প্রতারক চক্র ও সহযোগীদের ছাড় নয়
Published: 12th, January 2025 GMT
আর্থসামাজিক উন্নয়ন ও সামাজিক সুরক্ষায় সরকার সুবিধাবঞ্চিত, দরিদ্র ও পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে নানা ধরনের আর্থিক সহায়তা দিয়ে থাকে। এর মধ্যে আছে নারী ও শিশুর জন্য কল্যাণমূলক কিছু কর্মসূচিও। আমরা দেখে থাকি, নানা সময়ে এসব সহায়তার অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে কিছু প্রতারক চক্র। সবশেষে রাজশাহীর বাগমারায় প্রায় আড়াই হাজার নারীর মাতৃত্বকালীন ভাতা ডিজিটাল পদ্ধতিতে হাতিয়ে নিয়েছে একটি প্রতারক চক্র। ভুক্তভোগীরা মা ও নবজাতক হওয়ায় বিষয়টি অত্যন্ত গুরুতর।
মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তর ‘মা ও শিশুসহায়তা কর্মসূচি’র আওতায় অন্তঃসত্ত্বা নারীদের জন্য মাসিক ভাতা হিসেবে ৮০০ টাকা করে দেওয়া হয়। সুবিধাভোগী নারীরা মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে সেই ভাতার টাকা পেয়ে থাকেন। ভাতাভোগীরা স্থানীয় পরিবেশকদের কাছে গিয়ে সেই টাকা তুলে নেন। বাগমারা উপজেলা মহিলাবিষয়ক দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, প্রতি মাসে ৯৮ জন অন্তঃসত্ত্বা নারীকে নতুন করে ভাতার আওতায় আনা হয়। বর্তমানে বাগমারার সব ইউনিয়ন ও পৌরসভা মিলিয়ে মোট ৫ হাজার ৩৯৩ জন নারী এ কর্মসূচির আওতায় সুবিধা ভোগ করছেন।
কিন্তু তিন থেকে পাঁচ মাস ধরে প্রায় আড়াই হাজার ভাতাভোগী নারী সেই ভাতা আর পাচ্ছেন না। প্রথম আলোর অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ভাতাভোগীর হিসাব নম্বর পরিবর্তন করে সেই টাকা সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। তার মানে ভাতার টাকা ঠিকই ছাড় হয়েছে কিন্তু সেই টাকা ভাতাভোগীর কাছে আসেনি। সেই টাকা চলে গেছে প্রতারক চক্রের মোবাইল ব্যাংকিং নম্বরে।
ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা ও প্রতারিত নারীদের সঙ্গে কথা বলে স্পষ্ট হয় যে কেন্দ্রীয়ভাবে এই অনিয়ম করা হয়। একমাত্র অধিদপ্তর ছাড়া হিসাব নম্বর পরিবর্তন করা সম্ভব নয়। তাঁদের ভাষ্য, ভাতার টাকা আসার আগমুহূর্তে হিসাব নম্বর পরিবর্তন করা হয়। টাকা ওই প্রতারকদের হিসাবে চলে যাওয়ার পরেই আবার সুবিধাভোগীর হিসাব নম্বর দেওয়া হয়।
ভাতার এই টাকা সুবিধাভোগী নারীরা নিজের পুষ্টিকর খাবার ও নবজাতকের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কেনার কাজে ব্যয় করেন। অনেকে শিশুসন্তানের খাবারও কেনেন ভাতার এই টাকায়। ফলে কয়েক মাস ধরে এ টাকা না পেয়ে অনেকে শিশুসন্তানের খাবার জোগাতে চরম অসুবিধায় পড়েছেন। শিশুস্বাস্থ্যের জন্য এটি অবশ্যই উদ্বেগজনক।
উপজেলা মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা ভাতা লোপাটের এ ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেছেন। বিষয়টি তিনি কেন্দ্রীয় দপ্তরকে মানে ঢাকায় অধিদপ্তরের অফিসে প্রয়োজনীয় প্রমাণসহ জানিয়েছে। কেন্দ্র থেকেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে। এখন আমরা দেখতে চাই, এই প্রতারণার বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। প্রতারক চক্রটিকে তো ধরতেই হবে; কেন্দ্রীয়ভাবে কাদের সহায়তায় এ ঘটনা ঘটানো হয়েছে, তাদেরও কোনোভাবে ছাড় দেওয়া যাবে না।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
গোপালগঞ্জে সহিংসতার ঘটনায় গত চার দিনে ১২ শিশুর জামিন নামঞ্জুর
গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) পথসভাকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের ঘটনায় গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের মধ্যে ১৮ জন শিশু রয়েছে। এর মধ্যে গত চার দিনে ১২ শিশুর জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেছেন আদালত।
গতকাল বৃহস্পতিবার সাত শিশুর জামিন আবেদনের শুনানি হয়। গোপালগঞ্জ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক (জেলা ও দায়রা জজ) সৈয়দ আরাফাত হোসেন তাদের জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেন। এর আগে সোম ও মঙ্গলবার পাঁচ শিশুর জামিন আবেদন করা হয়। তাদের জামিন নামঞ্জুর করা হয়। ওই পাঁচজনের জামিন আবেদন করা হয়েছিল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে।
কারাগার সূত্র জানায়, গত ১৬ জুলাই সংঘর্ষের পর ১৭ ও ১৮ জুলাই জেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে ১৮ শিশুকে আটক করে পুলিশ। ১৮ জুলাই তাদের আদালতে হাজির করে গোপালগঞ্জ জেলা কারাগারে পাঠানো হয়। পরে ২১ জুলাই তাদের যশোরের পুলেরহাট শিশু-কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানো হয়।
আদালতের নথি অনুযায়ী, গ্রেপ্তার হওয়া শিশুদের বয়স, ঠিকানা পরিষ্কারভাবে উল্লেখ নেই। তবে গতকাল পর্যন্ত ১২ শিশুর নাম ও পরিচয় শনাক্ত হয়েছে। প্রথম আলোর পক্ষ থেকে চার পরিবারের সঙ্গে কথা বলা হয়েছে। অভিভাবকদের অভিযোগ, তাদের সন্তানদের কোনো ধরনের তদন্ত ছাড়াই আটক করা হয়েছে।
আরও পড়ুনগ্রেপ্তার হওয়া শিশুদের বিষয়ে তদন্ত কমিটি গঠনের নির্দেশ২৭ জুলাই ২০২৫একজন শিশুর বাবা বলেন, ‘সংসারে অভাব–অনটন, নিজেরাই সংসার চালাইতে পারি না। আমার কষ্ট দেখে ছেলে রাজমিস্ত্রির কাজে যোগ দেয়। সে গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার রমজান শেখ নামের একটা রাজমিস্ত্রির সহকারী হিসেবে কাজ করে। কাজের সময় পুলিশ তাদের ধরে নিয়ে যায়।’
আরেক শিশুর ভ্যানচালক বাবা বলেন, ‘আমরা গরিব মানুষ, কোথাও কোনো কাইজের মধ্যে নেই। তিনডা ছেলে, বড়টা একটা মাদ্রাসার শিক্ষক। ছোট দুইডা এখনো পড়ে। যারে ধরছে, সে সবার ছোট। ওই দিন সকালে আমার মাদ্রাসায় গেছে, পরীক্ষা ছিল। পরে দুপুরের আগে আমি নিজে যাইয়ে নিয়ে আসছি। সেদিন বাড়িতেই ছিল। পরের দিনও সারা দিন বাড়ি ছিল, সেদিন তো কারফিউ ছিল। আসরের নামাজের পর আমার কাছ থেকে ২০ টাকা নিয়ে গেছে চটপটি খাইতে। পাশে মাদ্রাসার সামনেই চটপটির দোকান বসে। সেই হান দে ওরে ধইরে নিছে।’
ওই ব্যক্তি আরও বলেন, ‘ধরার ঘণ্টাখানেক পর থানা থেইকা ফোন দিছে, কয় ছেলে ধরা হইছে। আমরা থানায় গিয়া অনেক কইছি, ও তো কোথাও যায় না, কোনো গ্যাঞ্জামের ছেলে না। মাদ্রাসায় পড়ে। কিন্তু কেউ কিছুই শুনল না। ছেলেরে ছাড়ায় আনতে অনেক জায়গায় দৌড়াইছি।’ তিনি জানান, এ ঘটনার পর থেকে তাঁদের প্রায় ২০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে।
এ ছাড়া জামিনের আশ্বাস দিয়ে কয়েকজন লোক তাদের কাছ থেকে টাকা নিয়েছে বলেও অভিযোগ করেন একজন অভিভাবক।
আরও পড়ুনগোপালগঞ্জে এনসিপির সমাবেশে হামলার ঘটনায় আরও একটি মামলা, আসামি ৪৭৭ জন৩১ জুলাই ২০২৫গ্রেপ্তার এক শিশুর আইনজীবী ফিরোজা বেগম বলেন, ১৬ জুলাই সহিংসতার ঘটনায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় এই শিশুকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। ফৌজদারি কার্যবিধির ১৭৩ ধারায় দ্রুত তদন্ত করে নির্দোষ প্রমাণিত হলে তাকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়ার সুযোগ রয়েছে।
এ বিষয়ে সরকারি কৌঁসুলি তৌফিকুল ইসলাম বলেন, শিশুরা অল্প সময় আগে গ্রেপ্তার হয়েছে, এখনো তদন্ত চলছে। তাই হয়তো বিচারক জামিন নামঞ্জুর করেছেন। এ মামলায় এখনো কারও জামিন হয়নি।
আরও পড়ুনগোপালগঞ্জে সংঘাতের ইঙ্গিত ছিল স্পষ্ট, নিরাপত্তা প্রস্তুতি নিয়ে প্রশ্ন ১৮ জুলাই ২০২৫