একটি জাতির ভবিষ্যৎ প্রজন্ম গড়ে তোলার শ্রেষ্ঠতম প্রাতিষ্ঠানিক প্রক্রিয়া চলে শিক্ষাঙ্গনে, বিশেষ করে বিদ্যালয়ে। যেখানে নতুন প্রজন্মকে বিষয়ভিত্তিক বিদ্যা শেখানোর পাশাপাশি জাতীয়তাবাদের মৌলিক তত্ত্ব ও সংস্কৃতির দীক্ষা দেওয়া হয়। জাতির যোগ্য ভবিষ্যৎ প্রতিনিধি হিসেবে প্রজন্মকে গড়ে তোলার লক্ষ্যে এই শিক্ষা প্রক্রিয়ার অবধারিত অংশ হিসেবে চর্চা করা হয় নৈতিক, আদর্শিক ও মানবিক তত্ত্বের জ্ঞান। এ ক্ষেত্রে যে উপকরণটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে তা হলো পাঠ্যপুস্তক।
জাতীয় শিক্ষাক্রম অনুসারে প্রস্তুত করা পাঠ্যপুস্তকের বিষয়াবলির বস্তুনিষ্ঠতা এবং স্থায়িত্ব অত্যন্ত জরুরি। যদি কোনো গোষ্ঠী ক্ষমতায়নের চরিত্র দ্বারা প্রভাবিত হয়; তাহলে বুঝতে হবে ওই গোষ্ঠী ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে প্রভাবিত করে গোটা জাতির ওপর তার আধিপত্য বিস্তার করতে চায়। যারা তাদের এই সুযোগ দেবে, তারা জাতিকে দাসত্বের পথে ঠেলে দিচ্ছে বলে ধরে নিতে হবে।
বিভিন্ন সময় বাংলাদেশে ইতিহাস বিকৃতি এবং ক্ষমতা প্রয়োগের অপসংস্কৃতির চর্চা হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে জাতীয় শিক্ষাক্রমে রচিত এসব পাঠ্যবই। বিগত সরকারের আমলেও মহান মুক্তিযুদ্ধের একক অংশীদার হওয়ার দৃশ্যমান প্রবণতা দেখা গেছে সে সময়ের পাঠ্যবইয়ে। সাম্প্রতিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় মনে হচ্ছে, পরিবর্তিত রূপে সদ্য প্রত্যাখ্যাত সেই অযাচিত শক্তির অপয়া অশনিসংকেত আবারও ধ্বনিত।
বাংলাদেশের জাতিগত পরিচিতি প্রত্যয়নের ক্ষেত্রে ‘আদিবাসী’ শব্দের ব্যবহার নিয়ে জটিলতা দীর্ঘদিনের। প্রচলিত সংবিধানে এ ক্ষেত্রে ‘নৃগোষ্ঠী’ ব্যবহারের কথা বলা হয়েছে। তবে এটি এই লেখার মূল আলোচ্য বিষয় নয়। বিষয় হচ্ছে, নতুন শিক্ষাক্রমে তৈরি করা নবম-দশম শ্রেণির বাংলা ভাষার ব্যাকরণ ও নির্মিতি বইয়ের পেছনের প্রচ্ছদে ব্যবহৃত একটি গ্রাফিতি। এর চিত্রপটে সবার ওপরে লেখা রয়েছে ‘পাতা ছেঁড়া নিষেধ’। একটি চারাগাছের ৫টি পাতায় লেখা– আদিবাসী, হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ ও খ্রিষ্টান। গাছটির গা-ঘেঁষে লেখা বাংলাদেশ।
১২ জানুয়ারি জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডে (এনসিটিবি) গিয়ে ‘স্টুডেন্ট ফর সভারেন্টি’ নামে একটি সংগঠন ‘আদিবাসী’ শব্দযুক্ত ওই গ্রাফিতির ছবি সরিয়ে নিতে আলটিমেটাম দেয়। অখ্যাত এই ছাত্র সংগঠন এনসিটিবি ভবনে ঢুকে সেখানকার সংশ্লিষ্টদের এ ব্যাপারে চাপ প্রয়োগ করেন বলেও জানা যায়। রাতেই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তা বাস্তবায়ন করে। এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে ১৫ জানুয়ারি শিক্ষার্থীদের অপর একটি পক্ষ এনসিটিবির সামনে গেলে প্রথম পক্ষটি তাদের ওপর হামলা চালিয়ে বেধড়ক মারধর করে। তাদের এই আচরণ মাত্র ৬ মাস আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কোটাবিরোধী আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা চালানো, বিপ্লবের বানে ভেসে যাওয়া ফ্যাসিস্ট সরকারের নিষিদ্ধ ভ্যানগার্ড ইউনিট ছাত্রলীগের প্রতিচ্ছবি যেন!
কারা এই স্টুডেন্ট ফর সভারেন্টি? যাদের আলটিমেটামে রাতারাতি জাতীয় পাঠ্যপুস্তকের মতো জাতীয় গুরুত্ববাহী ইস্যুতে সিদ্ধান্ত বদলে যায়? কাদের কথায় সরকারের সিদ্ধান্ত লাগে না জাতীয় পাঠ্যপুস্তকের তথ্য ছুড়ে ফেলতে? সরকার-সংশ্লিষ্টরা সামনে টেনে আনলেন জাতীয় সংবিধানকে। এই ‘সংশোধনী’র ক্ষেত্রে সংবিধান মান্য করার কথা জানালেন তারা। সেটাই যদি হবে, তাহলে তো পাতাটা ছিঁড়ে ফেলার কথা ছিল না। সেখানে আদিবাসী সরিয়ে নৃগোষ্ঠী লেখার কথা! সংবিধান কি কোথাও আদিবাসী শব্দের ব্যবহার দেখলে সেটা ছুড়ে ফেলতে বলেছে?
সেই সঙ্গে আরেকটি বিষয় ভাবতে বাধ্য করছে, এবারের পাঠ্যপুস্তকে সংযোজিত যেসব তথ্য-উপাত্তের বস্তুনিষ্ঠতা সচেতন মহলে প্রশ্নবিদ্ধ হলেও বহাল রয়েছে, সেগুলোও কি তবে কোনো গোষ্ঠীর ক্ষমতায়ন ও আধিপত্য এবং তার প্রতি দায়িত্বশীলদের আনুগত্য প্রকাশের দৃষ্টান্ত? এই প্রশ্নের উত্তর না হয় সচেতন পাঠকই তাদের প্রজ্ঞায় অনুসন্ধান করে নেবেন। আমি বরং ‘বেহাত বিপ্লব’ বইটা পড়ে শেষ করি।
এস এম সাব্বির খান: সহসম্পাদক, সমকাল
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: প রজন ম ব যবহ র র ওপর সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
সবাই ভেবেছিলেন কিশোরী ডুবে গেছে, ১০ দিন পর ফোন করে জানাল সে গাজীপুরে আছে
১০ দিন আগে কুষ্টিয়ার কুমারখালীর মরা কালিগঙ্গা নদীতে গোসল করতে গিয়েছিল কিশোরী সোহানা খাতুন। বাড়িতে ফিরে না আসায় পরিবারের সদস্য ও এলাকাবাসী তাকে খুঁজতে শুরু করেন। পরে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল নদীতে অভিযান চালিয়েও তার সন্ধান পায়নি। তবে গত বুধবার রাতে মাকে ফোন করেছে সোহানা; জানিয়েছে সে গাজীপুরে প্রাক্তন স্বামীর কাছে আছে।
নিখোঁজ হওয়া কিশোরীর নাম সোহানা খাতুন। তার বাড়ি কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার বাগুলাট ইউনিয়নের বাঁশগ্রাম কারিগর পাড়ায়। তার বাবা গোলাম মওলা ও মা শিরিনা খাতুন।
পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ১৯ জুলাই দুপুরে বাড়ির পাশের মরা কালিগঙ্গা নদীতে গোসল ও কাপড় ধুতে গিয়েছিল সোহানা। দীর্ঘ সময়েও না ফেরায় তার মা নদীর ধারে যান; দেখেন, সোহানার কাপড় পড়ে আছে। এরপর স্বজন ও এলাকাবাসী তাকে খুঁজতে শুরু করেন। খবর পেয়ে ওই রাতে ফায়ার সার্ভিসের একটি দল নদীতে উদ্ধার অভিযান চালায়। পরদিন খুলনা ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল ১২ ঘণ্টা অভিযান চালিয়েও তার সন্ধান না পেয়ে অভিযান স্থগিত করে। ২১ জুলাই এক কবিরাজ এনে নদীতে খোঁজার চেষ্টাও করেন সোহানার বাবা–মা।
এমন অবস্থায় বুধবার রাতে হঠাৎ সোহানা তার মায়ের ফোনে কল দিয়ে জানায়, সে ঢাকার গাজীপুরে তার প্রাক্তন স্বামীর কাছে রয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার রাত ৯টার দিকে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান সোহানার বাবা গোলাম মওলা। তিনি বলেন, ‘প্রথমে ভেবেছিলাম, মেয়ে নদীতে ডুবে গেছে। সবাই মিলে খোঁজাখুঁজি করেছি। এমনকি কবিরাজও এনেছিলাম। কিন্তু হঠাৎ বুধবার আমার স্ত্রীকে ফোন দিয়ে জানায়, সে প্রাক্তন স্বামীর কাছে আছে। আমরা বিষয়টি গতকাল রাতে পুলিশকে জানিয়েছি।’ বিষয়টি বুঝতে না পেরে সবাইকে কষ্ট দেওয়ার জন্য তিনি ক্ষমা চান।
স্থানীয় লোকজন জানান, প্রায় দুই বছর আগে খালাতো ভাই কুতুব উদ্দিনের সঙ্গে পালিয়ে যায় সোহানা এবং দুজন বিয়ে করে। তবে বনিবনা না হওয়ায় তিন মাস আগে সোহানা তাকে তালাক দিয়ে বাবার বাড়ি চলে আসে। নদীতে নিখোঁজ হওয়ার ‘নাটক’ করে সে পালিয়ে গেছে।
এ বিষয়ে কুমারখালী থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) আমিরুল ইসলাম বলেন, শুরুতে পরিবারের লোকজন জানিয়েছিল, নদীতে গোসলে গিয়ে নিখোঁজ হয়েছে সোহানা। গতকাল আবার তার বাবা জানিয়েছে, মেয়ে গাজীপুরে প্রাক্তন স্বামীর কাছে আছে।