পুলিশের খাতায় নাম তাঁর রাবেয়া, কারাগারে মর্তুজা
Published: 19th, September 2025 GMT
ইয়াবাসহ এক নারীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তবে চালাকি করে পুলিশের কাছে নিজের পরিচয় গোপন করেন ওই নারী, দেন ভুল নাম-ঠিকানা। পুলিশও সেই নাম-ঠিকানা অনুযায়ী মামলা করে। মাদক মামলাটিতে কারাগারে যাওয়ার ২৭ দিনের মাথায় ওই নারী জামিনে মুক্তি পান। এরই মধ্যে মামলার তদন্তের অংশ হিসেবে পরিচয় যাচাইয়ের জন্য আসামির নাম-ঠিকানা সংশ্লিষ্ট থানায় পাঠান তদন্ত কর্মকর্তা। তবে সেখান থেকে জানানো হয়, ঠিকানাটিতে ওই নামের কোনো নারীই নেই।
গত ১৯ আগস্ট চট্টগ্রাম নগরের বাকলিয়া গোলচত্বর এলাকায় ঢাকাগামী একটি যাত্রীবাহী বাস থেকে ৩১০টি ইয়াবাসহ ওই নারী গ্রেপ্তার হন। মামলার এজাহারে তাঁর নাম লেখা হয়েছে রাবেয়া বেগম, বাবার নাম ফরিদুল আলম, বাড়ি কক্সবাজার জেলার রামু থানার হোয়াইগারকাটা গ্রামে। মামলার বাদী বাকলিয়া থানার উপপরিদর্শক কিশোর মজুমদার।
এদিকে পুলিশ খুঁজে না পেলেও কারাগারে নেওয়া আঙুলের ছাপে ওই নারীর আসল পরিচয় উঠে আসে। জাতীয় পরিচয়পত্রের ডেটাবেজ (তথ্যভান্ডার) অনুযায়ী, ইয়াবাসহ গ্রেপ্তার ওই নারীর নাম বেগম মর্তুজা হোসাইন। তিনি কক্সবাজারের সদর উপজেলার দক্ষিণ মুহুরীপাড়ার নুর হোসেনের স্ত্রী। তাঁর বাবার নাম মাহবুবুল আলম।
প্রথমে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে জামিনের আবেদন করেন ওই নারী। সেখানে নামঞ্জুর হলে গত ২৭ আগস্ট মহানগর দায়রা জজ আদালতে আবেদন করা হয়। সেখানেও জামিন আবেদন নামঞ্জুর হয়। পরে গত সোমবার একই আদালত তাঁকে জামিন দেন। সেদিনই কারাগার থেকে বেরিয়ে যান ওই নারী।কারা কর্তৃপক্ষ ও আদালত সূত্রে জানা গেছে, গ্রেপ্তারের পরদিন ২০ আগস্ট মাদক মামলার আসামি ওই নারীকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়। এরপর প্রথমে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে জামিনের আবেদন করেন ওই নারী। সেখানে নামঞ্জুর হলে ২৭ আগস্ট মহানগর দায়রা জজ আদালতে আবেদন করা হয়। সেখানেও জামিন আবেদন নামঞ্জুর হয়। পরে গত সোমবার একই আদালত তাঁকে জামিন দেন। সেদিনই কারাগার থেকে বেরিয়ে যান ওই নারী।
ভুল নাম-ঠিকানা দিয়ে ওই নারীকে আসামি করা প্রসঙ্গে জানতে চাওয়া হয় বাকলিয়া থানার উপপরিদর্শক কিশোর মজুমদারের কাছে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, আটকের পর আসামি যে নাম-ঠিকানা বলেছেন, সেই অনুযায়ী এজাহারে লেখা হয়েছে। আসামি সঠিকভাবে নাম-ঠিকানা দিয়েছেন কি না কীভাবে নিশ্চিত হয়েছেন, এমন প্রশ্নের উত্তরে কিশোর মজুমদার বলেন, আসামিকে আদালতে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে পাঠানোর তাগিদ থাকায় দ্রুত এজাহার দিয়ে দেওয়া হয়।
মামলাটির তদন্ত করছেন বাকলিয়া থানার উপপরিদর্শক ফরহাদ মকিম। জানতে চাইলে ফরহাদ মকিম প্রথম আলোকে বলেন, ওই আসামির প্রকৃত নাম-ঠিকানা তিনি জানেন না। এজাহারে থাকা ঠিকানা সঠিক নয় বলে সংশ্লিষ্ট থানার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। তাই মুঠোফোন নম্বরের সূত্র ধরে ওই নারীর ঠিকানা বের করার চেষ্টায় রয়েছেন তিনি। কারাগারে আঙুলের ছাপে ওই নারীর প্রকৃত পরিচয় উঠে আসার বিষয়টিও জানা নেই বলে জানান ফরহাদ হাকিম।
আসামি স্বীকার করেছেন জামিনে বেরিয়ে যাতে আর ধরা না পড়েন, সে জন্য আসল পরিচয় গোপন রেখে ভুয়া নাম-ঠিকানা দিয়েছেন।—মো.ইকবাল হোসেন, জ্যেষ্ঠ তত্ত্বাবধায়ক, চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার।
কারা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জাতীয় পরিচয়পত্রের ডেটাবেজে (তথ্যভান্ডার) ভোটারদের আঙুলের ছাপ সংরক্ষিত আছে। এ পদ্ধতিকে বলা হয় ফিঙ্গারপ্রিন্ট আইডেনটিফিকেশন অ্যান্ড ভেরিফিকেশন সিস্টেম। ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে এ পদ্ধতি ব্যবহার শুরু করে চট্টগ্রাম কারা কর্তৃপক্ষ। এরই মধ্যে আঙুলের ছাপে ধরা পড়েছে অনেক বন্দীর আসল পরিচয়। এসব ঘটনায় মামলাও হয়েছে। ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত আত্মসমর্পণ করে জালিয়াতির মাধ্যমে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে আসা ১৭ জনকে আঙুলের ছাপের মাধ্যমে শনাক্ত করা হয়।
চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের জ্যেষ্ঠ তত্ত্বাবধায়ক মো. ইকবাল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, কারাগারে আসা অন্য নতুন আসামির মতো বন্দী রাবেয়া বেগমেরও আঙুলের ছাপ নেওয়া হয়। কিন্তু সেখানে তাঁর জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী ভিন্ন নাম-ঠিকানা আসে। তাঁর প্রকৃত নাম পাওয়া যায় বেগম মর্তুজা হোসাইন। বিষয়টি চিঠি দিয়ে ২৮ আগস্ট আদালতকে জানানো হয়েছে। ইকবাল হোসেন আরও বলেন, আসামি স্বীকার করেছেন জামিনে বেরিয়ে যাতে আর ধরা না পড়েন, সে জন্য আসল পরিচয় গোপন রেখে ভুয়া নাম-ঠিকানা দিয়েছেন।
চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি আবদুস সাত্তার প্রথম আলোকে বলেন, গ্রেপ্তারের পর আসামি যে নাম-ঠিকানা দেন, তা তাৎক্ষণিকভাবে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি কিংবা চৌকিদারের সঙ্গে যোগাযোগ করে যাচাই-বাছাই করা উচিত। ভুয়া ঠিকানায় আসামির বিরুদ্ধে পরোয়ানা গেলে আর খুঁজে পাওয়া যায় না। এ ছাড়া আসামির স্বজনদের সঙ্গে যোগাযোগ করে জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর নিয়ে সঠিক নাম-ঠিকানা দেওয়া যায়। তিনি আরও বলেন, এজাহারে নাম-ঠিকানা লেখার আগে পুলিশকে আরও সতর্ক হওয়া উচিত। একই সঙ্গে গাফিলতিকারী পুলিশ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। না হলে এ ধরনের ঘটনা বাড়তে থাকবে।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: প রথম আল ক ওই ন র র ন ওই ন র আস ম র অন য য় ব কল য় আগস ট
এছাড়াও পড়ুন:
ঢাকাসহ সারা দেশে যৌথ বাহিনীর অভিযানে আটক ২৯
রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে অভিযান চালিয়ে ৮ দিনে ২৯ জনকে আটক করেছে যৌথ বাহিনী। এ সময় তাঁদের কাছ থেকে অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র, গোলাবারুদ, ম্যাগাজিন, দেশীয় অস্ত্র, মাদকসহ বিভিন্ন মালামাল উদ্ধার করা হয়েছে।
আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) বৃহস্পতিবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, ১১ থেকে ১৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বিভিন্ন পদাতিক ডিভিশন ও স্বতন্ত্র ব্রিগেডের অধীন ইউনিটগুলো ও অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সমন্বয়ে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় যৌথ অভিযান পরিচালনা করে। এসব অভিযানে শীর্ষ সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ, অবৈধ অস্ত্রধারী, মাদক ব্যবসায়ী, চোর, প্রতারক, কিশোর গ্যাংয়ের সদস্য, মাদকাসক্তসহ ২৯ জনকে আটক করা হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানানো হয়, আটক হওয়া ব্যক্তিদের কাছ থেকে ৫টি অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র, ১টি ম্যাগাজিন, ১০টি গুলি, দেশীয় অস্ত্র, মাদক, জাল পরিচয়পত্র, সামরিক বাহিনীর ক্যাপ্টেন পদমর্যাদার পরিচয়পত্র, জাল ক্রেডিট ও ডেবিট কার্ড, রুপা, মুঠোফোনসহ বিভিন্ন চোরাই মালামাল ও নগদ টাকা উদ্ধার করা হয়েছে।
আটক ব্যক্তিদের প্রয়োজনীয় জিজ্ঞাসাবাদ ও পরবর্তী আইনি কার্যক্রমের জন্য সংশ্লিষ্ট এলাকার থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে বলে জানিয়েছে আইএসপিআর।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, দেশব্যাপী জননিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী বিভিন্ন এলাকায় নিয়মিত টহল ও নিরাপত্তা কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এ ছাড়া শিল্পাঞ্চলে শ্রমিক অসন্তোষ নিয়ন্ত্রণে সেনাবাহিনী সম্পৃক্ত রয়েছে। সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর এ ধরনের অভিযান অব্যাহত থাকবে।
সাধারণ মানুষকে যেকোনো সন্দেহজনক কর্মকাণ্ডের বিষয়ে কাছের সেনা ক্যাম্পে তথ্য দিতে অনুরোধ জানানো হয়েছে।