আমি যেন দেখে যেতে পারি
ফারুক মাহমুদ
ক্ষমতার পাশে থাকে অধিকাংশ মানুষের স্বভাবের গতি
কে কাকে ডিঙিয়ে যাবে। যোগ্যত্যা দক্ষতা নয়, দাপটের আঁচে
পুড়িয়ে উড়িয়ে দেবে বিনীত অর্জনগুলো। বেড়ে যাবে ক্ষতি
গানের বাগানপথে। তাতে কিছু এসে যায়! কে মরে কে বাঁচে
ও-সব তো লেখা হয় কাগজের উল্টোপিঠে– ধুলোপড়া ভাঁজে
চালাকি তাদের খেলা। ছলনার শতপ্রস্ত ঠোঁটে ঠোঁটে হাসে
ক্ষীণ কণ্ঠে বলে যায়– ‘সততার কোন নিষ্ঠা লাগে কোন কাজে!’
শিকড় ছড়িয়ে থাকে কাঁটার বিকট দৃশ্যে,
সুবিধার পাশে
যখন প্রস্থানে যাব, একবার, আমি যেন দেখে যেতে পারি
সকল দুয়ার খোলা, ঘরে ঘরে শুভচিন্তা হয়ে আছে দ্বারী
প্রিয় রং
দ্বিত্ব শুভ্রা
তরুণ স্পার্টান মেঘের ভিড় আকাশে, বাহনে ইন্দ্র।
ধনু ছুটে এলো এ বাড়ির ছাদে
তুমি উঠে গেলে, খোলা চুল–
প্রজাপতি বৃষ্টি ছুঁয়ে গেল খুব, তুমি ভিজছো
আরও ভিজবে।
ওই শরীরে এখনও অন্য পুরুষের গন্ধ
টের পাই!
অতিথি
এমরান কবির
এখনও তুচ্ছ পাখি! এতকাল পর!
পালক নিভিয়ে গেলে
কোন ফুল প্রস্ফুটিত হবে! সে তো ছিল
বাহিরে বাহিরে পাখি ভেতরে ভেতরে ফুল
পাপড়ি-ডানায় ভাসে, ঠোঁটে ঠোঁটে ফোটে তার
নদী-রেণু-কূল
কেন তবে এইসব বিধ্বংসী বৈঠক!
ক্ষুধা? নাকি শখ? বুঝি না এসব
তাই
নীরব কালিতে লিখি সূর্যোদয়ের সবক
তুমি ঠিক ঘুরে ফিরে পাখির ভেতরে ডাকো
ফুলের প্রতীক্ষা গান
ঘড়িগুলো ফুটপাতে ফেলে আকাশ দু’হাতে নিয়ে
আমি
পালকে পালকে করি তীরবিদ্ধ তীরের সন্ধান
তাতে লেগে থাকে রক্ত, প্রাণ তো আর নাই
পাখির উড়ন্ত রোদে এভাবেই হয়ে যায়
শীতাগত ছিনতাই
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
গংগাচড়ায় হিন্দুদের ঘরবাড়ি মেরামতের উদ্যোগ, আতঙ্ক কাটেনি এখনও
রংপুরের গংগাচড়ায় ফেসবুকে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ ঘিরে সহিংসতার শিকার হিন্দু পরিবারের ঘরবাড়ি মেরামতের উদ্যোগ নিয়েছে প্রশাসন। তবে ঘটনার তিন দিন পরেও এলাকায় ফেরেনি অনেক পরিবার। আতঙ্কে এখনো আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে অনেকে।
গত ২৭ জুলাই রাতে ওই গ্রামের হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘরে হামলার আগে এলাকায় মাইকিং করে লোকজন জড়ো করা হয়।
পুলিশ, প্রশাসন ও হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন বলছেন, যারা হামলা করেছেন, তাদের মধ্যে অনেকে ছিলেন ‘বহিরাগত’। পাশের নীলফামারী জেলার কিশোরগঞ্জ উপজেলা থেকে লোকজন এসে হামলা চালিয়ে চলে যায়। হামলার সময় ২২টি ঘরবাড়ি তছনছ ও লুটপাট করা হয়।
মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, এলাকায় অস্থায়ী সেনা ক্যাম্প বসানো হয়েছে, বাড়ানো হয়েছে পুলিশ টহল। প্রশাসন ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ঢেউটিন, কাঠ, চাল-ডাল ও শুকনো খাবার বিতরণ করেছে এবং ঘরবাড়ি মেরামতের কাজও শুরু হয়েছে। তবু আতঙ্কিত পরিবারগুলো।
ক্ষতিগ্রস্তদের একজন অশ্বিনী চন্দ্র মোহান্ত বলেন, “সেদিনের ঘটনা ছিল এক ভয়াবহ। আমাদের পরিবারের পক্ষ থেকে ধর্ম অবমাননাকারী কিশোরকে থানা হেফাজতে দিয়েছি। কিন্তু তারপরও ঘরবাড়ি রক্ষা হয়নি। স্থানীয় এক জনপ্রতিনিধি এবং কিছু মুরুব্বি আমাদেরকে অভয় দিয়েছিলেন, কিন্তু রক্ষা হয়নি।”
তিনি আরো বলেন, “আমরা নিজেরাই অভিযুক্ত কিশোরকে থানায় সোপর্দ করেছি। তারপরও মিছিল নিয়ে এসে দুই দফায় আমাদের ২০ থেকে ২৫টি ঘরবাড়ি তছনছ করে দিয়ে লুটপাট করেছে তারা। এদের মধ্যে অধিকাংশ লোকেই অপরিচিত।”
আরেক ভুক্তভোগী দেবেন্দ্র চন্দ্র বর্মন জানান, “প্রথমে অল্পসংখ্যক কম বয়সী কিছু ছেলে আসে। পরে হাজারো লোকজন এসে আমাদের বাড়িঘরে তাণ্ডব চালায়। অনেকেই এখনো আত্মীয়দের বাড়িতে। আমরা চরম আতঙ্কে আছি।”
রবীন্দ্র চন্দ্রের স্ত্রী রুহিলা রানী বলেন, “ছোট ছেলেটা যদি ভুল করে থাকে, আমরা তাকে থানায় দিয়েছি। কিন্তু তারপরও এমন ধ্বংসযজ্ঞ কেন? আমাদের গরু, সোনা-টাকা সব লুটে নিয়েছে। শুধু চাল-ডাল আর টিনে কি জীবন চলে?”
গতকাল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন রংপুর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম ও সদস্য সচিব আনিসুর রহমান লাকুসহ একটি প্রতিনিধি দল। তারা ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মাঝে শাড়ি ও লুঙ্গি বিতরণ করেন এবং পাশে থাকার আশ্বাস দেন।
গংগাচড়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আল এমরান বলেন, “ঘটনার খবর পেয়ে কিশোরটিকে গ্রেপ্তার করে থানায় আনা হয় এবং পরে আদালতের মাধ্যমে শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানো হয়। এখন পর্যন্ত কেউ থানায় লিখিত অভিযোগ দেয়নি। তারপরও পুলিশ প্রশাসন সর্বাত্মক নিরাপত্তায় নিয়োজিত।”
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহামুদ হাসান মৃধা বলেন, “অপরাধীদের ধরতে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্তদের দেওয়া হচ্ছে সহায়তা। পুলিশ ও সেনাবাহিনী পুরো এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করেছে।”
উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশের তথ্যমতে, হামলায় ১৫টি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যাতে ২২টি পরিবার বসবাস করতেন। ঘর মেরামতের পর কিছু পরিবার ফিরলেও অভিযুক্ত কিশোর ও তার চাচার পরিবারের কেউ এখনো ফিরে আসেনি।
ঢাকা/আমিরুল/ইভা