২০২৩ সালের ২২ জুলাই অ্যাম্বুলেন্সচালক মো. আব্দুস সালেক মিয়াকে বদলি করা হয়। এর পর আর নতুন চালক নিয়োগ দেওয়া হয়নি। ফলে কম খরচে অ্যাম্বুলেন্সের সেবা পাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন হাজারো রোগী। অধিক ভাড়া দিয়ে বেসরকারি মালিকানার অ্যাম্বুলেন্স ও মাইক্রোবাসে করে গুরুতর রোগীদের অন্য হাসপাতালে যেতে হচ্ছে। এমন চিত্র গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে।
জানা গেছে, প্রায় ১৮ মাস ধরে সুন্দরগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সরকারি অ্যাম্বুলেন্স সেবা বন্ধ রয়েছে। এতে প্রতি মাসে গড়ে শতাধিক রোগী সেবাবঞ্চিত হচ্ছেন। সরকারও রাজস্ব হারাচ্ছে। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে একটি সচল ও একটি অচল অ্যাম্বুলেন্স রয়েছে। সরকারি অ্যাম্বুলেন্সে সুন্দরগঞ্জ থেকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভাড়া দিতে হতো ১ হাজার ১২০ টাকা। অথচ এখন বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্সে দিতে হচ্ছে ২ থেকে ৩ হাজার টাকা।
অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক মো.

জোবাইদুর রহমান বলছিলেন, দেড় বছর ধরে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অ্যাম্বুলেন্স দুটি পড়ে থাকলেও দেখার কেউ নেই। প্রতিদিন তিন থেকে পাঁচজন রোগী রংপুরে স্থানান্তর করা হয়। সরকারি অ্যাম্বুলেন্স না থাকায় অধিক ভাড়া দিয়ে বেসরকারিভাবে রোগী রংপুরে নিয়ে যান স্বজন। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অবস্থা যদি এমন হয়, তাহলে মানুষ কোথায় যাবে? 
স্থানীয় বাসিন্দা, রোগী ও স্বজনরা বলছেন, যোগদানের ছয় মাস না যেতেই বদলি হচ্ছেন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা। চারজন মেডিকেল অফিসার দিয়ে চলছে চিকিৎসাসেবা। রোগীর স্বজন মো. সেলিম মিয়ার ভাষ্য, এখানকার শৌচাগার ব্যবহার করা যায় না। সুপেয় পানির অভাব, নলকূপ নষ্ট। খাবারের মান ভালো না। ওষুধ বাইরে থেকে কিনতে হয়। দু’দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর সরকারি অ্যাম্বুলেন্স না থাকায় অধিক ভাড়া দিয়ে ব্যক্তিমালিকানার অ্যাম্বুলেন্সে করে তাঁর ভাইকে রংপুরে পাঠিয়েছেন।
এ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা দিবাকর বসাক বলেন, তিনি গত সপ্তাহে এ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যোগদান করেছেন। অ্যাম্বুলেন্সের চালকসহ মেডিকেল অফিসারের কয়েকটি পদ শূন্য থাকায় চিকিৎসাসেবা ব্যাহত হচ্ছে। তবে তাঁর চালক মাঝেমধ্যে অ্যাম্বুলেন্সটি চালাচ্ছেন।
সারাদেশেই অ্যাম্বুলেন্সচালক সংকট রয়েছে বলে জানিয়েছেন গাইবান্ধার সিভিল সার্জন কানিজ সাবিহা। এ বিষয়ে তিনি বলেন, এখানে সিভিল সার্জনের কিছু করার নেই। তার পরও বিষয়টি নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: স ব স থ য কমপ ল ক স সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

গাইবান্ধায় চোর সন্দেহে মানসিক ভারসাম্যহীন ব্যক্তিকে পিটিয়ে হত্যা

গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলায় তিস্তা নদীর দুর্গম চরাঞ্চলে গরু চোর সন্দেহে আব্দুস সালাম (৫০) নামে মানসিক ভারসাম্যহীন এক ব্যক্তিকে পিটিয়ে হত্যা করেছে স্থানীয়রা। এ ঘটনায় দুলালী বেগম (৪৩) নামে এক নারীকে আটক করেছে পুলিশ।

শনিবার (১ নভেম্বর) সকালে উপজেলার বেলকা ইউনিয়নের বেলকা নবাবগঞ্জ গ্রামের তিস্তার চরে তাকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। খবর পেয়ে সুন্দরগঞ্জ থানা পুলিশ গিয়ে লাশ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে। 

আরো পড়ুন:

গাজীপুরে যুবককে কুপিয়ে হত্যা

ঝিনাইদহে কৃষকের হাত-পা ও গলা বাঁধা মরদেহ উদ্ধার

নিহত আব্দুস সালাম একই ইউনিয়নের রামডাকুয়া গ্রামের ওমেদ আলীর ছেলে। স্বজনরা জানান, সালাম দীর্ঘদিন ধরে মানসিক ভারসাম্যহীন অবস্থায় মানবেতর জীবন যাপন করছিল। 

আটক দুলালী বেগম বেলকা নবাবগঞ্জ গ্রামের আব্দুল গণি মিয়ার স্ত্রী।

সুন্দরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল হাকিম আজাদ বলেন, ‘‘খবর পাওয়ার পর পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য গাইবান্ধা সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠিয়েছে। হত্যাকাণ্ডে গ্রেপ্তার দুলালী বেগম ছাড়াও যারা জড়িত ছিল, তা শনাক্তে তদন্ত চলছে।’’ 

নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে বলে জানান এই পুলিশ কর্মকর্তা।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, শুক্রবার (৩১ অক্টোবর) গভীর রাতে সালাম আব্দুল গণি মিয়ার গোয়ালঘরে প্রবেশ করে। বিষয়টি টের পেয়ে দুলালী বেগম স্বামী ও আশপাশের লোকজনকে খবর দেয়। স্থানীয়রা সালামকে রশি দিয়ে বেঁধে বেধড়ক মারধর করে। একপর্যায়ে তিনি অচেতন হয়ে পড়লে তাকে পুকুরপাড়ে রেখে দেওয়া হয়। ভোরের দিকে আবার তাকে পাশের গোয়ালঘরে নিয়ে নির্যাতন চালানো হয়। এতে ঘটনাস্থলে তার মৃত্যু হয়।

অভিযুক্ত আব্দুল গণি মিয়া বলেন, ‘‘কয়েক দিন আগে শ্যালো মেশিন চুরি হয়ে গেছে। রাতে গোয়ালে সালামকে দেখি। তাই প্রতিবেশীদের খবর দেই। পরে তারা এসে মারধর করে।’’ 

আটক দুলালী বেগম বলেন, ‘‘এক সপ্তাহ আগে মেশিন হারিয়েছে। রাতে শব্দ শুনে দেখি গোয়ালের বাঁধন খুলছে। পরে লোকজন এসে মারধর করে।’’ 

নিহতের স্বজনরা জানান, আব্দুস সালাম দীর্ঘদিন ধরে মানসিকভাবে ভারসাম্যহীন ছিলেন এবং মানুষের সাহায্যে জীবন চলত। তার বিরুদ্ধে আগে কখনো চুরির অভিযোগ ওঠেনি। তারা দাবি করেন, পরিকল্পিতভাবে নির্যাতন করে তাকে হত্যা করা হয়েছে। নিহতের তিনটি ছোট ছেলে রয়েছে, বাবাকে হারিয়ে তারা অসহায় অবস্থায় পড়েছে। 

বেলকা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইব্রাহিম খলিলুল্যাহ জানান, ঘটনাস্থল দুর্গম চরাঞ্চল হওয়ায় খবর পেতে দেরি হয়। স্বজনদের বক্তব্য অনুযায়ী নিহত ব্যক্তি মানসিকভাবে অসুস্থ ছিলেন।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এ সার্কেল) বিদ্রোহ কুমার কুণ্ডু, সুন্দরগঞ্জ থানার ওসি আব্দুল হাকিম আজাদ এবং স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।

ঢাকা/মাসুম/বকুল

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সাঁকো বিড়ম্বনার ৪০ বছর 
  • গাইবান্ধায় চোর সন্দেহে এক ব্যক্তিকে পিটিয়ে হত্যা, নারী আটক
  • গাইবান্ধায় চোর সন্দেহে মানসিক ভারসাম্যহীন ব্যক্তিকে পিটিয়ে হত্যা