শরীয়তপুরে জমিজমার বিরোধে চাচাতো ভাইদের হামলায় সাংবাদিক ও তাঁর স্ত্রী আহত
Published: 14th, January 2025 GMT
শরীয়তপুরের ডামুড্যা উপজেলায় একজন সাংবাদিক ও তাঁর স্ত্রীকে মারধরের অভিযোগে থানায় মামলা হয়েছে। গতকাল সোমবার বিকেলে উপজেলার দশমনতার গ্রামে মারধরের এ ঘটনা ঘটে। আহত সাংবাদিক ও তাঁর স্ত্রীকে ডামুড্যা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।
মারধরের শিকার রাজিব হোসেন বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল ডিবিসি নিউজ ও দৈনিক খবরের কাগজ পত্রিকার শরীয়তপুর প্রতিনিধি। তাঁর স্ত্রী সোনিয়া ঢাকার একটি হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসক।
জমিজমা নিয়ে বিরোধের জেরে ওই সাংবাদিকের চাচাতো ভাইয়েরা সোমবার বিকেলে তাঁদের ওপর হামলা করেন বলে মামলায় অভিযোগ করেছেন তিনি। মামলায় রাজিব হোসেনের চাচা ইসহাক আকন, চাচি সেলিনা বেগম, চাচাতো ভাই আলমগীর হোসেন, আলমগীরের স্ত্রী শান্তা আক্তার, আরেক চাচাতো ভাই বোরহান উদ্দিন, চাচাতো বোন লিপি আক্তারকে আসামি করা হয়েছে।
মামলার এজাহারে রাজিব হোসেন বলেছেন, বাড়ির কিছু জমি নিয়ে চাচাতো ভাই আলমগীরের সঙ্গে তাঁর পরিবারের বিরোধ চলছিল। কয়েক দিন ধরে রাজিবের স্ত্রী সোনিয়াকে বিরক্ত করছিলেন আলমগীর। এমন আচরণের বিষয়ে রাজিব গতকাল আলমগীরকে জিজ্ঞেস করেন। তখন আলমগীর পরিবারের সদস্যদের নিয়ে রাজিব ও তাঁর স্ত্রীর ওপর হামলা করেন। স্থানীয় লোকজন তাঁদের উদ্ধার করে ডামুড্যা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। রাতেই রাজিব বাদী হয়ে ডামুড্যা থানায় মামলাটি করেন।
সাংবাদিক রাজিব হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি ব্যস্ততার কারণে বাড়ির বাইরে থাকি। আমার স্ত্রী ঢাকায় একটি হাসপাতালে ইন্টার্নশিপ করছেন। আমরা কেউই বাড়িতে তেমন থাকি না। প্রয়োজনে যখনই বাড়িতে আসি, আলমগীর ও তাঁর স্ত্রী আমাদের বিভিন্নভাবে বিরক্ত করেন। কয়েক দিন ধরে তাঁরা আমার স্ত্রীকে উত্ত্যক্ত করছিলেন। আমি বিষয়টি তাঁদের জিজ্ঞেস করার পরই তাঁরা আমার ওপর হামলা করেন। স্ত্রী আমাকে উদ্ধার করতে এলে তাঁকেও মারধর করা হয়।’
ঘটনার পর অভিযুক্ত আলমগীর হোসেন ও তাঁর পরিবারের অন্য সদস্যরা বাড়ি থেকে আত্মগোপনে চলে গেছেন। তাঁদের মুঠোফোন নম্বর বন্ধ থাকায় অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
ডামুড্যা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হাফিজুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, এক সাংবাদিক ও তাঁর স্ত্রীর ওপর হামলা ও মারধরের ঘটনা ঘটেছে। ভুক্তভোগী ছয় ব্যক্তিকে আসামি করে মামলা করেছেন। অভিযুক্ত ব্যক্তিরা পলাতক, তাঁদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
বন্দরে গভীর রাতে বুড়া-বুড়ির বাড়িতে হামলা
বন্দরের জাঙ্গাল এলাকায় ইট ভাটার মাটি কাটতে না দেয়ায় নিরিহ নিরপরাধ বৃদ্ধ দম্পত্তির (বুড়া-বুড়ি) নামে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানী ও বাড়ি ঘরে ব্যাপক হামলা ও ভাংচুরের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
পুলিশের উপস্থিতিতে একটি ইট ভাটা মালিকের সন্ত্রাসী বাহিনী এই হামলা ও ভাংচুরের নেতৃত্ব দিয়েছে বলে ভূক্তভোগীরা জানিয়েছেন। এরপর উল্টো তাদের ধরে নিয়ে তাদের নামে মিথ্যা মামলা দিয়ে জেল খাটিয়েছেন। পরে জামিনে বের হয়ে ভুক্তভোগী এ ঘটনায় থানায় মামলা করতে পুলিশ মামলা না নেয়ায় আতংকে রয়েছেন তারা।
জানা গেছে, বন্দরের জাঙ্গালের বাকদোবাড়িয়া এলাকায় অবস্থিত ৩টি ব্রিক ফিল্ডের মালিক মোঃ আলমগীর হোসেন। সে সাধারন মানুষের জমি জোর পূর্বক দখল করে মাটি কেটে ইট ভাটা পরিচালনা করে আসছে বলে ব্যাপক অভিযোগ রয়েছে। তার বিরুদ্ধে নারায়ণগঞ্জের আদালতে বেশ কয়েকটি দেওয়ানী মামলা চলমান রয়েছে।
ভূক্ত ভোগী বন্দরের জাঙ্গাল এলাকায় বৃদ্ধা মহিলা মিনারা বেগম মিনু জানান, আমার জমি জমার বিভিন্ন ভূয়া কাগজপত্র সৃজন করে ইট ভাটার মালিক আলমগীর জোর পূর্বক দখল করে মাটি কাটার চেষ্টা চালায়।
আমি ও আমার পরিবার এতে জোরালো আপত্তি করি এবং আমার স্বামী তার বিরুদ্ধে নারায়ণগঞ্জ আদালতে একাধিক দেওয়ানী মামলা দায়ের করেন। এতে ইট ভাটার মালিক আমাদের উপর ক্ষীপ্ত হয়ে আমাদের প্রানে মেরে ফেলার জন্য আলমগীর নানা ষড়যন্ত্রের ফাদ পাততে থাকে।
আর এ কাজে থানা পুলিশকে সে ম্যানেজ করে তার সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে আমাদের জীবন শেষ করে দেয়ার অপচেষ্টা চালায়। গত ২০ এপ্রিল রবিবার রাত সাড়ে ১২টা থেকে গভীর রাত ৩টা পর্যন্ত বন্দর থানার দারোগা জলিল, শরীফ ও বন্দর কামতাল ফাড়ির দারোগা মনির সহ প্রায় ২৫ জন পুলিশ আমার বাড়ীর চারদিকে ঘেরাও করে রাখে।
এসময় ব্রিক ফিল্ডের মালিক আলমগীরের প্রায় ২০/২৫ জনের ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসী বাহিনী দা, সাবল, বটি, খুন্তি, কুড়াল সহ দেশীয় অস্ত্র সস্ত্র নিয়ে বাড়ীর গেট ভেঙ্গে ভিতরে প্রবেশ করে ব্যাপক হামলা ভাংচুর ও লুটপাট চালায়। পরবর্তীতে বন্দর থানা পুলিশ বাড়ীর ভিতরে প্রবেশ করে আমাকে ও আমার বৃদ্ধ স্বামীকে জোর পূর্বক থানার পুলিশ ভ্যানে তুলতে চায়।
বন্দর থানা পুলিশ কোন মামলা ছাড়াই বিনা ওয়ারেন্টে টানা হেচড়া করে আমাদেরকে থানায় নিয়া যাওয়ার চেষ্টা করে। এ সময় আমি মামলা ছাড়া বিনা ওয়ারেন্ট আমাদের কেন থানায় নিয়া যাবেন জানেত চাইলে আমাকে ও আমার স্বামী আঃ বাতেন (৬০) কে বেধম প্রহার করেন। আমি একজন বৃদ্ধা মহিলা হওয়া স্বত্তেও পুলিশ আমাকে উপর্যপুরি ৪টি বেত্রাঘাত করে।
তখন আমি পুলিশের হাতে পায়ে ধরে কোন মতে পুলিশের হাত থেকে ছাড়া পেলেও গভীর রাত ৩টায় আমার স্বামী আঃ বাতেন (৬০)কে জোরপূর্বক বন্দর থানায় নিয়া যায়।
থানায় নিয়ে ব্রিক ফিল্ডের মালিক আলমগীরের ম্যানেজার মজিবরকে বাদী বানাইয়া আমাদের বিরুদ্ধে বন্দর থানায় ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইন ২০২৩ এর ১০/১৩/১৬ ধারায় একটি মিথ্যা মামলা নং-২৪৪২৫ দায়ের করেন।
বন্দর থানার পুলিশ আমার স্বামীকে ২০ এপ্রিল ৫ দিনের রিমান্ড আবেদন সহ নারায়ণগঞ্জ আদালতে প্রেরন করলে বিজ্ঞ আদালত শুনানী অন্তে রিমান্ডের আবেদন না-মঞ্জুর পূর্বক জামিন প্রদান করেন এবং পরবর্তীতে গত ২২ এপ্রিল আমি বিজ্ঞ আদালতে স্বেচ্ছায় আত্মসমর্পন করলে মহামান্য আদালত আমাকেও জামিন প্রদান করেন।
বর্তমানে আমরা আদালত থেকে জামিন নেয়র পর এ ঘটনায় বন্দর থানায় মামলা করতে গেলে ব্রিক ফিল্ডের মালিক আলমগীরের দাপটের কারনে পুলিশ কোন মামলা নিচ্ছে না।
এখন আমি আদালতে প্রতিকার চেয়ে ন্যায় বিচার পাওয়ার আশায় মামলা দায়েরের সিদ্ধান্ত গ্রহন করেছি। আমি এই ঘটনার সুুষ্ট তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য পুলিশের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
এ বিষয়ে কথা বলতে বন্দর থানার ওসির মোবাইলে একাধিকবার ফোন দিলেও সংযোগ পাওয়া যায়নি।