এক যুগ আগে জামায়াত কর্মীকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে শেখ হাসিনা ও পুলিশের ৩০ সদস্যের বিরুদ্ধে মামলা
Published: 12th, January 2025 GMT
এক যুগ আগে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর এক কর্মীকে গুলি করে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও পুলিশের ৩০ সদস্যসহ ৯০ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। গত শুক্রবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানায় জামায়াত কর্মী মোহাম্মদ আলমগীর হোসেন ভূঁইয়া মামলাটি দায়ের করেন। প্রথম আলোকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন শেরেবাংলা নগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ গোলাম আজম।
মামলায় শেখ হাসিনা ছাড়া আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, দুদকের সাবেক আইনজীবী খুরশীদ আলম খান, সাবেক প্রসিকিউটর (পিপি) মোশাররফ হোসেন কাজল, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সাবেক প্রসিকিউটর সৈয়দ রেজাউর রহমান, রানা দাশ গুপ্ত, আবদুর রহমান হাওলাদার, তুরিন আফরোজ, সাবিনা ইয়াসমিন খান, মোখলেছুর রহমান, জাহিদ ইমাম, তাপস কান্তি বল, ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের সাবেক পিপি আবদুল্লাহ আবু, হেমায়েত উদ্দিন, শেখ হাসিনার সাবেক প্রেস সচিব নাঈমুল ইসলাম খান, সাংবাদিক মোজাম্মেল বাবু, শ্যামল দত্ত ও মুন্নী সাহাকে আসামি করা হয়েছে।
এ ছাড়া মামলায় পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন, সাবেক ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান, সাবেক এসবি প্রধান মনিরুল ইসলাম, ডিএমপির সাবেক অতিরিক্ত কমিশনার আসাদুজ্জামান, শেরেবাংলা নগর থানার তৎকালীন ওসি আবদুল মুমিন, পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মারুফ আহম্মেদ, এসআই মছিউর রহমান, কামাল হোসেন, জহিরুল ইসলাম, শেখ মফিজুল ইসলাম, শামসু রহমান, সফিউদ্দিন, এএসআই আসাফুদ্দৌলা, মহিউদ্দিন, ইব্রাহীম শেখ, শাহজাহান, আবু হানিফ মণ্ডল, রুস্তম আলী, আল মামুন, দেলওয়ার হোসেন, মনির হোসেন, কনস্টেবল ইউনূস আলী, আবুল হাশেম, গোলাম মোস্তফা, মো.
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, ২০১৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি বিএনপি-জামায়াতের হরতাল কর্মসূচি ছিল। সেদিন রাজধানীর ফার্মগেটে তেজগাঁও বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের সামনে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগসহ সাদাপোশাকে পুলিশ জামায়াত-শিবিরের মিছিলে নির্বিচার গুলি চালায়। পরে জামায়াত কর্মী আলমগীর হোসেন ভূঁইয়াসহ (মামলার বাদী) ১১ জনকে শেরেবাংলা নগর থানায় ধরে নিয়ে যায় পুলিশ। ওই থানায় পুলিশ বাদী হয়ে তাঁদের বিরুদ্ধে পৃথক তিনটি মামলা করে।
মামলার এজাহারে আরও বলা হয়, শেরেবাংলা নগর থানার একটি মামলায় আলমগীর হোসেন ভূঁইয়া, ফাহাদ ও মহিন উদ্দিনের এক দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়। পরে মিথ্যা জব্দ তালিকা তৈরি করা হয়। এরপর সুষ্ঠু তদন্ত না করে ১১ জনের বিরুদ্ধে আদালতে ২০১৩ সালে অভিযোগপত্র জমা দেওয়া হয়। একইভাবে অন্য দুটি মামলায় পুলিশ সুষ্ঠু তদন্ত না করে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয়।
মামলায় অভিযোগ করা হয়, ২০১৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি শেরেবাংলা নগর থানার ভেতরে আলমগীর হোসেন ভূঁইয়ার বাঁ পায়ে গুলি করেন ওই থানার তৎকালীন ওসি আবদুল মমিন। এতে আলমগীর হোসেন অজ্ঞান হয়ে পড়েন। তাঁকে জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানে (পঙ্গু হাসপাতাল) ভর্তি করা হয়। পরে তাঁর বাঁ পা কেটে ফেলতে হয়েছিল।
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
বিদেশে চাকরির নামে যুবকদের পাঠানো হতো রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে, চক্রের ‘হোতা’ গ্রেপ্তার
বিদেশে আকর্ষণীয় বেতনে চকলেট কারখানার কর্মী, পরিচ্ছন্নকর্মী বা বাবুর্চির কাজ দেওয়ার কথা বলে আগ্রহীদের ফাঁদে ফেলা হয়। পরে তাদের সামরিক প্রশিক্ষণ দিয়ে রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধে অংশ নিতে বাধ্য করে আসছিল একটি চক্র। চক্রটির এদেশীয় ‘হোতা’ মুহাম্মদ আলমগীর হোছাইনকে গ্রেপ্তারের পর জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে আসে এমন তথ্য। তাদের খপ্পরে পড়ে অন্তত একজন যুদ্ধে নিহত এবং একজন গুরুতর আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।
পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) বিশেষ পুলিশ সুপার জসীম উদ্দিন খান জানান, আলমগীর হোছাইনকে বৃহস্পতিবার রাতে চট্টগ্রাম বিমানবন্দর থেকে গ্রেপ্তার করে সিআইডির মানব পাচার প্রতিরোধ শাখা। তার বিরুদ্ধে রাজধানীর বনানী থানায় মানব পাচার প্রতিরোধ আইনে মামলা রয়েছে। সেই মামলায় গতকাল শুক্রবার তাকে আদালতে হাজির করা হয়। এ সময় তিনি ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।
সিআইডি জানায়, চক্রের সদস্যরা রাশিয়ায় মাসে দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা বেতনে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে ১০ জনকে প্রথমে ওমরাহ ভিসায় সৌদি আরব পাঠায়। সেখানে তাদের ওমরাহ হজ করানোর পর রাশিয়ায় নিয়ে গিয়ে এক সুলতানের কাছে বিক্রি করে দেওয়া হয়। সেই সুলতান আবার তাদের দাস হিসেবে রাশিয়ান সৈনিকদের কাছে হস্তান্তর করে। পরে তাদের সামরিক প্রশিক্ষণ দিয়ে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অংশ নিতে বাধ্য করা হয়। কেউ যুদ্ধ অংশ নিতে রাজি না হলে তাদের ওপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালানো হয়। খাবার সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়ার মাধ্যমে তাদের দুর্বল করে ফেলা হয়। একপর্যায়ে ভুক্তভোগীরা বাধ্য হয়ে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অংশ নিতে রাজি হন। যুদ্ধে নাটোরের সিংড়ার হুমায়ুন কবির নামে একজন নিহত এবং ঢাকার কেরানীগঞ্জের আমিনুল নামে একজন গুরুতর আহত হন। আর রাশিয়ায় পাঠানো ১০ জনের মধ্যে নরসিংদীর পলাশের আকরাম হোসেন প্রশিক্ষণ ক্যাম্প থেকে পালিয়ে যান। পরবর্তীতে তিনি নিজ ব্যবস্থাপনায় গত ২৬ জানুয়ারি দেশে ফিরে আসেন। এখানে তিনি অন্য ভুক্তভোগীদের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তার কাছে তথ্য পেয়ে যুদ্ধাহত আমিনুলের স্ত্রী ঝুমু আক্তার বনানী থানায় গত ৪ ফেব্রুয়ারি মামলা করেন।
তদন্তকালে সিআইডি জানতে পারে, ১০ জনের আরেকটি দল এখন সৌদি আরবে অবস্থান করছে। যুদ্ধে অংশ নিতে বাধ্য করানোর বিষয়ে জানাজানি হওয়ায় তারা রাশিয়া যেতে রাজি হননি। এ কারণে তাদের পাসপোর্ট কেড়ে নেওয়া হয়েছে। তাই তারা সৌদি আরবে কোনো কাজ করতে পারছেন না, দেশেও ফিরতে পারছেন না। সিআইডি ভুক্তভোগীদের দেশে ফিরিয়ে আনতে সংশ্লিষ্ট সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করছে। সেইসঙ্গে মানব পাচারের এই নেটওয়ার্ক পুরোপুরি ভেঙে দেওয়ার পাশাপাশি নিবিড় তদন্ত এবং গ্রেপ্তার প্রক্রিয়া অব্যাহত রেখেছে।
এর আগে গত ৫ ফেব্রুয়ারি রাতে নেপালে পালিয়ে যাওয়ার সময় মানব পাচারকারী চক্রের অন্যতম সদস্য ফাবিহা জেরিন তামান্নাকে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে গ্রেপ্তার করে সিআইডি। তিনি ড্রিম হোম ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরস লিমিটেডের ব্যবসায়িক অংশীদার।