ফতুল্লায় ষাঁড় পালনের মধ্য দিয়ে সফল নারী খামারি ফরিদা
Published: 20th, October 2025 GMT
একদিকে স্বামীর সংসারের অভাব-অনটন অন্যদিকে নিজের স্বপ্ন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে দিন-রাত কঠোর পরিশ্রম করে সাফল্যের মুখ দেখতে শুরু করেছেন নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার ফতুল্লার কুতুবপুর ইউনিয়নের দেলপাড়ার ক্যানেলস্থ এলাকার এক নারী উদ্যোক্তা মোছাঃ ফরিদা।
স্বামী-সংসারের ওপর নির্ভরশীল না হয়ে নিজ পায়ে দাঁড়ানোর লক্ষ্যে মাত্র ২টি ষাঁড় গরু দিয়ে শুরু করে আত্মনির্ভরশীল হয়ে উঠেছেন তিনি। তার এই প্রচেষ্টা দেখে বাড়তি আয়ের আশায় এলাকার অনেকেই আগ্রহী হয়ে উঠছেন খামারী হতে।
ফরিদা একজন ভূমিহীন নারী খামারি। যিনি ২০১৪ সালে আর্থিক লোন নিয়ে দুটি ষাড় দিয়ে ভাড়াকৃত জায়গায় ছোট পরিসরে খামার শুরু করেন । পরবর্তীতে উনি ষাঁড়গুলো বিক্রি করে একটি গাভী এবং একটি বাছুর কেনেন।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর ও ভেটেরিনারি হাসপাতাল নারায়ণগঞ্জ সদর, নারায়ণগঞ্জ থেকে গবাদি পশু লালন পালন বিষয়ের উপর বিভিন্ন প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন।
এছাড়া উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তরের সুপারিশে তিনি আর্থিক লোন পান। প্রাণিসম্পদ দপ্তর হতে চিকিৎসা, মেডিসিন, ভ্যাকসিন সহায়তা পান। পরবর্তীতে প্রাণিসম্পদ ডেইরি উন্নয়ন প্রকল্প (এলডিডিপি)এর আওতায় পিজি সদস্য হিসেবে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ, প্রণোদনা,ভ্যাকসিন, মেডিসিন, ছাগলের জন্য পরিবেশ বান্ধব ঘর পান।
ধীরে ধীরে উনি আরো কিছু গাভী, ২ টি ছাগল, ১৪ টি ভেড়া, ২টি হাঁস, ২ টি মুরগি কেনেন। বর্তমানে তার খামারে গরু- ১৪টি, ছাগল -১৬টি, ভেড়া -৭২টি,কবুতর -১০টি, দেশি মুরগি -৬০টি, হাঁস -৫১টি। ফরিদা ইয়াসমিন বর্তমানে একজন সফল নারী খামারী।
তার বাৎসরিক আয় প্রায় কয়েক লক্ষ টাকা। প্রাণিসম্পদ উন্নয়নে উনি অসামান্য অবদান রাখছেন, সমাজে নিরাপদ প্রাণিজ আমিষ সরবরাহ করছেন। উনি সরকারের কাছে একটি জমি লিজ চান যাতে উনার খামারটি আরো বিস্তৃত পরিসরে করতে পারেন এবং আরো অনেকের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে পারেন।
উৎস: Narayanganj Times
কীওয়ার্ড: ন র য়ণগঞ জ
এছাড়াও পড়ুন:
বার্ষিক পরীক্ষায় স্কুলে ‘শাটডাউন’: আলোচনা করে পদক্ষেপ না নিলে শিক্ষার্থীদের ক্ষতি বাড়বে
তিন দফা দাবি আদায়ে এবার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের দুই অংশ মিলে আজ বৃহস্পতিবার থেকে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ বা তালাবদ্ধ কর্মসূচি শুরু করেছেন। এর ফলে আজ চতুর্থ দিনের মতো দেশের অনেক বিদ্যালয়ে বার্ষিক পরীক্ষা হয়নি। বিভিন্ন বিদ্যালয়ে শিক্ষকেরা নিজেরাই ফটকে তালা লাগিয়েছেন। কোথাও কোথাও পরীক্ষা হলেও তা অনেকটা ‘আধামাধা’ভাবে হচ্ছে; কিন্তু এভাবে পরীক্ষা হলেও উত্তরপত্র মূল্যায়ন সঠিকভাবে হবে কি না, তা নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। সব মিলিয়ে দেশে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চলমান তৃতীয় প্রান্তিক মূল্যায়ন বা বার্ষিক পরীক্ষা বড় রকমের সমস্যায় পড়ল।
এমন পরিস্থিতিতে প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগ আন্দোলনকারী শিক্ষকদের সঙ্গে আলোচনায় না বসে উল্টো শৃঙ্খলাবিরোধী কার্যক্রমে সম্পৃক্ত শিক্ষকদের বিরুদ্ধে চাকরি আইন এবং আচরণ বিধিমালা ও ফৌজদারি আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণের হুমকি দিচ্ছে। এরই মধ্যে একাধিক শিক্ষক নেতাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে। এ রকম হুমকিতে শিক্ষকেরা আরও বেশি ক্ষুব্ধ হচ্ছেন।
তবে বার্ষিক পরীক্ষার মধ্যে কর্মবিরতিতে সন্তানের পড়াশোনার ক্ষতিতে অভিভাবকদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। কারণ, বার্ষিক পরীক্ষার এ সময়ে এমন পরিস্থিতিতে আসল ক্ষতিটা হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। তাই শিক্ষাসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের পরামর্শ—প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগের উচিত দ্রুত শিক্ষকদের সঙ্গে বসে তাঁদের বুঝিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করা। আলোচনার মাধ্যমেই এর সমাধান আসতে পারে। না হলে কার্যত শিক্ষার্থীদের ক্ষতি আরও বাড়বে।
প্রাথমিক শিক্ষকদের তিন দফা দাবি হলো সহকারী শিক্ষকদের জাতীয় বেতন স্কেল আপাতত ১১তম গ্রেড দেওয়া, চাকরির ১০ ও ১৬ বছর পূর্তিতে উচ্চতর গ্রেড প্রাপ্তির জটিলতার নিরসন এবং সহকারী শিক্ষক থেকে প্রধান শিক্ষক পদে শতভাগ বিভাগীয় পদোন্নতি দেওয়া। বর্তমানে সহকারী শিক্ষকেরা ১৩তম গ্রেডে আছেন (শুরুর মূল বেতন ১১ হাজার টাকা)।
আরও পড়ুনপ্রাথমিক বিদ্যালয়ে কোথাও তালা, কোথাও পরীক্ষা১৮ ঘণ্টা আগেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকেরা পাঠদান করেন। সারা দেশে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে ৬৫ হাজার ৫৬৯টি। এসব বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা এক কোটির বেশি। শিক্ষক রয়েছেন পৌনে চার লাখের বেশি। সহকারী শিক্ষকের অনুমোদিত পদ ৩ লাখ ৬৯ হাজার ২১৬টি, বর্তমানে কর্মরত ৩ লাখ ৫২ হাজার ২০৮ জন।
গত ২৭ নভেম্বর থেকে তিন দফা দাবিতে কর্মবিরতি শুরু করে ‘প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদ’। গত সোমবার তারা বার্ষিক পরীক্ষা বর্জন কর্মসূচিও শুরু করে। এই পরিষদ গতকাল বুধবার থেকে বিদ্যালয়ে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি শুরু করেছে।
প্রায় একই দাবিতে সহকারী শিক্ষকদের আরেকটি সংগঠন ‘সহকারী শিক্ষক সংগঠন ঐক্য পরিষদের’ ব্যানারে ২৩ থেকে ২৭ নভেম্বর কর্মবিরতি পালন করেছিল।
ঐক্য পরিষদও আজ বৃহস্পতিবার থেকে বিদ্যালয়ে ‘তালাবদ্ধ’ কর্মসূচি শুরু করেছে। দুই পরিষদের নেতারা সভা করে এখন যৌথভাবে এ কর্মসূচি পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
‘প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদ’–এর একজন আহ্বায়ক মোহাম্মদ শামছুদ্দিন জানান, আজ সকালে নিজের নোয়াখালী সদর উপজেলায় কৃপালপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কলাপসিবল গেটে তালা লাগাতে দেখা যায়। এই শিক্ষক নেতা প্রথম আলোকে বলেন, সারা দেশের সরকারি বিদ্যালয়েই তাঁদের ‘শাটডাউন’ কর্মসূচি চলছে।
আজ বেলা পৌনে ১১টার দিকে রাজধানীর বড় মগবাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, নিচতলায় কয়েকজন অভিভাবক বসা। শিক্ষকদের বসার কক্ষে সহকারী শিক্ষকেরা বসা। একজন সহকারী শিক্ষক বলেন, সহকারী শিক্ষকেরা পরীক্ষা নিচ্ছেন না। তবে প্রধান শিক্ষক নিজে এবং সাবেক একজন শিক্ষক ও অভিভাবকদের সহায়তায় পরীক্ষা নিচ্ছেন। সেখান থেকে দোতলায় একটি কক্ষে গিয়ে দেখা গেল শিশুরা পরীক্ষা দিচ্ছে। ওই সময়ে কক্ষে কোনো শিক্ষক দেখা যায়নি।
প্রধান শিক্ষক সামসুন্নাহার বেগম জানান, তাঁদের বিদ্যালয়ে রুটিন অনুযায়ী পরীক্ষা হচ্ছে।
মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার থানা পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ফাঁকা শ্রেণিকক্ষ। ৩ ডিসেম্বর, ২০২৫