শেখ হাসিনা সরকারের আমলে ছিলেন ‘আওয়ামী লীগার’। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর ভোল পাল্টাতে সময় নেননি খায়রুজ্জামান খাজা। জেলা বিএনপির শীর্ষ এক নেতার সমর্থক পরিচয়ে ফরিদপুর সদরে এখন তিনি যুবদল নেতা ‘সেজেছেন’। নতুন উদ্যমে কানাইপুর ইউনিয়নে খুনোখুনি, আধিপত্য বিস্তার, চাঁদাবাজিতে জড়িয়েছেন। ‘খাজা বাহিনী’ এখন আরও বেপরোয়া।

সর্বশেষ গেল ১০ জানুয়ারি এই বাহিনী কেড়ে নিয়েছে কানাইপুর ইউনিয়নের ঝাউখোলা গ্রামের বিল্লাল খানের ছোট ছেলে ওবায়দুর খানের প্রাণ। খাজার বড় ভাই কানাইপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শাহ মুহাম্মদ আলতাফ হুসাইন। হাসিনা সরকারের আমলে বড় ভাইয়ের আশকারা আর আওয়ামী লীগ-যুবলীগের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে হত্যা, গুম, খুন, চুরি, ডাকাতি, অপহরণ, ধর্ষণ, চাঁদাবাজি, দখলবাজি– এমন কোনো অপকর্ম নেই, যা খাজা করেননি। রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পরও তাঁর বাহিনীর অত্যাচার-নির্যাতন থেমে নেই; উল্টো বেড়েছে।

গেল ১০ জানুয়ারি কানাইপুর মমতাজ ফিলিং স্টেশনে মোটরসাইকেলের তেল কিনতে গিয়েছিলেন ওবায়দুর। খাজার নেতৃত্বে ১০ থেকে ১৫ যুবক সেখান থেকে ওবায়দুরকে মারধর করে তুলে নিয়ে যায়। পরে ফরিদপুর জুট ফাইবার্সের পেছনে নিয়ে নির্মম নির্যাতন চালায়। তখন ওবায়দুরের দুই চোখে পেরেক দিয়ে খোঁচানো হয় এবং বাঁ পায়ের রগ কাটা হয়। রাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে মারা যান ওবায়দুর। এ ঘটনার পরদিন খাজাকে প্রধান আসামি করে ১৫ জনের নাম উল্লেখসহ কোতোয়ালি থানায় হত্যা মামলা করেন ওবায়দুরের মা রেখা বেগম।

ওবায়দুরের বড় ভাই রাজীব খান বলেন, ‘খাজার বিভিন্ন অপকর্ম দেখে আমার ভাই প্রতিবাদ জানাত। এ কারণে ভাইয়ের ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে হত্যা করেছে। এর আগেও আমার ভাইকে পাঁচবার মারার চেষ্টা চালায় খাজা বাহিনী।’

খাজার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, ডাকাতি, দস্যুতাসহ একাধিক মামলা রয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে একাধিকবার গ্রেপ্তার হলেও রাজনৈতিক প্রভাবে বারবার জামিনে বের হয়ে আসেন। এরপর ফের শুরু করেন নানা অপকর্ম। এমনকি আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দলটির কেন্দ্রীয় নেতা ও সাবেক মন্ত্রী আবদুর রহমানের হস্তক্ষেপে একটি সাজাপ্রাপ্ত মামলায় খালাস পেয়ে বেরিয়ে আসেন। আবদুর রহমানের আস্থাভাজন ও ঘনিষ্ঠ হওয়ায় সে সময় তিনি আরও দুর্ধর্ষ হয়ে ওঠেন। কানাইপুরে যুবলীগ নেতা পরিচয়ে আধিপত্য বিস্তার করেন। 

৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর খাজা জেলা বিএনপির শীর্ষ এক নেতার সমর্থক বনে যান। গত ১৮ ডিসেম্বর যুবদল নেতার ব্যানারে মিছিল দিয়ে নিজেকে যুবদল নেতা হিসেবে জাহির করেন। শুরু করেন এলাকায় আধিপত্য বিস্তার, চাঁদাবাজি। তাঁর দলে না ভিড়লে দিতে হয় চাঁদা। টাকা না দিলে ছাড়তে হয় এলাকা। এভাবেই গত কয়েক দিনে অন্তত কোটি টাকার চাঁদাবাজি করেছেন বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নেতা জানিয়েছেন।

এদিকে ওবায়দুর হত্যার পর মুখ খুলতে শুরু করেছেন এলাকাবাসী। কোশাগোপালপুর গ্রামের বাসিন্দা লাবলু মোল্যা বলেন, ‘আমাকে তার দলে যোগ দিতে বলে। যোগ না দেওয়ায় আমাকে তিন লাখ টাকা জরিমানা করে খাজা। টাকা না দিলে আমার জমি বিক্রি করে টাকা নেওয়ার পাশাপাশি মেরে ফেলারও হুমকি দেয়। আজ যেমন ওবায়দুরকে মেরে ফেলেছে, কাল আমাকেও মেরে ফেলতে পারে। এই খাজার কারণে কানাইপুরের মানুষ রাতে ঘুমাতে পারছে না।’

এ ব্যাপারে খায়রুজ্জামান খাজার সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করে সমকাল। তবে পালিয়ে থাকায় তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি।

কোতোয়ালি থানার ওসি মো.

আসাদউজ্জামান বলেন, ‘খাজাকে গ্রেপ্তারে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।’ 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: সরক র র আওয় ম

এছাড়াও পড়ুন:

বিএনপির নাম ভাঙিয়ে অপকর্মে জড়িতদের ছাড় নয়: রিজভী 

বিএনপির নাম ব্যবহার করে অপকর্মে জড়িতদের কোনো প্রকার ছাড় দেওয়া হবে না বলে হুঁশিয়ারি দিয়ে গণমাধ্যমকে সত্য ও বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশনের আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।

তিনি বলেছেন, “সমাজ ও রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ডে বিএনপির কোনো নেতাকর্মী জড়িত নয়। যদি কেউ বিএনপির নাম ব্যবহার করে এসব অপকর্মে করে তাদের কোন ছাড় নয়। পাশাপাশি গণমাধ্যমকে সত্য ও বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশন করতে হবে। একটি অসত্য সংবাদ রাষ্ট্র ও সমাজের মাঝে অনেক বিভ্রান্তি সৃষ্টি হতে পারে।”

শনিবার (১ নভেম্বর) দুপুরে নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন রিজভী।

কোনো কিছু ঘটলেই বিএনপির ওপর দায় চাপানো যেন কারো কারো অভ্যাসে পরিনণত হয়েছে মন্তব্য করে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, “সমাজবিরোধী কাজে যেই জড়িত হবে তাকে আইনের আওতায় আনতে হবে। সরকার কেনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। বরং সরকারের মাঝে ঢিলেঢালা ভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে।”

তিনি বলেন, “রাউজানে কিছু সন্ত্রাসী অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার হয়েছে। অথচ, কয়েকটি গণমাধ্যমে বলা হলো এই অস্ত্রধারীরা বিএনপির লোক! কোনো প্রমাণ ছাড়া এগুলো লেখা দুঃখজনক। এই রাউজানে নানান অভিযোগে অনেক সিনিয়র নেতাদের বিরুদ্ধেও সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।” 

বিএনপি ১৫ বছরের অত্যাচার-অবিচার থেকে মুক্তির জন্য সংগ্রাম করেছে। জুলাই-আগস্টে এ আন্দোলন চূড়ান্ত রূপ নিয়েছে। মানুষ হয়ত কিছুটা স্বস্তির নিঃশ্বাস নিচ্ছে। কিন্তু এখনও আত আতঙ্কমুক্ত নয় বলেও জানান রিজভী।

আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির দৃশ্যমান উন্নতি দেখা যাচ্ছে না মন্তব্য করে বিএনপির এই জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, “নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যে কৃত্রিমভাবে সংকট সৃষ্টি করছে যারা তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। বিশ্ববাজারে যখন গমের দাম কমেছে তখন বাংলাদেশে এর দাম বেড়েছে। জনগণকে নিরাপদ রাখার দায়িত্ব সরকারের। রাষ্ট্র এতে ব্যর্থ হলে যেকোন ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। সৃষ্টি হতে পারে সামাজিক অস্থিরতা।” 

ঢাকা/নঈমুদ্দীন/ইভা 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বিএনপির নাম ভাঙিয়ে অপকর্মে জড়িতদের ছাড় নয়: রিজভী