বিশ্বকাপের দ্বারপ্রান্তে বাংলাদেশ: ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়ে দারুণ জয়
Published: 22nd, January 2025 GMT
ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতেও দুইশোর নিচে রান ডিফেন্ড করতে গিয়ে রীতিমত উড়ে গিয়েছিল বাংলাদেশ নারী দল। দ্বিতীয় ওয়ান্ডেতেও পুঁজি যখন দুইশোর নিচে এল, তখন মনে হচ্ছিল সিরিজ হারটা সময়ের ব্যাপার হয়তো। তবে বাঘিনীদের বোলিং থাবা থেকে এবার আর বাঁচতে পারেননি ক্যারিবিয়ান মেয়েরা। বুধবার বাংলাদেশ সময় ভোরে (২২ জানুয়ারি, ২০২৫) দলীয় বোলিং প্রচেষ্টায় সেন্ট কিটসে দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ৬০ রানে হারিয়েছে নিগার সুলতানা জ্যোতির দল। বাংলাদেশের মেয়েদের ঐতিহাসিক এই জয়ের ফলে সিরিজে এসেছে ১-১ সমতা।
টস হেরে আগে ব্যাট করতে নেমে জ্যোতির ১২০ বলে ৬৮ রানে ভর করে বাংলাদেশের মেয়েরা পায় ১৮৪ রানের পুঁজি। জবাবে মারুফা আক্তার এবং নাহিদা আক্তার, রাবেয়া খান, ফাহিমা খাতুনদের সম্মিলিত বোলিং ঝলকে মাত্র ১২৪ রানে থেমে যায় স্বাগতিক দল। নারীদের ক্রিকেটে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে এটি বাংলাদেশের প্রথম কোন জয়।
১৮৫ রানের লক্ষ্যে নামা ওয়েস্ট ইন্ডিজকে তৃতীয় ওভারে প্রথম আঘাত দেন মারুফা। কিয়ানা জোসেফকে উইকেটের পেছনে ক্যাচ বানান তিনি। বিপদজনক হেইলি ম্যাথিউস থামেন নবম ওভারে। ১৬ করা ব্যাটারকে থামান নাহিদা। খানিক পর দান্দেন্দ্র ডটিনকেও তুলে নেন মারুফা।
আরো পড়ুন:
বিশ্বকাপে রেকর্ড সেঞ্চুরিতে ফের এক নম্বরে হিলি
বিশ্বকাপের সেরা একাদশে বাংলাদেশের সালমা খাতুন
শেমাইন ক্যাম্পবেল আশা বাঁচিয়ে রেখেছিলেন দলের। ২৮ রান করা কিপার ব্যাটারকে বোল্ড করে দেন নাহিদা। মান্ডি মানগ্রুকেও নাহিদা শিকার বানালে ৭০ রানে পড়ে যায় ৬ উইকেট। বাকিরাও উইকেট নেওয়া শুরু করলে আর ম্যাচে থাকেনি ক্যারিবিয়ানরা।
বাঁহাতি স্পিনার নাহিদা ৩৫ রানে ৩ উইকেট নিয়ে দলের সফলতম বোলার। লেগ স্পিনার ফাহিমা খাতুন ১৭ রানে ২ ও রাবেয়া খান ১৯ রানে নেন ২ উইকেট। পেসার মারুফা ৩৫ রানে ২ উইকেট তুলে বেঁধে দেন সুর।
প্রথমে ব্যাটিংয়ে নেমে বাংলাদেশও বিপর্যয়ে পড়েছিল। ৫৬ রানে হারিয়ে বসে ৩ উইকেট। এরপর সোবহানা মুশতারিকে নিয়ে জুটি গড়েন জ্যোতি। দুজনের ৫১ রানের জুটিতে ঘুরে দাঁড়ানোর কিছুটা পথ মিলে যায়। মুশতারির পর ফাহিমা খাতুন দ্রুত ফিরে গেলে স্বর্ণা আক্তারকে নিয়ে এগুতে থাকেন জ্যোতি। তিনিই পুরো ইনিংসে টেনে নেন দলকে। স্বর্ণা ২১ করে আউট হয়ে গেলে দলকে লড়াইয়ের পুঁজি এনে দিতে দৃঢ়তা দেখান জ্যোতি। ৪৯তম ওভারে থামার আগে ৭ চারে ৬৮ করে বাংলাদেশের অধিনায়ক। তিনি আউট হওয়ার পর আর কোন রান যোগ হয়নি, তবে তাতেই মিলে যায় জয়ের ভিত।
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর উইক ট প রথম
এছাড়াও পড়ুন:
পঞ্চদশ সংশোধনী সম্পূর্ণ বাতিল চেয়ে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল
তত্ত্বাবধায়ক সরকার ও গণভোট ফিরিয়ে এনে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী সংক্রান্ত যে রায় হাইকোর্ট দিয়েছিলেন, তার বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল (আপিল করার অনুমতি চেয়ে আবেদন) করেছেন সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদারসহ চারজন। তাঁদের আইনজীবী শরীফ ভূঁইয়া বলেছেন, পঞ্চদশ সংশোধনী সম্পূর্ণ বাতিল চেয়ে এই আবেদন করা হয়েছে।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বিলোপসহ বেশ কিছু বিষয়ে পরিবর্তন এনে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী এনেছিল আওয়ামী লীগ সরকার। ২০১১ সালের ৩০ জুন পঞ্চদশ সংশোধনী আইন জাতীয় সংসদে পাস হয়। ওই সংশোধনীতে সংবিধানে ৫৪টি ক্ষেত্রে পরিবর্তন এসেছিল। বিলোপ হয়েছিল তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থাও।
জুলাই অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর পঞ্চদশ সংশোধনীর বৈধতা নিয়ে রিট আবেদন হলে গত বছরের ১৭ ডিসেম্বর হাইকোর্ট রায় দেন। তাতে তত্ত্বাবধায়ক সরকার এবং গণভোট বাদ দেওয়া সংক্রান্ত সেই সংবিধান আইনের ২০ ও ২১ ধারা বাতিল ঘোষণা করা হয়। ওই দুটিসহ পঞ্চদশ সংশোধনী আইনের মাধ্যমে সংবিধানে যুক্ত ৭ক, ৭খ, ৪৪ (২) অনুচ্ছেদ সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ও বাতিলও ঘোষণা করেন আদালত।
চলতি বছরের ৮ জুলাই ১৩৯ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়। ওই রায়ের বিরুদ্ধেই সুজন সম্পাদকসহ চার বিশিষ্ট ব্যক্তি লিভ টু আপিল দায়ের করলেন। অন্য তিন ব্যক্তি হলেন এম হাফিজ উদ্দিন খান, জোবাইরুল হক ভূঁইয়া ও জাহরা রহমান।
আপিলের কারণ ব্যাখ্যা করে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ড. শরীফ ভূঁইয়া আজ সোমবার প্রথম আলোকে বলেন, পঞ্চদশ সংশোধনীর অংশবিশেষ অসাংবিধানিক ঘোষণা করে বাতিল করেছেন হাইকোর্ট। পুরো সংশোধনীর বাতিল চাওয়া হয়েছিল, কিন্তু পুরোটা বাতিল করেননি। হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল দায়ের করার জন্য অনুমতি প্রার্থনা করে আবেদন করা হয়েছে। ‘যথাসময়ে’ এর শুনানি হবে।
শরীফ ভূঁইয়া বলেন, ‘তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা সংক্রান্ত পঞ্চদশ সংশোধনী আইনের ২০ ও ২১ ধারা বাতিল করা হয়েছে। তবে তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা সম্পূর্ণভাবে ফিরিয়ে আনতে পঞ্চদশ সংশোধনী আইনের আরও কিছু ধারা বাতিল করা প্রয়োজন ছিল। হাইকোর্ট রায়ে সেসব ধারা বাতিল করেননি। ফলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা সম্পর্কিত ত্রয়োদশ সংশোধনীর সবগুলো বিধান সংবিধানে ফিরে আসেনি। পঞ্চদশ সংশোধনী আইন পাস করার ক্ষেত্রে পদ্ধতিগত ত্রুটি ছিল। ত্রুটিগুলোর বিষয়ে আদালতও বলেছেন। তারপরে হাইকোর্ট পঞ্চদশ সংশোধনী সম্পূর্ণ বাতিল না করে আংশিক বাতিল করেছেন। এতে করে সংবিধানে সংশোধনীর ব্যাপারে পদ্ধতিগত যে সুরক্ষা আছে, তা অকার্যকর হয়েছে। এসব কারণে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল দায়ের করা হয়েছে।’
পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিলের পাশাপাশি অবৈধ ক্ষমতা দখল করলে সর্বোচ্চ শাস্তির বিধান সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করা এবং সংরক্ষিত নারী আসন ৫০-এ উন্নীত করা হয়। জাতির পিতা হিসেবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। সংবিধানে জাতীয় চার মূলনীতি—জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা ফিরিয়ে আনা হয়। সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করা হয় বঙ্গবন্ধুর ১৯৭১ সালের সাতই মার্চের ভাষণ, ছাব্বিশে মার্চের স্বাধীনতার ঘোষণা ও স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র।
একই সঙ্গে অসাংবিধানিকভাবে রাষ্ট্রক্ষমতা দখলকে রাষ্ট্রদ্রোহ অপরাধ বিবেচনায় নিয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে রাষ্ট্রদ্রোহের অপরাধে দোষী করে সর্বোচ্চ শাস্তির বিধান যুক্ত করা হয়। আগে মেয়াদ শেষ হওয়ার পরবর্তী ৯০ দিনে নির্বাচন করার বিধান ছিল। পঞ্চদশ সংশোধনীতে পূর্ববর্তী ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করার বিষয়টি সংযোজন করা হয়।
পঞ্চদশ সংশোধনীর পুরো আইন ও আইনের কয়েকটি ধারার বৈধতা নিয়ে গত বছর হাইকোর্টে আলাদা দুটি রিট আবেদন হয়। সুজন সম্পাদকসহ পাঁচ ব্যক্তি একটি এবং আরেকজন ব্যক্তি আরেকটি রিট আবেদন করেন। চূড়ান্ত শুনানি শেষে গত বছরের ১৭ ডিসেম্বর হাইকোর্ট রায় দেন।
রায়ে বলা হয়েছিল, পঞ্চদশ সংশোধনী আইনের ২০ ও ২১ ধারা দুটি সংবিধানের মৌলিক কাঠামোকে ধ্বংস করেছে। এই দুটিসহ আইনের ৪৭ ধারা, ৭ক ও ৭খ সন্নিবেশিত করা সংক্রান্ত আইনের ৭ ধারা এবং ৪৪(২) অনুচ্ছেদ সন্নিবেশিত করা সংক্রান্ত আইনের ১৮ ধারা সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
রায়ে গণভোটের বিধান সংক্রান্ত ১৪২ অনুচ্ছেদ (দ্বাদশ সংশোধনী আইনের মাধ্যমে আনা) পুনর্বহাল করা হয়েছিল। পঞ্চদশ সংশোধনী আইন সম্পূর্ণ বাতিল না করে বাকি বিধানগুলোর বিষয়ে আইন অনুসারে পরবর্তী সংসদ সিদ্ধান্ত নিতে পারে বলে রায়ে উল্লেখ করা হয়।