প্রায় চার বছর আগের ঘটনা। অনিন্দ্যসুন্দর নীলপরির খোঁজে মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলার মুড়াছড়া ইকোপার্ক হয়ে সাগরনাল চা-বাগানে এসেছি। চা-বাগানে ঢোকার আগে হাতের বাঁয়ে ছোট্ট একটি ছড়া পেরিয়ে বনের মধ্যে ঢুকে পড়লাম। কিছু দূর হাঁটার পর সাগরনাল বন বিটের নাম না–জানা এক পাহাড়ে উঠলাম। পাহাড়ের শতবর্ষী এক পাকুড়গাছের ফল পাখিটির অত্যন্ত প্রিয়। আমাদের আগে এখানে যাঁরাই এসেছেন, তাঁরাই ওকে পাকুড়গাছে দেখেছেন। কিন্তু পুরোটা সকাল অপেক্ষা করেও ওকে পাকুড়গাছে দেখলাম না। আশপাশে আরও দু-একটা পাকুড় ও অন্যান্য বুনো ফলের গাছেও খুঁজলাম। কিন্তু ফলাফল একই।
দুপুর ১২টায় পাহাড় থেকে নেমে ছড়ার দিকে গেলাম। ছড়া ও চা-বাগানের আশপাশে ঘোরাফেরা করে তেমন কোনো পাখির দেখা না পেয়ে দুপুরের হালকা খাবার খেয়ে আবারও বেলা তিনটা নাগাদ পাহাড়ে উঠলাম। এবার গাছে বহু প্রজাতির পাখির মেলা বসেছে যেন! বিরামহীনভাবে ক্যামেরার শাটারে ক্লিক করে গেলাম। কিন্তু নীলপরির দেখা পেলাম না। বেলা ৩টা বেজে ২৫ মিনিট। পাকুড়গাছের পাশের ছোট্ট একটি গাছে সাদা-কালো পালকের খুদে একটি পাখি এসে বসল। মুহূর্তেই মনটা খুশিতে ভরে উঠল। নীলপরির দেখা না পেলেও ক্ষুদ্র এ পাখিটি আমার মন ভালো করে দিল। কারণ, এটাকেও বহুদিন ধরে খুঁজছি। আর এভাবে এখানে পেয়ে যাব ভাবতেও পারিনি। কিন্তু ক্যামেরার শাটারে মাত্র কয়েকটা ক্লিক করতেই সে উড়ে গেল। আর এল না। ৪ জানুয়ারি ২০২২ সালের ঘটনা এটি। বহুদিন পর ২০২৪ সালের ৩০ নভেম্বর পাখিটির দেখা পেলাম ঢাকার মিরপুরের জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যানে। তবে মাত্র চারটি ক্লিক করতেই লাজুক পাখিটি উড়ে গেল।
মৌলভীবাজারের সাগরনাল ও ঢাকার উদ্ভিদ উদ্যানে দেখা সাদা-কালো পাখিটি এ দেশের এক দুর্লভ পরিযায়ী পাখি পাকরা চটক বা খুদে পাকরা চটক। ইংরেজি নাম লিটল পাইড ফ্লাইক্যাচার। পশ্চিমবঙ্গে বলে সাদা-কালো চুটকি। মাসসিক্যাপিডি গোত্রের পাখিটির বৈজ্ঞানিক নাম Ficedula westermanni। উপমহাদেশের বিভিন্ন দেশসহ দক্ষিণ, পূর্ব ও দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশের পাখিটি এ দেশে আসে শীতকালে।
পাকরা চটক বড় মাথাওয়ালা গাঁট্টাগোট্টা ক্ষুদ্র পাখি। দেহের দৈর্ঘ্য ১০ থেকে ১১ সেন্টিমিটার। ওজন মাত্র ৭ থেকে ৯ গ্রাম।
স্ত্রী-পুরুষের পালকের রঙে বেশ পার্থক্য থাকে। পুরুষের মাথা-ডানা-পিঠ-লেজসহ দেহের ওপরটা কুচকুচে কালো। লম্বা-চওড়া সাদা ভ্রুটি একেবারে ঘাড় পর্যন্ত বিস্তৃত। দেহের নিচের অংশ পুরোপুরি সাদা। ডানার মাঝবরাবর ও লেজের গোড়ার দুই ধারে স্পষ্ট সাদা টান থাকে। অন্যদিকে স্ত্রীর দেহের ওপরটা বাদামি-ধূসরাভ। কপাল, চোখের চারপাশ ও কোমরের কাছে হালকা কমলা-বাদামি আভা রয়েছে। দেহের নিচটা ময়লাটে সাদা। লেজের দুই ধারে কোনো সাদা টান নেই। স্ত্রী-পুরুষনির্বিশেষে চোখ বাদামি। চঞ্চু, পা, পায়ের পাতা ও নখ কালো। অপ্রাপ্তবয়স্ক পাখির পিঠে হালকা সাদা ছিট থাকে। গলা ও বুকে আঁশসহ দেহতল কিছুটা ধূসর-বাদামি।
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
বগুড়ায় ফুটপাত দখল করে দোকানের পসরা, কোটি টাকার চাঁদাবাজির অভিযোগ
বগুড়া শহরের সার্কিট হাউস-কালীবাড়ি মোড় সড়কে সারি সারি ভ্যানে হরেক খাবারের পসরা। পিৎজা, বার্গার, স্যান্ডউইচ, চিকেন শর্মা, মিটবক্স—সবই মিলছে রাস্তার পাশের এসব দোকানে। ক্রেতারা মূলত কিশোর ও তরুণ-তরুণী।
দোকানগুলোতে নেই কোনো আলাদা শেফ। বিক্রেতারাই নিজের হাতে খাবার তৈরি করছেন, পরিবেশনও করছেন। কারও হাতে গ্লাভস নেই, শরীরে নেই অ্যাপ্রোন। বিকেল গড়াতেই এসব ভ্রাম্যমাণ খাবারের দোকানে ভিড় জমছে। কোর্ট হাউস স্ট্রিটের পাশেই আছে ‘পিজ অ্যান্ড বার্গ’, ‘পদ্মা ফুডস’ ও ‘হিলিয়াম রেস্টুরেন্ট’-এর মতো নামীদামি খাবারের দোকান। একসময় সন্ধ্যায় এসব প্রতিষ্ঠানে ক্রেতার ঢল নামত। এখন সে ভিড় চলে গেছে রাস্তার পাশে বসা দোকানগুলোর দিকে।
পদ্মা ফুডসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও জলেশ্বরীতলা ব্যবসায়ী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক এমদাদ আহমেদ বলেন, ‘অভিজাত এ এলাকায় একটি খাবারের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে ৮ থেকে ১০ লাখ টাকা বিনিয়োগ করতে হয়। অন্তত ১৪টি প্রতিষ্ঠান থেকে সনদ নিতে হয়। এসব নবায়নে প্রতিবছর মোটা অঙ্কের টাকা গুনতে হয়। ভবন ভাড়া, দামি শেফ ও কর্মচারীর বেতন—সব মিলিয়ে খরচ বিপুল। অথচ রাস্তার পাশে ভ্যানে বসা দোকানে বিনিয়োগ মাত্র ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা। কোনো সনদ নেই, দোকানভাড়া নেই, কর্মচারীও নেই। শুধু দামে সস্তা বলে ক্রেতারা ঝুঁকছেন ওদিকে। সড়ক দখল করে দোকান বসায় যানজটও বাড়ছে। অভিযোগ করেও প্রশাসনের কাছ থেকে কোনো প্রতিকার মিলছে না।
বগুড়া হোটেল মোটেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এসএম দেলোয়ার হোসেন বলেন, জলেশ্বরীতলা অভিজাত এলাকা। এখানে দোকান দিতে বিপুল বিনিয়োগ লাগে। নামীদামি দোকানে একটি পিৎজার দাম ৫০০ টাকা হলে ভ্রাম্যমাণ দোকানে বিক্রি হচ্ছে ৩০০ টাকায়। স্বাস্থ্যঝুঁকি থাকলেও ক্রেতারা সস্তা পেয়ে সেখান থেকেই কিনছেন। এতে অভিজাত রেস্টুরেন্টগুলো লোকসানে পড়ছে। এর সঙ্গে তিনি যুক্ত করেন, ‘আমরা স্ট্রিট ফুড ব্যবসার বিরোধী নই। তবে সেটা অভিজাত এলাকা থেকে সরিয়ে পৌর পার্ক, অ্যাডওয়ার্ড পার্কসংলগ্ন সড়ক কিংবা সরকারি আজিজুল হক কলেজের পাশের এলাকায় নিতে প্রশাসনকে অনুরোধ করেছি।’
সড়কজুড়ে দোকান, ভোগান্তিতে শহরবাসীসম্প্রতি দেখা যায়, চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের সামনে সড়কের এক পাশে ২০-২৫টি ভ্রাম্যমাণ খাবারের দোকান বসেছে। অন্য পাশে ফলের দোকান। বিকেল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত আদালত প্রাঙ্গণের সামনে যানজট লেগেই থাকে।
এ ছাড়া পৌরসভা লেন, জেলা খানা মোড়, বীর মুক্তিযোদ্ধা রেজাউল বাকী সড়ক, মহিলা ক্লাব মোড়, শহীদ আবদুল জব্বার সড়ক, সাতমাথা-সার্কিট হাউস সড়কসহ শহরের নানা সড়কেই বসছে ফুচকা, চটপটি, জুস, ফাস্ট ফুড ও ফলের দোকান।
সাতমাথায় প্রতিদিন বসছে অর্ধশতাধিক দোকান। জিলা স্কুলের সামনে চটপটি ও কাবাবের দোকানগুলোর চেয়ার বসানো হয়েছে ফুটপাত দখল করে। কবি নজরুল ইসলাম সড়ক, থানা মোড়, বড়গোলা, দত্তবাড়ি, কালিতলা—সবখানেই দুই পাশে দোকান।
রাস্তা দখল করে দোকান বসানোয় বেশির ভাগ সময় যানজটে থাকে শহরে। সম্প্রতি তোলা