নওগাঁয় বাড়িতে ডাকাতির পর গৃহবধূকে তুলে নিয়ে দলবদ্ধ ধর্ষণ, গ্রেপ্তার ৭
Published: 14th, January 2025 GMT
নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলায় একটি বাড়িতে ডাকাতির পর গৃহবধূকে তুলে নিয়ে দলবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে সাতজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। আজ মঙ্গলবার দুপুরে নিজ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে নওগাঁর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সাফিউল সারোয়ার এ তথ্য জানান।
এর আগে গত ৯ ডিসেম্বর রাতে মহাদেবপুরে একটি বাড়িতে ডাকাতি করতে ঢোকে ডাকাত দল। তারা বাড়ি থেকে টাকাপয়সা, স্বর্ণালংকার লুটের পর বাড়ির এক গৃহবধূকে তুলে নিয়ে দলবদ্ধভাবে ধর্ষণ করে। ঘটনার পর ওই গৃহবধূকে উদ্ধারের পাশাপাশি ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে প্রথমে তিনজনকে ও পরে দুজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। সর্বশেষ গতকাল সোমবার দিবাগত রাতে অভিযান চালিয়ে দুজনকে গ্রেপ্তার করে মহাদেবপুর থানা-পুলিশ।
গ্রেপ্তার সাতজন হলেন জেলার মান্দা উপজেলার চকজামদই গ্রামের শরিফুল ইসলাম ওরফে পচা (২৯), একই গ্রামের তারেক হোসেন (২৬), বনসেতর গ্রামের সোলাইমান আলী (৩৮), জিনারপুর গ্রামের রিপন আলী (৩০), গৌড়রা বৌদ্দপুর গ্রামের ফারুক হোসেন (৩২), চকন্দর্পপুর গ্রামের সাগর হোসেন (১৯) ও বন্দীপুর গ্রামের রুবেল সরদার (২৮)। তাঁদের শরিফুল ও ফারুককে গ্রেপ্তার করা হয়। এ ছাড়া সাগর, তারেক ও রিপন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার জানান, একদল ডাকাত গত ৯ ডিসেম্বর রাত ১১টার দিকে মহাদেবপুর উপজেলার একটি বাড়িতে ডাকাতির উদ্দেশ্যে ঢোকে। তারা প্রথমে বাড়ির সদস্যদের হাত-পা, মুখ বেঁধে নগদ টাকা, স্বর্ণালংকার ও একটি মোবাইল লুট করে। যাওয়ার সময় ওই বাড়ির এক গৃহবধূকে তুলে নিয়ে একটি খোলা মাঠে দলবদ্ধ ধর্ষণ করে। খবর পেয়ে পুলিশ ওই দিন রাতেই ভুক্তভোগী গৃহবধূকে উদ্ধার করে। এ ঘটনার পর স্বজনদের পক্ষ থেকে থানায় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলা হয়।
মহাদেবপুরে ডাকাতির পর গৃহবধূকে ধর্ষণের ঘটনায় পুলিশের সংবাদ সম্মেলন। মঙ্গলবার দুপুরে.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
মার্চে নির্যাতনের শিকার ৪৪২ নারী
গত মার্চে ৪৪২ নারী ও কন্যাশিশু নির্যাতনের শিকার হয়েছে। এর মধ্যে ধর্ষণ করা হয়েছে ১২৫ কন্যাসহ ১৬৩ জনকে। ১৮ কন্যাসহ ৩৬ জন দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছে। দুই কন্যাকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে। দুই কন্যা ধর্ষণের পর আত্মহত্যা করেছে। এছাড়া ৫৫ কন্যাসহ ৭০ জনকে ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়েছে।
সোমবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী মিলনায়তনে সাম্প্রতিক নারীর মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা এ তথ্য জানান। এর আয়োজন করে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, মহিলা পরিষদের কেন্দ্রীয় লিগ্যাল এইড উপ-পরিষদের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ফেব্রুয়ারিতে মোট ১৮৯ নারী ও কন্যাশিশু নির্যাতনের শিকার হয়েছে। এর মধ্যে ধর্ষণের শিকার ৩০ কন্যাসহ ৪৮ জন। তার মধ্যে তিন কন্যাসহ ১১ জন দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছে। এক কন্যাকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে।
জানুয়ারিতে নির্যাতনের শিকার হয়েছে মোট ২০৫ নারী ও কন্যাশিশু। এর মধ্যে ধর্ষণের শিকার হয়েছে ৩৩ কন্যাসহ ৪৯ জন। তার মধ্যে ১৪ কন্যাসহ ২০ জন দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছে। এক কন্যাসহ দুইজনকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে। এছাড়া দুইজনকে ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়েছে।
মডারেটরের বক্তব্যে সংগঠনের সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম বলেন, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার ৫ নম্বর ধারা জেন্ডার সমতা। এটি উপেক্ষা করা কোনো রাষ্ট্রের পক্ষে সম্ভব নয়।
সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু বলেন, নারী আন্দোলনের অন্যতম দাবি অভিন্ন পারিবারিক আইন প্রণয়ন, রাজনীতিতে সক্রিয় অংশগ্রহণ, সংসদে এক-তৃতীয়াংশ আসন ও সরাসরি নির্বাচন।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন মহিলা পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সীমা মোসলেম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মাসুদা রেহানা বেগম প্রমুখ। সঞ্চালনা করেন কেন্দ্রীয় অ্যাডভোকেসি ও নেটওয়ার্কিং পরিচালক জনা গোস্বামী।
পুলিশ সদরদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, মার্চে নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে দুই হাজার ৫৪টি। এর আগে মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশনের (এমএসএফ) প্রতিবেদনে বলা হয়, মার্চে ১৩২টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) জানায়, জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত নির্যাতনের শিকার হয়েছে ২৯৯ কন্যাশিশু।