চাহিদা থাকলেও ট্রাকে টিসিবির পণ্য বিক্রি বন্ধ
Published: 19th, September 2025 GMT
সম্প্রতি সামান্য কমলেও প্রায় তিন বছর ধরে দেশে মূল্যস্ফীতির হার ১০ শতাংশের আশপাশে। দীর্ঘ এই মূল্যস্ফীতির চাপে পড়ে তিন বছরে দেশে দারিদ্র্যের হার ১০ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৮ শতাংশ। আর উচ্চ মূল্যস্ফীতির বাজারে খাবারের জোগান দিতে পরিবারের আয়ের প্রায় ৫৫ শতাংশ ব্যয় হয়ে যাচ্ছে।
অর্থনৈতিক এমন চাপ থেকে স্বল্প মানুষদের কিছুটা স্বস্তি দিতে সরকার ভর্তুকি মূল্যে ট্রাকে পণ্য বিক্রি করে থাকে। কিন্তু চাহিদা সত্ত্বেও এক মাস বিক্রির পর এ মাসের ১৩ তারিখ ট্রাক সেল বন্ধ করেছে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, শহরাঞ্চলে সামাজিক সুরক্ষার তেমন কোনো কর্মসূচি নেই। তাই উচ্চ মূল্যস্ফীতির এই সময়ে কম আয়ের মানুষদের স্বস্তি দিতে টিসিবির ট্রাক সেল অব্যাহত রাখা উচিত। তবে বাজেটের সীমাবদ্ধতা এবং ব্যাপক ভর্তুকির কথা বলছেন সরকারি কর্মকর্তারা।
এ পণ্য বিক্রির জন্য ২০২২-২৩ অর্থবছরে সরকার টিসিবিকে ১ হাজার ১৮১ কোটি টাকা ভর্তুকি দেয়। আর কার্যক্রম সম্প্রসারণ করায় গত অর্থবছরে ভর্তুকির পরিমাণ দাঁড়িয়েছিল প্রায় সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা।গত এক মাসের টিসিবির ট্রাক সেলের সামনে সাধারণ মানুষের দীর্ঘ সারি ছিল নিয়মিত চিত্র। ঢাকায় ৬০টি ভ্রাম্যমাণ ট্রাকে ভর্তুকি মূল্যে পণ্য বিক্রি করা হয়। এ পণ্য বিক্রির জন্য ২০২২-২৩ অর্থবছরে সরকার টিসিবিকে ১ হাজার ১৮১ কোটি টাকা ভর্তুকি দেয়। আর কার্যক্রম সম্প্রসারণ করায় গত অর্থবছরে ভর্তুকির পরিমাণ দাঁড়িয়েছিল প্রায় সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা।
ওএমএসের ট্রাকে ৩০০ লোকের জন্য চাল ও ৫০০ লোকের জন্য আটা থাকে। এক ব্যক্তি পাঁচ কেজি চাল ও চার কেজি আটা কিনতে পারেন। তাতে ব্যয় হয় ২৬০ টাকা, যা বাইরে থেকে কিনলে প্রায় ৫০০ টাকা লাগে।২০২২ সালের পর থেকে টিসিবি ট্রাক সেল থেকে কার্ড ব্যবস্থায় চলে যায়। সারা দেশে ১ কোটি ফ্যামিলি কার্ডের মাধ্যমে সাশ্রয়ী মূল্যে পণ্য বিক্রি শুরু করে। নিত্যপণ্যের বার্ষিক বিক্রি এক লাখ টন থেকে বাড়িয়ে এখন তা প্রায় পাঁচ লাখ টনের লক্ষ্যমাত্রায় উন্নীত করেছে সংস্থাটি।
টিসিবির তথ্যমতে, একটি ট্রাকে ৫০০ জনের জন্য পণ্য থাকে। যেখান থেকে একজন ক্রেতা দুই কেজি মসুর ডাল, দুই লিটার সয়াবিন তেল ও এক কেজি চিনি কিনতে পারেন। তাতে মোট ব্যয় হয় ৪৫০ টাকা। বাইরে থেকে এ পণ্য কিনতে ৬২০-৬৫০ টাকা লাগে। অন্যদিকে ওএমএসের ট্রাকে ৩০০ লোকের জন্য চাল ও ৫০০ লোকের জন্য আটা থাকে। এক ব্যক্তি পাঁচ কেজি চাল ও চার কেজি আটা কিনতে পারেন। তাতে ব্যয় হয় ২৬০ টাকা, যা বাইরে থেকে কিনলে প্রায় ৫০০ টাকা লাগে।
ফ্যামিলি কার্ড চালুর পর থেকে আমরা ট্রাক সেল থেকে সরে এসেছি। কিন্তু রমজান ও ঈদকে কেন্দ্র করে তা সীমিত সময়ের জন্য চালু করা হয়েছিল। আমাদের ভর্তুকির নির্দিষ্ট একটি পরিমাণ রয়েছে। এক কোটি পরিবারের ক্রয় ও বিতরণের জন্য লোকবল নিয়ে আমাদের হিমশিম খেতে হয়।টিসিবির মুখপাত্র ও উপপরিচালক (বাণিজ্যিক) মো.শাহাদত হোসেন
বিপুল চাহিদা সত্ত্বেও টিসিবি কেন নিয়মিত ট্রাক সেল করছে না—এমন প্রশ্নের জবাবে টিসিবির মুখপাত্র ও উপপরিচালক (বাণিজ্যিক) মো. শাহাদত হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘ফ্যামিলি কার্ড চালুর পর থেকে আমরা ট্রাক সেল থেকে সরে এসেছি। কিন্তু রমজান ও ঈদকে কেন্দ্র করে তা সীমিত সময়ের জন্য চালু করা হয়েছিল। আমাদের ভর্তুকির নির্দিষ্ট একটি পরিমাণ রয়েছে। এক কোটি পরিবারের ক্রয় ও বিতরণের জন্য লোকবল নিয়ে আমাদের হিমশিম খেতে হয়। সব মিলিয়ে এটা কত দিন চলবে বা আবার কবে শুরু হবে, সেটা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তের বিষয়।’
ট্রাক সেলে ব্যাপক ভর্তুকি লাগে। ক্রয় আর বিক্রয়ের মধ্যে ২০ টাকা পার্থক্য থাকলেও হতো, কিন্তু আমাদের ভর্তুকির পরিমাণ প্রায় অর্ধেক। আমাদের বাজেটের সীমাবদ্ধতা আছে, তাই চাহিদা থাকলেও সারা বছর এটা চালানো যায় না। তবে বিশেষ বিবেচনায় রমজানের আগে হয়তো আবার চালু করা হবে।বাণিজ্যসচিব মাহবুবুর রহমানবিবিএসের তথ্য বলছে, গত আগস্ট মাসে দেশের সার্বিক মূল্যস্ফীতি ছিল ৮ দশমিক ২৯ শতাংশ। এই মূল্যস্ফীতির পেছনে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রেখেছে খাদ্য মূল্যস্ফীতি বা খাদ্যপণ্যের দাম।
এ বিষয়ে বেসরকারি গবেষণাপ্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, গ্রামে বিভিন্ন ধরনের সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি থাকলেও শহরে এমন কর্মসূচি নেই বললেই চলে। তাই উচ্চ মূল্যস্ফীতির সময়ে যখন মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমছে, তখন স্বস্তি দেওয়ার জন্য ট্রাক সেল অব্যাহত রাখা উচিত। অনেক মধ্যবিত্তও টিসিবির লাইনে দাঁড়াচ্ছিল। তাই কম আয়ের মানুষের এলাকায় এটা চালু রাখা প্রয়োজন।
সম্প্রতি বেসরকারি গবেষণাপ্রতিষ্ঠান পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টারের (পিপিআরসি) এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, দেশে এখন দারিদ্র্যের হার ২৭ দশমিক ৯৩ বা প্রায় ২৮ শতাংশ। সরকারি হিসাবে ২০২২ সালে এই হার ছিল ১৮ দশমিক ৭। আর একই সময়ে অতি দারিদ্র্যের হার ৫ দশমিক ৬ থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ৩৫ শতাংশে। প্রতিবেদনে দেখা গেছে, দেশের ১৮ শতাংশ মানুষ রয়েছে অর্থনৈতিকভাবে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায়। আর একটি পরিবারের মাসের মোট খরচের প্রায় ৫৫ শতাংশ চলে যায় খাবারের পেছনেই।
গ্রামে বিভিন্ন ধরনের সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি থাকলেও শহরে এমন কর্মসূচি নেই বললেই চলে। তাই উচ্চ মূল্যস্ফীতির সময়ে যখন মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমছে, তখন স্বস্তি দেওয়ার জন্য ট্রাক সেল অব্যাহত রাখা উচিত। অনেক মধ্যবিত্তও টিসিবির লাইনে দাঁড়াচ্ছিল। তাই কম আয়ের মানুষের এলাকায় এটা চালু রাখা প্রয়োজন।সিপিডি সম্মাননীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানসবজির দাম বেশি থাকায় মানুষ বিকল্প হিসেবে ডিম খাওয়া বাড়িয়ে দেন। কিন্তু এখন ডিমের দামও বেড়েছে। বর্তমানে ফার্মের মুরগির এক ডজন ডিম ১৪০-১৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পাড়া-মহল্লায় দাম আরও কিছুটা বেশি। এ ছাড়া পাঙাশ ছাড়া অধিকাংশ মাছের কেজি ২০০ টাকা ছাড়িয়ে গেছে।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে বাণিজ্যসচিব মাহবুবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘ট্রাক সেলে ব্যাপক ভর্তুকি লাগে। ক্রয় আর বিক্রয়ের মধ্যে ২০ টাকা পার্থক্য থাকলেও হতো, কিন্তু আমাদের ভর্তুকির পরিমাণ প্রায় অর্ধেক। আমাদের বাজেটের সীমাবদ্ধতা আছে, তাই চাহিদা থাকলেও সারা বছর এটা চালানো যায় না। তবে বিশেষ বিবেচনায় রমজানের আগে হয়তো আবার চালু করা হবে।’
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র জন য চ ল ল ক র জন য পর ব র র র রহম ন স বস ত থ কল ও রমজ ন দশম ক সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিতে আবেদন আজ বিকেলে, ক্লাস ১৩ নভেম্বর
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজগুলোতে ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে প্রথম বর্ষ স্নাতক (পাস) প্রোগ্রামে ভর্তি কার্যক্রম আজ মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) বিকেল ৪টা থেকে শুরু হচ্ছে। আবেদন করা যাবে আগামী ১৫ অক্টোবর রাত ১২টা পর্যন্ত। এ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের ক্লাস শুরু হবে ১৩ নভেম্বর থেকে। গত রোববার (১৪ সেপ্টেম্বর) জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে এসব কথা বলা হয়েছে।
ভর্তির জন্য আবেদন করতে পারবেন যেসব শিক্ষার্থী
২০২০, ২০২১ ও ২০২২ সালের এসএসসি বা সমমান এবং ২০২২, ২০২৩ ও ২০২৪ সালের এইচএসসি বা সমমান পরীক্ষায় উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীরা আবেদন করতে পারবেন ভর্তির জন্য। কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের এইচএসসি (ভোকেশনাল), এইচএসসি (বিজনেস ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড টেকনোলজি) ও ডিপ্লোমা-ইন-কমার্স উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীরাও আবেদন করতে পারবেন। এ-লেভেল, ও-লেভেল ও বিদেশি সনদধারীদের ক্ষেত্রে নির্ধারিত নিয়মে সরাসরি ডিন অফিসে বা ই–মেইলে আবেদন করতে হবে শিক্ষার্থীদের।
যেসব শিক্ষার্থী গত দুই শিক্ষাবর্ষে (২০২২-২৩ ও ২০২৩-২৪) স্নাতক (সম্মান), স্নাতক (সম্মান) প্রফেশনাল বা স্নাতক (পাস) প্রোগ্রামে ভর্তি হয়ে রেজিস্ট্রেশন কার্ড পেয়েছেন, তাঁরা এই শিক্ষাবর্ষে নতুন করে ভর্তি হতে পারবেন না। তবে পূর্ববর্তী ভর্তি বাতিল করে নতুন শিক্ষাবর্ষে আবেদন করতে পারবেন। একই সঙ্গে কোনো শিক্ষার্থী দ্বৈত ভর্তি হলে তাঁর উভয় ভর্তি ও রেজিস্ট্রেশন বাতিল হবে।
আবেদন ফি ৪০০ টাকা
ভর্তি ফি হিসেবে প্রাথমিক আবেদন ফি ৪০০ টাকা, যার মধ্যে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অংশ ২৫০ টাকা এবং কলেজের অংশ ১৫০ টাকা। ভর্তি নিশ্চিত হওয়ার পর রেজিস্ট্রেশন ফি ৭২০ টাকা জমা দিতে হবে। কলেজ কর্তৃপক্ষ আবেদনকারীর তথ্য যাচাই করে অনলাইনে নিশ্চয়ন করবে। তবে নিশ্চয়ন ছাড়া কোনো আবেদনকারীকে মেধাতালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হবে না। আবেদন ফি ১৯ অক্টোবরের মধ্য জমা দিতে হবে।
আরও পড়ুনবাংলাদেশ বিমানে ইন্টার্নশিপ, দৈনিক হাজিরায় সম্মানী ৬০০ টাকা৪ ঘণ্টা আগেআবেদনকারীদের এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে প্রতিটি কলেজের জন্য আলাদাভাবে কোর্সভিত্তিক মেধাতালিকা প্রণয়ন করা হবে। একই মেধা নম্বরপ্রাপ্ত হলে এসএসসি ও এইচএসসির জিপিএ (৪০: ৬০ অনুপাতে) এবং প্রয়োজনে মোট নম্বরের ভিত্তিতে মেধাক্রম নির্ধারণ করা হবে। এরপরও সমতা থাকলে বয়স কম শিক্ষার্থীকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। ভর্তি কার্যক্রম ধাপে ধাপে প্রথম মেধাতালিকা, দ্বিতীয় মেধাতালিকা, কোটার মেধাতালিকা এবং প্রথম ও দ্বিতীয় রিলিজ স্লিপের মাধ্যমে সম্পন্ন হবে। তবে এবারও তৃতীয় রিলিজ স্লিপে আবেদন করার সুযোগ থাকবে না।
বিস্তারিত দেখুন এখানে
আরও পড়ুনবিনা মূল্যে ফ্রিল্যান্সিং প্রশিক্ষণ, সুযোগ পাবেন ৪৮ জেলার যুবরা১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫আরও পড়ুন১২ দিনের ছুটিতে যাচ্ছে সরকারি নিম্ন মাধ্যমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫