দগ্ধ রোগী বেড়েই চলেছে, চিকিৎসা দিতে হিমশিম
Published: 13th, January 2025 GMT
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটে এক বছরে প্রায় দেড় হাজার রোগী বেড়েছে। রোগীর চাপে দিশেহারা সক্ষমতাহীন বার্ন ইউনিটটি। একদিকে জনবলসংকট, অন্যদিকে সংকটাপন্ন রোগী ব্যবস্থাপনা নিয়ে হিমশিম খাচ্ছে সরকারি হাসপাতালের এই বার্ন ইউনিট। এ অবস্থায় ১৫০ শয্যার স্বতন্ত্র বার্ন হাসপাতাল নির্মিত হলে পরিস্থিতির উন্নতি হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
চমেক বার্ন ইউনিটটি আগে ছিল ৩০ শয্যার। এখন কাগজকলমে এটিকে ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হয়েছে। কিন্তু ওয়ার্ডটিতে ৪৬ শয্যার বেশি বসানোর জায়গা নেই। শয্যা ও মেঝে মিলে এখানে রোগী থাকে ৫৫ থেকে ৬০ জন। কিন্তু এত রোগী সামাল দেওয়ার জন্য বার্ন ইউনিটটির সামর্থ্য পর্যাপ্ত নয়। ২০২৪ সালে এখানে মোট রোগী চিকিৎসা নিয়েছে ১০ হাজার ২৮৩ জন। আগের বছর ২০২৩ সালে ছিল ৮ হাজার ৯১৭ জন।
জানতে চাইলে বিভাগের প্রধান সহযোগী অধ্যাপক মো.
বার্ন ইউনিটে ২০২২ সালে অন্তর্বিভাগের ১ হাজার ৬৭০ জনসহ মোট রোগী ছিল ৭ হাজার ৪২১ জন। এখন প্রতি মাসে গড়ে ৯০০ থেকে ১০০০ রোগীকে সেবা দেওয়া হচ্ছে এখানে। চিকিৎসকেরা জানান, আগুনে পোড়া, গরম পানিতে ঝলসানো ও বৈদ্যুতিক শকে দগ্ধ রোগী এখানে চিকিৎসা নেন। আগুনে পোড়া রোগীর মধ্যে বর্তমানে সিলিন্ডার বিস্ফোরণের রোগী বেড়েছে বলে জানান চিকিৎসকেরা।
বার্ন ইউনিটের সহকারী অধ্যাপক মোহাম্মদ এস খালেদ প্রথম আলোকে বলেন, গ্যাস সিলিন্ডারজনিত রোগী এখানে বেশি আসে। এ ছাড়া শীতকালে আগুন পোহাতে গিয়ে দগ্ধ, বৈদ্যুতিক গোলযোগসহ নানা পোড়া রোগী এখানে আসে। গ্যাস সিলিন্ডারের ক্ষেত্রে সচেতন হলে এই হতাহত এড়ানো সম্ভব হতো।
চমেক বার্ন ইউনিটের কিছু সীমাবদ্ধতার কারণে বার্ন রোগীদের পূর্ণাঙ্গ সেবা দেওয়া সম্ভব হয় না। এর মধ্যে জনবলসংকট এবং নিবিড় পরিচর্যা না থাকা অন্যতম। বার্ন ইউনিটে জনবল অনুযায়ী একজন অধ্যাপক থাকার কথা, কিন্তু তা নেই। দুজন সহযোগী অধ্যাপক রয়েছেন। একজন সহকারী অধ্যাপক কর্মরত। তবে নিচের দিকে চিকিৎসক কম। তিনজন সহকারী রেজিস্ট্রারের মধ্যে আছেন দুজন। দুজন রেজিস্ট্রারের মধ্যে একজনও এখন নেই। মেডিকেল অফিসারের কোনো পদ নেই।
বিভাগের প্রধান রফিক উদ্দিন আহমেদ বলেন, বার্ন ইউনিটের নিজস্ব নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ) নেই এখানে। বেশি সংকটাপন্ন রোগীদের ঢাকায় পাঠাতে হচ্ছে।
চমেক ক্যাম্পাসে ১৫০ শয্যার স্বতন্ত্র বার্ন হাসপাতাল নির্মাণের কাজ চলছে। চীন সরকারের সহায়তায় এই হাসপাতাল নির্মিত হবে। তবে অবকাঠামোগত নির্মাণকাজের শুরুতে হোঁচট খেয়েছে হাসপাতালটি। পাহাড় কাটার অভিযোগ উঠেছে চমেক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। এ নিয়ে পরিবেশ অধিদপ্তর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে শুনানিতে ডেকেছে।
এ ব্যাপারে হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ তসলিম উদ্দীন বলেন, হাসপাতাল নির্মাণে পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমোদন নিয়ে কিছু সমস্যা দেখা দিয়েছিল। তবে তা কেটে যাবে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ১৫০ শয্যার বার্ন হাসপাতাল নির্মাণ করা হবে। এটা হলে চট্টগ্রামের পোড়া রোগীদের আর ঢাকায় যেতে হবে না।
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সুনজর কখন পড়বে
চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলার নোয়াপাড়া ইউনিয়নে দ্বিতল ভবনবিশিষ্ট একটি মা ও শিশু কল্যাণকেন্দ্রে ওষুধ নেই, চিকিৎসক নেই, বিদ্যুৎ–সংযোগ নেই। ফলে তেমন একটা রোগীও নেই। এই ‘নাই নাই’ হাসপাতালটির নাম মাস্টারদা সূর্য সেন মা ও শিশু কল্যাণকেন্দ্র। এভাবে কি একটা হাসপাতাল চলতে পারে? প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত মানুষের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে যাওয়ার এমন নমুনা আমাদের হতাশ করে। দেশজুড়ে এ রকম আরও চিত্র আমরা দেখতে পাই, যা আমাদের স্বাস্থ্য খাত নিয়ে ইতিবাচক কোনো বার্তা দেয় না।
প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, ১৯৭৫ সালে প্রতিষ্ঠিত এবং ২০০৩ সালে চালু হওয়া এই ১০ শয্যার হাসপাতালটির মূল সমস্যা জনবলসংকট। ১৬টি পদের ১টিতেও স্থায়ী জনবল পদায়ন করা হয়নি। অন্য হাসপাতাল থেকে প্রেষণে এসে মাত্র তিনজন কর্মচারী (একজন উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার, একজন মিডওয়াইফ ও একজন আয়া) সপ্তাহে কয়েক দিন করে দায়িত্ব পালন করেন। এটি একটি জরুরি প্রসূতিসেবাকেন্দ্র, যা ২৪ ঘণ্টা চালু থাকার কথা। কিন্তু বিদ্যুৎ নেই, ডাক্তার নেই এবং প্রয়োজনীয় জনবলের অভাবে এর কার্যক্রম এখন প্রায় স্থবির।
হাসপাতালের বিদ্যুৎ বিল বকেয়া থাকায় প্রায় তিন মাস ধরে বিদ্যুৎ–সংযোগ বিচ্ছিন্ন। ফলে পানীয় জলের ব্যবস্থাও নেই। বিনা মূল্যের ওষুধ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে প্রায় ছয় মাস ধরে। এ পরিস্থিতিতে একজন রোগী কীভাবে এখানে স্বাস্থ্যসেবা নিতে আসবেন? যেখানে হাসপাতালের বাইরের সাইনবোর্ডে জরুরি প্রসূতিসেবার জন্য ২৪ ঘণ্টা খোলা থাকার কথা লেখা, সেখানে মূল ফটকে তালা ঝোলানো। এটি জনগণের সঙ্গে একধরনের প্রতারণা। হাসপাতালটি চালু না থাকায় মা ও শিশুদের স্বাস্থ্যসেবার জন্য স্থানীয় বেসরকারি হাসপাতাল বা চট্টগ্রাম শহরে দৌড়াদৌড়ি করতে হয়। এতে সময় ও অর্থ—দুটোরই অপচয় তো বটেই, চরম ভোগান্তিরও শিকার হতে হয় মানুষকে।
যে মিডওয়াইফরা এখানে কাজ করছেন, তাঁরা জানান, এখন মাসে মাত্র চার-পাঁচজন প্রসূতি সেবা নিতে আসেন, যেখানে আগে শতাধিক প্রসূতি সেবা পেতেন। নিরাপত্তা প্রহরীরা দুই বছর ধরে বেতন পাচ্ছেন না। তবু নিয়মিত বেতন পাওয়ার আশায় তাঁরা এখনো কাজ করে যাচ্ছেন। এ অসহনীয় দুর্ভোগের কারণ হলো সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের চরম উদাসীনতা। উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা জানান, তাঁরা বারবার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জনবলসংকটের কথা জানিয়েছেন, কিন্তু কোনো সুরাহা হয়নি।
একটি মা ও শিশু কল্যাণকেন্দ্রের স্বাভাবিক কার্যক্রম চালু রাখতে কেন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে বারবার ধরনা দিতে হবে? জনবল নিয়োগ, কর্মচারীদের বকেয়া বেতন পরিশোধ, বিদ্যুতের ব্যবস্থা কার্যকর করা—সব ধরনের সংকট দূর করতে হাসপাতালটির দিকে আন্তরিক মনোযোগ দেওয়া হবে, সেটিই আমাদের প্রত্যাশা।