অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার নিয়ে প্রকাশিত ‘বিতর্কিত’ প্রতিবেদনটি প্রত্যাহার করে নিয়েছেন একদল ব্রিটিশ এমপি। রবিবার (১৯ জানুয়ারি) ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান এ তথ্য জানিয়েছে।

সংবাদমাধ্যমটি বলছে, এই প্রতিবেদন ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনা সরকারের পক্ষে পক্ষপাতদুষ্ট– এমন অভিযোগ আসার পর তারা সেটি সরিয়ে নেন। 

গার্ডিয়ান জানিয়েছে, ২০২৪ সালের নভেম্বরে অল-পার্টি পার্লামেন্টারি গ্রুপ (এপিপিজি) একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এতে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংকটের পরবর্তী পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করা হয়। প্রতিবেদনে অভিযোগ করা হয়, অন্তর্বর্তী সরকার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ, সাংবাদিক ও সাবেক কর্মকর্তাদের দমন করতে দেশের আইন ব্যবস্থাকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছে। এর পাশাপাশি ইসলামি উগ্রপন্থিদের ক্রমবর্ধমান প্রভাবও তুলে ধরা হয়।

আরো পড়ুন:

টিউলিপকে দুর্নীতিবাজ বলে আখ্যা দিলেন ইলন মাস্ক

টিউলিপ সিদ্দিকের স্থলাভিষিক্ত হলেন এমা রেনল্ডস

সেই প্রতিবেদন সরিয়ে নেওয়ার পর কর্মকর্তারা বলছেন, “এটি আর প্রকাশ করা হচ্ছে না এবং একজন লেবার এমপি হাউস অব কমন্সে এ সম্পর্কে অভিযোগ করার পরে এটি ‘পর্যালোচনার অধীনে’ রয়েছে। এটি ব্যাপকভাবে প্রচারের উদ্দেশ্যে করা হয়নি এবং এপিপিজি বিষয়টিকে আরো এগিয়ে নিয়ে যাবে না বা কোনো ফলো-আপ করবে না।”

এর আগে, এপিপিজির এই ‘বিতর্কিত’ প্রতিবেদন নিয়ে সমালোচনা করেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ সংসদ সদস্য (এমপি) রূপা হক।

সামাজিকমাধ্যম এক্সে এক পোস্টে তিনি লেখেন, “এপিপিজি ফর দ্য কমনওয়েলথের নামে বাংলাদেশের ইউনুস সরকার সম্পর্কে প্রকাশিত ‘একতরফা বর্ণনা’ ভুল তথ্য প্রচার করেছে এবং এটি যুক্তরাজ্য সরকারের নীতিকেও বিভ্রান্ত করেছে।”

স্বৈরাচারী শাসনের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের মুখে শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার তিন মাস পর গত নভেম্বরে 'দ্য অনগোয়িং সিচুয়েশন ইন বাংলাদেশ' শীর্ষক প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়। ওই বিক্ষোভে আনুমানিক ১ হাজার জন নিহত হয়েছিল। 

প্রতিবেদনে শেখ হাসিনার উত্তরসূরি নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী মুহাম্মদ ইউনূসকে নিয়ে একের পর এক সমালোচনা করা হয়। এপিপিজির কনজারভেটিভ চেয়ার অ্যান্ড্রু রোজিনডেল এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে লিখেছেন, “বাংলাদেশের একটি চমৎকার ভবিষ্যৎ থাকা উচিত যেখানে সবার জন্য সুযোগ উন্মুক্ত থাকবে। তাৎক্ষণিক পরিবর্তন না হলে নতুন সরকার আন্তর্জাতিকভাবে যে সুনাম অর্জন করছে তা উড়ে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হবে।”

প্রতিবেদনে ড.

ইউনূসের প্রশাসনের বিরুদ্ধে ‘আইনকে রাজনৈতিক অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার’ এবং ‘কট্টর ইসলামপন্থীদের’ ক্ষমতায়নের অভিযোগ আনা হয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়, “আমরা প্রমাণ পেয়েছি যে, সাবেক মন্ত্রী, আওয়ামী লীগ নেতা, এমপি, সাবেক বিচারক, বুদ্ধিজীবী, আইনজীবী এবং সাংবাদিকদের ওপর এত বেশি সংখ্যক হত্যার অভিযোগ আনা হচ্ছে, যা এসবের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে।”

মূলত নয়াদিল্লিভিত্তিক একটি থিংকট্যাংকের দেওয়া তথ্যের ওপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয় ওই প্রতিবেদনটি।

প্রতিবেদনে বলা হয়, বিক্ষোভে মৃত্যুর বেশিরভাগই ঘটেছে ৫ আগস্টের পর, যখন লাখ লাখ মানুষ আওয়ামী লীগ সরকারের সমর্থকদের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য রাস্তায় নেমে আসে।

এই প্রতিবেদনটি জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনারের পূর্ববর্তী একটি প্রতিবেদনের বিপরীত। গত আগস্টে জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনারের প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, “বেশিরভাগ মৃত্যু ও আহতের জন্য নিরাপত্তা বাহিনী এবং আওয়ামী লীগের সঙ্গে যুক্ত ছাত্র সংগঠন দায়ী।”

সম্প্রতি বাংলাদেশ ঘুরে গেছেন লেবার পার্টির এমপি রূপা হক। চলতি সপ্তাহে কমন্সে প্রকাশিত প্রতিবেদনের সমালোচনা করে একে ‘বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক কাজ’ বলে অভিহিত করেছেন তিনি। রূপা হক দাবি করেন, প্রফেসর ইউনূস ব্যক্তিগতভাবে তার কাছে প্রতিবেদনটি উত্থাপন করে প্রশ্ন তুলেছেন, ‘আপনার সরকার সংসদের নামে এসব মিথ্যাচার প্রকাশ করছে?’

লন্ডনের স্কুল অব ওরিয়েন্টাল অ্যান্ড আফ্রিকান স্টাডিজের অধ্যাপক নাওমী হোসেন এ বিষয়ে বলেন, “প্রতিবেদনটি হয় মারাত্মক পক্ষপাতদুষ্ট কিংবা অত্যন্ত খারাপ বিশ্লেষণ। জবাবদিহিতার হাতিয়ার হিসেবে এটি সম্পূর্ণরূপে ব্যর্থ।”

এপিপিজি’র একজন মুখপাত্র বলেছেন, “এই দলটি একটি প্রতিষ্ঠান হিসেবে কমনওয়েলথ অব নেশনসের দিকে একচেটিয়াভাবে মনোযোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আর সেজন্য, দেশ-নির্দিষ্ট প্রতিবেদন তৈরি করবে না।”

ঢাকা/ফিরোজ

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর সরক র র ইউন স

এছাড়াও পড়ুন:

সাজেকে নিহত খুবি শিক্ষার্থী রিংকীর মরদেহ নেওয়া হবে গাইবান্ধা

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান ডিসিপ্লিনের সেশনাল ট্যুরে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত শিক্ষার্থী মোছা. রুবিনা আফসানা রিংকীর মরদেহ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে তার বাড়ি গাইবান্ধায় নেওয়া হবে।

এছাড়া শিক্ষার্থী নিহত ও আহতের ঘটনায় আজ বৃহস্পতিবার (১৮ আগস্ট) বিশ্ববিদ্যালয়ে শোক ঘোষণা করা হয়েছে। একই সাথে এদিন সকল ক্লাস-পরীক্ষাও বন্ধ রয়েছে। 

বৃহস্পতিবার (১৮ আগস্ট) বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র বিষয়ক পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. নাজমুস সাদাত এ তথ্য জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, ‘‘খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান ডিসিপ্লিনের শিক্ষার্থীদের সেশনাল ট্যুরের সময় রাঙামাটির সাজেক যাওয়ার পথে গাড়ি দুর্ঘটনার শিকার হয়। এতে পদার্থবিজ্ঞান ডিসিপ্লিনের শিক্ষার্থী মোছা. রুবিনা আফসানা রিংকী নিহত হন। দুর্ঘটনায় নিহত রুবিনা আফসানা রিংকির মরদেহ বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে তাদের বাড়ি গাইবান্ধায় নেওয়া হবে। এই দুর্ঘটনায় আরো কয়েকজন শিক্ষার্থী ও শিক্ষক আহত হয়েছেন। আহতদেরকে দ্রুত চিকিৎসার জন্য খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। উন্নত চিকিৎসার জন্য তিনজনকে চট্টগ্রামে স্থানান্তর করা হচ্ছে ।”

তিনি বলেন, “এই শোকাবহ ঘটনায় খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার গভীরভাবে মর্মাহত। আজ বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয়ে শোক ঘোষণা করা হয়েছে, সকল ক্লাস পরীক্ষা বন্ধ রাখা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে খাগড়াছড়ি এবং বান্দরবানের সিভিল প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের সাথে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। ছাত্রদের সঙ্গে শিক্ষকবৃন্দ উপস্থিত আছেন। তিনি নিজে এবং সহকারী পরিচালকসহ কর্মকর্তারা খাগড়াছড়ি রওনা হয়েছেন।”

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের মসজিদসহ সকল উপাসনালয়ে নিহত শিক্ষার্থীর আত্মার মাগফিরাত এবং আহতদের সুস্থতার জন্য বিশেষ দোয়া ও প্রার্থনা করার জন্য সকলের প্রতি অনুরোধ করেন তিনি। 

এদিকে, সাজেকে শিক্ষার্থী নিহত ও আহতের ঘটনায় খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সব ধরনের সেশনাল ট্যুর অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করেছে কর্তৃপক্ষ। বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-রেজিস্ট্রার কাকলি রহমান স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, পদার্থবিজ্ঞান ডিসিপ্লিনের ২০২৩-২০২৪ শিক্ষাবর্ষ ৪র্থ বর্ষ টার্ম-২ এর সেশনাল ট্যুরে অংশগ্রহণরত অবস্থায় সড়ক দুর্ঘটনায় একজন শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে। এ সময়ে আরো কয়েকজন শিক্ষার্থী গুরুতর আহত হয়ে চিকিৎসাধীন আছেন। শিক্ষার্থীর এই অকাল মৃত্যুতে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার গভীরভাবে শোকাহত এবং আহতদের দ্রুত চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।

এ পরিপ্রেক্ষিতে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত সকল দূরপাল্লার সেশনাল ট্যুর স্থগিত করার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সকলকে অনুরোধ করেছে কর্তৃপক্ষ।

উল্লেখ্য, রাঙামাটির বাঘাইছড়ির সাজেক পর্যটনকেন্দ্রে যাওয়ার পথে চান্দের গাড়ি পাহাড়ের খাদে পড়ে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী নিহত হন। এসময় আহত হয়েছেন আরো ১১ জন। বুধবার দুপুর ১২টার দিকে সাজেকের হাউসপাড়া এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। 

নিহত রুবিনা আফসানা রিংকী খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন। আহতরা সবাই একই বিভাগের শিক্ষার্থী।

ঢাকা/নুরুজ্জামান/এস

সম্পর্কিত নিবন্ধ