আইফোন চার্জ করার সময় স্পর্শ করলেই ইলেকট্রিক শক করছে, অভিযোগ একাধিক ব্যবহারকারীর
Published: 14th, January 2025 GMT
গত বছরের সেপ্টেম্বরে আইফোন ১৬, আইফোন ১৬ প্লাস, আইফোন ১৬ প্রো ও আইফোন ১৬ প্রো ম্যাক্স মডেলের নতুন আইফোন আনার পর থেকে বেশ ভালোই ঝামেলায় পড়েছে অ্যাপল। বাজারে আসার পরপরই নতুন আইফোনের স্পর্শনির্ভর পর্দা কাজ না করার পাশাপাশি ব্যাটারি দ্রুত শেষ হয়ে যাওয়ার অভিযোগ করেছিলেন অনেক ব্যবহারকারী। এরপর আইফোনগুলোর বিরুদ্ধে বারবার রিস্টার্ট ও হ্যাং হয়ে যাওয়ার অভিযোগ ওঠে। এবার আইফোন ১৬ সিরিজের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ করেছেন ব্যবহারকারীরা। অ্যাপলের গ্রাহক ফোরামে বেশ কয়েকজন ভুক্তভোগী অভিযোগ করেছেন, চার্জ করা অবস্থায় ১৬ সিরিজের আইফোনের অ্যাকশন এবং ক্যামেরা কন্ট্রোল বাটন স্পর্শ করলেই ইলেকট্রিক শক করছে।
অ্যাপলের গ্রাহক ফোরামে একজন ভুক্তভোগী লিখেছেন, ‘আমি মাত্র এক সপ্তাহ আগে আইফোন ১৬ কিনেছি। কিন্তু চার্জ দেওয়ার সময় ক্যামেরা বাটন ধরলেই ইলেকট্রিক শক করছে। এটি খুবই অস্বস্তিকর।’ আরেকজন লিখেছেন, ‘আমার আইফোন ১৬ প্রো চার্জ দেওয়ার সময় ইলেকট্রিক শক খেয়েছি। আঙুল এখনো ঝনঝন করছে। এটি অত্যন্ত বিপজ্জনক।’
অ্যাপলের অফিশিয়াল সুরক্ষা নির্দেশনায় বলা হয়েছে, অফিশিয়াল চার্জিং এক্সেসরিজ ব্যবহার করলে আগুন, বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হওয়া, আঘাত বা ডিভাইসের ক্ষতির ঝুঁকি কমে যায়। কিন্তু অনেক ভুক্তভোগী অভিযোগ করেছেন, অ্যাপলের অফিশিয়াল চার্জার ও কেব্ল ব্যবহার করার পরও একই সমস্যা দেখা গেছে। এ বিষয়ে একজন ভুক্তভোগী মন্তব্য করেছেন, অফিশিয়াল চার্জিং ক্যাবলও ব্যবহার করেছি। কিন্তু সমস্যা থেকে মুক্তি পাইনি। অ্যাপলের উচিত বিষয়টি দ্রুত সমাধান করা।
আরও পড়ুননতুন আইফোনের ব্যাটারি দ্রুত শেষ হয়ে যাচ্ছে কেন১৯ অক্টোবর ২০২৪আইফোন চার্জ করার সময় ইলেকট্রিক শক করার বিষয়ে এখন পর্যন্ত অ্যাপলের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো বিবৃতি দেওয়া হয়নি। তবে প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, আইফোনের এই সমস্যা বড় ধরনের ঝুঁকির কারণ হতে পারে। আর তাই ব্যবহারকারীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে অ্যাপলকে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে।
সূত্র: অ্যান্ড্রয়েড পুলিশ
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
ডেঙ্গু-করোনায় দুই মৃত্যু, আক্রান্ত ২৭৫ জন
ডেঙ্গু ও করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে রোববার সকাল ৮টা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় দু’জনের মৃত্যু হয়েছে। এ সময় হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ২৭৫ জন। তাদের মধ্যে ডেঙ্গুতে ২৪৯ ও করোনা নিয়ে ভর্তি ২৬ জন।
রাজধানীর মহাখালীর ডিএনসিসি ডেডিকেটেড কভিড-১৯ ৩০০ শয্যার হাসপাতাল ডেঙ্গু ও করোনা রোগীর চিকিৎসায় প্রস্তুত। বর্তমানে করোনা আক্রান্ত ১০ ও ডেঙ্গু-চিকুনগুনিয়ার ১৫ রোগী চিকিৎসাধীন। কর্তৃপক্ষের দাবি, রোগীদের ৬০ শতাংশের বেশি ঢাকার বাইরে থেকে আসা। করোনা আক্রান্ত তিনজনকে আইসিইউতে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে রোববার পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, নতুন একজনসহ চলতি বছর ডেঙ্গুতে ৩০ ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। আক্রান্ত বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৯৮৮ জনে। মারা যাওয়া ব্যক্তি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। বরিশাল বিভাগে সবচেয়ে বেশি ১৩৪ জন আক্রান্ত হয়েছেন। এ ছাড়া ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন এলাকায় ৪৩, ঢাকা বিভাগে ৯, চট্টগ্রামে ৩৯, ময়মনসিংহে ৭, খুলনায় ৮, রাজশাহীতে ৫, রংপুরে ৩ ও সিলেট বিভাগে একজন ভর্তি হয়েছেন। দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি ৬৫৯ জন।
আরেক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, করোনায় আক্রান্ত হয়ে নতুন করে একজনের মৃত্যু হয়েছে। ঢাকা বিভাগের ৪১ থেকে ৫০ বছর বয়সী পুরুষ এ রোগী একটি সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। এ নিয়ে চলতি বছর করোনায় চারজনের মৃত্যু হলো। নতুন করে ২৬ জনসহ এ বছর আক্রান্ত দাঁড়িয়েছে ২৪৬ জনে। গত এক দিনে ২৯১ নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে ৮ দশমিক ৯৩ শতাংশ রোগী পজিটিভ হয়েছেন।
ঢাকায় বাড়ছে বাইরের রোগী
ডেঙ্গু ও করোনা আক্রান্তদের চিকিৎসায় রাজধানীর মহাখালীর ডিএনসিসি ডেডিকেটেড কভিড-১৯ হাসপাতালের ৩০০ শয্যা প্রস্তুত করেছে কর্তৃপক্ষ। বর্তমানে এখানে ২৫ রোগী চিকিৎসাধীন। তাদের মধ্যে আইসিইউতে থাকা তিনজনের অবস্থা জটিল।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, চিকিৎসাধীন রোগীর বড় অংশ ঢাকার বাইরের। প্রকোপ বাড়লে আগের মতো ধাপে ধাপে লোকবলের পাশাপাশি শয্যা বৃদ্ধি করা হবে।
সরেজমিন হাসপাতালটির বহির্বিভাগে ২০ থেকে ৩০ রোগী ও তাদের স্বজনের ভিড় দেখা যায়। জ্বর-সর্দি নিয়ে এসেছেন। লক্ষণ দেখে চিকিৎসক পরীক্ষা-নিরীক্ষার পরামর্শ দিলেও, অনেকেই তা না করে ফিরে যান। প্রায় আধা ঘণ্টার অপেক্ষায় অ্যাম্বুলেন্সে গাজীপুর থেকে এক রোগীকে পাওয়া যায়। স্বজন জানান, চার দিন ধরে শরীর ব্যথা, জ্বর। পরীক্ষা করে রোগ শনাক্ত না হওয়ায় এ হাসপাতালে রেফার করা হয়েছে।
মাকে ভর্তি করেছেন লক্ষ্মীপুরের রামগতির আলেকজান্ডার ইউনিয়নের বাহার হোসেন। তিনি সমকালকে জানান, স্থানীয় হাসপাতালে অবস্থার পরিবর্তন না হওয়ায় ডিএনসিসি হাসপাতালে মাকে নিয়ে এসেছেন তিনি। বর্তমানে অবস্থা ভালো। পেটে একটু ব্যথা আছে, আলট্রাসনোগ্রাম করে ছাড়পত্র দেবেন বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন।
হাসপাতালের পরিচালক কর্নেল তানভীর আহমেদ জানান, গত মাস থেকে রোগী বাড়ছে। মে মাসে করোনা নিয়ে ভর্তি হন ২৪ জন। এ মাসের ১৫ দিনে ভর্তি হয়েছেন ১৪ জন। ডেঙ্গু নিয়ে মে মাসে ভর্তি হন ৪৭ জন। চলতি মাসে এ পর্যন্ত এসেছেন ২৬ জন। রোববার বহির্বিভাগে পাঁচ শতাধিক রোগীর চিকিৎসা দেওয়া হয়। বেশির ভাগ রোগী আসছেন জ্বর-সর্দি ও গায়ে ব্যথা নিয়ে। গুরুতর রোগীরা অন্য হাসপাতালের রেফারে আসছেন।
বাইরের রোগী বেশি হলেও তা সুনির্দিষ্টভাবে জানাতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। এক চিকিৎসক নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ভর্তি রোগীদের ৬০ শতাংশের বেশি ঢাকার বাইরের বাসিন্দা।
কর্নেল তানভীর আহমেদ বলেন, হাসপাতালে প্রতিটি শয্যার সঙ্গে অক্সিজেন লাইন রয়েছে। বর্তমানে একসঙ্গে ৩০০ শয্যায় চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব। ৪৫ আইসিইউ সক্রিয়, ৭৯ চিকিৎসক ও নার্স রয়েছেন ৮৪ জন।
চট্টগ্রামে দুই হাসপাতালে শুরু পরীক্ষা
চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতাল ও চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের ৬৫ শয্যা করোনা চিকিৎসায় প্রস্তুত করা হয়েছে। গতকাল এখানে নমুনা পরীক্ষা শুরু হয়েছে। তবে রোগীদের মধ্যে তেমন কোনো আগ্রহ দেখা যায়নি। দুই হাসপাতালে বর্তমানে তিনজন চিকিৎসাধীন। পাঁচ শয্যার আইসিইউ প্রস্তুত করার কথা থাকলেও পারেনি কর্তৃপক্ষ। আজ তিনজনের নমুনা পরীক্ষা করে একজনের করোনা শনাক্ত হয়।
চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. আকরাম হোসেন বলেন, ‘আইসোলেশন ওয়ার্ড প্রস্তুত হলেও যন্ত্রপাতির অভাবে আইসিইউ শয্যাগুলো সক্রিয় করা সম্ভব হয়নি।’ চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল তসলিম উদ্দীন বলেন, ‘আপাতত ডেঙ্গু ওয়ার্ডকে করোনা রোগীর জন্য আইসোলেশন ওয়ার্ড করা হয়েছে। আইসিইউ প্রয়োজন হলে ব্যবস্থা করব।’
খুলনার পিসিআর ল্যাব বিকল
খুলনা ব্যুরো জানায়, জেলায় সরকারিভাবে করোনা পরীক্ষার একমাত্র আরটিপিসিআর ল্যাব খুলনা মেডিকেল কলেজে। মেরামত না করায় দীর্ঘদিন পিসিআর ল্যাবটি বিকল পড়ে আছে। বর্তমানে র্যা পিড অ্যান্টিজেন্ট কিট দিয়ে নমুনা পরীক্ষা করা হচ্ছে।
খুমেক হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. মিজানুর রহমান জানান, ৪০ শয্যা করোনা রোগীর জন্য প্রস্তুত করেছেন তারা।
সিলেটের দুই বন্দরে বিকল থার্মাল স্ক্যানার
সিলেট ব্যুরো জানায়, সরকারি নির্দেশে সিলেটে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও এর অধীনে শহীদ ডা. শামসুদ্দিন হাসপাতাল প্রস্তুত করা হয়েছে। দুয়েক দিনের মধ্যে এখানে করোনার নমুনা পরীক্ষা শুরু হবে। অবশ্য গত শুক্রবার শামসুদ্দিন হাসপাতালে দুই করোনা রোগী ভর্তি হয়েছেন।
স্বাস্থ্যের বিভাগীয় পরিচালক ডা. আনিসুর রহমান জানান, দুই নারী-পুরুষ চিকিৎসাধীন। একজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় আইসিইউতে রাখা হয়েছে।
এদিকে সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও তামাবিল স্থলবন্দরের থার্মাল স্ক্যানার বিকল হয়ে যাওয়ায় শরীরের তাপমাত্রা মাপা সম্ভব হচ্ছে না। তবে ওসমানী বিমানবন্দরে বিকল্প পদ্ধতি ইনফারেড থার্মোমিটার দিয়ে তাপমাত্রা মাপা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।