্রলীগ করতেন, তাঁরা মূলত আইডেনটিটি ক্রাইসিস (আত্মপরিচয়ের সংকট) থেকে উতরানোর জন্য কিছু ক্ষেত্রে অতি উৎসাহী কর্মকাণ্ডে জড়াতেন। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর ছাত্রশিবিরের নেতা আবু সাদিক কায়েম এমন কয়েকজনকে বাঁচাতে তদবির করেন বলে অভিযোগ করেন আবদুল কাদের।

আবদুল কাদের তোলা অভিযোগের জবাব দেন ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় নেতা আবু সাদিক কায়েম। তিনি রোববার মধ্যরাতে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে দেওয়া পোস্টে দাবি করেন, ছাত্রলীগে লুকিয়ে থাকা শিবিরকে বাঁচাতে সহায়তা করার ন্যারেটিভটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।

এখন আবদুল কাদের ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে বললেন, তাঁর যুক্তিকে খণ্ডন না করে প্রচার করা হচ্ছে যে তিনি ছাত্রলীগের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করেন। চরিত্র হননের উদ্দেশ্যে অনেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নানা কথা ছড়াচ্ছেন। তবে যে যা-ই বলুক না কেন, তিনি সত্য প্রকাশে পিছপা হবেন না।

আবদুল কাদেরের ফেসবুক পোস্টটি তুলে ধরা হলো—

আমি যখন সত্য প্রকাশ করলাম, ব্যক্তি-গোষ্ঠীর অপকর্ম, অপরাজনীতি তুলে ধরলাম; তখন আমার যুক্তিকে খণ্ডন না করে ওরা প্রচার করতে লাগলো, আমি ছাত্রলীগের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করি, আমি নাকি ছাত্রলীগ, আমি নাকি ডাকসুর জন্য এমন করি! সত্যকে মোকাবিলা করার সৎ সাহস যাদের নাই, তারাই অপ্রাসঙ্গিক বিষয় টেনে নিয়ে এসে ঘায়েল করার পায়তারায় লিপ্ত থাকে। গত ৫ বছরের জার্ণী’তে হাসিনা রেজিমও এইভাবে সত্যকে মোকাবিলা করতো না। তবে যে যা-ই বলেন, সত্য প্রকাশে এক চুলও পিছপা হবো না। সত্য আজ নয় কাল প্রতিষ্ঠা হবেই, সত্য প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে পিছপা হওয়া যাবে না। যে যা বলার বলুক।

হাসিনার আমলে হলে থাকতে পারি নাই, বাহিরে দুর্দশায় জীবন অতিবাহিত করছি, হামলা-মামলার শিকার হইছি, জেল খাটছি, জেলে যাওয়ার কারণে একাডেমিক ইয়ার লস হইছে। এতোকিছুর পরেও একটা দিনের জন্যও লড়াই থেকে পিছু হটি নাই। সকালে মাইর খাইছি, বিকেলে আবার রাজ পথে ফিরে আসছি। আর্থিক অনটনও আমার জন্য বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি। কারো কাছে একটা বারের জন্যও হাত পাতি নাই। এখন অনেকেই সোশ্যাল মিডিয়ায় চরিত্র হননের উদ্দেশ্যে নানান কথা ছড়ান। আমার আল্লাহ জানে, আমি আমার আর্থিক এবং উদ্দেশ্যের জায়গায় কতটুকু সৎ। যতদিন আমার ভেতরে সত্য থাকবে; ততদিন আমার বাহিরে ভয় নাই এবং ততোদিন-ই সত্য প্রতিষ্ঠার লড়াই চলবে.

..

আরও পড়ুনছাত্রলীগে লুকিয়ে থাকা শিবিরকে বাঁচাতে সহায়তার ন্যারেটিভটি সম্পূর্ণ মিথ্যা: সাদিক কায়েম২২ ঘণ্টা আগেআরও পড়ুনছাত্রলীগ পরিচয়ে নির্যাতনের অংশীদার হতেন ‘ছাত্রশিবিরের নেতা-কর্মীরা’, দিলেন অনেকের পরিচয়০৩ আগস্ট ২০২৫

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আবদ ল ক দ র র জন য ফ সব ক

এছাড়াও পড়ুন:

দায়বদ্ধতা থেকে সাজিদের ভিসেরা রিপোর্ট দ্রুত নেওয়ার চেষ্টা করেছি;

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) শিক্ষার্থী সাজিদ আব্দুল্লাহর মৃত্যর রহস্য উদঘাটনে ভিসেরা রিপোর্ট প্রকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন পুলিশের এআইজি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সদস্য ড. আশরাফুর রহমান। বিষয়টি ইতিবাচকভাবে দেখছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। 

জানা যায়, সাজিদ হত্যার রহস্য উদঘাটনে সবচেয়ে বেশি জরুরি ও প্রয়োজন হয়ে পড়ে সাজিদের মৃত্যুর ভিসেরা রিপোর্ট। এতে সাজিদ হত্যার ইস্যুতে নিজের দায়বদ্ধতা থেকে ভিসেরা রিপোর্ট দ্রুত নেওয়ার চেষ্টা করেছেন বলে জানান এআইজি আশরাফ।

থানা পুলিশের মাধ্যমে জানা গেছে, ভিসেরা রিপোর্ট আসতে সাধারণত এক থেকে দুই মাস সময় লাগে, কোনো কোনো ক্ষেত্রে এর চেয়ে বেশি সময়ও লেগে যায়। 

আরো পড়ুন:

‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ পাঠ অনুষ্ঠান ঘিরে যান চলাচল নিয়ন্ত্রণে ডিএমপির নির্দেশনা

দুদকের মামলায় অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ পরিদর্শক কারাগারে

ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের বিশেষজ্ঞের মতে, ভিসেরা রিপোর্ট সাধারণত ময়নাতদন্তের পর পরীক্ষাগারে পাঠানো হয় এবং ফলাফল আসতে সাধারণত ৪ থেকে ৮ সপ্তাহ বা তার বেশি সময় লাগতে পারে। এটি নির্ভর করে সংশ্লিষ্ট ফরেনসিক ল্যাবরেটরির কাজের গতি এবং মামলার গুরুত্বের উপর।

গত ১৭ জুলাই বিকেলে শাহ আজিজুর রহমান হল পুকুর থেকে সাজিদের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। তার মৃত্যুর ১৭ দিনের মাথায় ভিসেরা রিপোর্ট প্রকাশের মাধ্যমে সাজিদের হত্যার কারণ উদঘাটন করা সম্ভব হয়েছে। এক্ষেত্রে ডিআইজি আশরাফের ভূমিকা নিয়ে ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থীরা সন্তোষ প্রকাশ করছেন।

গত রবিবার (৩ আগস্ট) সাজিদের মৃত্যুর প্রকাশিত ভিসেরা রিপোর্ট থেকে জানা যায়, সাজিদকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে। সাজিদের শরীরে কোনো বিষাক্ত পদার্থের উপস্থিতি পাওয়া যায়নি। ময়না তদন্তের সময় থেকে আনুমানিক ৩০ ঘণ্টা আগে তার মৃত্যু হয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। 

রিপোর্টে স্বাক্ষর করেন বাংলাদেশ পুলিশ সিআইডি মহাখালীর রাসায়নিক পরীক্ষাগারের প্রধান নজরুল ইসলাম ও খুলনা বিভাগীয় পরীক্ষক জনি কুমার ঘোষ।

কুষ্টিয়া পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান বলেন, “ভিসেরা রিপোর্টে যেটা এসেছে, সেটা থেকে বোঝা যাচ্ছে এটা হত্যাকাণ্ড।”

দ্রুত ভিসেরা রিপোর্ট প্রকাশের বিষয়ে এআইজি ড. আশরাফ বলেন, “যেহেতু আমি এ বিভাগে আছি, আমি এই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছি, আবার আমার বিশ্ববিদ্যালয়েই একজন শিক্ষার্থী মারা গেছে; যেভাবেই হোক মারা গিয়েছে। তার প্রতি আমাদের দায় আছে না? তো সেই দায়বদ্ধতা থেকে চেষ্টা করেছি, যাতে ভিসেরা রিপোর্ট দ্রুত দিয়ে দেওয়া হয়। বিভাগের একজন ঊর্ধ্বতন হিসেবে আমি সুপারিশ করেছি, ওইভাবে তারা বিবেচনা করেছে।”

তিনি বলেন, “মামলার কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন। আর সোমবার (৪ আগস্ট) সিন্ডিকেট সভা হয়েছে। সিন্ডিকেটের মাধ্যমে ক্যাম্পাসের সার্বিক নিরাপত্তায় যে সিদ্ধান্ত হবে, সে অনুযায়ী কাজ করা উচিত।”

এ বিষয়ে শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক সাহেদ আহম্মেদ বলেন, “আশরাফ ভাই পুলিশের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সিন্ডিকেট সদস্য। বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বার্থে ও শিক্ষার্থীদের প্রয়োজনে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। এজন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন কৃতী শিক্ষার্থী ও সিনিয়র হিসেবে ছাত্রদলের পক্ষ থেকে তার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।”

ইবি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মেহেদী হাসান বলেন, “কারো সহায়তা ছাড়া এত দ্রুত ভিসেরা রিপোর্ট পাওয়া সম্ভব হয় না। সারা দেশের ভিসেরা এক জায়গায় হয়। তো এসব রিপোর্ট পেতে মিনিমান দুইমাস, অনেক ক্ষেত্রে ১ বছরও লেগে যেতে পারে। এই রিপোর্ট খুব দ্রুত হয়েছে, যা অকল্পনীয়।”

এ বিষয়ে উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম এয়াকুব আলী বলেন, “সাজিদের মৃত্যুর ঘটনায় আমি রুটিন দায়িত্বে উপাচার্য হিসেবে ছিলাম। আমি যখন দেখলাম সাজিদের রহস্যজনক মৃত্যুতে ক্যাম্পাসের হলগুলোতে শিক্ষার্থীরা নিরাপদ বোধ করছে না। শিক্ষার্থীদের দাবির প্রেক্ষিতে, ক্যাম্পাসকে শান্ত রাখতে এবং ক্লাস-পরীক্ষা স্বাভাবিকভাবে চলার জন্য কাজ করেছি। এজন্য নিজের দায়িত্বের জায়গা থেকে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ হিসেবে এআইজি আশরাফকে তাগাদা দিয়েছি এবং আমি জোরালোভাবে তাকে অনুরোধ করেছি, যাতে সাজিদের মৃত্যুর রহস্য উদঘাটন করা সম্ভব হয়।”

গত ১৭ জুলাই বিকেলে শাহ আজিজুর রহমান হল পুকুর থেকে সাজিদের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনার পর থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ধারাবাহিকভাবে আন্দোলন চালিয়ে আসছেন। সাজিদের হত্যায় জড়িতদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে আবার উত্তাল হয়ে উঠেছে ক্যাম্পাস। সর্বশেষ সাজিদের পরিবার সোমবার (৪ আগস্ট) অজ্ঞাতনামা আসামী করে একটি মামলা দায়ের করেন।

ঢাকা/তানিম/মেহেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ