Prothomalo:
2025-08-01@20:12:37 GMT

প্রেগনেন্সি–পূর্ববর্তী যত্ন

Published: 14th, January 2025 GMT

প্রেগনেন্সি-পূর্ববর্তী যত্ন হলো গর্ভধারণের আগে নারী এবং তাঁর স্বামীর পরিবারের শারীরিক, মানসিক ও সামাজিক প্রস্তুতি। এমন যত্নের লক্ষ্য, গর্ভধারণের জন্য শরীরকে সুস্থ ও সঠিকভাবে প্রস্তুত করা; যাতে সন্তান সুস্থ অবস্থায় জন্ম নিতে পারে এবং মা-ও সুস্থ থাকেন।

প্রেগনেন্সি-পূর্ববর্তী যত্নের গুরুত্ব

প্রেগনেন্সি-পূর্ববর্তী যত্নের মাধ্যমে গর্ভধারণের আগে যেসব স্বাস্থ্যঝুঁকি থাকে, তা কমানো সম্ভব। স্বাস্থ্যসম্মত জীবনযাপন, পুষ্টিকর খাবার ও সঠিক ওষুধ গ্রহণ গর্ভাবস্থার জন্য ভালো শারীরিক পরিস্থিতি তৈরি করতে সহায়তা করে।

স্বাস্থ্য পরীক্ষা

প্রেগনেন্সির আগে নারীর শারীরিক অবস্থা পরীক্ষা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ:

গাইনোকোলজিক্যাল পরীক্ষা: মাসিক স্বাস্থ্য, গর্ভধারণের ইতিহাস এবং কোনো জটিলতা রয়েছে কি না, তা যাচাই করা।

জেনেটিক কাউন্সেলিং: কোনো জেনেটিক অসুখের ঝুঁকি বা পরিবারের ইতিহাস পরীক্ষা করা, যেমন থ্যালাসেমিয়া।

ব্লাড টেস্ট: রক্তের গ্রুপ, রক্তে শর্করা এবং ইনফেকশনের (যেমন: হেপাটাইটিস) উপস্থিতি পরীক্ষা করা।

ভিটামিন ও মিনারেল চেক: বিশেষ করে ভিটামিন ডি এবং আয়রন লেভেল পরীক্ষা করা।

থাইরয়েড পরীক্ষা: থাইরয়েডের অবস্থাও খতিয়ে দেখা জরুরি।

রক্তচাপ পরীক্ষা।

পুষ্টি ও সঠিক খাদ্যাভ্যাস

ফলিক অ্যাসিড: গর্ভধারণের আগে ফলিক অ্যাসিডের পরিমাণ বাড়ানোর পরামর্শ দেওয়া হয়। নিউরোলজিক্যাল সমস্যার ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে এটি। সাপ্লিমেন্টও শুরু করা যায়।

প্রোটিন ও আয়রন: মাংস, ডাল, শাকসবজি ও বাদাম থেকে প্রোটিন এবং আয়রন নেওয়া উচিত।

ক্যালসিয়াম: হাড় ও দাঁত শক্ত করার জন্য ক্যালসিয়াম গ্রহণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

ওজন নিয়ন্ত্রণ ও ব্যায়াম

স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখা গর্ভধারণের আগে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রেগনেন্সির আগে শরীরের মাংসপেশি ও হাড় শক্ত করতে নিয়মিত ব্যায়াম করা উচিত।

মানসিক স্বাস্থ্য

গর্ভধারণের আগে মানসিক স্বাস্থ্যও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই যা প্রয়োজন:

যোগব্যায়াম, মেডিটেশন ও সঠিক বিশ্রাম।

স্বামী বা পরিবারের সদস্যদের সহায়তা।

জীবনযাপন-সম্পর্কিত অভ্যাস

ধূমপান ও মদ্যপান বাদ দেওয়া।

ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড, ফলিক অ্যাসিড, ভিটামিন ডি, আয়রন, ক্যালসিয়াম, প্রোবায়োটিক গ্রহণ।

কিছু টিকা নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়, যাতে মা ও শিশুর রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।

যথেষ্ট পরিমাণ ঘুম শরীর পুনরুদ্ধারে ও গর্ভাবস্থার জন্য প্রস্তুতি নিতে সহায়ক।

বন্ধু, পরিবার ও সমবয়সী মায়েদের সঙ্গে আলোচনা এবং তাঁদের পরামর্শ গ্রহণ।

মনে রাখবেন, প্রেগনেন্সি-পূর্ববর্তী যত্নের মাধ্যমে গর্ভধারণের আগে শারীরিক, মানসিক ও সামাজিক প্রস্তুতির পাশাপাশি সুস্থ শিশুর জন্মের সম্ভাবনাও বৃদ্ধি পায়।

ডা.

শারমিন আব্বাসি, গাইনোকোলজিস্ট ও বন্ধ্যত্ববিশেষজ্ঞ

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

অধ্যাপক ইউনূসের সংস্কারের অঙ্গীকারের এক বছর পরেও কারাগারে সাংবাদিকেরা: সিপিজে

সাংবাদিক ফারজানা রুপা চলতি বছরের ৫ মার্চ ঢাকার একটি জনাকীর্ণ আদালতে আইনজীবী ছাড়াই দাঁড়িয়েছিলেন। বিচারক তাঁর বিরুদ্ধে আরেকটি হত্যা মামলা নথিভুক্ত করার প্রক্রিয়া শুরু করছিলেন। ইতিমধ্যে অন্য মামলায় কারাগারে থাকা এই সাংবাদিক শান্তভাবে জামিনের আবেদন জানান। ফারজানা বলেন, ‘ইতিমধ্যে আমার বিরুদ্ধে এক ডজন মামলা দেওয়া হয়েছে। আমি একজন সাংবাদিক। আমাকে ফাঁসানোর জন্য একটি মামলাই যথেষ্ট।’

বিশ্বজুড়ে সাংবাদিকদের অধিকার রক্ষায় কাজ করা আন্তর্জাতিক সংগঠন কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টসের (সিপিজে) এক নিবন্ধে এসব কথা বলা হয়েছে। এতে বলা হয়, বেসরকারি একাত্তর টেলিভিশনের সাবেক প্রধান প্রতিবেদক ফারজানা রুপার বিরুদ্ধে ৯টি হত্যা মামলা রয়েছে। আর তাঁর স্বামী চ্যানেলটির সাবেক বার্তাপ্রধান শাকিল আহমেদের নামে রয়েছে আটটি হত্যা মামলা।

এক বছর আগে ছাত্রদের নেতৃত্বে কয়েক সপ্তাহের বিক্ষোভের পর পদত্যাগ করে দেশ থেকে পালিয়ে যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই বিক্ষোভ চলাকালে দুজন সাংবাদিক নিহত হন। শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশ ছাড়ার পর বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নেন নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।

অধ্যাপক ইউনূস গণমাধ্যম সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। শেখ হাসিনা সরকারের অধীন সাংবাদিকদের লক্ষ্যবস্তু করতে ব্যবহৃত সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিল করা হয়েছে। কিন্তু ২০২৪ সালের নভেম্বরে ডেইলি স্টার পত্রিকাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে অধ্যাপক ইউনূস বলেছিলেন, সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে তাড়াহুড়ো করে হত্যার অভিযোগ আনা হচ্ছে। তিনি আরও বলেছিলেন, সরকার তখন থেকে এ ধরনের পদক্ষেপ বন্ধ করে দিয়েছে। মামলাগুলো পর্যালোচনা করার জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।

কিন্তু প্রায় এক বছর পর এখনো সাংবাদিক ফারজানা রুপা, শাকিল আহমেদ, শ্যামল দত্ত ও মোজাম্মেল হক বাবু কারাগারে আছেন। হত্যায় উসকানি দেওয়ার অভিযোগে পৃথক মামলায় তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। বিগত সরকারের প্রতি সহানুভূতিশীল হিসেবে ব্যাপকভাবে পরিচিত সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগের বারবার ব্যবহারকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত সেন্সরশিপ বলেই মনে হচ্ছে।

এ ধরনের আইনি অভিযোগ ছাড়াও সিপিজে সাংবাদিকদের ওপর শারীরিক হামলা, রাজনৈতিক কর্মীদের কাছ থেকে হুমকি এবং নির্বাসনের ঘটনা নথিভুক্ত করেছে। বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল কমপক্ষে ২৫ জন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগে তদন্ত করছে। এই অভিযোগ সাবেক শেখ হাসিনা সরকারের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের লক্ষ্যবস্তু করতে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।

সিপিজের আঞ্চলিক পরিচালক বেহ লিহ ই বলেন, ‘চারজন সাংবাদিককে বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ ছাড়াই এক বছর ধরে কারাগারে আটকে রাখা অন্তর্বর্তী সরকারের সংবাদপত্রের স্বাধীনতা রক্ষার ঘোষিত প্রতিশ্রুতিকে দুর্বল করে।’ তিনি আরও বলেন, ‘প্রকৃত সংস্কার মানে অতীত থেকে বেরিয়ে আসা, এর অপব্যবহারের পুনরাবৃত্তি নয়। যেহেতু আগামী মাসগুলোতে দেশে নির্বাচন হতে চলেছে, তাই সব রাজনৈতিক দলকে সাংবাদিকদের খবর প্রকাশের অধিকারকে অবশ্যই সম্মান জানাতে হবে।’

আইনি নথি ও প্রতিবেদন নিয়ে সিপিজের এক পর্যালোচনায় দেখা গেছে, এফআইআর নথিভুক্ত হওয়ার অনেক পর সাংবাদিকদের নাম প্রায়ই এতে যুক্ত করা হয়। মে মাসে জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, গত বছরের বিক্ষোভের পর ১৪০ জনের বেশি সাংবাদিকের বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে।

শ্যামল দত্তের মেয়ে শশী সিপিজেকে বলেন, তাঁর বাবার বিরুদ্ধে এখন কতগুলো মামলা চলছে, পরিবার তার হিসাব রাখতে পারেনি। তাঁরা অন্তত ছয়টি হত্যা মামলার কথা জানেন, যেখানে শ্যামল দত্তের নাম আছে। মোজাম্মেল বাবুর পরিবার ১০টি মামলার কথা জানে। ফারজানা রুপা ও শাকিল আহমেদের পরিবার সিপিজেকে জানিয়েছে, তারা পাঁচটি মামলার এফআইআর পাননি, যেখানে একজন বা অন্য সাংবাদিকের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এর মানে হলো তাঁদের কেউই জামিনের আবেদন করতে পারছেন না।

এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে প্রধান উপদেষ্টার প্রেসসচিব শফিকুল আলম ও পুলিশের মুখপাত্র এনামুল হক সাগরকে ই–মেইল করে সিপিজে। তবে তাঁরা সাড়া দেননি বলে সিপিজের নিবন্ধে উল্লেখ করা হয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ