এ বছরের অর্থনীতির নোবেল পুরস্কার এত গুরুত্বপূর্ণ কেন
Published: 20th, October 2025 GMT
এ বছর নোবেল বিজয়ী জোয়েল মোকির, ফিলিপ আগিয়োঁ ও পিটার হাউইট যে গবেষণার জন্য পুরস্কারটা পেলেন, এর একটা অংশ হলো ক্রিয়েটিভ ডেস্ট্রাকশন, তথা সৃজনশীল ধ্বংস। ‘ধ্বংস’ও যে সৃজনশীল হতে পারে, তা একটা তত্ত্বের মাধ্যমে প্রথম দেখান হার্ভার্ড অধ্যাপক যোসেফ শমপিটার, যিনি আমার মতো কোটি কোটি মানুষের প্রিয় অর্থনীতিবিদ। কী সেই তত্ত্ব, যা যুগ যুগ ধরে ছাত্র-শিক্ষকের মুখে মুখে আলোচিত হয়ে আসছে?
এর মূল ধারণা হলো অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, পুঁজিবাদের বিকাশ ও প্রযুক্তিগত অগ্রগতি ঘটে এমন এক চক্রের মাধ্যমে, যেখানে নতুন প্রযুক্তি, পণ্য, প্রতিষ্ঠান বা ব্যবসায়িক মডেল পুরোনোদের প্রতিস্থাপন করে। শমপিটার উদ্যোক্তার ভূমিকাকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দিয়েছিলেন। বস্তুত উদ্যোক্তাই উদ্ভাবনের মূল চালিকা শক্তি। কারণ, তাঁর মতে, উদ্যোক্তাই বিদ্যমান কাঠামোকে ভেঙে নতুন উপায়ে সম্পদের সমন্বয় ঘটান।
পুঁজিবাদী অর্থনীতিকে শমপিটার অন্তর্নিহিতভাবেই গতিশীল বিবেচনা করতেন। তাঁর মতে, অগ্রগতি নির্ভর করে ধারাবাহিক পরিবর্তনের ওপর—পুরোনো শিল্পের অবসান, নতুনের উদ্ভব এবং সেকেলে পদ্ধতির প্রতিস্থাপন। প্রক্রিয়াটি সৃজনশীল হলেও এর ধ্বংসাত্মক দিকও রয়েছেন। শমপিটার এর নেতিবাচক দিকগুলোর প্রতিও সতর্ক করেছিলেন, যেমন অর্থনৈতিক অস্থিরতা, শ্রমিকদের স্থানচ্যুতি ও প্রতিষ্ঠিত স্বার্থগোষ্ঠীর রাজনৈতিক প্রতিরোধ। প্রসঙ্গত বাংলাদেশে এই লক্ষণগুলো এখন দৃশ্যমান।
উপরিউক্ত ধারণা ও আলোচনা শমপিটার তাঁর বিখ্যাত ‘ক্যাপিটালিজম, সোশ্যালিজম অ্যান্ড ডেমোক্রেসি’ গ্রন্থে লিপিবদ্ধ করেন। একই বইয়ে তিনি এ-ও বলেন, ক্যাপিটালিজম বিকশিত হতে হতে একসময় নিজেকে নিজে ধ্বংস করে ফেলবে। তিনি যুক্তি দেখান, ধনতন্ত্রের সামাজিক-মনস্তাত্ত্বিক ভিতগুলো ক্ষয় হতে হতে নিঃশেষ হয়ে যাবে। এখানে তিনি যেন কার্ল মার্ক্সের কথার প্রতিধ্বনি করছেন।
যদিও কারণ হিসেবে শমপিটার যা বলেন, তা মার্ক্স থেকে ভিন্ন। শমপিটার বলেন, পুঁজিবাদী প্রতিষ্ঠান, আমলাতন্ত্র ও স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীগুলো সাধারণত পরিবর্তনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। তিনি আরও ভবিষ্যদ্বাণী করেন, শিল্পপ্রতিষ্ঠানে আমলাতন্ত্র দেখা দেবে, ফলে উদ্ভাবনের স্পৃহা কমে যাবে। সমাজে ব্যাপক ধনবৈষম্য দেখা দেবে। ফলে এর বিরুদ্ধে জনগণের আন্দোলনের মুখে রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণ ও কড়াকড়ি বেড়ে যাবে। অর্থাৎ ধনতন্ত্রের মৃত্যু ঘটবে। সে জন্যই শমপিটার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, প্রকৃত চ্যালেঞ্জ হলো উদ্ভাবনের প্রাণশক্তি ও গতিশীলতা ধরে রাখা, একই সঙ্গে তার ধ্বংসাত্মক পরিণতিগুলোকে দক্ষভাবে নিয়ন্ত্রণ করা। কাঙ্ক্ষিত না হলেও পুঁজিবাদের ধ্বংস এক অমোঘ নিয়তি।
জোয়েল মোকির, ফিলিপ অ্যাগিয়ন ও পিটার হাউইট.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
এ বছরের অর্থনীতির নোবেল পুরস্কার এত গুরুত্বপূর্ণ কেন
এ বছর নোবেল বিজয়ী জোয়েল মোকির, ফিলিপ আগিয়োঁ ও পিটার হাউইট যে গবেষণার জন্য পুরস্কারটা পেলেন, এর একটা অংশ হলো ক্রিয়েটিভ ডেস্ট্রাকশন, তথা সৃজনশীল ধ্বংস। ‘ধ্বংস’ও যে সৃজনশীল হতে পারে, তা একটা তত্ত্বের মাধ্যমে প্রথম দেখান হার্ভার্ড অধ্যাপক যোসেফ শমপিটার, যিনি আমার মতো কোটি কোটি মানুষের প্রিয় অর্থনীতিবিদ। কী সেই তত্ত্ব, যা যুগ যুগ ধরে ছাত্র-শিক্ষকের মুখে মুখে আলোচিত হয়ে আসছে?
এর মূল ধারণা হলো অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, পুঁজিবাদের বিকাশ ও প্রযুক্তিগত অগ্রগতি ঘটে এমন এক চক্রের মাধ্যমে, যেখানে নতুন প্রযুক্তি, পণ্য, প্রতিষ্ঠান বা ব্যবসায়িক মডেল পুরোনোদের প্রতিস্থাপন করে। শমপিটার উদ্যোক্তার ভূমিকাকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দিয়েছিলেন। বস্তুত উদ্যোক্তাই উদ্ভাবনের মূল চালিকা শক্তি। কারণ, তাঁর মতে, উদ্যোক্তাই বিদ্যমান কাঠামোকে ভেঙে নতুন উপায়ে সম্পদের সমন্বয় ঘটান।
পুঁজিবাদী অর্থনীতিকে শমপিটার অন্তর্নিহিতভাবেই গতিশীল বিবেচনা করতেন। তাঁর মতে, অগ্রগতি নির্ভর করে ধারাবাহিক পরিবর্তনের ওপর—পুরোনো শিল্পের অবসান, নতুনের উদ্ভব এবং সেকেলে পদ্ধতির প্রতিস্থাপন। প্রক্রিয়াটি সৃজনশীল হলেও এর ধ্বংসাত্মক দিকও রয়েছেন। শমপিটার এর নেতিবাচক দিকগুলোর প্রতিও সতর্ক করেছিলেন, যেমন অর্থনৈতিক অস্থিরতা, শ্রমিকদের স্থানচ্যুতি ও প্রতিষ্ঠিত স্বার্থগোষ্ঠীর রাজনৈতিক প্রতিরোধ। প্রসঙ্গত বাংলাদেশে এই লক্ষণগুলো এখন দৃশ্যমান।
উপরিউক্ত ধারণা ও আলোচনা শমপিটার তাঁর বিখ্যাত ‘ক্যাপিটালিজম, সোশ্যালিজম অ্যান্ড ডেমোক্রেসি’ গ্রন্থে লিপিবদ্ধ করেন। একই বইয়ে তিনি এ-ও বলেন, ক্যাপিটালিজম বিকশিত হতে হতে একসময় নিজেকে নিজে ধ্বংস করে ফেলবে। তিনি যুক্তি দেখান, ধনতন্ত্রের সামাজিক-মনস্তাত্ত্বিক ভিতগুলো ক্ষয় হতে হতে নিঃশেষ হয়ে যাবে। এখানে তিনি যেন কার্ল মার্ক্সের কথার প্রতিধ্বনি করছেন।
যদিও কারণ হিসেবে শমপিটার যা বলেন, তা মার্ক্স থেকে ভিন্ন। শমপিটার বলেন, পুঁজিবাদী প্রতিষ্ঠান, আমলাতন্ত্র ও স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীগুলো সাধারণত পরিবর্তনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। তিনি আরও ভবিষ্যদ্বাণী করেন, শিল্পপ্রতিষ্ঠানে আমলাতন্ত্র দেখা দেবে, ফলে উদ্ভাবনের স্পৃহা কমে যাবে। সমাজে ব্যাপক ধনবৈষম্য দেখা দেবে। ফলে এর বিরুদ্ধে জনগণের আন্দোলনের মুখে রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণ ও কড়াকড়ি বেড়ে যাবে। অর্থাৎ ধনতন্ত্রের মৃত্যু ঘটবে। সে জন্যই শমপিটার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, প্রকৃত চ্যালেঞ্জ হলো উদ্ভাবনের প্রাণশক্তি ও গতিশীলতা ধরে রাখা, একই সঙ্গে তার ধ্বংসাত্মক পরিণতিগুলোকে দক্ষভাবে নিয়ন্ত্রণ করা। কাঙ্ক্ষিত না হলেও পুঁজিবাদের ধ্বংস এক অমোঘ নিয়তি।
জোয়েল মোকির, ফিলিপ অ্যাগিয়ন ও পিটার হাউইট