Prothomalo:
2025-08-05@11:30:15 GMT

উচ্ছ্বাস থেকে দীর্ঘশ্বাসে 

Published: 5th, August 2025 GMT

জুলাই গণ–অভ্যুত্থান কেবল একটি ছাত্র আন্দোলন ছিল না, ছিল আমজনতারও আন্দোলন। জাতি–ধর্ম–বর্ণনির্বিশেষে সব শ্রেণির মানুষের অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে আন্দোলনটি সবার হয়ে ওঠে; কিন্তু যে স্বপ্ন সামনে রেখে আমজনতা রাস্তায় নেমেছিলেন, এখনকার সার্বিক পরিস্থিতির মধ্যে কি তার প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে? 

জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের অন্যতম স্বপ্ন ছিল বৈষম্যহীন একটি দেশ গড়ে তোলা, যেখানে জাতি, ধর্ম, শ্রেণি ও লিঙ্গীয় বৈষম্য এবং আধিপত্যবাদ থাকবে না। দেশের উন্নয়নে সব নাগরিকের সমান অংশগ্রহণ নিশ্চিত হবে। দুঃখজনক হলো, গত এক বছরে সে প্রত্যাশার অভিজ্ঞতা মোটেও সুখকর নয়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে বরং জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের চেতনা ভূলুণ্ঠিত হতে শুরু করেছে। সারা দেশে চাঁদাবাজি, মবতন্ত্র, নারীর প্রতি অসম্মানজনক আচরণ ও অবমাননা, আশঙ্কাজনক হারে ধর্ষণ এবং সংখ্যালঘু নির্যাতন, তকমা দেওয়া ইত্যাদি বেড়ে গেছে। স্বৈরাচারী আওয়ামী শাসনকে হটিয়ে মানুষ এ রকম মবতন্ত্রের দেশ চায়নি। জুলাইয়ের উত্তাল সময়ে গুলির মুখে দাঁড়িয়ে দেশের মানুষ যখন রাজপথে নেমে এসেছিলেন, তখন তাঁরা নিশ্চয়ই এমন দায়হীন ‘গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ’ প্রত্যাশা করেননি।

স্বাধীনতার পর থেকে দেশে অনেক সরকার পরিবর্তন হয়েছে। এক সরকার গেছে, আরেক সরকার ক্ষমতায় এসেছে; কিন্তু সরকারগুলোর ফ্যাসিবাদী চরিত্র বা পদ্ধতির কোনো পরিবর্তন ঘটেনি। তাই বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যখন রাষ্ট্র সংস্কারের লক্ষ্যে বিভিন্ন সংস্কারের উদ্যোগ নেয়, তখন আমরা আশা করেছিলাম, এবার বুঝি সত্যিকার অর্থে রাষ্ট্র সংস্কারের কাজ শুরু হলো। সংস্কার কমিশনগুলো তাদের সুপারিশ সরকারের কাছে পেশ করেছে। এখন সেসব সুপারিশের ভিত্তিতে রাষ্ট্র সংস্কার করার দায়িত্ব সরকারের; ভবিষ্যতে যেসব রাজনৈতিক দল দেশ পরিচালনা করবে, তাদের। 

আমরা বিশ্বাস করি, দেশের সব শ্রেণির নাগরিকের মর্যাদাপূর্ণ অংশগ্রহণই গণতন্ত্রের মূল শর্ত। তাই ফ্যাসিবাদী বেড়াজাল থেকে মুক্তির জন্য আমরা জুলাই আন্দোলনে শরিক হয়েছিলাম। রাজপথের স্লোগানে-বক্তৃতায় যতবার ‘অন্তর্ভুক্তিমূলক বাংলাদেশ’-এর শব্দটি শুনেছি, ততবারই উচ্ছ্বসিত হয়েছি। মনে নতুন করে আশার সঞ্চার হয়েছিল, এবার তাহলে সত্যিকার অর্থে এ দেশের ভিন্ন ভিন্ন জাতিসত্তার মানুষদের ওপর জিইয়ে থাকা দীর্ঘদিনের বৈষম্য, নিপীড়ন ও জুলুম থেকে তাঁরা মুক্তি পাবেন; কিন্তু ২০২৪ সালের আগস্টের পরে যতই দিন পেরিয়ে মাস গড়িয়েছে, ততই সেই উচ্ছ্বাস ধীরে ধীরে দীর্ঘশ্বাসে পরিণত হয়েছে।

ইলিরা দেওয়ান: মানবাধিকারকর্মী; সদস্য, স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশন.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

উচ্ছ্বাস থেকে দীর্ঘশ্বাসে 

জুলাই গণ–অভ্যুত্থান কেবল একটি ছাত্র আন্দোলন ছিল না, ছিল আমজনতারও আন্দোলন। জাতি–ধর্ম–বর্ণনির্বিশেষে সব শ্রেণির মানুষের অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে আন্দোলনটি সবার হয়ে ওঠে; কিন্তু যে স্বপ্ন সামনে রেখে আমজনতা রাস্তায় নেমেছিলেন, এখনকার সার্বিক পরিস্থিতির মধ্যে কি তার প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে? 

জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের অন্যতম স্বপ্ন ছিল বৈষম্যহীন একটি দেশ গড়ে তোলা, যেখানে জাতি, ধর্ম, শ্রেণি ও লিঙ্গীয় বৈষম্য এবং আধিপত্যবাদ থাকবে না। দেশের উন্নয়নে সব নাগরিকের সমান অংশগ্রহণ নিশ্চিত হবে। দুঃখজনক হলো, গত এক বছরে সে প্রত্যাশার অভিজ্ঞতা মোটেও সুখকর নয়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে বরং জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের চেতনা ভূলুণ্ঠিত হতে শুরু করেছে। সারা দেশে চাঁদাবাজি, মবতন্ত্র, নারীর প্রতি অসম্মানজনক আচরণ ও অবমাননা, আশঙ্কাজনক হারে ধর্ষণ এবং সংখ্যালঘু নির্যাতন, তকমা দেওয়া ইত্যাদি বেড়ে গেছে। স্বৈরাচারী আওয়ামী শাসনকে হটিয়ে মানুষ এ রকম মবতন্ত্রের দেশ চায়নি। জুলাইয়ের উত্তাল সময়ে গুলির মুখে দাঁড়িয়ে দেশের মানুষ যখন রাজপথে নেমে এসেছিলেন, তখন তাঁরা নিশ্চয়ই এমন দায়হীন ‘গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ’ প্রত্যাশা করেননি।

স্বাধীনতার পর থেকে দেশে অনেক সরকার পরিবর্তন হয়েছে। এক সরকার গেছে, আরেক সরকার ক্ষমতায় এসেছে; কিন্তু সরকারগুলোর ফ্যাসিবাদী চরিত্র বা পদ্ধতির কোনো পরিবর্তন ঘটেনি। তাই বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যখন রাষ্ট্র সংস্কারের লক্ষ্যে বিভিন্ন সংস্কারের উদ্যোগ নেয়, তখন আমরা আশা করেছিলাম, এবার বুঝি সত্যিকার অর্থে রাষ্ট্র সংস্কারের কাজ শুরু হলো। সংস্কার কমিশনগুলো তাদের সুপারিশ সরকারের কাছে পেশ করেছে। এখন সেসব সুপারিশের ভিত্তিতে রাষ্ট্র সংস্কার করার দায়িত্ব সরকারের; ভবিষ্যতে যেসব রাজনৈতিক দল দেশ পরিচালনা করবে, তাদের। 

আমরা বিশ্বাস করি, দেশের সব শ্রেণির নাগরিকের মর্যাদাপূর্ণ অংশগ্রহণই গণতন্ত্রের মূল শর্ত। তাই ফ্যাসিবাদী বেড়াজাল থেকে মুক্তির জন্য আমরা জুলাই আন্দোলনে শরিক হয়েছিলাম। রাজপথের স্লোগানে-বক্তৃতায় যতবার ‘অন্তর্ভুক্তিমূলক বাংলাদেশ’-এর শব্দটি শুনেছি, ততবারই উচ্ছ্বসিত হয়েছি। মনে নতুন করে আশার সঞ্চার হয়েছিল, এবার তাহলে সত্যিকার অর্থে এ দেশের ভিন্ন ভিন্ন জাতিসত্তার মানুষদের ওপর জিইয়ে থাকা দীর্ঘদিনের বৈষম্য, নিপীড়ন ও জুলুম থেকে তাঁরা মুক্তি পাবেন; কিন্তু ২০২৪ সালের আগস্টের পরে যতই দিন পেরিয়ে মাস গড়িয়েছে, ততই সেই উচ্ছ্বাস ধীরে ধীরে দীর্ঘশ্বাসে পরিণত হয়েছে।

ইলিরা দেওয়ান: মানবাধিকারকর্মী; সদস্য, স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশন

সম্পর্কিত নিবন্ধ