জুলাই সনদের আইনি ভিত্তিসহ কয়েকটি দাবিতে রাজধানীতে সাত দলের বিক্ষোভ-জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলনসহ সাতটি দল রাজধানীতে একযোগে বিক্ষোভ সমাবেশ করে জুলাই সনদের ভিত্তিতে নির্বাচন আয়োজনের দাবি জানিয়েছে। এর পাশাপাশি সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (পিআর) পদ্ধতিতে নির্বাচন অনুষ্ঠানেরও দাবি জানিয়েছে তারা।

জামায়াতে ইসলামী বলেছে, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে আলোচনার টেবিলে রাষ্ট্রকাঠামোর সংস্কার বিষয়ে সফলতা আসছে না বলেই তারা মাঠের কর্মসূচিতে গেছে। ইসলামী আন্দোলন পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন প্রশ্নে ‘গণভোট’ দাবি করে বলেছে, জনগণ না চাইলে তারা এ দাবি থেকে সরে যাবে।

বৃহস্পতিবার জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররম, জাতীয় প্রেসক্লাব ও বিজয়নগর এলাকায় সাত দলের এই বিক্ষোভ ও সমাবেশ হয়। বিক্ষোভকারী অপর দলগুলো হলো, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, খেলাফত মজলিস, নেজামে ইসলাম পার্টি, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা) ও খেলাফত আন্দোলন। সাত দলের এই কর্মসূচির সময় জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররম থেকে প্রেসক্লাব সড়কে যান চলাচল ব্যাহত হয়। সপ্তাহের শেষ কর্মদিবসে ওই এলাকায় তীব্র যানজট দেখা দেয়।

আগামী ফেব্রুয়ারিতে জুলাই সনদের ভিত্তিতে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানসহ কয়েকটি দাবিতে এই বিক্ষোভ সমাবেশ হয়। মূল দাবিগুলো হলো আগামী নির্বাচনে সংসদের উভয় কক্ষে পিআর পদ্ধতি চালু করা; অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের লক্ষ্যে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড (সবার জন্য সমান সুযোগ) নিশ্চিত করা; ফ্যাসিস্ট সরকারের সব জুলুম-নির্যাতন, গণহত্যা ও দুর্নীতির বিচার দৃশ্যমান করা এবং স্বৈরাচারের দোসর জাতীয় পার্টি ও ১৪ দলের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা।

একই দাবিতে শুক্রবার সারা দেশে সব মহানগরে এবং ২৬ সেপ্টেম্বর জেলা ও উপজেলায় বিক্ষোভ সমাবেশের কর্মসূচি রয়েছে।

জামায়াতের বিক্ষোভ–সমাবেশ

বিকেলে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ ফটকে জামায়াতের বিক্ষোভ সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন দলের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার। সেখানে ঐকমত্য কমিশনের আলোচনা চলমান অবস্থায় কেন জামায়াত মাঠের কর্মসূচিতে গেল, তার ব্যাখ্যা দেন। তিনি বলেন, ‘আলোচনার টেবিলে যাচ্ছি, কিন্তু সে আলোচনায় সফলতার মুখ দেখছি না। মনে হয়, কোনো চাপের মধ্যে পড়ে সরকার একটি শুভংকরের ফাঁকির দিকে যাচ্ছে।’

এই আন্দোলনকে ‘রাজনীতির অংশ’ উল্লেখ করে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, এই আন্দোলন জনগণের আকাঙ্ক্ষা তুলে ধরার জন্য।

সমাবেশে পিআরের পক্ষে গণভোটের দাবি করেন মিয়া গোলাম পরওয়ার। তিনি বলেন, ‘আমরা চ্যালেঞ্জ নিচ্ছি, গণভোট দিন। জনগণ যদি পিআর মানে, তো আপনাদেরও (অন্তর্বর্তী সরকার) মানতে হবে। আর জনগণ যদি বিপক্ষে যায়, আমরা জামায়াতে ইসলামী তা মেনে নেব।’

বিদ্যমান রাষ্ট্রকাঠামোতে নির্বাচন হলে আরেকটি ফ্যাসিবাদের জন্ম হবে উল্লেখ করে পরওয়ার বলেন, সংস্কার যদি এখন না হয়; রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার ভারসাম্যগুলো ঠিক করার জন্য যত সংস্কার, তা যদি নির্বাচনের আগে না হয়; বিদ্যমান রাষ্ট্রকাঠামোতে যদি আবার নির্বাচন হয়, তাহলে এই কাঠামোতে আরেকটি ফ্যাসিবাদের জন্ম হবে। আরেকটি হাসিনার জন্ম হবে। বাংলার মানুষ আর ফ্যাসিবাদ জন্ম হতে দেবে না।

জামায়াতের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আমির নুরুল ইসলাম বুলবুলের সভাপতিত্বে সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন দলের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল রফিকুল ইসলাম খান ও হামিদুর রহমান আযাদ। সমাবেশ শেষে একটি মিছিল পুরানা পল্টন মোড়, জাতীয় প্রেসক্লাব ও হাইকোর্টের সামনে দিয়ে মৎস্য ভবন মোড়ে গিয়ে শেষ হয়।

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সমাবেশ

বেলা তিনটার দিকে বায়তুল মোকাররম মসজিদের উত্তর ফটকে বিক্ষোভপূর্ব সমাবেশ করে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে দলের জ্যেষ্ঠ নায়েবে আমির সৈয়দ মুহাম্মাদ ফয়জুল করীম বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকার শুধু নির্বাচনের জন্য গঠন করা হয় নাই। তারা বসেছে সংস্কার, বিচার ও তার পরে নির্বাচনের জন্য।’ প্রধান উপদেষ্টার উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আপনি সংস্কার, দৃশ্যমান বিচার না করে কীভাবে নির্বাচন দেন?’

পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন নিয়ে বিএনপির বিরোধিতার প্রসঙ্গ তুলে ফয়জুল করীম বলেন, ‘বিএনপির একজন উঁচু পর্যায়ের নেতা বক্তব্য দিয়েছেন যে দেশের ৯০ শতাংশ ভোট তাঁদের। যদি তা-ই হয়, তাহলে পিআর পদ্ধতিতে তাঁরা আসন পাবেন ২৭০টির ওপরে। তাহলে তাঁদের এই পদ্ধতিতে সমস্যা কোথায়? বিএনপি জাতীয় সরকার গঠনের কথাও বলেছে। সেটা কীভাবে হবে, আমাকে বলেন?’

পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন প্রশ্নে ‘গণভোট’ দাবি করেন ইসলামী আন্দোলনের এই নেতা। তিনি বলেন, ‘যদি ঐকমত্য কমিশন বিষয়টি বুঝতে না পারেন, তাহলে সহজ কথা গণভোট দেন। যদি জনগণ পিআর পদ্ধতির পক্ষে না থাকে, তাহলে আমরা দাবি করব না।’

প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সংগীতের শিক্ষক নিয়োগের বিরোধিতা করে ফয়জুল করীম বলেন, ‘বিদ্যালয়গুলোতে ধর্মীয় শিক্ষক নিয়োগ দিতে হবে। সংগীত-নাচের শিক্ষক নিয়োগ দিলে আপনাদের মসনদ থাকবে না।’

সাত দলের অভিন্ন দাবিতে যুগপৎ কর্মসূচির বিষয়ে ফয়জুল করীম গণমাধ্যমকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, যুগপৎ আন্দোলন হলো একই দাবিতে যার যার মতো আন্দোলন করা। যুগপৎ আন্দোলন কারও নেতৃত্বে হয় না। সংবাদ প্রচারে আরও সতর্ক হতে হবে সাংবাদিকদের।

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি মুহাম্মদ ইমতিয়াজ আলমের সভাপতিত্বে সমাবেশে সংগঠনের কেন্দ্রীয় ও মহানগর নেতারা বক্তব্য দেন।

সমাবেশ শেষে একটি মিছিল বায়তুল মোকাররমের উত্তর ফটক থেকে শুরু হয়ে পল্টন মোড় হয়ে বায়তুল মোকাররমে এসে শেষ হয়।

বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস

জুলাই সনদের ভিত্তিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচন, উচ্চকক্ষে পিআর এবং জাতীয় পার্টিসহ ১৪ দলের রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধের দাবি জানায় মাওলানা মামুনুল হকের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস।

জুলাই সনদ বাস্তবায়িত না হলে জাতীয় বিপর্যয় অনিবার্য বলে মন্তব্য করেন দলটির মহাসচিব জালালুদ্দীন আহমদ। তিনি বলেন, রাষ্ট্রপতির সাংবিধানিক ঘোষণার মাধ্যমে অবিলম্বে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন করতে হবে এবং এর ভিত্তিতেই আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে হবে। এ ছাড়া কোনো নির্বাচনী প্রক্রিয়া দেশ ও জাতির কোনো কল্যাণ বয়ে আনবে না।

জুলাই গণহত্যার বিচারের দৃশ্যমান অগ্রগতি ছাড়া জাতীয় নির্বাচনের আয়োজন অর্থহীন হবে এবং ফ্যাসিবাদের বিচার দৃশ্যমান না হলে জাতির ঐক্য টেকসই হবে না বলেও উল্লেখ করেন জালালুদ্দীন আহমদ।

পাঁচ দফা দাবিতে বৃহস্পতিবার জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের উত্তর ফটকে থেকে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের যৌথ উদ্যোগে বিক্ষোভ মিছিল করে দলটি। বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আতাউল্লাহ আমিন, মাওলানা তোফাজ্জল হোসাইন মিয়াজি। এ সময় উপস্থিত ছিলেন দলটির ঢাকা মহানগরের নেতা–কর্মীরা।

খেলাফত মজলিস

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের দায়িত্ব গ্রহণের দাবি জানিয়েছে খেলাফত মজলিস। উচ্চকক্ষে পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন, জুলাই সনদের আইনি ভিত্তিসহ ছয় দফা দাবিতে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সমাবেশ শেষে বিক্ষোভ মিছিল করে দলটি।

দলটির মহাসচিব আহমদ আবদুল কাদের বলেন, ‘জনগণ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে দায়িত্ব দিয়েছিল ফ্যাসিবাদীদের বিচার, প্রয়োজনীয় সংস্কার এবং সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠান করার জন্য। কিন্তু আমরা দেখলাম সংস্কারের গুরুত্বপূর্ণ বেশ কিছু বিষয় পরবর্তী নির্বাচিত সরকারের হাতে ছেড়ে দেওয়ার জন্য ষড়যন্ত্র চলছে। একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য প্রশাসন এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাঙ্ক্ষিত অগ্রগতি এখনো সাধিত হয়নি।’

অতিদ্রুত জুলাই জাতীয় সনদ ঘোষণা করে তা কার্যকর করতে আইনি ভিত্তি প্রদান এবং জুলাই জাতীয় সনদের ভিত্তিতেই ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠান করার দাবি জানান আহমদ আবদুল কাদের।

বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টি

জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি, শাপলা গণহত্যা, পিলখানা ও জুলাই হত্যাযজ্ঞের দ্রুত বিচারসহ পাঁচ দফা দাবিতে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টি। দলটির ঢাকা মহানগর আয়োজিত এই সমাবেশে বক্তব্য দেন দলের সিনিয়র নায়েবে আমির আবদুল মাজেদ আতহারী, প্রধান বক্তা হিসেবে বক্তব্য দেন মহাসচিব মাওলানা মুসা বিন ইযহার।

সমাবেশে বক্তারা মৌলিক সংস্কার ও লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করে দ্রুত জাতীয় নির্বাচন, আওয়ামী ফ্যাসিবাদ ও তার দোসরদের বিচার, জাপাসহ ১৪ দলের কার্যক্রম নিষিদ্ধ এবং প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গানের শিক্ষক নিয়োগের সিদ্ধান্ত বাতিল করে ধর্মীয় শিক্ষক নিয়োগের দাবি জানান।

বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তারা বলেন, শত শত শহীদের রক্তস্নাত ৯২ ভাগ মুসলিম অধ্যুষিত বাংলাদেশের জনগণের ভাগ্য নিয়ে তামাশা করলে আরেকটি গণবিপ্লব সংঘটিত হবে। জুলাই ও শাপলার সৈনিকেরা ঘরে ফিরে যায়নি। একটা নতুন বাংলাদেশ নির্মাণ না করে এই বিপ্লবের মিশন শেষ হবে না।

জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা)

সাত দফা দাবিতে বিকেলে রাজধানীর বিজয় নগরে বিক্ষোভ মিছিল করে জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা)। এর আগে সমাবেশে দলের সহসভাপতি ও দলীয় মুখপাত্র রাশেদ প্রধান বলেন, আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টিসহ ১৪ দলের বাংলাদেশের মাটিতে রাজনীতি করার আর কোনো অধিকার নেই। তিনি বলেন, ‘হিন্দুস্তানি আপা–জাপা নিষিদ্ধ করে পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন চাই। জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি ব্যতীত জাতীয় নির্বাচন শহীদের রক্তের সঙ্গে বেইমানি। আগামী জাতীয় নির্বাচন জুলাই সনদের আলোকে হতে হবে। হিন্দুস্তানের সামনে আর মাথা নত করা যাবে না।’

দেশের চেয়ে কম মূল্যে ভারতে ইলিশ যায় কেন—এমন প্রশ্ন রাখেন রাশেদ প্রধান। শেখ হাসিনার সময় ভারতের সঙ্গে সম্পাদিত সব অসম গোপন চুক্তি জনসমক্ষে প্রকাশ করে তা বাতিলের দাবি জানান তিনি।

খেলাফত আন্দোলন

বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সমাবেশ করে খেলাফত আন্দোলন। সেখানে দলটির নেতারা জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি, নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত, শাপলার গণহত্যা থেকে চব্বিশের গণ–অভ্যুত্থান পর্যন্ত সব হত্যার দ্রুত বিচার ও সব মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার এবং চব্বিশের শহীদদের মতো শাপলা চত্বরে শহীদদের রাষ্ট্রীয় মর্যাদা প্রদানের দাবি জানান।

খেলাফত আন্দোলনের মহাসচিব মাওলানা ইউসুফ সাদেকের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য দেন দলের নায়েবে আমির মাওলানা মুজিবুর রহমান হামিদী, যুগ্ম মহাসচিব রোকনুজ্জামান রোকন, মাওলানা ফিরোজ আশরাফী প্রমুখ। বক্তারা স্কুলে গানের শিক্ষক নিয়োগের সিদ্ধান্ত বাতিল করে ধর্মীয় শিক্ষক হিসেবে আলেমদের নিয়োগের দাবি জানান।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: জ ল ই সনদ র আইন সনদ র ভ ত ত ত স ত দল র ১৪ দল র গণহত য দল র স র স মন র জন য র র জন ন র জন ইসল ম দলট র গণভ ট সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

৩০০ আসনে প্রার্থী বাছাই প্রায় চূড়ান্ত: তারেক রহমান

জনগণকে সঙ্গে নিয়ে বিএনপি আসন্ন নির্বাচন উপলক্ষে সম্ভাব্য সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করছে বলে জানিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।

তিনি বলেন, “দেশের ৩০০ সংসদীয় আসনে বিএনপি দলীয় প্রার্থী কিংবা বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীদের মনোনয়ন চূড়ান্ত করার প্রক্রিয়া প্রায় চূড়ান্ত ধাপে রয়েছে।”

আরো পড়ুন:

বরগুনায় জামায়াতে যোগ দিলেন বিএনপির বহিষ্কৃত নেতা মামুন 

জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবসের কর্মসূচি ঘোষণা বিএনপির 

রবিবার (২ নভেম্বর) সন্ধ্যায় রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে প্রবাসে বিএনপির সদস্যপদ নবায়ন ও নতুন সদস্য সংগ্রহ কর্মসূচির অনলাইন পেমেন্ট গেটওয়ে কার্যক্রম উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন তারেক রহমান। লন্ডন থেকে ভার্চ্যুয়ালি অনুষ্ঠানে যুক্ত হন তিনি।

প্রতিটি নির্বাচনী আসনে বিএনপির একাধিক প্রার্থী মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন জানিয়ে দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, “দেশের প্রতিটি সংসদীয় আসনে বিএনপির একাধিক যোগ্য এবং জনপ্রিয় প্রার্থী থাকা সত্ত্বেও প্রতিটি মানুষকে নিশ্চয়ই মনোনয়ন দেওয়া সম্ভব নয়। ভিন্ন রাজনৈতিক দলের যারা ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে আমাদের সঙ্গে রাজপথের সঙ্গী ছিলেন, এমন প্রার্থীকেও বিএনপি সমর্থন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।”

এই বাস্তবতার কারণে হয়তো কিছু সংসদীয় সংসদীয় আসনে বিএনপি দলীয় প্রার্থী মনোনয়ন বঞ্চিত হবেন জানিয়ে তারেক রহমান বলেন, “বিএনপির সর্বস্তরের নেতাকর্মী, সমর্থকদের কাছে আমাদের প্রত্যাশা, দেশ ও জনগণের বৃহত্তর স্বার্থে, গণতন্ত্রের স্বার্থে আপনারা এই বাস্তবতাকে মেনে নেবেন।”

জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়ে জনমনে সৃষ্ট সংশয়, সন্দেহ গণতন্ত্রে উত্তরণের পথকে সংকটপূর্ণ করে তুলতে পারে মন্তব্য করে তারেক রহমান বলেন, “দেশে প্রতিনিয়ত একের পর এক নিত্য নতুন শর্ত জুড়ে দিয়ে গণতন্ত্র উত্তরণের পথকে সংকটাপূর্ণ করে তোলা হচ্ছে। তবে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী শক্তিতে বিশ্বাসী নাগরিকেরা ঐক্যবদ্ধ থাকলে কোনো ষড়যন্ত্রই বিএনপিকে জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন করতে পারবে না।”

আসন্ন জাতীয় নির্বাচন নিয়ে মানুষের উদ্বেগের কথা তুলে ধরে তারেক রহমান বলেন, “পরাজিত পলাতক স্বৈরাচারের শাসন আমলে জনগণের জাতীয় নির্বাচন নিয়ে কোনোই আগ্রহ ছিল না। বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময় জনমনে কোনো কোনো ক্ষেত্রে জিজ্ঞাসা বাড়ছে, যথাসময়ে কি নির্বাচন হবে?... এমন তো হবার কথা ছিল না।”

বিএনপির বিজয় ঠেকাতে অপপ্রচার ও অপকৌশল দৃশ্যমান হতে শুরু করেছে বলে উল্লেখ করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, “উদ্বেগ এবং আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে, ফ্যাসিবাদমুক্ত বাংলাদেশেও বর্তমানে বিএনপির বিজয় ঠেকাতে সংঘবদ্ধ অপপ্রচার এবং অপকৌশল দৃশ্যমান হতে শুরু করেছে।”

শুধু বিএনপির বিজয় ঠেকাতে গিয়ে পতিত পরাজত পলাতক স্বৈরাচার দেশে ‘ফ্যাসিবাদ কায়েম করেছিল’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, “বিগত ১৫ বছরে দেশের নির্বাচনী ব্যবস্থাকে সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করা হয়েছে।”

প্রতিষ্ঠার পর থেকে বিভিন্ন সময়ে বিএনপি দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছে মন্তব্য করে তারেক রহমান জানান, তবে বিএনপির প্রতি দেশের গণতন্ত্র ও স্বাধীনতাপ্রিয় জনগণের আস্থা, ভালোবাসা থাকায় সে সংকট কাটিয়েছে তার দল।

তারেক রহমান বলেন, “দায়িত্বশীল রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপি শুরু থেকেই ফ্যাসিবাদবিরোধী জাতীয় ঐক্য বজায় রাখার স্বার্থে সর্বোচ্চ ছাড় দিয়ে একদিকে গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সমঝোতার পথ বেছে নিয়েছে। অপরদিকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকেও যতটুকু সম্ভব, যতটুকু যথাসাধ্য সম্ভব আমাদের অবস্থান থেকে আমরা সহযোগিতা করে আসছি।”

দেশে নারীদের নিরাপত্তার বিষয়ে সামাজিক উদাসীনতা প্রকট হয়ে উঠছে উল্লেখ করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এ সংক্রান্ত গণমাধ্যমের প্রতিবেদন তুলে ধরে বলেন, “নারী ও শিশুদের জন্য নিরাপত্তাহীন সমাজ নিশ্চয়ই সভ্য সমাজ হিসেবে গণ্য হতে পারে না।”

সেজন্য তিনি জাতীয়তাবাদী মহিলা দলসহ বাংলাদেশের সচেতন নারী সমাজকে তাদের দাবি সরকারের কাছে তুলে ধরার আহ্বান জানান।

অনুষ্ঠানের শুরুতে অনলাইনে বিএনপির প্রাথমিক সদস্যপদ গ্রহণ এবং তার ফি পরিশোধের প্রক্রিয়া নিয়ে একটি ভিডিওচিত্র প্রদর্শন করা হয়। তাতে বলা হয়, এখন থেকে বিশ্বের যেকোনো দেশ থেকে অনলাইনে বিএনপির দলীয় ওয়েবসাইটে গিয়ে সদস্যপদ গ্রহণ করা যাবে।

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য দেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, এ জে ড এম জাহিদ হাসান, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা হুমায়ুন কবির, মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক মওদুদ আলমগীর হোসেন প্রমুখ।

ঢাকা/নঈমুদ্দীন/সাইফ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • উজানে বাঁধ ও জলবিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে মারাত্মক সংকটে তিস্তা নদী
  • ভুল শুধরে জনগণের আস্থা ফেরানোর সুযোগ এই নির্বাচন: আইজিপি
  • ৩০০ আসনে প্রার্থী বাছাই প্রায় চূড়ান্ত: তারেক রহমান
  • ইরান পারমাণবিক স্থাপনাগুলো আরো শক্তিশালী করে পুনর্নির্মাণ করবে
  • জ্বালানি সুবিচার নিশ্চিতে সংগ্রাম, শপথ যুব সংসদের সদস্যদের
  • বন্দরে বিএনপি নেতা তাওলাদের উপর হামলাকারীদের গ্রেপ্তারে আল্টিমেটাম
  • বিএনপি ও জামায়াত কে কোন ফ্যাক্টরে এগিয়ে
  • অন্তর্বর্তী সরকার জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করেছে: ফখরুল
  • সরকার নিরপেক্ষতা হারালে জনগণ মাঠে নামবে: তাহের
  • সংস্কার ইস্যুতে সব দল ঐক্যবদ্ধ থাকলেও বিএনপি অবস্থান পরিবর্তন করে