পুরান ঢাকার কোতোয়ালি রোডের একটি বাসার ছাদে ঘুড়ি ওড়াচ্ছে কিশোর সুমন। সঙ্গে তার চার বন্ধু। সবার হাতে নাটাই। তাদের মনোযোগ আকাশে ওড়া ঘুড়ির দিকে। কে কার ঘুড়ির সুতা কাটবে, সেই প্রতিযোগিতা চলছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই সুমনের ঘুড়ির সুতা অন্য ছাদের একজন কেটে ফেলে। প্রতিশোধ নিতে এবার তার সুতা কাটার প্রতিযোগিতায় নামে সুমনের বন্ধুরা। 

‘সাকরাইন উৎসব’ ঘিরে গতকাল মঙ্গলবার সারাদিন এমনই চিত্র ছিল পুরান ঢাকার বিভিন্ন ছাদে। প্রতিবছর পৌষ মাসের শেষ দিন এ উৎসব উদযাপন করা হয়ে থাকে। এবারও তার ব্যতিক্রম ছিল না। তবে সাকরাইন উৎসবে আগের মতো জৌলুস নেই। প্রযুক্তির ছোঁয়ায় সাকরাইন উৎসবে কিছুটা ভাটা পড়েছে। সঙ্গে এসেছে ভিন্নতা। ব্যবসায়িক ব্যস্ততায় সাকরাইন উৎসবে সময় দেওয়া কমিয়ে দিয়েছে অনেকে। তবে এ উৎসবের উৎসাহ-আমেজ ধরে রাখার চেষ্টা করেন শিশু-কিশোর ও তরুণ-তরুণীরা।

শাঁখারীবাজারের বাসিন্দা সুভাষ চন্দ্র বলেন, এবারের সাকরাইন তথা ঘুড়ি উৎসবের জন্য তিনি ও তাঁর বোন ১০টি ঘুড়ি কিনেছেন। বিকেল পর্যন্ত তিনি অন্য ছাদের তিনটি ঘুড়ির সুতা কেটেছেন। অন্যরাও তার ঘুড়ি কেটেছে কয়েকবার। সুভাষের সবচেয়ে পছন্দের ঘুড়ি পতেঙ্গা।

ছোট বোনের কথা জিজ্ঞেস করলে মুচকি হেসে তিনি বলেন, ও তো ছোট মানুষ। ছাদে নিয়ে না এলে কান্না করে। তাই নিয়ে আসছি। ওর জন্য আমার বেশি ঘুড়ি কাটা যাচ্ছে!
শুধু শাঁখারীবাজার নয়, পুরান ঢাকার সূত্রাপুর, কাঠেরপুল, লোহারপুল, বংশাল, নয়াবাজার, রায়সাহেব মোড়, শিংটোলা, ইসলামপুর, ধূপখোলা মাঠসহ বিভিন্ন ছাদে ঘুড়ি ওড়ানোর প্রতিযোগিতা দেখা যায়। ছেলেমেয়ের ঘুড়ি ওড়ানোর আবদারে ধূপখোলা মাঠে আসেন জুলফিকার মাহমুদ। তিনি বলেন, ছোটবেলায় সাকরাইন উৎসবে আমিও ঘুড়ি ওড়াতাম। ঘুড়ি কাটাকাটিতে সবচেয়ে মজা। এখন কাজের চাপে ব্যস্ত হয়ে উঠেছি। আগে সাকরাইন উৎসবে শুধু ঘুড়িই ওড়াতাম আমরা। এখন এটা কমেছে।
ব্যবসায়ী রমকান্ত হালদার বলেন, এবার ঘুড়ি বিক্রি হয়েছে কম। মানুষ এখন ঘুড়ির থেকে গান-বাজনায় বেশি মাতে। ঘুড়ি ওড়ানো উৎসব হয়ে গেছে গান-বাজনা আর ডিজে পার্টির। ছেলেমেয়েরা সাকরাইন উৎসবটাই জানে না। স্থানীয়রা ঘুড়ি ওড়ানোর উৎসব ধরে রেখেছে। এবার সব মিলিয়ে ২ হাজার ঘুড়ি বিক্রি হয়েছে।

রমকান্ত হালদারের কথার প্রমাণ মিলল সন্ধ্যা নামতেই। ছাদে ছাদে জ্বলে ওঠে নানান রঙের আলো। সাউন্ড বক্সে চলে গান। আতশবাজি ফোটাতে থাকে কেউ কেউ।
শাঁখারীবাজারের বাসিন্দা বীরেন বোস বলেন, ব্যবসায়িক ব্যস্ততায় আমরা আগের মতো সময় দিতে পারি না। তবে ছেলেমেয়েদের চাপে বাসার ছাদে সাউন্ড সিস্টেম এনেছি। যদিও আমাদের সময় হাজার হাজার ঘুড়ি ওড়ানো হতো। এখনকার ছেলেরা ঘুড়ি ওড়ানোর চেয়ে আতশবাজি ফোটানো ও ডিজে গানে বেশি আগ্রহী।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কোতোয়ালি জোনের সহকারী কমিশনার ফজলুল হক বলেন, সাকরাইন ঘিরে মানুষের জনজীবনে যাতে সমস্যা সৃষ্টি না হয়, এ বিষয়ে প্রশাসনের পক্ষ থেকে নির্দেশনা ছিল। আমরা সতর্ক অবস্থানে আছি। সার্বিক পরিস্থিতি মোকাবিলায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। 
 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ঘ ড় উৎসব ন উৎসব

এছাড়াও পড়ুন:

‘কাঁচামিঠে ফলের ছড়া’ গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন

রাজধানীর বাংলা মোটরের বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে শিশুসাহিত্যিক অমিত কুমার কুণ্ডুর শিশুতোষ ছড়ার বই ‘কাঁচামিঠে ফলের ছড়া’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন ও প্রকাশনা উৎসব হয়েছে।

শুক্রবার (১ আগস্ট) বিকেল ৫টায় অনুষ্ঠানের আয়োজনে ছিল বইটির প্রকাশনা সংস্থা পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লিমিটেড।

শিক্ষাবিদ, গবেষক ও কলামিস্ট সৈয়দ মো. গোলাম ফারুকের সভাপতিত্বে প্রকাশনা উৎসবে প্রধান অতিথি ছিলেন সাহিত্যিক রফিকুর রশীদ। এছাড়া অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সাহিত্যিক ও সাংবাদিক দন্ত্যস রওশন, লোকসংস্কৃতিবিদ তপন বাগচী, শিশুসাহিত্যিক সঙ্গীতা ইমাম, কথাসাহিত্যিক মনি হায়দার। অনুষ্ঠানে বক্তারা বইটির বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন।

আরো পড়ুন:

নদী স্মৃতিনির্ভর সংকলন গ্রন্থ ‘আমার নদী’ প্রকাশিত 

রাজশাহীতে বইপড়ায় কৃতিত্বের পুরস্কার পেল ২৩০৩ শিক্ষার্থী

প্রধান অতিথির আলোচনায় রফিকুর রশীদ বলেন, “১২৪টি ফলের ওপর লেখা এই বইয়ের ছড়াগুলো কেবল পাঠকের রসাস্বাদনই করাবে না, শিশু শিক্ষামূলক এই ছড়াগুলো রসোত্তীর্ণও বটে।”

তিনি দেশের প্রকাশকদের অংশগ্রহণের ওপর জোর দিয়ে বলেন,“প্রকাশকদের বেশি বেশি এরকম প্রকাশনা উৎসব আয়োজন করা উচিত।”

বইটির ব্যতিক্রমী আকৃতির দিকে ইঙ্গিত করে দন্ত্যস রওশন বলেন, “পাঠক তৈরির প্রয়াসেই পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স এমন ক্ষুদ্রাকৃতির ও নতুন নতুন সাইজের বইয়ের ধারণা বাজারে আনছে। এটা সাধুবাদ পাওয়ার যোগ্য।”

শিক্ষাবিদ সৈয়দ মোহাম্মদ গোলাম ফারুক বলেন, “শিক্ষার দুটো দিক রয়েছ।একটি হলো ট্রাডিশনাল, যা আমরা পড়েছি, আপনারাও পড়েন। আরেকটি  হলো জাঁ জ্যাক রুশোর পদ্ধতি। তিনি বলেছে, প্রকৃতির সঙ্গে শেখা।রবীন্দ্রনাথ যা বিশ্বভারতীর মাধ্যমে করিয়ে দেখিয়েছেন।অমিত কুমার কুণ্ডুর ছড়ার বইটি সে রকমই।এর মাধ্যমে প্রকৃতির সান্নিধ্য লাভ করবে শিশুরা ও ওরা শিখবে। এরকম বই প্রকাশ করার জন্য প্রকাশকে ধন্যবাদ। আমাদের প্রকাশকদের এ ধরনের বই বেশি বেশি করতে হবে।”

কাঁচামিঠে ফলের ছড়া বইটির পাতায় পাতায় দেশি-বিদেশি বিচিত্র ফলের পরিচয়, পুষ্টিগুণ ও স্বাস্থ্য উপকারিতা নান্দনিক অলংকরণে ছন্দে-ছড়ায় তুলে ধরা হয়েছে। বইটি থেকে ছড়া আবৃত্তি করে বাচিক শিল্পী জান্নাতুল ফেরদৌস মুক্তা।

অনুষ্ঠান শেষে ছিল মৌসুমী ফল দিয়ে অতিথিদের অ্যাপায়নের ব্যবস্থা।

ঢাকা/এসবি

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • মোশাররফ করিমের ২৪ মিনিটের সিনেমা যুক্তরাষ্ট্রের উৎসবে
  • ১১ নাটক নিয়ে শিল্পকলায় চলছে ‘জুলাই পুনর্জাগরণ নাট্যোৎসব’
  • চুয়েটে দিনভর তারুণ্যের ‘তর্ক-যুদ্ধ’
  • ‘কাঁচামিঠে ফলের ছড়া’ গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন
  • জুলাইয়ের ১১ নাটক নিয়ে শিল্পকলায় উৎসব
  • ১৬ কোটি টাকায় সারা দেশে ফুটবলের তিন টুর্নামেন্ট
  • দুদিনের সফরে কলকাতায় ভারতের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু
  • ভৌতিক গল্প নিয়ে কানাডায় নুহাশ
  • তাহলে তো স্পন্সর নিয়ে প্রোগ্রাম করলেই চাঁদাবাজি: সালাউদ্দিন