আর্থসামাজিক উন্নয়ন ও সামাজিক সুরক্ষায় সরকার সুবিধাবঞ্চিত, দরিদ্র ও পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে নানা ধরনের আর্থিক সহায়তা দিয়ে থাকে। এর মধ্যে আছে নারী ও শিশুর জন্য কল্যাণমূলক কিছু কর্মসূচিও। আমরা দেখে থাকি, নানা সময়ে এসব সহায়তার অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে কিছু প্রতারক চক্র। সবশেষে রাজশাহীর বাগমারায় প্রায় আড়াই হাজার নারীর মাতৃত্বকালীন ভাতা ডিজিটাল পদ্ধতিতে হাতিয়ে নিয়েছে একটি প্রতারক চক্র। ভুক্তভোগীরা মা ও নবজাতক হওয়ায় বিষয়টি অত্যন্ত গুরুতর।

মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তর ‘মা ও শিশুসহায়তা কর্মসূচি’র আওতায় অন্তঃসত্ত্বা নারীদের জন্য মাসিক ভাতা হিসেবে ৮০০ টাকা করে দেওয়া হয়। সুবিধাভোগী নারীরা মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে সেই ভাতার টাকা পেয়ে থাকেন। ভাতাভোগীরা স্থানীয় পরিবেশকদের কাছে গিয়ে সেই টাকা তুলে নেন। বাগমারা উপজেলা মহিলাবিষয়ক দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, প্রতি মাসে ৯৮ জন অন্তঃসত্ত্বা নারীকে নতুন করে ভাতার আওতায় আনা হয়। বর্তমানে বাগমারার সব ইউনিয়ন ও পৌরসভা মিলিয়ে মোট ৫ হাজার ৩৯৩ জন নারী এ কর্মসূচির আওতায় সুবিধা ভোগ করছেন।

কিন্তু তিন থেকে পাঁচ মাস ধরে প্রায় আড়াই হাজার ভাতাভোগী নারী সেই ভাতা আর পাচ্ছেন না। প্রথম আলোর অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ভাতাভোগীর হিসাব নম্বর পরিবর্তন করে সেই টাকা সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। তার মানে ভাতার টাকা ঠিকই ছাড় হয়েছে কিন্তু সেই টাকা ভাতাভোগীর কাছে আসেনি। সেই টাকা চলে গেছে প্রতারক চক্রের মোবাইল ব্যাংকিং নম্বরে।

ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা ও প্রতারিত নারীদের সঙ্গে কথা বলে স্পষ্ট হয় যে কেন্দ্রীয়ভাবে এই অনিয়ম করা হয়। একমাত্র অধিদপ্তর ছাড়া হিসাব নম্বর পরিবর্তন করা সম্ভব নয়। তাঁদের ভাষ্য, ভাতার টাকা আসার আগমুহূর্তে হিসাব নম্বর পরিবর্তন করা হয়। টাকা ওই প্রতারকদের হিসাবে চলে যাওয়ার পরেই আবার সুবিধাভোগীর হিসাব নম্বর দেওয়া হয়।

ভাতার এই টাকা সুবিধাভোগী নারীরা নিজের পুষ্টিকর খাবার ও নবজাতকের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কেনার কাজে ব্যয় করেন। অনেকে শিশুসন্তানের খাবারও কেনেন ভাতার এই টাকায়। ফলে কয়েক মাস ধরে এ টাকা না পেয়ে অনেকে শিশুসন্তানের খাবার জোগাতে চরম অসুবিধায় পড়েছেন। শিশুস্বাস্থ্যের জন্য এটি অবশ্যই উদ্বেগজনক।

উপজেলা মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা ভাতা লোপাটের এ ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেছেন। বিষয়টি তিনি কেন্দ্রীয় দপ্তরকে মানে ঢাকায় অধিদপ্তরের অফিসে প্রয়োজনীয় প্রমাণসহ জানিয়েছে। কেন্দ্র থেকেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে। এখন আমরা দেখতে চাই, এই প্রতারণার বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। প্রতারক চক্রটিকে তো ধরতেই হবে; কেন্দ্রীয়ভাবে কাদের সহায়তায় এ ঘটনা ঘটানো হয়েছে, তাদেরও কোনোভাবে ছাড় দেওয়া যাবে না।

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

বদলীর পরও কুমিল্লায় বহাল এএসপি শামীম

বদলীর আদেশ কার্যকর হওয়ার সময়সীমা পেরিয়ে গেলেও কুমিল্লা ছাড়েননি অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এএসপি) মো. শামীম কুদ্দুছ ভূঁইয়া। দিনাজপুর ইন সার্ভিস ট্রেনিং সেন্টারে যোগদানের নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও তিনি এখনও কুমিল্লাতেই দায়িত্ব পালন করছেন। 

বহাল থাকার বিষয়ে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করলে তাদেরকে মামলার হুমকি দেন কুমিল্লার চাঁদাবাজির অডিও ফাঁস হওয়ায় ঘটনায় আলোচিত এএসপি মো. শামীম কুদ্দুছ ভূঁইয়া।

বদলির কারণ প্রসঙ্গে এই প্রতিবেদক জানতে চাইলে শামীম কুদ্দুছ ভূঁইয়া বলেন, “আমি অসুস্থ, আমি বক্তব্য দিতে পারব না। আমার বিরুদ্ধে কোন নিউজ করলে মামলা করে দিব। সাংবাদিক সম্মেলন করব। আপনি নিউজ করেন, আমি দেখে নিব।”

সম্প্রতি দুটি অডিও ক্লিপ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। একটিতে তাকে ব্যক্তিগত কারণে দায়িত্বে অনীহা প্রকাশ করতে শোনা যায়। অপরটিতে সার্জেন্ট ও ট্রাফিক ইন্সপেক্টরদের (টিআই) নির্দেশ দিতে শোনা যায়, বাসস্ট্যান্ড থেকে সংগৃহীত টাকা সরাসরি তার ঘনিষ্ঠদের কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য।

গত ২০ আগস্ট পুলিশ সদর দপ্তরের প্রজ্ঞাপনে শামীম কুদ্দুছ ভূঁইয়াকে কুমিল্লা থেকে বদলি করে দিনাজপুরে পাঠানো হয়। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, চলতি বছরের ৬ সেপ্টেম্বরের মধ্যে নতুন কর্মস্থলে যোগ না দিলে ৭ সেপ্টেম্বর থেকে তাকে তাৎক্ষণিক অবমুক্ত করা হবে। তবে নির্ধারিত সময় পেরিয়ে গেলেও তিনি নতুন কর্মস্থলে যোগ দেননি।

চলতি বছরের আগস্টে বিভিন্ন গণমাধ্যমে পরিবহন সেক্টরে চাঁদাবাজিসহ নানা অভিযোগে তার বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশিত হয়। তবে এসব অভিযোগ তিনি ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছিলেন।

কুমিল্লা জেলা পুলিশ নজির আহমেদ বলেন, “জনস্বার্থে তাকে বদলি করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ তদন্ত সাপেক্ষে যাচাই করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সাংবাদিকদের হুমকির বিষয় অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

ঢাকা/রুবেল/এস

সম্পর্কিত নিবন্ধ