চেয়ারম্যানের ভাই খাজা কানাইপুরের ‘রাজা’
Published: 16th, January 2025 GMT
শেখ হাসিনা সরকারের আমলে ছিলেন ‘আওয়ামী লীগার’। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর ভোল পাল্টাতে সময় নেননি খায়রুজ্জামান খাজা। জেলা বিএনপির শীর্ষ এক নেতার সমর্থক পরিচয়ে ফরিদপুর সদরে এখন তিনি যুবদল নেতা ‘সেজেছেন’। নতুন উদ্যমে কানাইপুর ইউনিয়নে খুনোখুনি, আধিপত্য বিস্তার, চাঁদাবাজিতে জড়িয়েছেন। ‘খাজা বাহিনী’ এখন আরও বেপরোয়া।
সর্বশেষ গেল ১০ জানুয়ারি এই বাহিনী কেড়ে নিয়েছে কানাইপুর ইউনিয়নের ঝাউখোলা গ্রামের বিল্লাল খানের ছোট ছেলে ওবায়দুর খানের প্রাণ। খাজার বড় ভাই কানাইপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শাহ মুহাম্মদ আলতাফ হুসাইন। হাসিনা সরকারের আমলে বড় ভাইয়ের আশকারা আর আওয়ামী লীগ-যুবলীগের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে হত্যা, গুম, খুন, চুরি, ডাকাতি, অপহরণ, ধর্ষণ, চাঁদাবাজি, দখলবাজি– এমন কোনো অপকর্ম নেই, যা খাজা করেননি। রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পরও তাঁর বাহিনীর অত্যাচার-নির্যাতন থেমে নেই; উল্টো বেড়েছে।
গেল ১০ জানুয়ারি কানাইপুর মমতাজ ফিলিং স্টেশনে মোটরসাইকেলের তেল কিনতে গিয়েছিলেন ওবায়দুর। খাজার নেতৃত্বে ১০ থেকে ১৫ যুবক সেখান থেকে ওবায়দুরকে মারধর করে তুলে নিয়ে যায়। পরে ফরিদপুর জুট ফাইবার্সের পেছনে নিয়ে নির্মম নির্যাতন চালায়। তখন ওবায়দুরের দুই চোখে পেরেক দিয়ে খোঁচানো হয় এবং বাঁ পায়ের রগ কাটা হয়। রাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে মারা যান ওবায়দুর। এ ঘটনার পরদিন খাজাকে প্রধান আসামি করে ১৫ জনের নাম উল্লেখসহ কোতোয়ালি থানায় হত্যা মামলা করেন ওবায়দুরের মা রেখা বেগম।
ওবায়দুরের বড় ভাই রাজীব খান বলেন, ‘খাজার বিভিন্ন অপকর্ম দেখে আমার ভাই প্রতিবাদ জানাত। এ কারণে ভাইয়ের ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে হত্যা করেছে। এর আগেও আমার ভাইকে পাঁচবার মারার চেষ্টা চালায় খাজা বাহিনী।’
খাজার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, ডাকাতি, দস্যুতাসহ একাধিক মামলা রয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে একাধিকবার গ্রেপ্তার হলেও রাজনৈতিক প্রভাবে বারবার জামিনে বের হয়ে আসেন। এরপর ফের শুরু করেন নানা অপকর্ম। এমনকি আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দলটির কেন্দ্রীয় নেতা ও সাবেক মন্ত্রী আবদুর রহমানের হস্তক্ষেপে একটি সাজাপ্রাপ্ত মামলায় খালাস পেয়ে বেরিয়ে আসেন। আবদুর রহমানের আস্থাভাজন ও ঘনিষ্ঠ হওয়ায় সে সময় তিনি আরও দুর্ধর্ষ হয়ে ওঠেন। কানাইপুরে যুবলীগ নেতা পরিচয়ে আধিপত্য বিস্তার করেন।
৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর খাজা জেলা বিএনপির শীর্ষ এক নেতার সমর্থক বনে যান। গত ১৮ ডিসেম্বর যুবদল নেতার ব্যানারে মিছিল দিয়ে নিজেকে যুবদল নেতা হিসেবে জাহির করেন। শুরু করেন এলাকায় আধিপত্য বিস্তার, চাঁদাবাজি। তাঁর দলে না ভিড়লে দিতে হয় চাঁদা। টাকা না দিলে ছাড়তে হয় এলাকা। এভাবেই গত কয়েক দিনে অন্তত কোটি টাকার চাঁদাবাজি করেছেন বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নেতা জানিয়েছেন।
এদিকে ওবায়দুর হত্যার পর মুখ খুলতে শুরু করেছেন এলাকাবাসী। কোশাগোপালপুর গ্রামের বাসিন্দা লাবলু মোল্যা বলেন, ‘আমাকে তার দলে যোগ দিতে বলে। যোগ না দেওয়ায় আমাকে তিন লাখ টাকা জরিমানা করে খাজা। টাকা না দিলে আমার জমি বিক্রি করে টাকা নেওয়ার পাশাপাশি মেরে ফেলারও হুমকি দেয়। আজ যেমন ওবায়দুরকে মেরে ফেলেছে, কাল আমাকেও মেরে ফেলতে পারে। এই খাজার কারণে কানাইপুরের মানুষ রাতে ঘুমাতে পারছে না।’
এ ব্যাপারে খায়রুজ্জামান খাজার সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করে সমকাল। তবে পালিয়ে থাকায় তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি।
কোতোয়ালি থানার ওসি মো.
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
অপকর্মকারীদের দায় দল নেবে না: তমিজ উদ্দিন
ঢাকার ধামরাইয়ে বিএনপির এক জনসভায় দলটির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য তমিজ উদ্দিন বলেছেন, ‘‘যারা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়াবে, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান স্পষ্ট করে দিয়েছেন— দল তাদের দায়িত্ব নেবে না।”
রবিবার (১৫ জুন) গাংগুটিয়া ইউনিয়নের নবগ্রাম বাজারে কাওয়ালীপাড়া-নবগ্রাম বাজার কমিটির উদ্যোগে আয়োজিত এক জনসভায় এসব কথা বলেন তিনি।
ধামরাই উপজেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোজাম্মেল হকের সভাপতিত্ব জনসভায় উপজেলার গাংগুটিয়া, আমতা, বালিয়া, কুশুরা ও সানোড়া ইউনিয়নের বিএনপির বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী অংশ নেন।
এসময় তমিজ উদ্দিন বলেন, ‘‘আমাদের সামনে লড়াই এক দিকে নয়। দলের চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, সামনে নির্বাচন, নির্বাচনের আগ মুহূর্তে এই সময় আমাদের জন্য অত্যন্ত কঠিন। কারণ আমরা মোনাফেক, মীরজাফর সবাইকে নিয়ে একত্রে চলছি। আমরা এই চলাটা চাই না। আমরা চাই, দলে প্রতিযোগিতা-প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকবে, সুন্দর থাকবে। সেখান থেকে যোগ্যরা এগিয়ে আসবে, আমরা সবাই তার সঙ্গে থাকব। এখানে ঐক্য ছাড়া বিকল্প কিছু নাই। যারা সন্ত্রাসী করবে, তারেক রহমান পরিষ্কার বলেছেন, তিনি তাদের দায়িত্ব নেবেন না। অর্থাৎ দল তাদের দায়িত্ব নেবে না। অতএব যারা অপকর্মের সঙ্গে জড়িত আছে, তাদের বিএনপির বলে চিন্তা করবেন না।’’
তিনি আরও বলেন, ‘‘বিএনপি করে বিএনপির সুবিধা নিয়ে যারা আওয়ামী লীগের সময় আঁতাত করেছে। এখন বড় নেতা হয়েছে, তাদের বিষয় ঠান্ডা মাথায় খেয়াল রাখতে হবে। যেমনটি তারেক রহমান সাহেব বলেছেন, সামনে একটা কঠিন নির্বাচন, ষড়যন্ত্র এখনও শেষ হয়নি। নির্বাচন দেবে কিন্তু ষড়যন্ত্র শেষ হয়নি। আপনাদের মাথা ঠান্ডা রাখতে হবে। এখানে আমরা সবাই জানি, ধামরাইয়ে নির্বাচন হলে, মানুষ ভোট দিতে পারলে কি হবে আমরা জানি। আমরা সুন্দর পরিবেশের অপেক্ষায় আছি।’’
সভায় আরও বক্তব্য দেন ধামরাই উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শামসুল ইসলাম, সিনিয়র সহসভাপতি রাকিবুর রহমান খান ফরহাদ, বালিয়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও সহসভাপতি আব্দুল মান্নান মধু, আমতা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মনিরুল ইসলাম লাবু, উপজেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী এইচ এম লুৎফর রহমানসহ বিভিন্ন ইউনিয়ন ও ধামরাই উপজেলা বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা।
এছাড়াও উপজেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী সিরাজুল ইসলাম সিরাজ, যুবদল নেতা মো. খোকন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
ঢাকা/সাব্বির/এস