৫ আগস্ট ঘটে যাওয়া একটা ঘটনা দিয়ে শুরু করি। উত্তরা দিয়া বাড়ি লেকে সকাল বেলা সাঁতার কাটতে, উত্তরাকেন্দ্রিক একটি ফিটনেস গ্রুপের সাথে গিয়েছিলাম। সবার সাথে আমিও ব্যাগ রেখে পানিতে নেমেছি। ব্যাগে মানিব্যাগ এবং মোবাইল ছিল। পানি থেকে উঠে দেখি দুটো জিনিসই গায়েব করে দিয়েছে বুদ্ধিমান চোর। বাকি কারো ব্যাগে হাত দেয়নি। ফোনটা বেশ দাম দিয়ে কেনা ১০ মাস আগে। ফোনের শোকে স্তব্ধ হওয়ার পর টের পেলাম মানিব্যাগে সিটি ব্যাংকের ভিসা কার্ড ছিল, তাতে তিলে তিলে কিছু টাকা জমা করা হয়েছিল।
গ্রুপের একজন ভাইয়ের ফোন থেকে সিটি ব্যাংকের কল সেন্টারে ফোন করে জানালাম আমার ফোন কার্ড চুরি হয়েছে, যত দ্রুত সম্ভব বন্ধ করুন। অপরপ্রান্ত থেকে নিশ্চিত করলো আমার কার্ড এবং সিটি টাচ বন্ধ হয়েছে। সময় সকাল ১০.
প্রশ্ন হলো কার্ড বন্ধ করার পরেও কীভাবে টাকা ট্রানজেকশন হয়? আবার, একজনের কার্ড কেউ হাতে পেলেই এত সহজে কীভাবে নিজের বিকাশ একাউন্টে টাকা ট্র্যান্সফার করে ফেলে?
বিকাশ এবং ব্যাংক কোনভাবেই এ দায় এড়াতে পারে না যে তাদের সিস্টেম নড়বড়ে। আদতে দেখা যাচ্ছে, কেউ চাইলেই যে কারো টাকা সহজে হাতিয়ে নিতে পারে! ব্যাংকের কাছে অভিযোগ করার পরে তারা ইনভেস্টিগেশন করে জানাল, কার্ড বন্ধ করার সাথে সাথে সমসাময়িক সময়ে আমার হারিয়ে যাওয়া নাম্বারে টাকা লেনদেন হচ্ছে দেখতে পেয়ে রেজিস্টার্ড নাম্বারে কল দিলে চোর কলটি ধরে জানায়, তিনি কার্ডের মালিক এবং লেনদেন করছেন, আরো কিছু লেনদেন করবেন। সিটি ব্যাংক বিনা বাধায় আর কোনো বাক্য বিনিময় না করে কার্ডের গেটওয়ে খুলে দেয়।
এখানে প্রশ্ন হলো কার্ড বন্ধ করতে যেভাবে ভেরিফিকেশন করে ব্যাংক, ঠিক সেভাবে ভেরিফিকেশন করে কি কার্ড আবার পুনরায় চালু করা হয়েছিল? নাকি কার্ডটি বন্ধই করা হয়নি?
সিটি বাংক ব্যপারটি খুব গুরুত্বের সঙ্গে দেখেছে। গ্রাহকের সাথে যোগাযোগ রেখেছে এবং পরবর্তীতে কার্ড বন্ধের পরের লেনদেনগুলো ফেরত দেওয়ার ব্যাপারে সম্মতি দিয়েছে।
গ্রাহকের টাকা ব্যাংকের কাছে আমানত হিসেবে থাকে তাই গ্রাহকরাও ব্যাংকের প্রতি বিশ্বাস রাখে, যে তাদের টাকা নিরাপদে আছে। ব্যাংক ব্যবসা করে গ্রাহকদের টাকা দিয়ে। সুতরাং গ্রাহকদের অধিকার বিষয়ে আইন কি বলে একটু জেনে নেই।
ব্যাংকের গ্রাহকদের অধিকার হলো নিরাপত্তা, স্বচ্ছতা, তথ্য জানার অধিকার, ন্যায্য আচরণ, অভিযোগ করার অধিকার এবং ক্ষতিপূরণ পাওয়ার সুযোগ।
ব্যাংক যদি এগুলো লঙ্ঘন করে, তাহলে আইনগতভাবে ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা (Customer Rights & Responsibilities Guidelines) অনুযায়ী ব্যাংক গ্রাহকের ব্যক্তিগত তথ্য ও লেনদেনের নিরাপত্তা রক্ষায় বাধ্য। গ্রাহক যে কোনো ব্যাংকিং অনিয়ম বা প্রতারণা বিষয়ে অভিযোগ করতে পারবেন এবং ব্যাংককে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সমাধান দিতে হবে।
ব্যাংক পরিচালনা, আমানতকারীর স্বার্থ রক্ষা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে ব্যাংক কোম্পানি আইন, ১৯৯১ (সংশোধিত) ধারা অনুসারে এই আইন কার্যকর হবে।
ব্যাংকিং সেবা যেহেতু একটি ভোক্তা সেবা, তাই ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন, ২০০৯ আইনের আওতায় গ্রাহকরা অধিকার ভোগ করেন। প্রতারণা, অন্যায্য শর্ত বা ভুল তথ্য দিলে গ্রাহক ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তরে অভিযোগ করতে পারেন। ব্যাংকের ভুল বা অবহেলার কারণে ক্ষতি হলে গ্রাহক ক্ষতিপূরণ চাইতে পারেন। প্রতিটি ব্যাংকে Customer Complaint Cell বা গ্রাহক অভিযোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগ থাকে। ঠিকভাবে সমাধান না পেলে বাংলাদেশ ব্যাংকের Financial Integrity & Customer Services Department (FICSD)-এ গ্রাহকরা অভিযোগ করতে পারবেন।
গ্রাহক বা ভোক্তাদের আইনি অধিকারের ব্যপারে বেশীরভাগেরই তেমন জানা নেই। গ্রাহকদেরও ব্যক্তিগত তথ্য নিরাপদে রাখার ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। কার্ড ব্যবহার করার ব্যাপারে খুব সতর্ক হতে হবে, বিশেষ করে বিদেশে ভ্রমণের সময়। এ ক্ষেত্রে অভিজ্ঞরা বলেন নির্দিষ্ট ট্র্যাভেল কার্ড ব্যবহার করতে যা ভিসার মেয়াদের সাথে সংযুক্ত থাকে। এ ছাড়া বিদেশ থেকে ফিরে এসে ব্যবহৃত কার্ডটি পরিবর্তন করে নিতে পারেন পরবর্তী ঝুঁকি এড়াতে। মোবাইল ফোন এখন আমাদের জীবনের অপরিহার্য এক বস্তু সেখানে নটিফিকেশন যেনো অন্য কেউ সহজেই না দেখতে পারে সেই অপশন বন্ধ করে রাখতে হবে।
ফোন হারালে প্রথম যে কাজটা করতে হবে তা হলো সিম বন্ধ করা। কারণ সিম দিয়েই যাবতীয় সকল কাজ করা যায়। ব্যাংকের কার্ড সংশ্লিষ্ট যে কোনো ব্যাপারে লিখিতভাবে অর্থাৎ ইমেইলে যোগাযোগ করা শ্রেয়। থানায় জিডি করে রাখতে হবে এবং আইন সংস্থার সাথে যোগাযোগ রাখতে হবে। প্রয়োজনে বাংলাদেশ ব্যাংক এবং সাইবার ক্রাইম ইউনিটে অভিযোগ জানান। সর্বপোরি নিজেকে অনেক বেশি সতর্ক থাকতে হবে। কেউ আপনাকে অনুসরণ করছে কিনা পর্যবেক্ষণ করুন।
ব্যাংকের পিন নাম্বার কখনো কার্ডের সাথে রাখবেন না বা ওয়ালেটে রাখবেন না। আপনার ব্যাংকের মোবাইল অ্যাপে গিয়ে দৈনিক বা প্রতি ট্রানজাকশনের সীমা কমিয়ে রাখুন। এসএমএস/ইমেইল অ্যালার্ট চালু রাখুন যাতে প্রতিটি লেনদেনের সাথে সাথে জানতে পারেন। একসাথে সব কার্ড বহন করার দরকার নেই, শুধু প্রয়োজনীয় কার্ড রাখুন। কার্ডের ছবি বা কপি কখনো ফোনে রাখবেন না।
ফোন এখন আমাদের জীবনের অংশ, তাই ফোনের ব্যপারেও সতর্ক হওয়া চাই। ফোনে প্যাটার্ন লক বা সহজ পিন না দিয়ে জটিল পাসওয়ার্ড ব্যবহার করুন। আলাদা পাসওয়ার্ড বা ফিঙ্গারপ্রিন্ট সুরক্ষা ব্যবহার করুন। মেসেজ, নোট বা গ্যালারিতে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট, কার্ড নম্বর বা পাসওয়ার্ড রাখবেন না। ব্যাংকিং বা মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল অ্যাপে ‘Remember Password’ বা ‘Auto Login’ ব্যবহার করবেন না।
ফোন চুরি হলে সাথে সাথে মোবাইল সিম ব্লক করে নতুন সিম সংগ্রহ করুন। “Find My Device / Find My iPhone” সক্রিয় রাখুন। মোবাইল ব্যাংকিং এর মাধ্যমগুলো বিকাশ, নগদ, রকেট কাস্টমার কেয়ার এ কল করে ব্লক করুন। ইমেইল ও সোশ্যাল মিডিয়ার পাসওয়ার্ড বদলান চোর যাতে OTP না পায়। সব অ্যাকাউন্টে টু-ফ্যাক্টর অথেনটিকেশন (2FA) চালু করুন। বড় কোন আয়োজন বা অনুষ্ঠানে যাবার আগে এ বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বন করুন। চেনাজানা কেউ হয়ত আপনার ক্ষতি করে বসতে পারে। সচেতন হলেই তবে দুর্ঘটনা কমানো সম্ভব।
তারা//
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব যবহ র কর ক র ড বন ধ গ র হকদ র প সওয় র ড গ র হক র ল নদ ন সতর ক
এছাড়াও পড়ুন:
মুসলিম সভ্যতায় দরিদ্রদের চিকিৎসাসেবা
মুসলিম সভ্যতার ইতিহাসে প্রায়ই বিজ্ঞান, স্থাপত্য বা শাসনব্যবস্থার কথা আলোচিত হয়। কিন্তু এর মানবিক দিক অধরা রয়ে যায়। বিশেষ করে দরিদ্রদের প্রতি দয়া ও চিকিৎসাসেবার গল্প আড়ালে রয়ে গেছে সব সময়।
মুসলিম সভ্যতায় কীভাবে দরিদ্র ও অসুস্থদের জন্য বিনা মূল্যে চিকিৎসা, আশ্রয় এবং মানসিক সান্ত্বনার ব্যবস্থা করা হয়েছিল, তা এক অপূর্ব কাহিনি।
বিমারিস্তান: দরিদ্রদের জন্য চিকিৎসার আশ্রয়মুসলিম সভ্যতায় দরিদ্রদের চিকিৎসাসেবায় ‘বিমারিস্তান’ নামের হাসপাতাল ছিল একটি যুগান্তকারী উদ্যোগ। এগুলো শুধু চিকিৎসার জায়গা ছিল না, বরং দরিদ্রদের জন্য বিনা মূল্যে আশ্রয়, খাদ্য ও যত্নের ব্যবস্থা ছিল। বেশির ভাগ মুসলিম অধ্যুষিত নগরে, বিশেষ করে বড় রাজধানীগুলোতে বিমারিস্তান ছিল। দামেস্কে বিমারিস্তানের নাম ছিল ‘নুরি’, বাগদাদে ‘আদুদি’।
প্রতিটি অন্ধ বৃদ্ধের জন্য এমন একজন সাহায্যকারী নিয়োগ কর, যে তাকে অত্যাচার বা অবহেলা না করে।খলিফা উমর ইবন আবদুল আজিজ (রহ.)প্রথম বিমারিস্তান প্রতিষ্ঠিত হয় উমাইয়া খলিফা ওয়ালিদ ইবন আবদুল মালিকের সময়, ৭০৭ খ্রিষ্টাব্দে। তিনি এতে চিকিৎসক নিয়োগ করেন এবং তাঁদের বেতনের ব্যবস্থা করেন। সমাজের স্বাস্থ্য রক্ষায় কুষ্ঠরোগীদের জন্য পৃথক স্থানে বিনা মূল্যে খাদ্য ও যত্ন দেওয়া হতো।
অন্ধদের জন্য রাষ্ট্রীয় ভাতা ও সাহায্যকারী নিয়োগ করা হতো। খলিফা উমর ইবন আবদুল আজিজ নির্দেশ দিয়েছিলেন, ‘প্রতিটি অন্ধ বৃদ্ধের জন্য এমন একজন সাহায্যকারী নিয়োগ কর, যে তাকে অত্যাচার বা অবহেলা না করে।’ (ইবনে আসাকির, তারিখে দিমাশক, ৪৪/১২৩, দারুল ফিকর, বৈরুত, ১৯৯৫)
আরও পড়ুন“আল্লাহ ধনী, তোমরা দরিদ্র”০১ অক্টোবর ২০২৫ভ্রাম্যমাণ হাসপাতালও ছিল, যা যুদ্ধক্ষেত্রে সৈন্যদের চিকিৎসার জন্য গড়ে তোলা হতো। দূরবর্তী অঞ্চলে মহামারি মোকাবিলায় ৪০টি উটের কাফেলায় চিকিৎসা সরঞ্জাম নিয়ে যাওয়া হতো।
মিসরে প্রথম বিমারিস্তান প্রতিষ্ঠিত হয় আহমদ ইবন তুলুনের সময়, ৮৭২ খ্রিষ্টাব্দে, ফুসতাতে। এর নাম ছিল ‘বিমারিস্তান আতিক’।
এর জন্য ওয়াক্ফ তহবিল রাখা হয়েছিল, এবং শর্ত ছিল যে এটি শুধু সাধারণ মানুষের জন্য, সৈন্য বা দাসদের জন্য নয়। এর বার্ষিক খরচ ছিল ৬০ হাজার দিনার (স্বর্ণমুদ্রা)। ইবন তুলুন নিজে প্রতি সপ্তাহে এটি পরিদর্শন করতেন এবং জুমার দিনে মুসল্লিদের জন্য জরুরি সেবার ব্যবস্থা করেছিলেন। এতে ছিল ১ লাখের বেশি বইয়ের গ্রন্থাগার। (মাকরিজি, খিতাত, ২/৪০৫, দারু সাদির, কায়রো, ১৮৫৩)
সংগীতজ্ঞ ও গল্পকারেরা এখানে রোগীদের মনোবল বাড়াতেন। ঘরে সুগন্ধি গাছ রাখা হতো, রোগীদের হাতপাখা দেওয়া হতো গরম ও পোকামাকড় থেকে রক্ষার জন্য।সালাহউদ্দিন আইয়ুবি বিমারিস্তান ‘নাসিরি’ প্রতিষ্ঠা করেন। তবে মিসর ও মুসলিম বিশ্বের সবচেয়ে সমৃদ্ধ বিমারিস্তান ছিল মনসুর কালাউনের প্রতিষ্ঠিত বিমারিস্তান, ১২৮৪ খ্রিষ্টাব্দে। এখানে নারী-পুরুষ সবার জন্য চিকিৎসার ব্যবস্থা ছিল, চিকিৎসার জন্য নির্ধারিত সময়সীমা ছিল না। এখানে মানসিক স্বাস্থ্যের প্রতি গুরুত্ব দেওয়া হতো।
সংগীতজ্ঞ ও গল্পকারেরা এখানে রোগীদের মনোবল বাড়াতেন। রাতের দীর্ঘ সময় রোগীদের জন্য কষ্টকর হতো, তাই ফজরের আজান দুই ঘণ্টা আগে দেওয়া হতো, যাতে রোগীরা সকালের আশায় উৎফুল্ল হয়। ঘরে সুগন্ধি গাছ রাখা হতো, রোগীদের হাতপাখা দেওয়া হতো গরম ও পোকামাকড় থেকে রক্ষার জন্য।
সুস্থ হওয়ার পর রোগীদের পোশাক ও কিছু টাকা দেওয়া হতো, যাতে তারা তাড়াতাড়ি কাজে ফিরতে না বাধ্য হয়। এই বিমারিস্তান ২০০ জনের বেশি দরিদ্র রোগীকে বাড়িতে চিকিৎসা দিত। (মাকরিজি, খিতাত, খণ্ড ২, পৃষ্ঠা ৪০৭)
দরিদ্রদের জন্য চিকিৎসাগ্রন্থমুসলিম সভ্যতার চিকিৎসকেরা লক্ষ করেন, চিকিৎসা কখনো কখনো ধনীদের কাছে ব্যবসায় পরিণত হন। তাই তাঁরা দরিদ্রদের জন্য সহজলভ্য চিকিৎসা গ্রন্থ রচনা করেন, যাতে তারা নিজেরা নিজেদের চিকিৎসা করতে পারে বা ছোট চিকিৎসকেরা তাদের সহজে চিকিৎসা দিতে পারেন। এই গ্রন্থগুলোয় স্থানীয় ও সাশ্রয়ী উপকরণ ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হতো; কারণ, ভারত বা চীন থেকে আমদানি করা ওষুধ ছিল দামি।
আরও পড়ুনইসলামে দারিদ্র্য দূরীকরণের ৮টি ব্যবহারিক উপায়০২ নভেম্বর ২০২৫আবু বকর আর-রাজি: তিনি দরিদ্রদের প্রতি অসাধারণ দয়া দেখাতেন এবং তাদের জন্য ভাতার ব্যবস্থা করতেন। তিনি দুটি গ্রন্থ রচনা করেন: ‘বুরউ সা’আত’ (তাৎক্ষণিক চিকিৎসা) এবং ‘মান লা ইয়াহদুরুহু তাবিব’ (যার কাছে চিকিৎসক নেই), যাকে ‘তিব্বুল ফুকারা ওয়াল মাসাকিন’ (দরিদ্রদের চিকিৎসা) বলা হয়।
তিনি লিখেছেন, ‘অনেক চিকিৎসক ওষুধ ও খাবারের কথা লেখেন, যা শুধু রাজাদের ভান্ডারে পাওয়া যায়। আমি সাধারণ ও সহজলভ্য উপকরণ দিয়ে চিকিৎসার একটি সংক্ষিপ্ত গ্রন্থ লিখতে চাই, যাতে সবাই এর সুবিধা পায়।’ (আল-রাজি, মান লা ইয়াহদুরুহু তাবিব, পৃষ্ঠা ১৫, দারুল কুতুব, বৈরুত, ১৯৮৫)
মুসলিম সভ্যতা দরিদ্রদের চিকিৎসায় অসাধারণ মানবিকতা দেখিয়েছে। বিমারিস্তান ছিল দরিদ্রদের জন্য আশ্রয়, যেখানে শারীরিক ও মানসিক চিকিৎসা দেওয়া হতো।ইবনে জাজ্জার কায়রাওয়ানি: তিনি কখনো দরিদ্রদের কাছ থেকে চিকিৎসার ফি নিতেন না। তিনি তিব্বুল ফুকারা ওয়াল মাসাকিন গ্রন্থে লিখেছেন, ‘দরিদ্ররা স্বাস্থ্য ও রোগ–সম্পর্কিত বইয়ের সুবিধা পায় না। তাই আমি এমন একটি গ্রন্থ লিখলাম, যাতে সহজলভ্য ওষুধ দিয়ে সাধারণ মানুষের চিকিৎসা করা যায়।’ (ইবনে জাজ্জার, তিব্বুল ফুকারা, পৃষ্ঠা ১০, দারুল ফিকর, কায়রো, ১৯৯০)
ইবনে আকফানি: তিনি গুনইয়াতুল লাবিব ফি গাইবাতিত তাবিব (চিকিৎসক না থাকলে জ্ঞানীর সম্পদ) গ্রন্থে জরুরি রোগের চিকিৎসা ও স্বাস্থ্য রক্ষার পরামর্শ দিয়েছেন।
জামালুদ্দিন ইউসুফ মাকদিসি: তিনি ‘তিব্বুল ফুকারা’ গ্রন্থে লিখেছেন, ‘ধনীরা সুস্বাদু খাবার খায়, তাই তাদের রোগ বেশি। দরিদ্ররা সাধারণ খাবারে সন্তুষ্ট থাকে, তাই তাদের রোগ কম। কিন্তু দরিদ্ররা অসুস্থ হলে তাদের জন্য সহজ ও সস্তা ওষুধ দরকার।’ (মাকদিসি, তিব্বুল ফুকারা, পৃষ্ঠা ৮, দারুল মারিফা, বৈরুত, ১৯৯২)
মুসলিম সভ্যতা দরিদ্রদের চিকিৎসায় অসাধারণ মানবিকতা দেখিয়েছে। বিমারিস্তান ছিল দরিদ্রদের জন্য আশ্রয়, যেখানে শারীরিক ও মানসিক চিকিৎসা দেওয়া হতো। চিকিৎসকেরা দরিদ্রদের জন্য সহজলভ্য গ্রন্থ রচনা করেছেন, যাতে তারা নিজেদের চিকিৎসা করতে পারে। এই ঐতিহ্য দেখায়, ইসলামি সভ্যতা কেবল জ্ঞান বা শক্তিতে নয়, মানবিকতা ও দয়াতেও শ্রেষ্ঠ ছিল।
আরও পড়ুনআপনার মানসিক স্বাস্থ্যের চিকিৎসা নিচ্ছেন তো২১ জুন ২০২৫