কর্মীরা সত্যিই অসুস্থ কি না, জানতে গোয়েন্দা নিয়োগ
Published: 12th, January 2025 GMT
রোগবালাই বলে–কয়ে আসে না। যে কেউ যেকোনো সময় অসুস্থ হতে পারেন। এতে ভুক্তভোগী ব্যক্তিই শুধু নন, প্রতিষ্ঠানও ক্ষতির মুখে পড়তে পারে। অসুস্থ হলে কর্মীরা ছুটি নিয়ে থাকেন। তবে এমন অভিযোগও আছে, কেউ কেউ নাকি অসুস্থতার জন্য ছুটি নিয়ে অন্য কাজে লাগান। এমন কর্মীদের খুঁজে বের করতে বিচিত্র এক কৌশলের আশ্রয় নিয়েছে জার্মানির কিছু প্রতিষ্ঠান। কর্মীরা আসলেই অসুস্থ কি না, তা দেখতে বেসরকারি গোয়েন্দা নিয়োগ দিচ্ছে তারা।
এমন একটি বেসরকারি গোয়েন্দা সংস্থার নাম ‘লেনৎজ গ্রুপ’। তাদের কার্যালয় জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট শহরের প্রধান রেলস্টেশনের কাছে। সংস্থাটির প্রতিষ্ঠাতা মার্কাস লেনৎজ বলেন, জার্মানিতে অসুস্থতার জন্য ছুটি নেওয়া কর্মীদের পেছনে গোয়েন্দা দিয়ে খোঁজখবর নেওয়ার ঘটনা বাড়ছে। বছরে তাঁরা এমন প্রায় ১ হাজার ২০০টি কাজ পাচ্ছেন। কয়েক বছর আগের তুলনায় তা প্রায় দ্বিগুণ।
জার্মানির আইন অনুযায়ী, বছরে ছয় সপ্তাহ পর্যন্ত অসুস্থতার ছুটি নিতে পারেন একজন কর্মী। এ সময়ে তাঁর নিয়োগদাতা প্রতিষ্ঠান পুরো বেতন দিতে বাধ্য। মূলত যাঁরা মিথ্যা বলে ছুটি কাটাচ্ছেন, তাঁদের ছাঁটাই করতেই দেশটির প্রতিষ্ঠানগুলো গোয়েন্দা নিয়োগের পথ বেছে নিয়েছে। মার্কাস লেনৎজ বলেন, কেউ যদি বছরে ৩০, ৪০ বা ১০০ দিন পর্যন্ত ছুটি কাটান, তাহলে একপর্যায়ে তাঁরা নিয়োগদাতার কাছে অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতির কারণ হয়ে ওঠেন। এমন অনেককে পাওয়া গেছে, যাঁরা অসুস্থতার ছুটি নিয়ে পারিবারিক ব্যবসায় সময় দিয়েছেন বা বাড়ি সংস্কারের কাজ করেছেন।
জার্মানির সরকারি পরিসংখ্যান সংস্থার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে দেশটির কর্মীরা গড়ে ১৫ দশমিক ১ দিন অসুস্থতাজনিত ছুটি কাটিয়েছেন। ২০২১ সালে তা ছিল ১১ দশমিক ১ দিন। ছুটির কারণে ২০২৩ সালে জার্মানির মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) শূন্য দশমিক ৮ শতাংশ কমেছিল বলে ধারণা করা হয়।
তবে অনেক সময় এই গোয়েন্দাগিরি ব্যর্থ হতেও দেখা গেছে। যেমন ইতালিতে একজন বাসচালককে ছুটি নেওয়ার পর একটি পানশালায় গান গাইতে দেখা যায়। ফলে তাঁকে চাকরিচ্যুত করে তাঁর প্রতিষ্ঠান। পরে আদালতে প্রমাণিত হয়, শারীরিক অবস্থার উন্নতির জন্যই গান গাইতে গিয়েছিলেন তিনি।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
আইএমএফের পর্ষদ বৈঠক ২৩ জুন, এরপর মিলতে পারে দুই কিস্তি অর্থ
২৩ জুন আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) নির্বাহী পর্ষদের বৈঠক ডাকা হয়েছে। সেই বৈঠকে বাংলাদেশের সঙ্গে আইএমএফের চলমান ঋণ কর্মসূচির দুই কিস্তির অর্থ ছাড়ের বিষয়টি উত্থাপনের কথা রয়েছে। বৈঠকে অনুমোদন হলে চলমান ঋণ কর্মসূচির আওতায় একসঙ্গে দুই কিস্তির অর্থ পাবে বাংলাদেশ। আইএমএফ গতকাল শুক্রবার তার কার্যসূচিতে নির্বাহী পর্ষদের বৈঠকের এ তারিখ নির্ধারণসংক্রান্ত তথ্য প্রকাশ করেছে।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, আইএমএফের এ বৈঠকে চলমান ঋণ কর্মসূচির তৃতীয় ও চতুর্থ পর্যালোচনার (রিভিউ) প্রতিবেদন উপস্থাপনের কথা রয়েছে। এ প্রতিবেদন পর্ষদ অনুমোদন করলে বাংলাদেশ একসঙ্গে পেয়ে যাবে চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তির অর্থ। দুই কিস্তির অর্থ একসঙ্গে হতে পারে ১৩০ কোটি মার্কিন ডলার।
এর আগে ২০২৩ সালের ৩১ জানুয়ারি আইএমএফ বাংলাদেশের জন্য সাড়ে তিন বছর মেয়াদি ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণ প্রস্তাব অনুমোদন করে। ঋণ অনুমোদনের সময় আইএমএফ বলেছিল, বাংলাদেশের সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা বজায় রাখা, ঝুঁকিতে থাকা ও পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে সুরক্ষা দেওয়া এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক ও পরিবেশসম্মত প্রবৃদ্ধি অর্জনে সহায়তা করবে এ ঋণ কর্মসূচি। চলতি হিসাবের ঘাটতি বেড়ে যাওয়া, টাকার দরপতন ও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে যাওয়া—মূলত এ তিন কারণে ওই সময় আইএমএফের কাছে ঋণ চেয়েছিল তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার।
আইএমএফের ঋণ কর্মসূচির মধ্যে বর্ধিত ঋণসহায়তা (ইসিএফ) ও বর্ধিত তহবিলসহায়তা (ইএফএফ) বাবদ ঋণ রয়েছে ৩৩০ কোটি ডলার। আর রেজিলিয়েন্স অ্যান্ড সাসটেইনেবিলিটি ফ্যাসিলিটি (আরএসএফ) বাবদ ঋণ রয়েছে ১৪০ কোটি ডলার। আরএসএফ আইএমএফের একটি নতুন তহবিল, যেখান থেকে এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশকেই প্রথম ঋণ দেওয়া হচ্ছে। ২০২৩ সালের ২ ফেব্রুয়ারি আইএমএফের কাছ থেকে প্রথম কিস্তির ৪৭ কোটি ৬৩ লাখ ডলার পায় বাংলাদেশ। একই বছরের ডিসেম্বরে দ্বিতীয় কিস্তির ৬৮ কোটি ১০ লাখ ডলার ও ২০২৪ সালের জুনে তৃতীয় কিস্তির ১১৫ কোটি ডলার পেয়েছে বাংলাদেশ। অর্থাৎ তিন কিস্তিতে আইএমএফ থেকে এখন পর্যন্ত ২৩১ কোটি ডলার পেয়েছে বাংলাদেশ। বাকি আছে ঋণের ২৩৯ কোটি ডলার।
আইএমএফের ঋণের চতুর্থ কিস্তির অর্থ গত বছরের ডিসেম্বরে পাওয়ার কথা থাকলেও তা আর পাওয়া যায়নি। আইএমএফের সদর দপ্তর যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে অবস্থিত। প্রায় প্রতিবছর ওয়াশিংটনসহ প্রতিবেশী রাজ্যগুলোতে বড় ধরনের তুষারপাত হয়। গত বছরও তাই হয়েছে। অতিমাত্রার বরফের কারণে অচল হয়ে যায় জনজীবন। মার্কিন প্রশাসন সতর্কবার্তা জারি করে। তুষারপাতের কারণে আইএমএফসহ অনেক প্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল অনেক দিন।
পরে আইএমএফের পক্ষ থেকে প্রথমে এ বছরের ফেব্রুয়ারি ও পরে মার্চে পর্ষদ বৈঠকের কথা বলা হয়। গত এপ্রিলে আইএমএফের একটি দল পর্যালোচনা করতে ঢাকায় আসে দুই সপ্তাহের জন্য। এর মধ্যে শর্ত পরিপালন নিয়ে দর–কষাকষিতে চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তির অর্থ ছাড় আটকে যায়। এরপর ওয়াশিংটনে গত ২১ থেকে ২৬ এপ্রিল অনুষ্ঠিত আইএমএফ-বিশ্বব্যাংকের বসন্তকালীন বৈঠকে এ বিষয়ে আরও আলোচনা হলেও কোনো সুরাহা হয়নি। তখন দর-কষাকষি হচ্ছিল মূলত মুদ্রা বিনিময় হার বাজারভিত্তিক করা নিয়ে। আইএমএফ তা চাইলেও করতে চাইছিল না সরকার।
সবশেষে গত মাসে এ নিয়ে আইএমএফের সঙ্গে কয়েকটি ভার্চ্যুয়াল বৈঠক করে বাংলাদেশ ব্যাংক। গত ১২ মে দুই পক্ষ চূড়ান্ত সমঝোতায় পৌঁছায় ও বিনিময় হার বাজারভিত্তিক করে বাংলাদেশ। ১৪ মে আইএমএফ ওয়াশিংটন থেকে এক বিবৃতিতে জানায়, দুই পক্ষের মধ্যে সমঝোতা হয়েছে এবং ঋণের অর্থ ছাড় করা হবে জুনে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, সাধারণত পর্ষদ বৈঠকে অনুমোদন হওয়ার দুই থেকে তিন দিনের মাথায় আইএমএফ অর্থ ছাড় করে দেয়। এবারও এর ব্যতিক্রম হবে না।