লক্ষ্মীপুরে পেট্রোল বোমা হামলা: জেলা জামায়াতের আমির খালাস
Published: 16th, January 2025 GMT
লক্ষ্মীপুর জেলা জামায়াতে ইসলামীর আমির রুহুল আমিন ভূঁইয়াসহ ৩৭ জনকে পুলিশের দায়েরকৃত পেট্রোল বোমা হামলার মামলা থেকে বেকসুর খালাস দিয়েছেন আদালত। বৃহস্পতিবার (১৬ জানুয়ারি) দুপুরে অতিরিক্ত জেলা জজ আদালত-১ এর বিচারক ফারজানা আক্তারের আদালত এ রায় দেন।
জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) আহমেদ ফেরদৌস মানিক ও আসামি পক্ষের আইনজীবী মহসিন কবির মুরাদ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
আসামি পক্ষের আইনজীবী মহসিন কবির মুরাদ জানান, ২০১৫ সালের ১ ফেব্রুয়ারি নতুন মহিলা কলেজের সামনে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় বোমা নিক্ষেপ করে মানুষ হত্যার কথিত অভিযোগে তখন সদর থানা পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) মিঠন মহাজন ২৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। এতে জেলা জামায়াতের আমির রুহুল আমিন ভূঁইয়াসহ ৪ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আসামি করা হয়। পরবর্তীতে পুলিশ ৩৭ জনের বিরুদ্ধে দুটি অভিযোগপত্র আদালতে দাখিল করে। দীর্ঘ শুনানি ও সাক্ষীদের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে আদালতে অভিযুক্তদের ওপর আনা অভিযোগ সত্য প্রমাণিত হয়নি। এতে আদালত তাদের খালাস দিয়ে রায় ঘোষণা করেন।
আরো পড়ুন:
পুরনো মামলার নথির জন্য যেতে হবে না দিনাজপুর
ফরিদপুরে যুবককে কুপিয়ে হত্যা: ১ জনের যাবজ্জীবন
আইনজীবী মুরাদ আরও বলেন, ‘‘মামলায় অভিযুক্তরা আদালতে প্রত্যেক শুনানিতে উপস্থিত ছিলেন। সাক্ষীরা সাক্ষ্য দিতে আসেননি। এক পর্যায়ে আদালত সাক্ষীদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। তাদের পুলিশ ধরে আনার পর তারা সাক্ষ্য দিয়েছেন, অভিযুক্তদের কাউকেই তারা চেনেন না, মামলার ঘটনার সম্পর্কেও তাদের কিছু জানা নেই। বাদীসহ ১১ জন সাক্ষী সবাই বলেছেন, ঘটনাটি তারা দেখেননি, ঘটনা সম্পর্কে তারা কিছুই জানেন না।’’
জেলা জামায়াতের আমির রুহুল আমিন ভূঁইয়া জানান, ১০টি বছর মামলার গ্লানি টানতে হয়েছে। দীর্ঘ সময় অনেককেই জেল খাটতে হয়েছে। কারাগারে থেকে কষ্ট পেতে হয়েছে। বিগত সরকারের সময় আইন-আদালত তাদের অনুকূলে ও আজ্ঞাবহ ছিল। আজকের আদালতের রায়ে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা হয়েছে।
ঢাকা/লিটন/বকুল
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
দক্ষিণ ভারতের নিষ্পেষিত মুসলিম নারীদের কণ্ঠস্বর
বানু মুশতাক বললেন, ‘মানুষ ও তার মৌলিক স্বভাব সবখানেই একই ধরনের। এটাই আমার লেখার উদ্দেশ্য। আমার বিষয়বস্তু নারী, প্রান্তিক মানুষ, কণ্ঠহীন সমাজের কণ্ঠস্বর হওয়া।’
বানু মুশতাকের মাধ্যমে এ বছরই প্রথম কোনো ছোটগল্প সংকলন বুকার জিতেছে। আবার কন্নড় ভাষাতেও এসেছে প্রথম বুকার। হার্ট ল্যাম্প ইংরেজি ভাষায় অনূদিত বানু মুশতাকের প্রথম বই। তাঁর বয়স এখন ৭৭ বছর।
বানু মুশতাক একজন আইনজীবী, সমাজকর্মী ও লেখক। ১৯৮১ সাল থেকে তিনি গল্প লিখছেন। হার্ট ল্যাম্প তাঁর বিভিন্ন সময়ে লেখা গল্পের একটি সংকলন। তাঁর গল্পে দক্ষিণ ভারতের কর্ণাটকের মুসলিম নারীদের জীবনের গল্প ফুটে উঠেছে। সেখানে দেখানো হয়েছে, তাঁরা কীভাবে পারিবারিক রীতির জাঁতাকলে পড়েন।
বানু মুশতাক বলেন, ‘হ্যাঁ, মেয়েরা, আজও তারা অবহেলিত। আর ঘর থেকেই এর শুরু।’
তাঁর অনুবাদক দীপা ভাস্তি বলেন, ‘এই গল্পগুলো একটি সুনির্দিষ্ট অঞ্চলের সুনির্দিষ্ট সম্প্রদায়ের প্রেক্ষাপটে রচিত হলেও একেবারে সর্বজনীন।’
একজন আইনজীবী ও সমাজকর্মী হিসেবে তাঁর কাজ লেখালেখিতে কী প্রভাব ফেলে—এ প্রশ্নের জবাবে বানু মুশতাক বলেন, ‘কেউ যখন কোনো আইনি সমস্যা নিয়ে আমার কাছে আসে, তখন তারা তাদের সব অনুভূতি ভাগ করে নিতে চায়। সেসব তাড়না আমার মধ্যে ক্রমাগত বাড়তে থাকে। তারপর একদিন ছোটগল্পে পরিণত হয়।’
কিন্তু আইনি মামলা নাহয় সমস্যার সমাধান করতে পারে, ছোটগল্প কি পারে? ‘অবশ্যই। কারণ নীরবতা কোনো সমাধান নয়। তারা যে পাল্টা লড়াই করতে পারে, সেই দৃষ্টিভঙ্গি আমি গল্পের মাধ্যমে দিয়েছি।’
বানু মুশতাকের ‘কালো গোখরারা’ গল্পে একজন নারীকে জানানো হয়েছে, ইসলাম নারীদের শিক্ষিত হওয়ার এবং কাজ করার কথা বলেছে। কিন্তু সমাজ সুবিধার জন্য তাদের সেই অধিকার থেকে বঞ্চিত রাখে। গল্পে আমি বলেছি, নিজের অধিকারের কথা বলো।’ বলেন বানু মুশতাক।
বানু মুশতাকের গল্পে কমেডিও আছে। তাঁর ভাষ্য, ‘এই স্টাইল ব্যবহারের কারণ আমি ক্ষমতাকাঠামোর মুখে সত্য বলছি। পিতৃতন্ত্র, রাজনীতি, ধর্ম—সব একসঙ্গে মিলিয়েই ক্ষমতাকাঠামো। খুব গম্ভীর সুরে কথাটি বললে এর পরিণতি যা–ই হোক না কেন, আমি দায়বদ্ধ থাকব। তাই আমি ব্যঙ্গাত্মক মোচড় দিই। সেলফ সেন্সরশিপের বদলে এই কৌশল ব্যবহার করি।’
অনুবাদক ভাস্তি বলেন, ‘নারীরা যে পুরুষদের দ্বারাই নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে, রসিকতা করে এই গল্পে সেটাই বোঝানো হয়েছে।’
বানু মুশতাক বান্দায়া সাহিত্যের (কন্নড়ের প্রতিবাদী সাহিত্য আন্দোলন) ঐতিহ্যে লিখেছেন। ১৯৭০–এর দশকে লেখকেরা ছিলেন ‘বেশির ভাগ পুরুষ এবং উচ্চবর্ণের’। সে আন্দোলনের স্লোগান ছিল, ‘লেখক হলে আপনিও একজন যোদ্ধা’। এটি নারী ও সংখ্যালঘু লেখকদের নিজস্ব পরিচয়ে লিখতে উত্সাহিত করেছিল।
দ্য গার্ডিয়ান থেকে সংক্ষেপিত অনুবাদ
রবিউল কমল