ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি) প্রশাসনের সঙ্গে পাবলিক পরিবহন সমিতির এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে ক্যাম্পাস থেকে কুষ্টিয়া ও ঝিনাইদহ পর্যন্ত বাস ভাড়া ২০ টাকা নির্ধারণসহ ছয় সিদ্ধান্ত  নেওয়া হয়েছে।

মঙ্গলবার (২১ জানুয়ারি) বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহীনুজ্জামান স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, গত বৃহস্পতিবার (১৬ জানুয়ারি) বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অফিসে গত বুধবার (১৫ জানুয়ারি) পাবলিক পরিবহনের সঙ্গে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার প্রেক্ষিতে বসা হয়। ইবি প্রশাসনের সঙ্গে এ সভায় কুষ্টিয়া জেলা বাস-মিনিবাস মালিক গ্রুপ, কুষ্টিয়া জেলা বাস-মিনিবাস মালিক সমিতি, ঝিনাইদহ বাস-মিনিবাস মালিক গ্রুপ, ঝিনাইদহ জেলা বাস-মিনিবাস মালিক সমিতি, কুষ্টিয়া জেলা মটর মালিক শ্রমিক ইউনিয়নের প্রতিনিধিবৃন্দ, ঝিনাইদহ জেলা মটর ইউনিয়নের প্রতিনিধিবৃন্দ, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধি ও পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।

ওই সভায় বেশ কয়েকটি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এসব সিদ্ধান্তগুলোর মধ্যে রয়েছে- ক্যাম্পাস থেকে কুষ্টিয়া ও ঝিনাইদহ বাস ভাড়া ২০ টাকা; অভিযুক্ত ড্রাইভার, সুপারভাইজার দোষ স্বীকার করে ক্ষমা প্রার্থনা, তদন্ত করে দোষী ব্যক্তিদের শাস্তি নিশ্চিতের ব্যবস্থা; সংঘটিত ঘটনায় গাড়ির চালক, সুপারভাইজার, ও সহকারীদের সাময়িকভাবে চাকরিচ্যুত এবং বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সম্মতি সাপেক্ষে তারা চাকরিতে যোগদান করতে পারবে। 

এছাড়া কোন শিক্ষার্থী যেকোন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার সম্মুখীন হলে প্রথমে সরবরাহকৃত নাম্বারে যোগাযোগ করতে হবে, তারা ব্যর্থ হলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে। কোনভাবেই আইন নিজ হাতে তুলে নেওয়া যাবে না। ১৫ জানুয়ারি সংঘটিত ঘটনার আহত শিক্ষার্থীকে আর্থিক ক্ষতিপূরণ বাবদ দশ হাজার টাকা প্রদান করা হবে।

গত বুধবার (১৫ জানুয়ারি) গড়াই পরিবহনের চালক ও তার সহকারী এবং শ্রমিক ইউনিয়নের লোকজনের বিরুদ্ধে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) এক শিক্ষার্থীকে মারধর করার অভিযোগ উঠে। এ ঘটনায় গড়াই ও রূপসা পরিবহনের ছয়টি বাস আটকে রাখেন শিক্ষার্থীরা। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডির সঙ্গে আলোচনায় বসে সমাধানের আশ্বাস দিলে আটক বাসগুলো ছেড়ে দেন শিক্ষার্থীরা।

এ ঘটনায় ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী হলেন, পরিসংখ্যান বিভাগের ২০১৯-২০ বর্ষের আসিফ মাহমুদ।

ঢাকা/তানিম/মেহেদী

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ঝ ন ইদহ ত ঘটন

এছাড়াও পড়ুন:

এই সরকারও আমলাতন্ত্রের চাপে!

চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থান নতুন যে জন-আকাঙ্ক্ষা তৈরি করেছে, সেখানে নিশ্চিত করেই জনপ্রশাসন সংস্কারের প্রশ্নটি নাগরিকদের কেন্দ্রীয় একটি চাহিদা। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার যেভাবে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের মতোই পদ ছাড়া পদোন্নতি দিচ্ছে, তাতে উদ্বিগ্ন না হওয়ার কোনো কারণ নেই। কেননা, আগের সরকার কর্তৃত্ববাদী ও স্বৈরাচারী হয়ে উঠেছিল যে কয়টা স্তম্ভের ওপর দাঁড়িয়ে, তার অন্যতম আমলাতন্ত্র।

জনপ্রশাসনকে রাজনীতিকরণের বৃত্ত ভেঙে জনবান্ধব করার একটা বড় সুযোগ এনে দিয়েছিল অভ্যুত্থান। কিন্তু শুরু থেকেই অন্তর্বর্তী সরকার আমলাতন্ত্রের ওপর অতিনির্ভরশীল হয়ে ওঠায় সেই সুযোগ অনেকটাই হাতছাড়া হয়েছে। সরকারি কর্মকর্তাদের বিরোধিতার কারণে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের বড় কোনো সুপারিশ বাস্তবায়ন করতে পারেনি সরকার। অন্যদিকে বেতন বাড়াতে গঠন করা হয়েছে বেতন কমিশন। কিছু মুখকে সরিয়ে দেওয়া ছাড়া জনপ্রশাসনে সেই পুরোনো চর্চা অব্যাহত রয়েছে। বিশেষ করে পদ ছাড়া পদায়নের ক্ষেত্রে জনপ্রশাসনে যেভাবে আগের সরকারের চর্চার ধারাবাহিকতা বজায় রাখা হয়েছে, সেটা যারপরনাই দুঃখজনক।

প্রথম আলোর খবর জানাচ্ছে, উপসচিব স্তরে যেখানে আগে থেকেই পদের চেয়ে ৬০০ কর্মকর্তা বেশি রয়েছেন, সেখানে আগস্ট মাসে নতুন করে ২৬৮ জনকে এই পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। অতিরিক্ত সচিব পদেও পদোন্নতির আলোচনা শুরু হয়েছে। রাজনৈতিক সরকারের আমলে জনপ্রশাসনে হরেদরে পদোন্নতি দেওয়ার অনেক নজির আছে। এর কারণ একটাই, আমলাতন্ত্রকে তুষ্ট রাখা। অন্তর্বর্তী সরকার এই চর্চায় ছেদ ঘটাতে পারবে, সেটাই সবাই প্রত্যাশা করেছিল।

পরিহাসের বিষয় হচ্ছে, জনপ্রশাসনে পদ ছাড়া পদোন্নতি দেওয়ার পর বেশির ভাগ কর্মকর্তাকে আগের জায়গাতেই রেখে দেওয়া হয়। এর মানে হচ্ছে তাঁরা আগের দায়িত্বই পালন করেন, কিন্তু মাঝখান থেকে বেতন-ভাতা বাড়ে। উপসচিব পর্যায়ের কর্মকর্তারা তিন বছর চাকরি পাওয়ার পর বিনা সুদে গাড়ি কেনার জন্য ঋণসুবিধা পান। অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে অবসরে যাওয়া সরকারি কর্মকর্তাদের যেভাবে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে, তার দৃষ্টান্তও খুব বেশি নেই। অবসরে যাওয়া প্রশাসন ক্যাডারের ‘বঞ্চিত’ ৭৬৪ জন কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে ও অন্য ক্যাডারের ‘বঞ্চিত’ ৭৮ জন অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে ভূতাপেক্ষ পদোন্নতির সুপারিশ করা হয়েছে।

জনপ্রশাসনের মেধাবী ও যোগ্য কর্মকর্তারা পদোন্নতি পেয়ে পরের ধাপে যাবেন, সেটা স্বাভাবিক বিষয়। কিন্তু পদ না থাকার পরও কেন পদায়ন করা হবে? এ ক্ষেত্রে সরকারকে পর্যালোচনা করে দেখা প্রয়োজন, জনপ্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে পদ বাড়ানো যায় কি না। আবার যেখানে এমনিতেই পদের বিপরীতে নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সংখ্যা বেশি, সেখানে অবসরে যাওয়া কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেওয়া কতটা যৌক্তিক?

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ও জনপ্রশাসনবিশেষজ্ঞ সালাউদ্দিন এম আমিনুজ্জামান বলেছেন, জনপ্রশাসনে পদ ছাড়া পদোন্নতি দেওয়া যায় না। তবে বিশেষ ক্ষেত্রে মেধাবীদের পদোন্নতি দেওয়ার সুযোগ রয়েছে। এরপরও কেন এমন পদোন্নতি—সেই ব্যাখ্যায় তিনি বলেছেন, সরকার সম্ভবত আমলাতন্ত্রের চাপে রয়েছে। এই ধারণা শুধু তাঁর একার নয়, নাগরিক পরিসরের
বিস্তৃত একটি ধারণাও। অন্তর্বর্তী সরকারকে অবশ্যই এর পরিষ্কার ব্যাখ্যা হাজির করা উচিত।

মাথাভারী আমলাতন্ত্র সরকারি সেবা নাগরিকের কাছে ঠিকভাবে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে বড় একটা বাধা। অন্যদিকে সরকারকে এখানে বিশাল ব্যয়ের বোঝা বহন করতে হয়। ফলে মাঠ প্রশাসন থেকে শুরু করে সিনিয়র সচিব পর্যন্ত একটি সামঞ্জস্যপূর্ণ ও গতিশীল জনপ্রশাসনই সবাই প্রত্যাশা করে। জনপ্রশাসনের সব স্তরে পদোন্নতি রাজনৈতিক বিবেচনায় নয়, মেধার ভিত্তিতেই হতে হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ