ঠাকুরগাঁওয়ে ঘুষের টাকাসহ পাসপোর্ট কার্যালয়ের হিসাবরক্ষক আটক
Published: 14th, January 2025 GMT
ঠাকুরগাঁও আঞ্চলিক পাসপোর্ট কার্যালয়ের সহকারী হিসাবরক্ষক ফারুক আহমেদকে ঘুষের টাকাসহ হাতেনাতে আটক করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। আজ মঙ্গলবার দুপুরে দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয় ঠাকুরগাঁওয়ের উপপরিচালক তাহসিন মুনাবীল হকের নেতৃত্বে এ অভিযান পরিচালিত হয়।
দুদক কর্মকর্তা তাহসিন মুনাবীল হক বিষয়টি প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, এক সেবাগ্রহীতার অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তাঁরা অভিযান চালিয়ে ওই কর্মকর্তাকে ঘুষের ২০ হাজার টাকাসহ আটক করেন। এ ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
তাহসিন মুনাবীল হক জানান, মিরানা মাহাজাবিন সরকার নামের এক সৌদিপ্রবাসী পাসপোর্ট নবায়নের জন্য ঠাকুরগাঁও পাসপোর্ট কার্যালয়ে আবেদন করেছিলেন। গত ২৯ নভেম্বর তাঁর পাসপোর্ট নেওয়ার দিন ছিল। ওই দিন তিনি পাসপোর্ট নিতে গেলে কার্যালয় থেকে বলা হয়, তিনি যেহেতু সৌদিপ্রবাসী, তাঁকে সেখান থেকে পাসপোর্ট নিতে হবে। তখন তিনি তাঁদের জানান, এখন তো তাঁর সৌদি আরবে যাওয়ার সুযোগ নেই। তখন পাসপোর্ট কার্যালয়ের লোকজন তাঁকে এখান থেকেই পাসপোর্ট পাওয়ার ব্যবস্থা করে দেওয়ার আশ্বাস দেন। এরপর ওই প্রবাসীকে দিনের পর দিন ঘোরানো হয়। এ অবস্থায় পাসপোর্ট কার্যালয়ের সহকারী হিসাবরক্ষক ফারুক আহমেদ পাসপোর্টের ব্যবস্থা করে দিতে ৫০ হাজার টাকা ঘুষ দাবি করে বলেন, এই টাকার মধ্যে তিনি পাঁচ হাজার টাকা নেবেন আর বাকি টাকা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে দেবেন। এরপর এ বিষয়ে দুদকে অভিযোগ করেন ওই প্রবাসী।
তাহসিন মুনাবীল হক বলেন, অভিযোগের পর কমিশনের অনুমোদন নিয়ে আজ দুপুরে একটি ফাঁদ পেতে পাসপোর্ট কার্যালয়ে অভিযান চালানো হয়। দুদকের লোকজন ছদ্মবেশে সেখানে অবস্থান নেন। এরপর ফারুকের দাবির প্রথম কিস্তি হিসেবে আজ ২০ হাজার টাকা সৌদিপ্রবাসী মিরানা মাহাজাবিনের কাছ থেকে নিতে যান। তখন ফারুক আহমেদকে হাতেনাতে আটক করা হয় এবং তাঁর কাছ থেকে ঘুষের ২০ হাজার টাকা জব্দ করা হয়।
জানতে চাইলে ঠাকুরগাঁও আঞ্চলিক পাসপোর্ট কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো.
জাহিদুল ইসলাম বলেন, এখানে প্রশাসনিক বিভাগে চিঠিপত্র আদান–প্রদানের কাজ করেন ফারুক। চিঠি ইস্যুর পর প্রধান কার্যালয়ে পাঠালে পাসপোর্ট বাতিলের অনুমোদন হয়। সিস্টেম অ্যানালিস্ট পাসপোর্ট বাতিল করতে গেলে দেখেন, তাঁর পাসপোর্টটি ইস্যু হয়ে গেছে। আবেদন সৌদিতে হওয়ায় পাসপোর্টটি জেদ্দায় চলে গেছে। গতকাল ওই প্রবাসী এলে তাঁকে বিষয়টি জানানো হয়। তখন মিনারাকে পাসপোর্ট ফেরতের আবেদন করতে বলা হয়। ওই চিঠি ইস্যু করার বিষয়ে তাঁকে ফারুকের সঙ্গে কথা বলতে অনুরোধ করা হয়। এরপর তাঁরা নিজেদের মধ্যে কী চুক্তি করেছেন, তিনি বলতে পারবেন না।
আটক ফারুক আহমেদ বিকেলে এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত দুদকের হেফাজতে ছিলেন। এ বিষয়ে তাঁর বক্তব্য পাওয়া যায়নি। বিকেল পর্যন্ত তাঁকে থানা-পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়নি বলে জানিয়েছে পুলিশ।
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
কোরবানির গরু কেনার আড়াই লাখ টাকা ছিনিয়ে নিতে ব্যবসায়ী জাকিরকে হত্যা করা হয়
রাজধানীর সবুজবাগের প্লাস্টিক ব্যবসায়ী জাকির হোসেনের সঙ্গে থাকা আড়াই লাখ টাকা ছিনিয়ে নিতেই ধারালো অস্ত্রের আঘাতে তাঁকে ছয় টুকরা করে লাশ বস্তায় ঢুকিয়ে কাছের একটি ঝোপের ভেতরে পুঁতে রাখা হয়। এর আগে আজহারুল ইসলাম (গ্রেপ্তার) মুঠোফোনে সবুজবাগের ভাইগদিয়ায় তাঁর ভাড়া বাসায় জাকিরকে (৫৫) ডেকে নেন।
গ্রেপ্তার আজহারুল ইসলাম (৩৯) আজ শুক্রবার আদালতে দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে এ কথা বলেছেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। আদালত তাঁর জবানবন্দি নিয়ে তাঁকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। এ ছাড়া এ হত্যাকাণ্ডে গ্রেপ্তার শুক্কুর আলী (৪৪), মো. রাজীব (২৬) ও স্বপনকে (২৫) পাঁচ দিন করে পুলিশি হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দিয়েছেন আদালত। গ্রেপ্তার শুক্কুর আলী পেশায় রাজমিস্ত্রি এবং বাকিরা রংমিস্ত্রি।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সবুজবাগ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. সামছুল আমিন আজ প্রথম আলোকে বলেন, গ্রেপ্তার আজহারুল, শুক্কুর আলী, রাজীব ও স্বপন জবানবন্দি দিতে রাজি হওয়ায় দুপুরে তাঁদের ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে পাঠানো হয়। এর মধ্যে আজহারুল আদালত জবানবন্দি দেন। অপর তিনজন জবানবন্দি দিতে রাজি হননি। পরে তাঁদের সাত দিন করে রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন জানানো হয়। শুনানি শেষে আদালত তাঁদের পাঁচ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
মামলার তদন্ত–সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, আজহারুল আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে বলেন, জাকির হোসেনের সঙ্গে তাঁদের চারজনের (আজহারুল, শুক্কুর আলী, রাজীব ও স্বপন) বন্ধুত্ব ছিল। তাঁরা একসঙ্গে আড্ডা দিতেন। মাঝেমধ্যে জাকিরের সঙ্গে তাঁর ভাইগদিয়ার ভাড়া বাসায় তাঁরা একসঙ্গে মদ্যপান করতেন। ৪ জুন রাতে জাকির নন্দীপাড়ায় শেখের বাজারের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান থেকে বাসায় ফিরছিলেন। তখন আজহারুল মুঠোফোনে জাকিরকে তাঁর বাসায় ডেকে নেন। ওই বাসায় আজহার একা থাকতেন। আগেই জাকির তাঁদের জানিয়েছিলেন, তাঁর কাছে কোরবানির গরু কেনার আড়াই লাখ টাকা আছে এবং ডেমরার আমুলিয়া পশুরহাট থেকে কোরবানির জন্য গরু কিনবেন। জাকির তাঁর বাসায় পৌঁছানোর পর ওই টাকার ওপর তাঁদের সবার লোভ জাগে। তাঁরা টাকা ছিনিয়ে নিতে গেলে জাকির বাধা দেন। তখন ইস্পাতের পাইপ দিয়ে জাকিরের মাথায় সজোরে আঘাত করেন আজহারুল। এতে জাকির অচেতন হয়ে যান। এ সময় তাঁর কাছ থেকে এক হাজার টাকার দুটি বান্ডিল ছিনিয়ে নিয়ে সেই টাকা শুক্কুর আলীর কাছে জমা রাখেন।
পুলিশ সূত্র জানায়, আজহারুল আদালতকে জানান, জাকিরকে বাঁচিয়ে রাখা হলে তাঁরা সবাই ফেঁসে যাবেন—এমন আশঙ্কায় জাকিরকে হত্যা করে লাশ গুম করার সিদ্ধান্ত নেন। এরপর ধারালো অস্ত্রের আঘাতে জাকিরের শরীর থেকে মাথা বিচ্ছিন্ন করে ফেলেন। এরপর শুক্কুর, রাজীব ও স্বপন তাঁর শরীর টুকরা টুকরা করেন। পরে লাশের ছয়টি টুকরা রঙের দুটি পাত্রে ভরে একটি অটোরিকশায় করে দক্ষিণ ভাইগদিয়ায় নিয়ে যান। শুক্কুর, রাজীব ও স্বপন অন্য পথ দিয়ে দক্ষিণ ভাইগদিয়ায় আসেন। তখন তাঁরা সবাই মিলে বালতিভর্তি লাশের টুকরাগুলো পাশের ঝোপে নিয়ে যান। এরপর সেখানে খুঁড়ে লাশের টুকরাগুলো পুঁতে রাখেন।
আজহারুল আদালতকে বলেন, জাকিরের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেওয়া টাকা ভাগাভাগি করার আগেই তাঁরা পুলিশের হাতে ধরা পড়েন।
পুলিশ কর্মকর্তা সামছুল আমিন বলেন, আজহারুলের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাহেরচরে। বাকি তিনজন ঢাকার সবুজবাগের ভাইগদিয়ার স্থায়ী বাসিন্দা।
প্লাস্টিক ব্যবসায়ী জাকির হোসেন সপরিবার সবুজবাগ থানার ভাইগদিয়া এলাকায় থাকতেন। ৪ জুন জাকির হোসেন নিখোঁজ হন। এরপর স্বজনেরা বিভিন্ন স্থানে খোঁজ করেও তাঁর সন্ধান পাননি। পরদিন জাকির নিখোঁজ রয়েছেন বলে তাঁর স্ত্রী রেখা বেগম সবুজবাগ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। এর মধ্যে জাকিরের খোঁজ না পাওয়ায় তিনি ১০ জুন আজহার আলীসহ অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে সবুজবাগ থানায় একটি অপহরণের মামলা করেন।
পুলিশ কর্মকর্তা সামছুল আমিন বলেন, এ মামলার তদন্ত করতে গিয়ে এলাকার ক্লোজড সার্কিট টেলিভিশন (সিসিটিভি) ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ ও তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় হত্যাকাণ্ডে জড়িত আজহারুলকে শনাক্ত করা হয়। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে আজহারের অবস্থান নিশ্চিত হয়ে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁর দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে হত্যায় জড়িত অভিযোগে গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে অপর তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গে ময়নাতদন্ত শেষে গতকাল রাতে জাকির হোসেনকে ভাইগদিয়ায় দাফন করা হয়।
সবুজবাগ থানার ওসি ইয়াছিন আলী প্রথম আলোকে বলেন, জমিজমা নিয়ে বিরোধের জের ধরে জাকিরকে হত্যা করা হয়েছে বলে তাঁর পরিবার অভিযোগ করলেও তদন্তে এখন পর্যন্ত এর সত্যতা পাওয়া যায়নি। জাকির হত্যায় আরও একজন জড়িত। তাঁকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।