শেষ বলে এনামুলের সেঞ্চুরি, ৭ রানে খুলনার জয়
Published: 19th, January 2025 GMT
শেষ ২ বলে জয়ের জন্য ৯ রান দরকার ছিল দুর্বার রাজশাহীর। এনামুল হক বিজয় সেঞ্চুরি থেকে ১ রান দূরে ছিলেন। খুলনা টাইগার্সের পেসার হাসান মাহমুদের করা ওভারের পঞ্চম বলের কোনো উত্তর জানা ছিল না এনামুলের। টো অ্যান্ড ইয়র্কারে কেবল ব্যাটটাই পেতে দিয়েছিলেন। তাতে খুলনার জয় নিশ্চিত হয়ে যায়। শেষ বলটা কেবল বৈধ করলেই হয়।
ওদিকে এনামুল অপেক্ষায় ছিলেন ১ রানের। জয় হাতছাড়ার পর সেঞ্চুরি বঞ্চিত হতে চাননি। শেষ বলে ১ রান নিয়ে বিপিএলের প্রথম ও সব মিলিয়ে নিজের ক্যারিয়ারের তৃতীয় টি-টোয়েন্টি সেঞ্চুরি। ৭ রানের দারুণ জয় তুলে নেয় খুলনা টাইগার্স।
এর আগে আফিফ হোসেন পেয়েছিলেন আসরের প্রথম ফিফটি। উইলিয়াম বোসিস্টো পান দ্বিতীয় ফিফটি ছোঁয়ার স্বাদ। শেষে মাহিদুল ইসলাম অঙ্কনের ঝড়। তাতে টস জিতে ব্যাটিং করতে নেমে ৪ উইকেটে ২০৯ রান তুলে খুলনা টাইগার্স।
আরো পড়ুন:
চট্টগ্রামে ‘চিটাগং ঝাঁজ’ টের পেল খুলনা
আশ্বাসেও ভরসা নেই ক্রিকেটারদের!
লক্ষ্য তাড়ায় জিসানের শুরুর ঝড়ের পর এনামুলের সেঞ্চুরিতে জবাব দেয় দুর্বার রাজশাহী। ইয়াসির, বার্ল রাখেন অবদান। শেষ ৬ বলে ১৭ রানের লক্ষ্য ছিল তাদের। এনামুল প্রথম বলে চার হাঁকিয়ে সমীকরণ কমিয়ে আনেন। পরের বলে নেন আরো ২ রান। তৃতীয় বল রিভার্স স্কুপ করতে গিয়ে বল মিস করেন এনামুল। পরের বল ফুলটসে ২ রান নেন রাজশাহীর অধিনায়ক। শেষ ২ বলে ৯ রান দরকার থাকলেও শেষ হাসিটা হাসতে পারেননি। ২০২ রান তুলে ম্যাচটা হারতে হয়েছে তাদের।
বিশাল লক্ষ্য তাড়ায় রাজশাহীর ভালো শুরুর প্রয়োজন ছিল। ৪ ওভারে ৪৭ রান তুলে নেন দুই ওপেনার। জিসান ২টি ছক্কা ও ৩টি চারে দর্শক মাতিয়ে তোলেন। মনে হচ্ছিল তরুণ ওপেনার ভালো ইনিংস উপহার দেবেন। কিন্তু পেসার হাসান বোলিংয়ে এসে প্রথম বলেই তাকে আউট করেন। সঙ্গী হারানোর পর হারিস বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি। হাসানের পরের ওভারেই লং অফে রনি তালুবন্দি হন।
এগিয়ে এসে সামনে ডাইভ দিয়ে দারুণ এক ক্যাচ নিলেও রনি কিছুক্ষণ পর ইয়াসিরের লোপ্পা ক্যাচ ছাড়েন। অবশ্য ৩ রানে জীবন পাওয়ার পর ইয়াসির বেশিদূর যেতে পারেননি।২০ রানে রনির বলেই আউট হন। সেখান থেকে বার্লকে সঙ্গে নিয়ে দলকে জয়ের এগিয়ে নিতে থাকেন এনামুল। ৩৩ বলে ফিফটির পর সেঞ্চুরির দিকে এগিয়ে যেতে থাকেন। বার্ল ১৬ বলে ২৫ রান করে যোগ্য সঙ্গ দেন। কিন্তু শেষের হাসিটা তারা কেউই হাসতে পারেননি।
এর আগে প্রথমে ব্যাটিংয়ে নেমে ইনিংসের শুরু থেকে ছন্দে ছিল খুলনা। আগ্রাসী শুরু এনে দেন নাঈম শেখ ও মেহেদী হাসান মিরাজ। দুই স্পিনার সানজামুল ও জিসানের ওপর চড়াও হয়ে ৩.
২টি করে চার ও ছক্কায় ১৪ বলে ২৭ রান করা নাঈম বোল্ড হন জিসানের বলে। অন্যদিকে ১৩ বলে ৩ চার ও ২ ছক্কায় ২৬ রান করেন মিরাজ। পঞ্চম ওভারে তাকে থামান পেসার তাসকিন আহমেদ। প্রথমবারের মতো খেলতে আসা অ্যালেক্স রস চারে নেমে সুবিধা করতে পারেননি। ৩ বলে ১ রান করে ফেরেন রান আউট হয়ে।
৬ ওভার শেষে ৩ উইকেটে খুলনার রান ৬০ রান। পাওয়ার প্লে’র কাজটা ঠিকঠাক হলেও উইকেট একটু বেশিই হারিয়েছিল। সেখান থেকে জুটি বাঁধেন আফিফ ও বোসিস্টো। তাদের ৭৫ বলে ১১৩ রনের জুটিতেই পাল্টে যায় দলের স্কোরবোর্ডের চিত্র। আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ের সঙ্গে বলের মেরিট অনুযায়ী খেলে অনায়েসে রান তোলেন তারা।
শেষ তিন ম্যাচে আফিফের রান ছিল যথাক্রমে ৩৩, ২৯ ও ২০। এবার ভালো শুরুর পর পেয়েছেন প্রথম ফিফটির স্বাদ। ৪২ বলে ৩টি করে চার ও ছক্কায় করেন ৫৬ রান। স্পিনার ডেয়ালকে মারা একটি ছক্কা ছিল ১১৩ মিটারের।
ওপেনিং থেকে মিডল অর্ডারে নেমে বোসিস্টিও সুযোগটা দারুণভাবে কাজে লাগিয়েছেন। পেয়েছেন নিজের দ্বিতীয় ফিফটি। ৩৭ বলে ৪ চার ও ১ ছক্কায় করেন ৫৫ রান।
পরের গল্পটা শুধুই মাহিদুলের। ১৯তম ওভারে মৃত্যুঞ্জয়কে দুই ছক্কা উড়ানোর পর শেষ ওভারে তাসকিনের বলেও দুই ছক্কা পান হার্ডহিটার ব্যাটসম্যান। তার শেষ ৩০ রানই গড়ে দেয় ব্যবধান।
শেষ ওভার বাদে তাসকিন ছিলেন দুর্দান্ত। সব মিলিয়ে ৩৬ রানে পেয়েছেন ২ উইকেট। ১ উইকেট নেন জিসান আলম।
সিলেটে দুই দলের প্রথম মোকাবিলায় দুর্বার রাজশাহী ২৮ রানে হারিয়েছিল খুলনাকে। খুলনা চট্টগ্রামে নিল প্রতিশোধ। ম্যাচ সেরার পুরস্কার পেয়েছেন ২৫ রানে ২ উইকেট নেওয়া হাসান মাহমুদ।
ঢাকা/ইয়াসিন/সাইফ
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব প এল র ন কর উইক ট প রথম
এছাড়াও পড়ুন:
পঞ্চদশ সংশোধনী সম্পূর্ণ বাতিল চেয়ে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল
তত্ত্বাবধায়ক সরকার ও গণভোট ফিরিয়ে এনে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী সংক্রান্ত যে রায় হাইকোর্ট দিয়েছিলেন, তার বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল (আপিল করার অনুমতি চেয়ে আবেদন) করেছেন সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদারসহ চারজন। তাঁদের আইনজীবী শরীফ ভূঁইয়া বলেছেন, পঞ্চদশ সংশোধনী সম্পূর্ণ বাতিল চেয়ে এই আবেদন করা হয়েছে।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বিলোপসহ বেশ কিছু বিষয়ে পরিবর্তন এনে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী এনেছিল আওয়ামী লীগ সরকার। ২০১১ সালের ৩০ জুন পঞ্চদশ সংশোধনী আইন জাতীয় সংসদে পাস হয়। ওই সংশোধনীতে সংবিধানে ৫৪টি ক্ষেত্রে পরিবর্তন এসেছিল। বিলোপ হয়েছিল তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থাও।
জুলাই অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর পঞ্চদশ সংশোধনীর বৈধতা নিয়ে রিট আবেদন হলে গত বছরের ১৭ ডিসেম্বর হাইকোর্ট রায় দেন। তাতে তত্ত্বাবধায়ক সরকার এবং গণভোট বাদ দেওয়া সংক্রান্ত সেই সংবিধান আইনের ২০ ও ২১ ধারা বাতিল ঘোষণা করা হয়। ওই দুটিসহ পঞ্চদশ সংশোধনী আইনের মাধ্যমে সংবিধানে যুক্ত ৭ক, ৭খ, ৪৪ (২) অনুচ্ছেদ সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ও বাতিলও ঘোষণা করেন আদালত।
চলতি বছরের ৮ জুলাই ১৩৯ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়। ওই রায়ের বিরুদ্ধেই সুজন সম্পাদকসহ চার বিশিষ্ট ব্যক্তি লিভ টু আপিল দায়ের করলেন। অন্য তিন ব্যক্তি হলেন এম হাফিজ উদ্দিন খান, জোবাইরুল হক ভূঁইয়া ও জাহরা রহমান।
আপিলের কারণ ব্যাখ্যা করে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ড. শরীফ ভূঁইয়া আজ সোমবার প্রথম আলোকে বলেন, পঞ্চদশ সংশোধনীর অংশবিশেষ অসাংবিধানিক ঘোষণা করে বাতিল করেছেন হাইকোর্ট। পুরো সংশোধনীর বাতিল চাওয়া হয়েছিল, কিন্তু পুরোটা বাতিল করেননি। হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল দায়ের করার জন্য অনুমতি প্রার্থনা করে আবেদন করা হয়েছে। ‘যথাসময়ে’ এর শুনানি হবে।
শরীফ ভূঁইয়া বলেন, ‘তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা সংক্রান্ত পঞ্চদশ সংশোধনী আইনের ২০ ও ২১ ধারা বাতিল করা হয়েছে। তবে তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা সম্পূর্ণভাবে ফিরিয়ে আনতে পঞ্চদশ সংশোধনী আইনের আরও কিছু ধারা বাতিল করা প্রয়োজন ছিল। হাইকোর্ট রায়ে সেসব ধারা বাতিল করেননি। ফলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা সম্পর্কিত ত্রয়োদশ সংশোধনীর সবগুলো বিধান সংবিধানে ফিরে আসেনি। পঞ্চদশ সংশোধনী আইন পাস করার ক্ষেত্রে পদ্ধতিগত ত্রুটি ছিল। ত্রুটিগুলোর বিষয়ে আদালতও বলেছেন। তারপরে হাইকোর্ট পঞ্চদশ সংশোধনী সম্পূর্ণ বাতিল না করে আংশিক বাতিল করেছেন। এতে করে সংবিধানে সংশোধনীর ব্যাপারে পদ্ধতিগত যে সুরক্ষা আছে, তা অকার্যকর হয়েছে। এসব কারণে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল দায়ের করা হয়েছে।’
পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিলের পাশাপাশি অবৈধ ক্ষমতা দখল করলে সর্বোচ্চ শাস্তির বিধান সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করা এবং সংরক্ষিত নারী আসন ৫০-এ উন্নীত করা হয়। জাতির পিতা হিসেবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। সংবিধানে জাতীয় চার মূলনীতি—জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা ফিরিয়ে আনা হয়। সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করা হয় বঙ্গবন্ধুর ১৯৭১ সালের সাতই মার্চের ভাষণ, ছাব্বিশে মার্চের স্বাধীনতার ঘোষণা ও স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র।
একই সঙ্গে অসাংবিধানিকভাবে রাষ্ট্রক্ষমতা দখলকে রাষ্ট্রদ্রোহ অপরাধ বিবেচনায় নিয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে রাষ্ট্রদ্রোহের অপরাধে দোষী করে সর্বোচ্চ শাস্তির বিধান যুক্ত করা হয়। আগে মেয়াদ শেষ হওয়ার পরবর্তী ৯০ দিনে নির্বাচন করার বিধান ছিল। পঞ্চদশ সংশোধনীতে পূর্ববর্তী ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করার বিষয়টি সংযোজন করা হয়।
পঞ্চদশ সংশোধনীর পুরো আইন ও আইনের কয়েকটি ধারার বৈধতা নিয়ে গত বছর হাইকোর্টে আলাদা দুটি রিট আবেদন হয়। সুজন সম্পাদকসহ পাঁচ ব্যক্তি একটি এবং আরেকজন ব্যক্তি আরেকটি রিট আবেদন করেন। চূড়ান্ত শুনানি শেষে গত বছরের ১৭ ডিসেম্বর হাইকোর্ট রায় দেন।
রায়ে বলা হয়েছিল, পঞ্চদশ সংশোধনী আইনের ২০ ও ২১ ধারা দুটি সংবিধানের মৌলিক কাঠামোকে ধ্বংস করেছে। এই দুটিসহ আইনের ৪৭ ধারা, ৭ক ও ৭খ সন্নিবেশিত করা সংক্রান্ত আইনের ৭ ধারা এবং ৪৪(২) অনুচ্ছেদ সন্নিবেশিত করা সংক্রান্ত আইনের ১৮ ধারা সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
রায়ে গণভোটের বিধান সংক্রান্ত ১৪২ অনুচ্ছেদ (দ্বাদশ সংশোধনী আইনের মাধ্যমে আনা) পুনর্বহাল করা হয়েছিল। পঞ্চদশ সংশোধনী আইন সম্পূর্ণ বাতিল না করে বাকি বিধানগুলোর বিষয়ে আইন অনুসারে পরবর্তী সংসদ সিদ্ধান্ত নিতে পারে বলে রায়ে উল্লেখ করা হয়।