কুষ্টিয়ায় ঐতিহ্যবাহী ঝাপান খেলা অনুষ্ঠিত
Published: 14th, September 2025 GMT
কুষ্টিয়া সদর উপজেলার ঝাউদিয়া ইউনিয়নের ঝাউদিয়া বিল পাড়ায় গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী ঝাপান খেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে। দীর্ঘ এক যুগ পর আয়োজিত এ খেলায় হাজারো দর্শকের ভিড় জমে।
শনিবার (১৩ সেপ্টেম্বর) সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত চলে সাপুড়েদের বিষধর সাপ নিয়ে চমকপ্রদ প্রদর্শনী। বীণ, বাঁশি আর বাদ্যের তালে তালে কাঠের বাক্স ও মাটির হাড়ি থেকে বেরিয়ে আসে বিষধর গোখরা ও অন্যান্য সাপ। ফণা তুলে দাঁড়িয়ে থাকা সাপের সঙ্গে নানা কসরত দেখিয়ে দর্শকদের মাতিয়ে তোলেন সাপুড়ে দল।
১১টি দলের শতাধিক সাপ নিয়ে অনুষ্ঠিত এ প্রতিযোগিতায় অংশ নেন বিভিন্ন জেলা থেকে আগত ১৫ জন সাপুড়ে। এসময় দর্শকদের করতালি আর উল্লাসে মুখর হয়ে ওঠে চারপাশ। গ্রামীণ ঐতিহ্যবাহী এ খেলা ঘিরে ছোট-বড়, নারী-পুরুষ সবাই আনন্দে মেতে ওঠেন। খেলাকে কেন্দ্র করে তৈরি হয় এক উৎসবের আমেজ।
ঝিনাইদহ থেকে আসা সাপুড়ে সবুজ বলেন, ‘‘এটা বাপ-দাদার ঐতিহ্য। ছোটবেলা থেকেই শিখে আসছি। এ খেলার মাধ্যমেই জীবিকা নির্বাহ করি। সরকার যদি আমাদের পাশে দাঁড়ায় তাহলে এ ঐতিহ্য টিকে থাকবে। একই সঙ্গে মানুষকে পরামর্শ দিচ্ছি সাপে কাটা রোগীকে অবশ্যই দ্রুত হাসপাতালে নিতে হবে।”
শৈলকুপার সাপুড়ে সোহেল বলেন, ‘‘বাপ-দাদারাও এ খেলা দেখাতেন। তাদের কাছে শিখে মানুষের মনোরঞ্জন করছি। কিন্তু সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা না থাকায় সমস্যায় পড়ছি।’’
আয়োজকদের পক্ষ থেকে শাহারিয়া ইমন রুবেল বলেন, ‘‘গ্রামের মানুষকে একত্রিত করে প্রাচীন ঐতিহ্য টিকিয়ে রাখতেই এ আয়োজন। আমরা চাই ভবিষ্যৎ প্রজন্মও যেন এসব খেলা দেখতে পারে।”
দর্শকরা জানান, ঝাপান খেলা কেবল বিনোদন নয় বরং গ্রামীণ ঐতিহ্যের অংশ। সাপুড়েরা যেমন মানুষকে আনন্দ দিচ্ছেন, তেমনি সচেতনতার বার্তাও দিচ্ছেন।
ঢাকা/কাঞ্চন/এস
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
রাজশাহীতে বইমেলায় বিক্রি কম, এখনো আশায় আছেন প্রকাশকেরা
রাজশাহী বিভাগীয় বইমেলার প্রথম তিন দিনে লোকজনের ভিড় থাকলেও বেচাকেনা তেমন হয়নি। এতে অনেক প্রকাশকের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে। তবে আগামী কয়েক দিনে বেচাকেনা বাড়বে বলে আশা করছেন প্রকাশকেরা ও আয়োজক কর্তৃপক্ষ।
গত শুক্রবার রাজশাহী জেলা কালেক্টরেট মাঠে ৯ দিনব্যাপী এই বইমেলার উদ্বোধন করা হয়। সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পৃষ্ঠপোষকতায়, জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের উদ্যোগে এবং রাজশাহী বিভাগীয় প্রশাসনের ব্যবস্থাপনায় আয়োজিত এ মেলা চলবে ৮ নভেম্বর পর্যন্ত। মেলায় ঢাকা ও চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তের ৭০টি বেসরকারি প্রকাশনাসহ মোট ৮১টি প্রতিষ্ঠান অংশ নিয়েছে। সাপ্তাহিক ছুটির দিন বাদে মেলা চলছে বেলা ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত। আর ছুটির দিনে মেলা শুরু হয় বেলা ১১টায়।
উদ্বোধনের আগের দিন বৃষ্টিতে মেলার মাঠ কাদাপানিতে একাকার হয়ে যায়। সেই কর্দমাক্ত পরিবেশেই মেলার উদ্বোধন হয়। দর্শনার্থীদের ভোগান্তি কমাতে পরে প্রতিটি স্টলের সামনে ইট বিছিয়ে দেওয়া হয়। এতে কিছুটা স্বস্তি ফিরলেও বিক্রির খরা কাটেনি বলে জানালেন বিক্রেতারা।
গতকাল রোববার সন্ধ্যায় মেলা প্রাঙ্গণে গিয়ে দেখা যায়, মাঠের বিভিন্ন অংশে তখনো পানি জমে আছে। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের জন্য নির্ধারিত মঞ্চের সামনের প্যান্ডেলেও কাদা। সেখানেই কাজী নজরুল ইসলামের জীবন ও সাহিত্য নিয়ে আলোচনা চলছিল, তবে দর্শক-শ্রোতার উপস্থিতি ছিল নগণ্য। স্টলের সামনে ইটের সলিংয়ের তৈরি রাস্তা দিয়ে হাঁটছেন অনেকে। অনেকে বই দেখছেন।
সূর্যোদয় প্রকাশনীর বিক্রেতা রিপন আলী বলেন, প্রথম দিন তো কাদাপানির মধ্যেই দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছে। তখনো মানুষ ছিলেন। এখন ইট বিছানোর পর আরও বেশি মানুষ আসছেন, ভিড়ও করছেন, কিন্তু বই কিনছেন খুব কম।
ঐতিহ্য প্রকাশনীর স্টলে কাদার ওপর চেয়ার পেতে বসে থাকতে দেখা গেল বিক্রয়কর্মী ও চিত্রশিল্পী অর্ণব পাল সন্তুকে। তিনি বলেন, মানুষ আসছেন, ঘুরে দেখছেন, কিন্তু বিক্রি নেই বললেই চলে। মেলার ব্যবস্থাপনা আরও ভালো হতে পারত। আরেক বিক্রেতা আবদুল্লাহ হীল বাকি জানালেন, এমনও স্টল আছে, যেখানে সারা দিনে ২০০ থেকে ৩০০ টাকার বইও বিক্রি হচ্ছে না।
তবে হতাশার ভিড়ে আশার কথাও শোনালেন কেউ কেউ। চট্টগ্রাম থেকে আসা নন্দন বইঘর প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী সুব্রত কান্তি চৌধুরী বলেন, বেচাবিক্রি আজ না হোক কাল হবে। মানুষ যে মেলায় এসে বই হাতে নিয়ে দেখছেন, এটাই বড় পাওয়া। এতে তাঁদের মধ্যে বই কেনার আগ্রহ তৈরি হবে।
মেলায় আসা পাঠকদের মধ্যে অবশ্য ভিন্ন চিত্র। দুই সন্তানের জন্য শিশুতোষ বই কিনে এক অভিভাবক বলেন, বাচ্চাদের হাতে বই তুলে দেওয়ার আনন্দটাই অন্য রকম।
মেলা থেকে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম ও তারাশঙ্কর বন্দ্যোপ্যাধ্যায়ের বই কিনেছেন মনির হোসেন। তিনি বলেন, মেলায় একসঙ্গে অনেক বই পাওয়া যায়, যা বই কেনার জন্য দারুণ সুযোগ।