প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহ তাআলা কিয়ামতের দিন বলবেন, “হে আদম সন্তান! আমি অসুস্থ ছিলাম, তুমি আমাকে সেবা করোনি।” বান্দা বলবে, “হে প্রভু! আপনি তো সব সৃষ্টির প্রতিপালক, আমি কীভাবে আপনার সেবা করব?” তখন আল্লাহ তাআলা বলবেন, “আমার অমুক বান্দা অসুস্থ হয়েছিল, তুমি তার সেবা করোনি। তুমি যদি তার সেবা করতে, তাহলে আমার সেবা করা হতো!”’ (মুসলিম)

নবীজি (সা.

) আরও বলেছেন, ‘এক মুমিনের ওপর অপর মুমিনের ছয়টি হক রয়েছে। এর অন্যতম হলো কোনো মুসলমান অসুস্থ হলে তার সেবা করা।’ তিরমিজি ও নাসায়ি)।

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যখন কোনো বান্দা তার অসুস্থ মুসলিম ভাইকে দেখতে যায় অথবা তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে যায়, তখন একজন ফেরেশতা আকাশ থেকে উচ্চস্বরে বলেন, “তুমি ভালো থাকো, তোমার কর্ম ভালো হলো, তুমি জান্নাতে স্থান করে নিয়েছ।”’ (তিরমিজি)

রাসুলুল্লাহ (সা.) যখন কোনো অসুস্থ ব্যক্তিকে দেখতে যেতেন, তখন তার শিয়রে বসতেন। এরপর তিনি সাতবার বলতেন, ‘আসআলুল্লাহাল আজিম, রাব্বাল আরশিল আজিম, আন্ ইয়াশফিয়াক।’ (অর্থ আরশে আজিমের মালিক মহান আল্লাহর কাছে তোমার সুস্থতার জন্য দোয়া করছি।)

নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘যদি তার মৃত্যু নির্ধারিত না হয়ে থাকে, তবে সে অবশ্যই সুস্থ হয়ে যাবে।’ (তিরমিজি: ২০৮৩, আবু দাউদ: ৩১০৬)

হজরত আয়েশা (রা.) বর্ণনা করেছেন, ‘আমাদের কারও অসুখ (কষ্ট) হলে রাসুলুল্লাহ (সা.) তাঁর ডান হাত রোগীর গায়ে বুলিয়ে দিয়ে বলতেন, “আজহিবিল-বা’স, রব্বান-নাস, ওয়াশফি, আনতাশ-শাফি, লা শিফা’আ ইল্লা শিফাউক, শিফাউঁ লা ইউগাদিরু সাকামা।”’ (অর্থ: হে মানুষের রব! এই ব্যক্তির কষ্ট দূর করে দিন। তাকে সুস্থ করে দিন। নিরাময়ের মালিক কেবল আপনিই। আপনার নিরাময় ছাড়া আর কোনো নিরাময় নেই। এমন নিরাময় দিন, যা কোনো রোগকে অবশিষ্ট রাখে না।)

(বুখারি: ৫৭৫০, মুসলিম: ২১৯১, ইবনে মাজাহ: ৩৫২০, মুসনাদে আহমাদ: ২৪৭৭৬, নাসায়ি: ৭৪৬৬)

নবীজি (সা.) আরও বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি এমন রোগীকে দেখতে গেল, যার শেষ সময় এখনো আসেনি, সে যেন তার সামনে উপরিউক্ত দোয়াটি সাতবার পড়ে; তাহলে তাকে নিশ্চয়ই রোগমুক্তি দান করা হবে।’ (আবু দাউদ: ৩১০৬)

অসুস্থ ব্যক্তিকে দেখতে যাওয়ার অনেক ফজিলত রয়েছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি সকালবেলায় কোনো অসুস্থ মুসলমানকে দেখতে যায়, ৭০ হাজার ফেরেশতা সন্ধ্যা পর্যন্ত তার জন্য দোয়া করতে থাকেন। আর বিকেলে রোগী দেখতে গেলে সকাল পর্যন্ত ৭০ হাজার ফেরেশতা তার জন্য দোয়া করতে থাকেন।’ (তিরমিজি: ৯৬৭)

আরও বর্ণিত আছে, ‘যে ব্যক্তি কোনো অসুস্থ ব্যক্তি বা কোনো মুসলমান ভাইকে দেখতে যায়, তখন একজন ঘোষক তার জন্য ঘোষণা করতে থাকেন—হে আল্লাহর বান্দা! তুমি আনন্দিত হও, তোমার পদক্ষেপ বরকতময় হোক, জান্নাতে তুমি একটি মর্যাদাপূর্ণ স্থান লাভ করবে।’ (মুসনাদে আহমাদ)

অসুস্থ ব্যক্তিকে দেখতে গিয়ে তাকে সালাম দেবেন, তার শারীরিক অবস্থা ও বিভিন্ন বিষয়ে খোঁজখবর নেবেন। অসুস্থ ব্যক্তিকে দেখতে গিয়ে অহেতুক দীর্ঘক্ষণ সেখানে অবস্থান করবেন না। (বায়হাকি)

অসুস্থ ব্যক্তি যেন হতাশ ও নিরাশ হয়ে না যায়, এ জন্য তাকে অনুপ্রাণিত করতে হবে, অভয় ও সাহস দিয়ে বলতে হবে, ‘লা বা’সা তুহুরুন, ইনশা আল্লাহ।’ (অর্থ: ভয় নেই, ইনশা আল্লাহ ভালো হয়ে যাবে।) (বুখারি: ৩৬১৬, তিরমিজি)

সম্ভব হলে অসুস্থ ব্যক্তি ও তার পরিবারের জন্য উপহার হিসেবে কিছু হাদিয়া নিয়ে যাওয়া উচিত। প্রয়োজনবোধে তাকে অর্থনৈতিকভাবে সহযোগিতা করা উচিত। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘সর্বোত্তম ব্যক্তি সে-ই, যে মানুষের উপকার করে।’

মুফতি মাওলানা শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী

যুগ্ম মহাসচিব, বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতি; সহকারী অধ্যাপক, আহ্ছানিয়া ইনস্টিটিউট অব সুফিজম

[email protected]

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ত র জন য বল ছ ন আল ল হ

এছাড়াও পড়ুন:

অসুস্থ ব্যক্তির সেবা গুরুত্বপূর্ণ সুন্নত আমল

প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহ তাআলা কিয়ামতের দিন বলবেন, “হে আদম সন্তান! আমি অসুস্থ ছিলাম, তুমি আমাকে সেবা করোনি।” বান্দা বলবে, “হে প্রভু! আপনি তো সব সৃষ্টির প্রতিপালক, আমি কীভাবে আপনার সেবা করব?” তখন আল্লাহ তাআলা বলবেন, “আমার অমুক বান্দা অসুস্থ হয়েছিল, তুমি তার সেবা করোনি। তুমি যদি তার সেবা করতে, তাহলে আমার সেবা করা হতো!”’ (মুসলিম)

নবীজি (সা.) আরও বলেছেন, ‘এক মুমিনের ওপর অপর মুমিনের ছয়টি হক রয়েছে। এর অন্যতম হলো কোনো মুসলমান অসুস্থ হলে তার সেবা করা।’ তিরমিজি ও নাসায়ি)।

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যখন কোনো বান্দা তার অসুস্থ মুসলিম ভাইকে দেখতে যায় অথবা তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে যায়, তখন একজন ফেরেশতা আকাশ থেকে উচ্চস্বরে বলেন, “তুমি ভালো থাকো, তোমার কর্ম ভালো হলো, তুমি জান্নাতে স্থান করে নিয়েছ।”’ (তিরমিজি)

রাসুলুল্লাহ (সা.) যখন কোনো অসুস্থ ব্যক্তিকে দেখতে যেতেন, তখন তার শিয়রে বসতেন। এরপর তিনি সাতবার বলতেন, ‘আসআলুল্লাহাল আজিম, রাব্বাল আরশিল আজিম, আন্ ইয়াশফিয়াক।’ (অর্থ আরশে আজিমের মালিক মহান আল্লাহর কাছে তোমার সুস্থতার জন্য দোয়া করছি।)

নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘যদি তার মৃত্যু নির্ধারিত না হয়ে থাকে, তবে সে অবশ্যই সুস্থ হয়ে যাবে।’ (তিরমিজি: ২০৮৩, আবু দাউদ: ৩১০৬)

হজরত আয়েশা (রা.) বর্ণনা করেছেন, ‘আমাদের কারও অসুখ (কষ্ট) হলে রাসুলুল্লাহ (সা.) তাঁর ডান হাত রোগীর গায়ে বুলিয়ে দিয়ে বলতেন, “আজহিবিল-বা’স, রব্বান-নাস, ওয়াশফি, আনতাশ-শাফি, লা শিফা’আ ইল্লা শিফাউক, শিফাউঁ লা ইউগাদিরু সাকামা।”’ (অর্থ: হে মানুষের রব! এই ব্যক্তির কষ্ট দূর করে দিন। তাকে সুস্থ করে দিন। নিরাময়ের মালিক কেবল আপনিই। আপনার নিরাময় ছাড়া আর কোনো নিরাময় নেই। এমন নিরাময় দিন, যা কোনো রোগকে অবশিষ্ট রাখে না।)

(বুখারি: ৫৭৫০, মুসলিম: ২১৯১, ইবনে মাজাহ: ৩৫২০, মুসনাদে আহমাদ: ২৪৭৭৬, নাসায়ি: ৭৪৬৬)

নবীজি (সা.) আরও বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি এমন রোগীকে দেখতে গেল, যার শেষ সময় এখনো আসেনি, সে যেন তার সামনে উপরিউক্ত দোয়াটি সাতবার পড়ে; তাহলে তাকে নিশ্চয়ই রোগমুক্তি দান করা হবে।’ (আবু দাউদ: ৩১০৬)

অসুস্থ ব্যক্তিকে দেখতে যাওয়ার অনেক ফজিলত রয়েছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি সকালবেলায় কোনো অসুস্থ মুসলমানকে দেখতে যায়, ৭০ হাজার ফেরেশতা সন্ধ্যা পর্যন্ত তার জন্য দোয়া করতে থাকেন। আর বিকেলে রোগী দেখতে গেলে সকাল পর্যন্ত ৭০ হাজার ফেরেশতা তার জন্য দোয়া করতে থাকেন।’ (তিরমিজি: ৯৬৭)

আরও বর্ণিত আছে, ‘যে ব্যক্তি কোনো অসুস্থ ব্যক্তি বা কোনো মুসলমান ভাইকে দেখতে যায়, তখন একজন ঘোষক তার জন্য ঘোষণা করতে থাকেন—হে আল্লাহর বান্দা! তুমি আনন্দিত হও, তোমার পদক্ষেপ বরকতময় হোক, জান্নাতে তুমি একটি মর্যাদাপূর্ণ স্থান লাভ করবে।’ (মুসনাদে আহমাদ)

অসুস্থ ব্যক্তিকে দেখতে গিয়ে তাকে সালাম দেবেন, তার শারীরিক অবস্থা ও বিভিন্ন বিষয়ে খোঁজখবর নেবেন। অসুস্থ ব্যক্তিকে দেখতে গিয়ে অহেতুক দীর্ঘক্ষণ সেখানে অবস্থান করবেন না। (বায়হাকি)

অসুস্থ ব্যক্তি যেন হতাশ ও নিরাশ হয়ে না যায়, এ জন্য তাকে অনুপ্রাণিত করতে হবে, অভয় ও সাহস দিয়ে বলতে হবে, ‘লা বা’সা তুহুরুন, ইনশা আল্লাহ।’ (অর্থ: ভয় নেই, ইনশা আল্লাহ ভালো হয়ে যাবে।) (বুখারি: ৩৬১৬, তিরমিজি)

সম্ভব হলে অসুস্থ ব্যক্তি ও তার পরিবারের জন্য উপহার হিসেবে কিছু হাদিয়া নিয়ে যাওয়া উচিত। প্রয়োজনবোধে তাকে অর্থনৈতিকভাবে সহযোগিতা করা উচিত। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘সর্বোত্তম ব্যক্তি সে-ই, যে মানুষের উপকার করে।’

মুফতি মাওলানা শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী

যুগ্ম মহাসচিব, বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতি; সহকারী অধ্যাপক, আহ্ছানিয়া ইনস্টিটিউট অব সুফিজম

[email protected]

সম্পর্কিত নিবন্ধ