চীন মালিকানাধীন টিকটক গত কয়েক বছর ধরে বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় সামাজিক মাধ্যম প্ল্যাটফর্মগুলোর একটি। টিকটকের বর্তমানে দুই বিলিয়নেরও বেশি ব্যবহারকারী রয়েছে। তবে এর ব্যাপক জনপ্রিয়তা সত্ত্বেও শক্তিশালী দেশগুলোর নজরদারির মুখে পড়ায় টিকটকের ভবিষ্যৎ এখন অনিশ্চয়তার দিকে যাচ্ছে।

সম্প্রতি টিকটকের বিরুদ্ধে একটি মামলায় রায় দিয়েছেন মার্কিন সুপ্রিম কোর্ট। এই রায়ে যুক্তরাষ্ট্রের একটি ফেডারেল আইনকে বৈধ ঘোষণা করা হয়। ওই আইনের অধীনে বলা হয়, চীনা মালিকানাধীন এই অ্যাপটির মালিকানা বদলাতে হবে অথবা এই অ্যাপ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিষিদ্ধ করা হবে। 

আমেরিকা টিকটক নিষিদ্ধ করার বিষয়ে পদক্ষেপ নিয়েছিল মূলত নিরাপত্তা ও ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষায় অনাস্থা থাকার কারণে।

এদিকে বিবিসি জানিয়েছে, মার্কিন সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পর কোনো রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ না হলে রোববার থেকেই যুক্তরাষ্ট্রে বন্ধ হয়ে যাবে টিকটক।

যদিও সুপ্রিম কোর্টে মামলাটি চলাকালীন ট্রাম্পের আইনি দল বিচারকদের অনুরোধ করেছিল যাতে তারা একটি সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর আগে ট্রাম্পকে সমাধান খুঁজে বের করার জন্য সময় দেয়।
ওই সংক্ষিপ্ত নথিতে বলা হয়েছিল, "শুধুমাত্র প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের মধ্যেই চুক্তি করার দক্ষতা, নির্বাচনী ম্যান্ডেট এবং প্ল্যাটফর্মটি বাঁচানোর রাজনৈতিক ইচ্ছাশক্তি রয়েছে,"।

তবে সুপ্রিম কোর্ট তাদের ইচ্ছা পূরণ করতে পারেনি। তবে সোমবার বিকেলে ট্রাম্পের বেশ কয়েকজন সহকারী কোর্টের এই নিষেধাজ্ঞার বাস্তবায়ন যাতে দেরি করে করা হয় সে বিষয়ে একটি নির্বাহী আদেশের সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করেছেন।

এদিকে সুপ্রিম কোর্টের রায়ের কিছুক্ষণ পর, নব নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ট্রুথ স্পেশাল-এ একটি পোস্টে বলেছেন, তিনি পরিস্থিতি পর্যালোচনা করবেন, তবে সবাইকে সুপ্রিম কোর্টের সিদ্ধান্তের প্রতি সম্মান দেখাতে হবে।

তিনি আরও বলেন, 'টিকটক বিষয়ে আমার সিদ্ধান্ত খুব শিগগিরই আসবে, তবে আমাকে পরিস্থিতি পর্যালোচনার জন্য সময় দিতে হবে। অপেক্ষায় থাকুন!'। 

ট্রাম্প ইতোমধ্যেই চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে কথা বলেছেন, যেখানে টিকটক প্রসঙ্গটি  উঠেছে।

যুক্তরাষ্ট্র সরকারের মতে, টিকটকের মালিকানাধীন কোম্পানি বাইটডান্স একটি চীনা প্রতিষ্ঠান, এবং যুক্তরাষ্ট্রের সরকার আশঙ্কা করেছিল এই প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে ব্যবহারকারীদের ব্যক্তিগত ডেটা চীনা সরকারের হাতে যেতে পারে। এতে জাতীয় নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়তে পারে বলে তারা মনে করছিল। 

এছাড়াও টিকটকের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল টিকটক তার ব্যবহারকারীদের তথ্য সংগ্রহ করছে। এবং চীনের আইন অনুযায়ী টিকটক ব্যবহারকারীদের তথ্য শেয়ার করা বাধ্যতামূলক হতে পারে। যদিও টিকটকের বিরুদ্ধে শিশুদের ডেটা সংগ্রহ ও গোপনীয়তার নিয়ম লঙ্ঘনের অভিযোগও উঠেছিল। 

তারা আরও দাবি করে, চীন গোপন তথ্য সংগ্রহ এবং প্রচার চালানোর জন্য এই প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করতে পারে।

এর আগে একই অভিযোগে ভারত ২০২০ সালে টিকটক নিষিদ্ধ করেছিল, যখন দেশটির চীনের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের অবনতি ঘটে। ২০২০ সালের ১৫ জুন লাদাখের গালওয়ান উপত্যকায় ভারত ও চীনের সেনাদের সংঘর্ষে অন্তত ২০ জন ভারতীয় সেনা নিহত হয়। এর ফলে দুই দেশের মধ্যে সামরিক অচলাবস্থা তৈরি হয়।

সংঘর্ষের দুই সপ্তাহ পরে, ২৯ জুন ভারত সরকার ৫৯টি চীনা অ্যাপ নিষিদ্ধ করে, যার মধ্যে টিকটকও ছিল। ভারতের তথ্য ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় জানায় যে এই অ্যাপগুলো ব্যবহারকারীদের ডেটা "চুরি করে এবং অনুমতি ছাড়াই দেশের বাইরে থাকা সার্ভারে প্রেরণ করছে।" মন্ত্রণালয় বলেছিল যে এটি ভারতের "সার্বভৌমত্ব ও অখণ্ডতার জন্য হুমকি।"

এর আগে প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন ট্রাম্প প্রশাসন টিকটক নিষিদ্ধ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল, যদিও আইনি বাধার কারণে সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করা সম্ভব হয়নি। পরবর্তীতে জো বাইডেন প্রশাসন নতুন নিয়ম তৈরি করে এ বিষয়ে আরও গভীর পর্যালোচনা করেছে। তবে ট্রাম্প গত এক বছর ধরে সামাজিক মাধ্যমে প্রভাবশালীদের এবং তরুণ ভোটারদের সমর্থন আদায়ে কাজ করেছেন, যাদের মধ্যে অনেকেই টিকটকের ভক্ত।

যদি নতুন প্রেসিডেন্ট হিসেবে ট্রাম্প শপথ নেওয়ার পর জাতীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রে টিকটককে চালু রাখার সমাধান খুঁজে পান, তবে এটি তার দ্বিতীয় মেয়াদে একটি প্রাথমিক রাজনৈতিক সাফল্য হতে পারে এবং টিকটকের ব্যবহারকারীদের কাছ থেকেও প্রশংসা পেতে পারেন।


 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ট কটক প ল য টফর ম ন ষ দ ধ কর ট কটক র ব ব যবহ র র জন য সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

বিনা মূল্যে কম্পিউটার প্রশিক্ষণের সুযোগ, সারা দেশে ৮টি কেন্দ্রে

ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ইমাম প্রশিক্ষণ একাডেমি ২০২৫-২৬ অর্থবছরে হাফেজ, ইমাম, মাদ্রাসাছাত্র ও বেকার যুবকদের বিনা কোর্স ফিতে কম্পিউটার প্রশিক্ষণের দ্বিতীয় কোর্সে প্রক্রিয়া শুরু করেছে। এ প্রশিক্ষণের মেয়াদ দুই মাস। প্রশিক্ষণটি আগামী ১২ অক্টোবর শুরু হবে, চলবে ১০ ডিসেম্বর পর্যন্ত। প্রশিক্ষণ শেষে ইসলামিক ফাউন্ডেশন থেকে প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে সরকারি সনদ দেওয়া হবে। আগ্রহী প্রার্থীদের ৯ অক্টোবরের মধ্যে ইমাম প্রশিক্ষণ একাডেমিতে আবেদন করতে হবে।

প্রশিক্ষণের বিষয়

১. বেসিক কম্পিউটার,

২. অফিস অ্যাপ্লিকেশন ও ইউনিকোড বাংলা,

৩. ইন্টারনেট,

৪. গ্রাফিক ডিজাইন,

৫. ফ্রিল্যান্সিং,

৬. মার্কেটপ্লেস ও কনসালটিং।

আরও পড়ুনহার্ভার্ড এনভায়রনমেন্টাল ফেলোশিপ, দুই বছরে ১ লাখ ৮৫ হাজার ডলার১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫আবেদনের যোগ্যতা

১. ন্যূনতম দাখিল বা সমমানের পরীক্ষায় পাস হতে হবে,

২. হাফেজদের ক্ষেত্রে শিক্ষাগত যোগ্যতা শিথিল করা হবে,

৩. উচ্চতর শিক্ষাগত যোগ্যতা সম্পন্ন প্রার্থীকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে,

৪. প্রার্থীকে কম্পিউটার চালনায় বেসিক জ্ঞান থাকতে হবে,

৫. যাঁদের নিজস্ব কম্পিউটার আছে, তাঁদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।

ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ইমাম প্রশিক্ষণ একাডেমি ২০২৫-২৬ অর্থবছরে হাফেজ, ইমাম, মাদ্রাসাছাত্র ও বেকার যুবকদের বিনা কোর্স ফিতে কম্পিউটার প্রশিক্ষণের দ্বিতীয় কোর্সে প্রক্রিয়া শুরু করেছে।যে ৮টি কেন্দ্রে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে

১. ঢাকা,

২. চট্টগ্রাম,

৩. রাজশাহী,

৪. খুলনা,

৫. বরিশাল,

৬. সিলেট,

৭. দিনাজপুর,

৮. গোপালগঞ্জ।

আরও পড়ুনবিনা মূল্যে ২ লাখ টাকার প্রশিক্ষণ, নন-আইটি স্নাতক শিক্ষার্থীদের সুযোগ ৭ ঘণ্টা আগেদরকারি কাগজপত্র

১. শিক্ষাগত যোগ্যতার সব সনদের সত্যায়িত ফটোকপি,

২. জাতীয় পরিচয়পত্রের সত্যায়িত ফটোকপি,

৩. এক কপি পাসপোর্ট সাইজের সত্যায়িত ছবি জমা দিতে হবে,

৪. ইমামদের ক্ষেত্রে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান অথবা ওয়ার্ড কমিশনারের কাছ থেকে নেওয়া ইমামতির প্রমাণপত্রের সত্যায়িত কপি জমা দিতে হবে,

৫. মাদ্রাসাছাত্রদের ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানের প্রধানের কাছ থেকে ছাত্রত্ব প্রমাণের কপি জমা দিতে হবে।

নিবন্ধন ফি

মনোনীত প্রার্থীদের নিবন্ধন ফি হিসেবে ৫০০ টাকা দিতে হবে।

দেশের ৮টি প্রশিক্ষণকেন্দ্রে এ প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে

সম্পর্কিত নিবন্ধ