Samakal:
2025-06-16@06:12:22 GMT

এ কেমন ‘সভারেন্টি’!

Published: 19th, January 2025 GMT

এ কেমন ‘সভারেন্টি’!

একটি জাতির ভবিষ্যৎ প্রজন্ম গড়ে তোলার শ্রেষ্ঠতম প্রাতিষ্ঠানিক প্রক্রিয়া চলে শিক্ষাঙ্গনে, বিশেষ করে বিদ্যালয়ে। যেখানে নতুন প্রজন্মকে বিষয়ভিত্তিক বিদ্যা শেখানোর পাশাপাশি জাতীয়তাবাদের মৌলিক তত্ত্ব ও সংস্কৃতির দীক্ষা দেওয়া হয়। জাতির যোগ্য ভবিষ্যৎ প্রতিনিধি হিসেবে প্রজন্মকে গড়ে তোলার লক্ষ্যে এই শিক্ষা প্রক্রিয়ার অবধারিত অংশ হিসেবে চর্চা করা হয় নৈতিক, আদর্শিক ও মানবিক তত্ত্বের জ্ঞান। এ ক্ষেত্রে যে উপকরণটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে তা হলো পাঠ্যপুস্তক।

জাতীয় শিক্ষাক্রম অনুসারে প্রস্তুত করা পাঠ্যপুস্তকের বিষয়াবলির বস্তুনিষ্ঠতা এবং স্থায়িত্ব অত্যন্ত জরুরি। যদি কোনো গোষ্ঠী ক্ষমতায়নের চরিত্র দ্বারা প্রভাবিত হয়; তাহলে বুঝতে হবে ওই গোষ্ঠী ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে প্রভাবিত করে গোটা জাতির ওপর তার আধিপত্য বিস্তার করতে চায়। যারা তাদের এই সুযোগ দেবে, তারা জাতিকে দাসত্বের পথে ঠেলে দিচ্ছে বলে ধরে নিতে হবে।
বিভিন্ন সময় বাংলাদেশে ইতিহাস বিকৃতি এবং ক্ষমতা প্রয়োগের অপসংস্কৃতির চর্চা হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে জাতীয় শিক্ষাক্রমে রচিত এসব পাঠ্যবই। বিগত সরকারের আমলেও মহান মুক্তিযুদ্ধের একক অংশীদার হওয়ার দৃশ্যমান প্রবণতা দেখা গেছে সে সময়ের পাঠ্যবইয়ে। সাম্প্রতিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় মনে হচ্ছে, পরিবর্তিত রূপে সদ্য প্রত্যাখ্যাত সেই অযাচিত শক্তির অপয়া অশনিসংকেত আবারও ধ্বনিত।

বাংলাদেশের জাতিগত পরিচিতি প্রত্যয়নের ক্ষেত্রে ‘আদিবাসী’ শব্দের ব্যবহার নিয়ে জটিলতা দীর্ঘদিনের। প্রচলিত সংবিধানে এ ক্ষেত্রে ‘নৃগোষ্ঠী’ ব্যবহারের কথা বলা হয়েছে। তবে এটি এই লেখার মূল আলোচ্য বিষয় নয়। বিষয় হচ্ছে, নতুন শিক্ষাক্রমে তৈরি করা নবম-দশম শ্রেণির বাংলা ভাষার ব্যাকরণ ও নির্মিতি বইয়ের পেছনের প্রচ্ছদে ব্যবহৃত একটি গ্রাফিতি। এর চিত্রপটে সবার ওপরে লেখা রয়েছে ‘পাতা ছেঁড়া নিষেধ’। একটি চারাগাছের ৫টি পাতায় লেখা– আদিবাসী, হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ ও খ্রিষ্টান। গাছটির গা-ঘেঁষে লেখা বাংলাদেশ।
১২ জানুয়ারি জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডে (এনসিটিবি) গিয়ে ‘স্টুডেন্ট ফর সভারেন্টি’ নামে একটি সংগঠন ‘আদিবাসী’ শব্দযুক্ত ওই গ্রাফিতির ছবি সরিয়ে নিতে আলটিমেটাম দেয়। অখ্যাত এই ছাত্র সংগঠন এনসিটিবি ভবনে ঢুকে সেখানকার সংশ্লিষ্টদের এ ব্যাপারে চাপ প্রয়োগ করেন বলেও জানা যায়। রাতেই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তা বাস্তবায়ন করে। এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে ১৫ জানুয়ারি শিক্ষার্থীদের অপর একটি পক্ষ এনসিটিবির সামনে গেলে প্রথম পক্ষটি তাদের ওপর হামলা চালিয়ে বেধড়ক মারধর করে। তাদের এই আচরণ মাত্র ৬ মাস আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কোটাবিরোধী আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা চালানো, বিপ্লবের বানে ভেসে যাওয়া ফ্যাসিস্ট সরকারের নিষিদ্ধ ভ্যানগার্ড ইউনিট ছাত্রলীগের প্রতিচ্ছবি যেন!

কারা এই স্টুডেন্ট ফর সভারেন্টি? যাদের আলটিমেটামে রাতারাতি জাতীয় পাঠ্যপুস্তকের মতো জাতীয় গুরুত্ববাহী ইস্যুতে সিদ্ধান্ত বদলে যায়? কাদের কথায় সরকারের সিদ্ধান্ত লাগে না জাতীয় পাঠ্যপুস্তকের তথ্য ছুড়ে ফেলতে? সরকার-সংশ্লিষ্টরা সামনে টেনে আনলেন জাতীয় সংবিধানকে। এই ‘সংশোধনী’র ক্ষেত্রে সংবিধান মান্য করার কথা জানালেন তারা। সেটাই যদি হবে, তাহলে তো পাতাটা ছিঁড়ে ফেলার কথা ছিল না। সেখানে আদিবাসী সরিয়ে নৃগোষ্ঠী লেখার কথা! সংবিধান কি কোথাও আদিবাসী শব্দের ব্যবহার দেখলে সেটা ছুড়ে ফেলতে বলেছে? 
সেই সঙ্গে আরেকটি বিষয় ভাবতে বাধ্য করছে, এবারের পাঠ্যপুস্তকে সংযোজিত যেসব তথ্য-উপাত্তের বস্তুনিষ্ঠতা সচেতন মহলে প্রশ্নবিদ্ধ হলেও বহাল রয়েছে, সেগুলোও কি তবে কোনো গোষ্ঠীর ক্ষমতায়ন ও আধিপত্য এবং তার প্রতি দায়িত্বশীলদের আনুগত্য প্রকাশের দৃষ্টান্ত? এই প্রশ্নের উত্তর না হয় সচেতন পাঠকই তাদের প্রজ্ঞায় অনুসন্ধান করে নেবেন। আমি বরং ‘বেহাত বিপ্লব’ বইটা পড়ে শেষ করি।

এস এম সাব্বির খান: সহসম্পাদক, সমকাল

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: প রজন ম ব যবহ র র ওপর সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

ইরানের হামলায় ২০ ইসরায়েলি নিহত

ইসরায়েলের সঙ্গে ইরানের পাল্টাপাল্টি হামলা চারদিন ধরে চলছে। এসব হামলায় উভয় দেশের মধ্যে নিহতের সংখ্যা বেড়েই চলছে। ইসরায়েলের জাতীয় পরিষেবা জানিয়েছে, আজ সোমবার ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইসরায়েলে পাঁচজন নিহত হয়েছেন। এ নিয়ে গত শুক্রবার থেকে আজ সোমবার পর্যন্ত ইসরায়েলে নিহতের সংখ্যা  ২০ জনে পৌঁছুল। আজ সোমবার এ তথ্য জানিয়েছে বিবিসি।

অন্যদিকে আল-জাজিরা বলছে, ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরায়েলি বিমান হামলায় রোববার পর্যন্ত ইরানে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ২২৪ জনে পৌঁছেছে।

ইসরায়েলের জাতীয় জরুরি পরিষেবার প্রধান ম্যাগেন ডেভিড অ্যাডমের বরাত দিয়ে বিবিসি জানায়, মধ্য ইসরায়েলজুড়ে ইরানের হামলায় চারজন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে দুইজন নারী। 

এর আগে সিএনএন ইসরায়েলের ১৫ জন নিহত হওয়ার খবর দেয়। ইসরায়েলের সরকারি সম্প্রচারমাধ্যম কানের খবর বলছে, বন্দরনগরী হাইফায় অন্তত দুইজন আহত হয়েছেন। এছাড়া, তিনজন নিখোঁজ রয়েছেন।

রোববার ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) জানায়, ইরান থেকে নতুন করে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা শুরু হয়েছে। একাধিক ক্ষেপণাস্ত্র শনাক্ত করেছে ইসরায়েল। বর্তমানে হামলা প্রতিহত করার কাজ চলছে বলে জানিয়েছে আইডিএফ।

আজ সিএনএনের এক খবরে বলা হয়েছে, তেল আবিব ও জেরুজালেমসহ ইসরায়েলের বিভিন্ন শহরে জরুরি সতর্ক সংকেত (সাইরেন) বাজতে শুরু করেছে। আইডিএফ সতর্ক করে বলেছে, তাদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা পুরোপুরি অভেদ্য নয়।

সিএনএনের একজন প্রযোজক জেরুজালেমে সাইরেন এবং একাধিক বিস্ফোরণের শব্দ শুনেছেন। তার তোলা ভিডিওতে আকাশে বহু ক্ষেপণাস্ত্র ছুটে যেতে দেখা গেছে।

ইসরায়েলের জরুরি পরিষেবা সংস্থা ম্যাগেন ডেভিড আদোম জানিয়েছে, তাদের দলগুলো আক্রান্ত এলাকার দিকে রওনা দিয়েছে।

সারা দেশের নাগরিকদের আশ্রয়কেন্দ্রে ঢুকতে এবং পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত সেখানে থাকার আহ্বান জানিয়েছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী।

বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ইসরায়েলি সেনাবাহিনী এক্সে দেওয়া এক পোস্টে বলেছে, বর্তমানে বিমানবাহিনী হামলা প্রতিহত করার পাশাপাশি পাল্টা হামলা চালানোর কাজ করছে।

ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম ওয়াইনেট নিউজ জানিয়েছে, মধ্য ইসরায়েলের পেতাহ টিকভা শহরের একটি ভবনে একটি ইসরায়েলি ক্ষেপণাস্ত্র সরাসরি আঘাত হেনেছে। হামলার ফলে ওই স্থানে আগুন ধরে যায়। তবে এ ঘটনায় তাৎক্ষণিকভাবে কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।

এদিকে মধ্য ইরানে একাধিক বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। দেশটির সেনাবাহিনী এ তথ্য জানিয়েছে। আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সেনাবাহিনীর দাবি, বিভিন্ন ক্ষেপণাস্ত্র স্থাপনা লক্ষ্য করে এসব হামলা চালানো হয়েছে।

ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘ইসরায়েলি বিমানবাহিনী সফলভাবে মধ্য ইরানে অবস্থিত একাধিক স্থাপনায় আঘাত হেনেছে। আমাদের গোয়েন্দা তথ্য বলছে, এসব স্থাপনা থেকে ইসরায়েলের দিকে ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হচ্ছিল।’

তবে ইসরায়েলের এই হামলার প্রতিক্রিয়ায় ইরান এখনো আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেয়নি।

এদিকে ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরায়েলি বিমান হামলায় রোববার পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা বেড়ে ২২৪ জনে পৌঁছেছে।

বার্তা সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের (এপি) এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নিহতদের মধ্যে ৯০ শতাংশেরও বেশি বেসামরিক নাগরিক। হামলায় ১ হাজার ২৭০ জনেরও বেশি মানুষ আহত হয়েছেন।

এপির প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, গত ১৩ জুন ইরানে বিমান হামলা শুরু করে ইসরায়েল। ওই হামলায় ইরানের নাতাঞ্জ ও ইসফাহান অঞ্চলের পারমাণবিক স্থাপনা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বেশ কয়েকজন উচ্চপদস্থ সামরিক কর্মকর্তা ও পারমাণবিক বিজ্ঞানী নিহত হন। ইরানে বর্তমানে মসজিদ ও মেট্রো স্টেশনগুলোকে অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।

ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইসরায়েলের তিন শিশুসহ অন্তত ১৫ জন নিহত হয়েছেন। রোববার ইসরায়েল সরকারের বরাতে এ তথ্য জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম সিএনএন।

ইসরায়েল কর্তৃপক্ষ বলেছে, এছাড়া ইরানের হামলায় কমপক্ষে ৩৮৫ জন আহত হয়েছেন, যার মধ্যে সাত জনের অবস্থা গুরুতর।

এদিকে ইসরায়েলি পুলিশের বরাতে আল জাজিরা জানিয়েছে, তেল আবিবের দক্ষিণে অবস্থিত বাত ইয়াম শহরে ৬ জন নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে দুই শিশু রয়েছে। এছাড়া সাতজন এখনও নিখোঁজ। ধ্বংসস্তূপের মধ্যে উদ্ধার অভিযান চালাচ্ছেন জরুরি সেবাদানকারীরা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ