দীর্ঘদিন ধরে অচল কোমরের নিচসহ দুই পা। চলাফেরা করতে হয় হুইল চেয়ারে। তবুও জীবন যুদ্ধে হার মানেননি আক্কাস খন্দকার (২৭)। বেছে নিয়েছেন মোবাইল মেরামতের কাজ। এই কাজে যা আয় হয়, তা দিয়ে বৃদ্ধ মা-বাবাকে নিয়ে চলছেন।

আক্কাসের আরেকটু স্বাচ্ছন্দ্যে চলাফেরায় একটি ইলেকট্রিক হুইল চেয়ারের জন্য সরকার অথবা সমাজের বিত্তবানদের সহযোগিতা চেয়েছেন স্থানীয়রা। আক্কাস পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার বালিয়াতলী ইউনিয়নের ছোট বালিয়াতলী গ্রামের বাসিন্দা।

জানা যায়, প্রায় ১২ বছর আগে আক্কাসের বাবা রাজ্জাক খন্দকার বিদ্যুতের শর্টসার্কিটে আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে ডান হাত হারান। এরপর মাত্র ১৮ বছর বয়সে পরিবারের দায়িত্ব চলে আসে আক্কাসের কাঁধে। বালুর ড্রেজারে শ্রমিক হিসেবে কাজ শুরু করেন। সেখানে সবকিছু স্বাভাবিক চলছিল। কিন্তু, কিছুদিন পরেই ড্রেজার থেকে পরে মেরুদণ্ডে আঘাতপ্রাপ্ত হন। এতে অচল হয়ে যায় তার কোমরের নিচের অংশ।

আক্কাসের চিকিৎসার ব্যয়ভার চালাতে গিয়ে অসহায় হয়ে পরে পরিবার। জীবন নিয়ে অনিশ্চয়তায় পরে যানে আক্কাস। পরে এক বন্ধুর পরামর্শে ঢাকায় গিয়ে মোবাইল মেরামতের প্রশিক্ষণ নেন। ফিরে এসে পার্শ্ববর্তী লালুয়া ইউনিয়নের শনিবাড়িয়া বাজারে একটি মোবাইল মেরামতের দোকান দেন। বর্তমানে সেই দোকানের আয়ে চলছে তিন জনের পরিবার।

স্থানীয়রা জানান, দেশের বেশির ভাগ প্রতিবন্ধী যেখানে ভিক্ষাবৃত্তি বেছে নেন। সেখানে আক্কাস প্রশিক্ষণ নিয়ে স্বাবলম্বী হয়েছেন। তবে, তার একা চলাফেরার জন্য একটি ইলেকট্রিক হুইল চেয়ার প্রয়োজন।

শনিবাড়িয়া বাজার এলাকার শাহজালাল বলেন, ‘‘আক্কাস আসলেই দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। ভিক্ষাবৃত্তি বেছে না নিয়ে মোবাইল মেরামতের কাজ করে পরিবার নিয়ে চলছেন। একটি ইলেকট্রিক হুইল চেয়ার হলে তিনি একা চলাফেরা করতে পারতেন। কিন্তু, এটা তার সামর্থ্যের বাইরে। তাই, সরকার অথবা সমাজের বিত্তবানদের সহযোগিতা প্রয়োজন।’’

আক্কাস মিয়া বলেন, ‘‘আমি আহত হওয়ার পরে জীবন নিয়ে অসহায় হয়ে পড়ি। পরে এক বন্ধুর পরামর্শে প্রশিক্ষণ নিয়ে মোবাইল মেরামতের কাজ শুরু করি। এখন আল্লাহর রহমতে মোটামুটি ভালো চলছে। তবে, বাড়ি থেকে দোকানে যাওয়া-আসার জন্য একটি ইলেকট্রিক হুইল চেয়ার প্রয়োজন।’’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কলাপাড়া উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘‘আক্কাসকে একটি ইলেকট্রিক হুইল চেয়ার প্রদানের বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হবে।’’

ঢাকা/রাজীব

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর পর ব র

এছাড়াও পড়ুন:

মুসলমান বলেই রোহিঙ্গারা ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার

রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের দুরবস্থা বর্তমান সময়ে অন্যতম করুণ মানবিক সংকট বলে উল্লেখ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, শুধু মুসলমান হওয়ার কারণেই রোহিঙ্গারা এই ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার।

গতকাল সোমবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় তুরস্কের একটি সংসদীয় প্রতিনিধিদলের সঙ্গে সাক্ষাতের সময় এ কথা বলেন প্রধান উপদেষ্টা। পাঁচ সদস্যের ওই প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিয়েছেন তুরস্ক-বাংলাদেশ সংসদীয় মৈত্রী গ্রুপের সভাপতি ও তুর্কি পার্লামেন্ট সদস্য মেহমেত আকিফ ইয়িলমাজ।

সাক্ষাতে দুই পক্ষ বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও মানবিক সহায়তার ক্ষেত্রগুলোতে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা আরও জোরদার করার উপায় নিয়ে আলোচনা করে। এ সময় মেহমেত আকিফ ইয়িলমাজ বলেন, তুরস্ক ও বাংলাদেশের মধ্যে গভীর সাংস্কৃতিক ও ঐতিহাসিক সম্পর্ক রয়েছে। দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান দৃঢ় বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের ওপর আলোকপাত করেন তিনি।

ইয়িলমাজ বলেন, তাঁদের প্রতিনিধিদল রোববার কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন করেছে এবং তুর্কি বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা, বিশেষ করে তুর্কি ফিল্ড হাসপাতালের মানবিক কার্যক্রম সম্পর্কে অবহিত হয়েছে। এ সময় রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের প্রতি তুরস্কের অবিচল সমর্থনের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন প্রধান উপদেষ্টা। তুর্কি উদ্যোক্তাদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানান তিনি।

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের দুরবস্থা আমাদের সময়ের অন্যতম করুণ মানবিক সংকট। তারা শুধু মুসলমান বলেই এই ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার এবং তাদের নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়া হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আট বছর ধরে আশ্রয়শিবিরে থাকায় রোহিঙ্গা শিশুদের শিক্ষা ও ভবিষ্যৎ সুযোগ একেবারেই সীমিত হয়ে পড়েছে। এই অবস্থা হতাশা ও অস্থিতিশীলতার জন্ম দিতে পারে।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ