শরীয়তপুরের ডামুড্যা উপজেলায় একজন সাংবাদিক ও তাঁর স্ত্রীকে মারধরের অভিযোগে থানায় মামলা হয়েছে। গতকাল সোমবার বিকেলে উপজেলার দশমনতার গ্রামে মারধরের এ ঘটনা ঘটে। আহত সাংবাদিক ও তাঁর স্ত্রীকে ডামুড্যা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।

মারধরের শিকার রাজিব হোসেন বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল ডিবিসি নিউজ ও দৈনিক খবরের কাগজ পত্রিকার শরীয়তপুর প্রতিনিধি। তাঁর স্ত্রী সোনিয়া ঢাকার একটি হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসক।

জমিজমা নিয়ে বিরোধের জেরে ওই সাংবাদিকের চাচাতো ভাইয়েরা সোমবার বিকেলে তাঁদের ওপর হামলা করেন বলে মামলায় অভিযোগ করেছেন তিনি। মামলায় রাজিব হোসেনের চাচা ইসহাক আকন, চাচি সেলিনা বেগম, চাচাতো ভাই আলমগীর হোসেন, আলমগীরের স্ত্রী শান্তা আক্তার, আরেক চাচাতো ভাই বোরহান উদ্দিন, চাচাতো বোন লিপি আক্তারকে আসামি করা হয়েছে।

মামলার এজাহারে রাজিব হোসেন বলেছেন, বাড়ির কিছু জমি নিয়ে চাচাতো ভাই আলমগীরের সঙ্গে তাঁর পরিবারের বিরোধ চলছিল। কয়েক দিন ধরে রাজিবের স্ত্রী সোনিয়াকে বিরক্ত করছিলেন আলমগীর। এমন আচরণের বিষয়ে রাজিব গতকাল আলমগীরকে জিজ্ঞেস করেন। তখন আলমগীর পরিবারের সদস্যদের নিয়ে রাজিব ও তাঁর স্ত্রীর ওপর হামলা করেন। স্থানীয় লোকজন তাঁদের উদ্ধার করে ডামুড্যা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। রাতেই রাজিব বাদী হয়ে ডামুড্যা থানায় মামলাটি করেন।
সাংবাদিক রাজিব হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি ব্যস্ততার কারণে বাড়ির বাইরে থাকি। আমার স্ত্রী ঢাকায় একটি হাসপাতালে ইন্টার্নশিপ করছেন। আমরা কেউই বাড়িতে তেমন থাকি না। প্রয়োজনে যখনই বাড়িতে আসি, আলমগীর ও তাঁর স্ত্রী আমাদের বিভিন্নভাবে বিরক্ত করেন। কয়েক দিন ধরে তাঁরা আমার স্ত্রীকে উত্ত্যক্ত করছিলেন। আমি বিষয়টি তাঁদের জিজ্ঞেস করার পরই তাঁরা আমার ওপর হামলা করেন। স্ত্রী আমাকে উদ্ধার করতে এলে তাঁকেও মারধর করা হয়।’

ঘটনার পর অভিযুক্ত আলমগীর হোসেন ও তাঁর পরিবারের অন্য সদস্যরা বাড়ি থেকে আত্মগোপনে চলে গেছেন। তাঁদের মুঠোফোন নম্বর বন্ধ থাকায় অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

ডামুড্যা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হাফিজুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, এক সাংবাদিক ও তাঁর স্ত্রীর ওপর হামলা ও মারধরের ঘটনা ঘটেছে। ভুক্তভোগী ছয় ব্যক্তিকে আসামি করে মামলা করেছেন। অভিযুক্ত ব্যক্তিরা পলাতক, তাঁদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

আসামিদের হুমকিতে অসহায় মা, নিরাপত্তা চেয়ে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ দাবি

খুলনা মহানগরীর লবণচরার বাংলাদেশ সী ফুডস রোড এলাকার ঘের ব্যবসায়ী মো. আলমগীর হোসেন বিদ্যুৎ (২৪) হত্যা মামলার বিচার কাজ এক যুগ অতিবাহিত হলেও এখনো শেষ হয়নি। মামলার দীর্ঘ সূত্রিতার কারণে আসামিরা জামিনে বের হয়ে মামলা তুলে নিতে হুমকি দিচ্ছেন নিহতের পরিবারকে। তাদের বিরুদ্ধে বাদীর অপর ছেলেকে হত্যার ভয়-ভীতি প্রদর্শনের অভিযোগ উঠেছে। 

এ অবস্থায় সাক্ষীদের নিরাপত্তা দিয়ে সাক্ষ্য গ্রহণের ব্যবস্থা এবং আসামিদের অপতৎপরতা থেকে রক্ষা করে দ্রুত মামলা নিষ্পত্তির আহ্বান জানিয়েছেন নিহত বিদ্যুতের মা জাহানারা বেগম। রবিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) দুপুরে খুলনা প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে তিনি বিচার বিভাগ, পুলিশ বিভাগ ও সাংবাদিকসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

আরো পড়ুন:

কেএমপির ৮ থানার ওসি রদবদল

জলবায়ু পরিবর্তন আজকের বিশ্বের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ: ইইউ রাষ্ট্রদূত

লিখিত বক্তব্যে জাহানারা বেগম বলেন, ‍“২০১২ সালের ৪ ডিসেম্বর সন্ত্রাসীরা আমার ছোট ছেলে মো. আলমগীর হোসেন ওরফে বিদ্যুৎকে (২৪) নগরীর খানজাহান আলী (র.) সেতু এলাকায় নিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে। ঘটনার পর ৭ ডিসেম্বর আমি বাদী হয়ে খুলনা সদর থানায় হত্যা মামলা করি (মামল নং- ০৩)। মামলাটি বর্তমানে খুলনা মহানগর দায়রা জজ (মামলা নং: ৪৪৯/১৫) বিচারাধীন আছে।” 

“মামলায় লবণচরা বাংলাদেশ সী ফুডস রোড এলাকার নাজিম খলিফার দুই ছেলে আরমান খলিফা ও আরিফ খলিফা, লবণচরা মোহাম্মদীয়া পাড়া মসজিদ এলাকার আব্দুল জলিল হাওলাদারের ছেলে হারুন হাওলাদার, লবণচরা ইব্রাহীমিয়া মাদরাসা রোড এলাকার হামিদ মিস্ত্রীর ছেলে মো. সিরাজ এবং লবণচরা মোক্তার হোসেন রোড এলাকার হযরত আলী ফকিরের ছেলে বাদল ফকিরকে আসামি করা হয়। এ মামলায় আসামিরা বিভিন্ন সময় গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারেও ছিলেন। আসামিরা জামিনে মুক্তি পেয়ে জেল থেকে বের হয়ে মামলা তুলে নিতে নানাভাবে হুমকি-ধামকি অব্যাহত রেখেছে। এই সব আসামিদের বিরুদ্ধে একাধিক থানায় বিভিন্ন মামলাও রয়েছে”, যোগ করেন তিনি।

জাহানারা বেগম অভিযোগ করে বলেন, “আমার কলিজার টুকরো সন্তানকে হত্যা করেও সন্ত্রাসীরা ক্ষ্যান্ত হয়নি। উপরন্ত জামিনে মুক্তি পেয়ে তারা এখন মামলা তুলে নিতে আমি ও আমার এক মাত্র সন্তান এবং মামলার স্বাক্ষীদের জীবননাশসহ বিভিন্ন ধরনের ভয়ভীতি ও হুমকি দিচ্ছে। এ বিষয়ে বারবার সাধারণ ডায়রি (জিডি) করার ফলে হত্যাকারী-সন্ত্রাসীরা ক্ষুদ্ধ হয়ে আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। যে কোন সময় তারা আমি ও আমার বড় ছেলেসহ আমার পরিবারের সদস্যদের বড় ধরণের ক্ষতি করতে পারে। এ অবস্থায় আমরা চরম নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে রয়েছি।”

তিনি আরো বলেন, “হত্যাকারী-আওয়ামী সন্ত্রাসীদের ভয়ে আমি এখন পর্যন্ত খুলনা ও লবণচরা থানায় চারটি সাধারণ ডায়রি করেছি। সর্বশেষ গত ৩ মার্চও আমি লবণচরা থানায় জিডি করি। কারণ ২ মার্চ দুপুরে মামলার চার্জশিটভুক্ত প্রধান আসামি আরমান তার ভাই আরিফ এবং অপর আসামি জুয়েল শেখ, হারুন হাওলাদার, সিরাজ ও বাদল ফকিরসহ আরো অনেকে আমার বাসার সামনে এসে মামলা তুলে নেয়ার জন্য ভয়ভীতি ও হুমকি দেয়। এমনকি তারা আমাকে ও আমার বড় ছেলে জাহাঙ্গীর হোসেন বিপ্লবকেও হত্যা করবেন বলেও হুমকি দেয়। এ ছাড়া, একই ধরণের ভয়ভীতি ও হুমকির কারণে আমি ২০১৪ সালের ৪ মার্চ ও ২ মে খুলনা থানায় এবং একই বছরের ৪ মে জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে লবণচরা থানায় সাধারণ ডায়রি করি।”

ঢাকা/নূরুজ্জামান/মাসুদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • আসামিদের হুমকিতে অসহায় মা, নিরাপত্তা চেয়ে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ দাবি