ভারতের আসামে কয়লাখনির ভেতর পানি থেকে আজ শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত চারটি মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। দেশটির ন্যাশনাল ডিজাস্টার রেসপন্স ফোর্স এ খবর জানিয়েছে।

ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য আসামের একটি কয়লাখনি গত সোমবার (৬ জানুয়ারি) প্লাবিত হয়। সেখানে প্রায় ৩০০ ফুট গভীরে অন্তত ৯ শ্রমিক আটকা পড়েন।

গত কয়েক দিনে ডুবুরিরা প্লাবিত কয়লাখনিতে উদ্ধার তৎপরতা চালান। এ অবস্থায় মঙ্গলবার তাঁরা একজনের মরদেহ উদ্ধার করেন। আজ আরও তিনটি মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

ভারতের ন্যাশনাল ডিজাস্টার রেসপন্স ফোর্সের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেন, ‘সেচের মাধ্যমে পানি সরানো হচ্ছে। ফলে খনির ভেতরে পানি কমছে। তবে (খনির ভেতরে) পানির স্তর এখনো বেশ উঁচু। কিন্তু তা সত্ত্বেও আমরা তিনটি মরদেহ দেখতে সক্ষম হই এবং সেগুলো উদ্ধার করেছি।’

আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা সাংবাদিকদের বলেন, কয়লাখনিটি ১২ বছর আগে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। খনির ভেতরে যাঁরা ছিলেন, তাঁরা অবৈধ (শ্রমিক) ছিলেন। ঘটনার পর তিনি খনিতে ৯ জন আটকে পড়েছেন বলে জানিয়ে তাঁদের নামও প্রকাশ করেছিলেন।

বিভিন্ন গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়, স্থানীয় প্রশাসন, জরুরি বিপর্যয় মোকাবিলা বিভাগের কর্মী ও খনিবিশেষজ্ঞদের নিয়ে গঠিত দল আটকে পড়া শ্রমিকদের উদ্ধারে দ্রুত মাঠে নামে। রাজ্য ও কেন্দ্র স্তরের বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর সাহায্যও নেওয়া হচ্ছে। সেনাবাহিনীও শ্রমিকদের উদ্ধারে কাজ করছে বলে বাহিনীর এক মুখপাত্র জানিয়েছেন।

৭ জানুয়ারি জেলার পুলিশপ্রধান রয়টার্সকে বলেছিলেন, ‘গতকাল সোমবার খনি পানিতে প্লাবিত হয়। পানির উৎস খনির ভেতরেই ছিল। তাঁরা (শ্রমিক) সম্ভবত পানিপ্রবাহের কোনো পথে আঘাত করেছিলেন। ফলে সেখানে ছিদ্র হয়ে পানি বের হয়ে খনিটি প্লাবিত হয়।’

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

লবণ শ্রমিকদের নুন আনতে পান্তা ফুরায়

“প্রতিদিন সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মাঠে কাজ করি। লবণ তুলি, বস্তা ভরি। কিন্তু যে মজুরি পাই, তা দিয়ে এক বেলার চাল-ডালও কেনা যায় না। লবণ চাষের কাজ করলেও আমাদের নুন আনতে পান্তা ফুরায়।” 

এ কথা কক্সবাজারের কুতুবদিয়া উপজেলার তাবলেরচর এলাকার লবণ শ্রমিক জাহেদ আলমের। হাজারো লবণ শ্রমিক দিনভর কড়া রোদে ঘাম ঝরালেও মিলছে না ন্যায্য মজুরি। নিদারুণ কষ্টে দিনাতিপাত করছেন জাহেদ আলমের মতো শত শত লবণ শ্রমিক। 

উত্তর ধুরুংয়ের লবণ চাষি রশীদ আহমদ বলেন, “এবার সাড়ে ৫ কানি জমিতে লবণ চাষ করেছি। এই বছর আবহাওয়া ভালো ছিল, উৎপাদনও হয়েছে। কিন্তু দাম পড়ে যাওয়ায় আমরা লোকসানে যাচ্ছি। প্রতিমণ লবণের উৎপাদন খরচ পড়ে ৩৫০ টাকার মতো, অথচ বিক্রি হচ্ছে ১৮০-১৮৫ টাকায়। এই লোকসান শ্রমিকদের মজুরিতেও প্রভাব পড়েছে।”

তিনি জানান, মজুরি দিতে না পারায় একদিকে শ্রমিকরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন, অন্যদিকে চাষিরাও হতাশ হয়ে পড়ছেন।

আরমান হোসেন নামে আরেক শ্রমিক বলেন, “লবণের কাজ করেই জীবিকা নির্বাহ করে আসছি। লবণের দাম কম পেলেই চাষিরা আমাদের পারিশ্রমিকের ওপর লোকসান চাপিয়ে দেয়। এতে আমরা ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হই। এই অনিয়ম দূর হোক।” 

চাষিরা বলছেন, একদিকে জমির ইজারা, পলিথিন, লবণ পরিবহন, শ্রমিক মজুরি-সব খরচ বেড়েছে। অন্যদিকে বাজারে সিন্ডিকেট করে দাম নামিয়ে দেওয়া হয়েছে। ফলে প্রতি মণ লবণে তারা ১৭০ টাকার মতো লোকসান গুণছেন। এই লোকসানের কারণে লবণ শ্রমিকরাও দিশেহারা হয়ে পড়ছেন।

লেমশীখালীর চাষি বেলাল উদ্দিন আকাশ বলেন, ‘‘গত বছর এই সময় প্রতি মণ লবণ বিক্রি করেছি ৪৫০ টাকায়। এখন পাই ১৮৫ টাকা। এতে শ্রমিকের মজুরি দিতেও আমরা হিমশিম খাচ্ছি।” 

চাষি আবুল বশর ও সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘‘সিন্ডিকেট করেই দাম নামিয়ে দেওয়া হচ্ছে যাতে লবণ উৎপাদন কমে যায়। পরে বিদেশ থেকে লবণ আমদানি করার সুযোগ তৈরি হয়। অথচ এতে মাঠের হাজারো শ্রমিকের জীবিকা হুমকির মুখে পড়ছে।”

মহেশখালী লবণ চাষি ঐক্য সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি শাহাব উদ্দিন বলেন, ‘‘মজুরি না পেয়ে অনেক শ্রমিক লবণের মাঠ ছাড়ছেন। এইভাবে চলতে থাকলে শ্রমিক সংকট হবে।”

বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের (বিসিক) কক্সবাজার লবণশিল্প উন্নয়ন প্রকল্পের উপ-মহাব্যবস্থাপক মো. জাফর ইকবাল ভূঁইয়া বলেন, “চাষিদের ন্যায্য দাম না পাওয়ার কারণে উৎপাদনে অনীহা দেখা দিচ্ছে। এর ফলে শ্রমিকদেরও চাহিদা কমে যাচ্ছে। বাজারে দাম কমে যাওয়ার পেছনের কারণ খতিয়ে দেখা হচ্ছে।” 

বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের (বিসিক) তথ্য অনুযায়ী, চলতি মৌসুমে কক্সবাজার জেলার সদর, কুতুবদিয়া, মহেশখালী, পেকুয়া, চকরিয়া, ঈদগাঁও, টেকনাফ এবং চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলায় প্রায় ৬৮ হাজার একর জমিতে লবণ চাষ হচ্ছে। গত ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত এসব অঞ্চলে উৎপাদিত হয়েছে ১ লাখ ৩৫ হাজার মেট্রিক টন লবণ। মৌসুম শেষে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২৬ লাখ ১০ হাজার মেট্রিক টন, যা দেশের বার্ষিক চাহিদার সমান।

সম্পর্কিত নিবন্ধ