আসামে কয়লাখনি থেকে চার মরদেহ উদ্ধার
Published: 11th, January 2025 GMT
ভারতের আসামে কয়লাখনির ভেতর পানি থেকে আজ শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত চারটি মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। দেশটির ন্যাশনাল ডিজাস্টার রেসপন্স ফোর্স এ খবর জানিয়েছে।
ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য আসামের একটি কয়লাখনি গত সোমবার (৬ জানুয়ারি) প্লাবিত হয়। সেখানে প্রায় ৩০০ ফুট গভীরে অন্তত ৯ শ্রমিক আটকা পড়েন।
গত কয়েক দিনে ডুবুরিরা প্লাবিত কয়লাখনিতে উদ্ধার তৎপরতা চালান। এ অবস্থায় মঙ্গলবার তাঁরা একজনের মরদেহ উদ্ধার করেন। আজ আরও তিনটি মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
ভারতের ন্যাশনাল ডিজাস্টার রেসপন্স ফোর্সের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেন, ‘সেচের মাধ্যমে পানি সরানো হচ্ছে। ফলে খনির ভেতরে পানি কমছে। তবে (খনির ভেতরে) পানির স্তর এখনো বেশ উঁচু। কিন্তু তা সত্ত্বেও আমরা তিনটি মরদেহ দেখতে সক্ষম হই এবং সেগুলো উদ্ধার করেছি।’
আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা সাংবাদিকদের বলেন, কয়লাখনিটি ১২ বছর আগে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। খনির ভেতরে যাঁরা ছিলেন, তাঁরা অবৈধ (শ্রমিক) ছিলেন। ঘটনার পর তিনি খনিতে ৯ জন আটকে পড়েছেন বলে জানিয়ে তাঁদের নামও প্রকাশ করেছিলেন।
বিভিন্ন গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়, স্থানীয় প্রশাসন, জরুরি বিপর্যয় মোকাবিলা বিভাগের কর্মী ও খনিবিশেষজ্ঞদের নিয়ে গঠিত দল আটকে পড়া শ্রমিকদের উদ্ধারে দ্রুত মাঠে নামে। রাজ্য ও কেন্দ্র স্তরের বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর সাহায্যও নেওয়া হচ্ছে। সেনাবাহিনীও শ্রমিকদের উদ্ধারে কাজ করছে বলে বাহিনীর এক মুখপাত্র জানিয়েছেন।
৭ জানুয়ারি জেলার পুলিশপ্রধান রয়টার্সকে বলেছিলেন, ‘গতকাল সোমবার খনি পানিতে প্লাবিত হয়। পানির উৎস খনির ভেতরেই ছিল। তাঁরা (শ্রমিক) সম্ভবত পানিপ্রবাহের কোনো পথে আঘাত করেছিলেন। ফলে সেখানে ছিদ্র হয়ে পানি বের হয়ে খনিটি প্লাবিত হয়।’
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
কাজের আনন্দই জীবনের সার্থকতা
জন্মদিনের অনুষ্ঠান নয়, তবে অনানুষ্ঠানিক আয়োজনটি ছিল সে উপলক্ষেই। আলোকিত মানুষ গড়ার কারিগর, বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা শিক্ষাবিদ ও সুবক্তা অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদের জন্মদিন ছিল গত ২৫ জুলাই। তাঁর অগণিত অনুরাগীরা চেয়েছিলেন তাঁকে নিয়ে জন্মদিনের অনুষ্ঠানে মিলিত হতে। উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের যে হৃদয়বিদারক ঘটনা ঘটে গেছে, তারপর আর জন্মদিনের অনুষ্ঠান করতে কিছুতেই সম্মত হননি তিনি।
শুক্রবার সন্ধ্যায় বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের ষষ্ঠতলায় কেন্দ্রের প্রাক্তনী ও তাঁর কিছু ঘনিষ্ঠজন আলাপচারিতার এক ঘরোয়া আয়োজন করেছিলেন আবদুল্লাহ আবু সায়ীদকে নিয়ে। সেখানে তিনি বললেন, কাজের মধ্য দিয়ে জীবনে যে আনন্দ পেয়েছেন, সেটিই জীবনের সার্থকতা। এই আনন্দই তাঁকে অনুপ্রাণিত করে, শক্তি জোগায়।
এ আয়োজনে অংশগ্রহণকারীরা অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদকে বিভিন্ন প্রশ্ন করেছেন। তিনি তাঁর চিরপরিচিত সরস অথচ বুদ্ধিদীপ্ত গভীর তাৎপর্যময় কথায় উত্তর দিয়েছেন। কবিতা, সাহিত্য, শিল্প থেকে শিক্ষা, ইতিহাস, দর্শন, ধর্ম, রাজনীতি, অর্থনীতি, সংগঠন, প্রেম–ভালোবাসা—সবকিছু উঠে আসে প্রশ্নোত্তরভিত্তিক কথোপকথনে। রবীন্দ্রনাথ, নজরুল থেকে শুরু করে বিশ্বসাহিত্যের বহু কালজয়ী লেখকের রচনা থেকে প্রচুর উদ্ধৃতি দিয়েছেন তিনি। এক অন্তরঙ্গ প্রাণবন্ত আবহ বিরাজমান ছিল সন্ধ্যা থেকে অনেকটা রাত অবধি এই আয়োজনে।
আবৃত্তিশিল্পী জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায় শুরুতেই আবদুল্লাহ আবু সায়ীদের একটি কবিতা আবৃত্তি করে জানতে চান, তিনি কবিতার চর্চা করেননি কেন? জবাবে তিনি বলেন, কবি শামসুর রাহমান একবার তাঁকে বলেছিলেন, তাঁর মধ্যে কবিত্বের ঘাটতি আছে। তাঁর নিজেরও সে রকম মনে হয়েছে। তারপর সাহিত্য পত্রিকা কণ্ঠস্বর প্রকাশ ও অনেক রকম কাজ করতে গিয়ে আর কবিতা লেখা হয়ে ওঠেনি।
অর্থনীতিবিদ দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য প্রশ্ন করেন, এখন একটা কঠিন সময় যাচ্ছে। তরুণ প্রজন্মকে কীভাবে দেখেন, কী আশা করেন তাদের কাছে?
আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ বলেন, ‘তরুণেরা কী হবে, তা তরুণদের ওপরে নির্ভর করে না। সেটা নির্ভর করে আমরা তাদের কী বানাতে চাই, তার ওপর। দেখতে হবে তরুণদের গড়ার মতো আমাদের ক্ষমতা কতটা আছে। অর্থাৎ শিক্ষক কেমন হবে, তার ওপরে নির্ভর করে তাঁর ছাত্র কেমন হবে। সক্রেটিস শিক্ষক ছিলেন বলে ছাত্র প্লেটো হয়েছেন। প্লেটোর শিক্ষা পেয়ে ছাত্র অ্যারিস্টটল হতে পেরেছেন। বড়দের যদি বড়ত্ব না থাকে, তবে ছোটরা বড় হতে পারে না। দুর্ভাগ্য যে আমরা বড়রা তাদের সামনে আদর্শ দাঁড় করাতে পারিনি। ফলে এখন বড়দেরই ছোটদের পেছনে দাঁড়াতে হচ্ছে।’
ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহ্ফুজ আনাম জানতে চান, তিনি এত বিচিত্র ধরনের এত বিপুল কাজ করেছেন। এই প্রাণশক্তি পান কেমন করে?
উত্তর দিতে গিয়ে আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ বলেন, ‘শক্তি আসে আনন্দ থেকে। কাজ করতে পারাটাই আনন্দের। আর সব সময় আশাবাদী থাকি। আশা কখনো শেষ হয় না। আশা শেষ মানে আমি শেষ।’
আলাপচারিতায় আরও অংশ নেন দুদক চেয়ারম্যান এম এ মোমেন, ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক আসিফ সালেহ, চিকিৎসক আমজাদ হোসেন, অভিনয়শিল্পী খায়রুল আলম সবুজ, কথাশিল্পী আনিসুল হক, ছড়াকার আমিরুল ইসলাম, উপস্থাপক আবদুন নূর তুষার, অভিনয়শিল্পী আফসানা মিমি, মশিউর রহমান, আলী নকী প্রমুখ। সঞ্চালনা করেন বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের প্রাক্তনী খাদিজা রহমান।