Prothomalo:
2025-09-18@07:37:31 GMT

খুদে পাখি পাকরা চটক

Published: 16th, September 2025 GMT

প্রায় চার বছর আগের ঘটনা। অনিন্দ্যসুন্দর নীলপরির খোঁজে মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলার মুড়াছড়া ইকোপার্ক হয়ে সাগরনাল চা-বাগানে এসেছি। চা-বাগানে ঢোকার আগে হাতের বাঁয়ে ছোট্ট একটি ছড়া পেরিয়ে বনের মধ্যে ঢুকে পড়লাম। কিছু দূর হাঁটার পর সাগরনাল বন বিটের নাম না–জানা এক পাহাড়ে উঠলাম। পাহাড়ের শতবর্ষী এক পাকুড়গাছের ফল পাখিটির অত্যন্ত প্রিয়। আমাদের আগে এখানে যাঁরাই এসেছেন, তাঁরাই ওকে পাকুড়গাছে দেখেছেন। কিন্তু পুরোটা সকাল অপেক্ষা করেও ওকে পাকুড়গাছে দেখলাম না। আশপাশে আরও দু-একটা পাকুড় ও অন্যান্য বুনো ফলের গাছেও খুঁজলাম। কিন্তু ফলাফল একই।

দুপুর ১২টায় পাহাড় থেকে নেমে ছড়ার দিকে গেলাম। ছড়া ও চা-বাগানের আশপাশে ঘোরাফেরা করে তেমন কোনো পাখির দেখা না পেয়ে দুপুরের হালকা খাবার খেয়ে আবারও বেলা তিনটা নাগাদ পাহাড়ে উঠলাম। এবার গাছে বহু প্রজাতির পাখির মেলা বসেছে যেন! বিরামহীনভাবে ক্যামেরার শাটারে ক্লিক করে গেলাম। কিন্তু নীলপরির দেখা পেলাম না। বেলা ৩টা বেজে ২৫ মিনিট। পাকুড়গাছের পাশের ছোট্ট একটি গাছে সাদা-কালো পালকের খুদে একটি পাখি এসে বসল। মুহূর্তেই মনটা খুশিতে ভরে উঠল। নীলপরির দেখা না পেলেও ক্ষুদ্র এ পাখিটি আমার মন ভালো করে দিল। কারণ, এটাকেও বহুদিন ধরে খুঁজছি। আর এভাবে এখানে পেয়ে যাব ভাবতেও পারিনি। কিন্তু ক্যামেরার শাটারে মাত্র কয়েকটা ক্লিক করতেই সে উড়ে গেল। আর এল না। ৪ জানুয়ারি ২০২২ সালের ঘটনা এটি। বহুদিন পর ২০২৪ সালের ৩০ নভেম্বর পাখিটির দেখা পেলাম ঢাকার মিরপুরের জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যানে। তবে মাত্র চারটি ক্লিক করতেই লাজুক পাখিটি উড়ে গেল।

মৌলভীবাজারের সাগরনাল ও ঢাকার উদ্ভিদ উদ্যানে দেখা সাদা-কালো পাখিটি এ দেশের এক দুর্লভ পরিযায়ী পাখি পাকরা চটক বা খুদে পাকরা চটক। ইংরেজি নাম লিটল পাইড ফ্লাইক্যাচার। পশ্চিমবঙ্গে বলে সাদা-কালো চুটকি। মাসসিক্যাপিডি গোত্রের পাখিটির বৈজ্ঞানিক নাম Ficedula westermanni। উপমহাদেশের বিভিন্ন দেশসহ দক্ষিণ, পূর্ব ও দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশের পাখিটি এ দেশে আসে শীতকালে।

পাকরা চটক বড় মাথাওয়ালা গাঁট্টাগোট্টা ক্ষুদ্র পাখি। দেহের দৈর্ঘ্য ১০ থেকে ১১ সেন্টিমিটার। ওজন মাত্র ৭ থেকে ৯ গ্রাম।
স্ত্রী-পুরুষের পালকের রঙে বেশ পার্থক্য থাকে। পুরুষের মাথা-ডানা-পিঠ-লেজসহ দেহের ওপরটা কুচকুচে কালো। লম্বা-চওড়া সাদা ভ্রুটি একেবারে ঘাড় পর্যন্ত বিস্তৃত। দেহের নিচের অংশ পুরোপুরি সাদা। ডানার মাঝবরাবর ও লেজের গোড়ার দুই ধারে স্পষ্ট সাদা টান থাকে। অন্যদিকে স্ত্রীর দেহের ওপরটা বাদামি-ধূসরাভ। কপাল, চোখের চারপাশ ও কোমরের কাছে হালকা কমলা-বাদামি আভা রয়েছে। দেহের নিচটা ময়লাটে সাদা। লেজের দুই ধারে কোনো সাদা টান নেই। স্ত্রী-পুরুষনির্বিশেষে চোখ বাদামি। চঞ্চু, পা, পায়ের পাতা ও নখ কালো। অপ্রাপ্তবয়স্ক পাখির পিঠে হালকা সাদা ছিট থাকে। গলা ও বুকে আঁশসহ দেহতল কিছুটা ধূসর-বাদামি।

ঢাকার মিরপুরের উদ্ভিদ উদ্যানে পাকরা চটক.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

খুদে পাখি পাকরা চটক

প্রায় চার বছর আগের ঘটনা। অনিন্দ্যসুন্দর নীলপরির খোঁজে মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলার মুড়াছড়া ইকোপার্ক হয়ে সাগরনাল চা-বাগানে এসেছি। চা-বাগানে ঢোকার আগে হাতের বাঁয়ে ছোট্ট একটি ছড়া পেরিয়ে বনের মধ্যে ঢুকে পড়লাম। কিছু দূর হাঁটার পর সাগরনাল বন বিটের নাম না–জানা এক পাহাড়ে উঠলাম। পাহাড়ের শতবর্ষী এক পাকুড়গাছের ফল পাখিটির অত্যন্ত প্রিয়। আমাদের আগে এখানে যাঁরাই এসেছেন, তাঁরাই ওকে পাকুড়গাছে দেখেছেন। কিন্তু পুরোটা সকাল অপেক্ষা করেও ওকে পাকুড়গাছে দেখলাম না। আশপাশে আরও দু-একটা পাকুড় ও অন্যান্য বুনো ফলের গাছেও খুঁজলাম। কিন্তু ফলাফল একই।

দুপুর ১২টায় পাহাড় থেকে নেমে ছড়ার দিকে গেলাম। ছড়া ও চা-বাগানের আশপাশে ঘোরাফেরা করে তেমন কোনো পাখির দেখা না পেয়ে দুপুরের হালকা খাবার খেয়ে আবারও বেলা তিনটা নাগাদ পাহাড়ে উঠলাম। এবার গাছে বহু প্রজাতির পাখির মেলা বসেছে যেন! বিরামহীনভাবে ক্যামেরার শাটারে ক্লিক করে গেলাম। কিন্তু নীলপরির দেখা পেলাম না। বেলা ৩টা বেজে ২৫ মিনিট। পাকুড়গাছের পাশের ছোট্ট একটি গাছে সাদা-কালো পালকের খুদে একটি পাখি এসে বসল। মুহূর্তেই মনটা খুশিতে ভরে উঠল। নীলপরির দেখা না পেলেও ক্ষুদ্র এ পাখিটি আমার মন ভালো করে দিল। কারণ, এটাকেও বহুদিন ধরে খুঁজছি। আর এভাবে এখানে পেয়ে যাব ভাবতেও পারিনি। কিন্তু ক্যামেরার শাটারে মাত্র কয়েকটা ক্লিক করতেই সে উড়ে গেল। আর এল না। ৪ জানুয়ারি ২০২২ সালের ঘটনা এটি। বহুদিন পর ২০২৪ সালের ৩০ নভেম্বর পাখিটির দেখা পেলাম ঢাকার মিরপুরের জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যানে। তবে মাত্র চারটি ক্লিক করতেই লাজুক পাখিটি উড়ে গেল।

মৌলভীবাজারের সাগরনাল ও ঢাকার উদ্ভিদ উদ্যানে দেখা সাদা-কালো পাখিটি এ দেশের এক দুর্লভ পরিযায়ী পাখি পাকরা চটক বা খুদে পাকরা চটক। ইংরেজি নাম লিটল পাইড ফ্লাইক্যাচার। পশ্চিমবঙ্গে বলে সাদা-কালো চুটকি। মাসসিক্যাপিডি গোত্রের পাখিটির বৈজ্ঞানিক নাম Ficedula westermanni। উপমহাদেশের বিভিন্ন দেশসহ দক্ষিণ, পূর্ব ও দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশের পাখিটি এ দেশে আসে শীতকালে।

পাকরা চটক বড় মাথাওয়ালা গাঁট্টাগোট্টা ক্ষুদ্র পাখি। দেহের দৈর্ঘ্য ১০ থেকে ১১ সেন্টিমিটার। ওজন মাত্র ৭ থেকে ৯ গ্রাম।
স্ত্রী-পুরুষের পালকের রঙে বেশ পার্থক্য থাকে। পুরুষের মাথা-ডানা-পিঠ-লেজসহ দেহের ওপরটা কুচকুচে কালো। লম্বা-চওড়া সাদা ভ্রুটি একেবারে ঘাড় পর্যন্ত বিস্তৃত। দেহের নিচের অংশ পুরোপুরি সাদা। ডানার মাঝবরাবর ও লেজের গোড়ার দুই ধারে স্পষ্ট সাদা টান থাকে। অন্যদিকে স্ত্রীর দেহের ওপরটা বাদামি-ধূসরাভ। কপাল, চোখের চারপাশ ও কোমরের কাছে হালকা কমলা-বাদামি আভা রয়েছে। দেহের নিচটা ময়লাটে সাদা। লেজের দুই ধারে কোনো সাদা টান নেই। স্ত্রী-পুরুষনির্বিশেষে চোখ বাদামি। চঞ্চু, পা, পায়ের পাতা ও নখ কালো। অপ্রাপ্তবয়স্ক পাখির পিঠে হালকা সাদা ছিট থাকে। গলা ও বুকে আঁশসহ দেহতল কিছুটা ধূসর-বাদামি।

ঢাকার মিরপুরের উদ্ভিদ উদ্যানে পাকরা চটক

সম্পর্কিত নিবন্ধ