বেনফিকা ৪-৫ বার্সালোনা! চোখ কপালে উঠার মতই একটা স্কোরলাইন। চ্যাম্পিয়নস লিগের ইতিহাসে এমন স্কোরলাইন যে এবারই প্রথম। মঙ্গলবার দিবাগত রাতে (২১ জানুয়ারি, ২০২৫) একবার নয়, দুইবার ‘দুই’ গোলে পিছিয়ে পড়েও শেষমুহূর্তের নাটকীয়তায় বেনফিকাকে তাদেরই মাঠে ৪-৫ ব্যবধানে হারিয়েছে হান্সি ফ্লিকের বার্সালোনা। এই জয়ের ফলে চ্যাম্পিয়নস লিগে নিশ্চিত হলো কাতালান ক্লাবটির শেষ ষোলো।

স্টাদিও দা স্পোর্টিং লিসবনে ৯ গোলের থ্রিলার মাঠেই শেষ হয়নি, এর রেষ চলে গিয়েছিল খেলোয়াড়দের টানেল পর্যন্ত! যোগকরা সময়ে (৯৬ মিনিটে) গোল করা বার্সার জয়ের নায়ক রাফিনহা দাবি করেছেন বেনফিকার ফুটবলারদের সাথে তার হাতাহাতি হয়েছে ম্যাচ শেষে!

ম্যাচের প্রথমার্ধেই বেনফিকার হয়ে হ্যাটট্রিক করেন ভাঙ্গেলিস পাভলিদিস। মাত্র ৩০ মিনিটেই তিন গোল করে বার্সাকে স্তব্ধ করে দেন এই গ্রীক স্ট্রাইকার। চ্যাম্পিয়নস লিগ ইতিহাসে ম্যাচের শুরু থেকে হিসাব করলে এটি তৃতীয় দ্রুততম হ্যাটট্রিক। ২০২২ সালে সালজ্‌বুর্গের বিপক্ষে রবার্ট লেভানডফস্কির ২৩ মিনিটের মধ্যে হ্যাটট্রিকটাই দ্রুততম।

আরো পড়ুন:

কোয়ার্টার ফাইনালে লিগানেসকে পেল রিয়াল, ভ্যালেন্সিয়াকে বার্সা

তলানির দলের কাছে পয়েন্ট হারালো বার্সা

৩-০ ব্যবধানে পিছিয়ে পড়া বার্সার হয়ে বিরতির আগে পেনাল্টি থেকে একটি গোল শোধ করেন পোলিশ সুপারস্টার লেভানডফস্কি। ম্যাচের ৬৪ মিনিটে রাফিনহা গোলের ব্যবধান কমিয়ে এনে স্কোরলাইন করেন ৩-২। এরপর ৪ মিনিটের মাথায় আত্মঘাতী গোলের সুযোগে ব্যবধান বাড়িয়ে নেয় বেনফিকা। ভুলে নিজেদের জালে বল জড়িয়ে দেন বার্সার রোনাল্ড আরাওহো।

ম্যাচ শেষ হওয়ার ১৫ মিনিট আগে পর্যন্ত ৪-২ গোলে এগিয়ে ছিল স্বাগতিক ক্লাবটি। তবে ম্যাচের ৭৮ মিনিটে আবারও পেনাল্টিতে গোল পান লেভানডফস্কি। বদলি তারকা এরিক গার্সিয়ার দুর্দান্ত হেডে ম্যাচের ৮৬ মিনিটে ৪-৪ সমতায় ফেরে কাতালানরা।

নাটক বাকি আছে তখনও। রেফারি শেষ বাঁশি বাজানোর ঠিক আগমুহূর্তে রাফিনহা জয়সূচক গোলটি করে। এই ব্রাজিলিয়ান উইঙ্গারের দ্বিতীয় গোলে পূর্ণ ৩ পয়েন্ট নিয়ে ঘরে ফেরে সফরকারীরা।

তবে মাঠের উত্তাপ সেখানেই যে শেষ হয়নি তার প্রমাণ মিলল জয়ের নায়ক রাফিনহার কথায়, “যখন আমি মাঠ ছেড়ে যাচ্ছিলাম, বেনফিকা খেলোয়াড়রা আমাকে অপমান করছিল। আমি তাদের অপমানের জবাব দিয়েছি। আমি জানি, আমাকে সেটা করা উচিত ছিল না। বেনফিকা খেলোয়াড়দের সাথে বিষয়টি বেশ উত্তপ্ত হয়ে গিয়েছিল। তারা আমাকে অপমান করতে চেয়েছিল।”

বার্সা কোচ অবশ্য এসব ঝামেলায় না গিয়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়লেন। ফ্লিক তার দলের খেলোয়াড়দের প্রশংসা করে বলেন, “পাগলাটে ম্যাচ হল একটা। বেনফিকা প্রথমার্ধে ভাল খেলেছে। আমরা অনেক ভুল করেছি। তবে আমি দলের (বার্সালোনা) মানসিকতার প্রশংসা করব। ওরা সব সময়ে নিজেদের উপরে বিশ্বাস রাখে। অবিশ্বাস্য ভাবে ম্যাচে ফিরে এল।”

৩৬ দলের অংশগ্রহণে রাউন্ড রবিন পদ্ধতিতে হওয়া গ্রুপ পর্বে সেরা ৮ দল সরাসরি যাবে শেষ ষোলোতে। বার্সা সেই সেরা ৮ দলের মধ্যে অন্যতম হিসেবে গ্রুপপর্ব শেষ করলো। যদিও সাত ম্যাচ খেলে প্রতিটি জেতা লিভারপুল ২১ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে। দ্বিতীয় স্থানে বার্সা। সাত ম্যাচে তাদের পয়েন্ট ১৮। তৃতীয় স্থানে থাকা আতলেতিকো মাদ্রিদের পয়েন্ট ১৫।

ঢাকা/নাভিদ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ফ টবল চ য ম প য়নস ল গ চ য ম প য়নস ল গ ব যবধ ন

এছাড়াও পড়ুন:

অনশনের পর ডিবি কার্যালয় থেকে ছাড়া পেলেন ছয় সমন্বয়ক

নিরাপত্তার অজুহাতে গোয়েন্দা (ডিবি) কার্যালয়ে আটকে রাখা হয়েছিল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সম্মুখসারির ছয়জন সমন্বয়ককে। আটক থাকার এক পর্যায়ে তাঁরা অনশন শুরু করেন। ৩২ ঘণ্টা অনশনের পর ১ আগস্ট (২০২৪ সাল) দুপুরে ছয় সমন্বয়ককে ডিবি কার্যালয় থেকে কালো রঙের দুটি গাড়িতে করে যাঁর যাঁর ঠিকানায় পৌঁছে দেওয়া হয়।

সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম, আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া ও আবু বাকের মজুমদারকে ছয় দিন; সারজিস আলম ও হাসনাত আবদুল্লাহকে পাঁচ দিন এবং নুসরাত তাবাসসুমকে চার দিন ডিবি কার্যালয়ে তখন আটক রাখা হয়েছিল। এই ছয় সমন্বয়কের মধ্যে নাহিদ এখন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক। আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া বর্তমানে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা। সারজিস, হাসনাত ও নুসরাত এনসিপির গুরুত্বপূর্ণ নেতা। আবু বাকের এখন গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের আহ্বায়ক।

ডিবি কার্যালয় থেকে ছাড়া পাওয়ার সেই ঘটনা সম্পর্কে সমন্বয়ক আবু বাকের মজুমদার গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি আমার বোনের বাসার লোকেশন (ঠিকানা) দিয়েছিলাম ডিবিকে। ১ আগস্ট (২০২৪ সাল) ডিবি তাদের তত্ত্বাবধানেই আমাদের ছয়জনকে যার যার গন্তব্যে পৌঁছে দেয়। বোনের বাসায় পৌঁছানোর কিছুক্ষণ পর আমি প্রথমে আসিফ ভাইয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করে মানিকনগরের একটা জায়গায় দেখা করি। আমরা পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করি। কীভাবে এক দফার (সরকার পতনের) ঘোষণায় যাওয়া যায়, সে বিষয়েও সেদিন আমরা চিন্তা করি।’

সেদিন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে নিহত ব্যক্তিদের স্মরণ ও হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবিতে ‘রিমেম্বারিং আওয়ার হিরোজ’ কর্মসূচি পালিত হয়। এ কর্মসূচির আওতায় গণসংগীত, পথনাটক, দেয়াললিখন, স্মৃতিচারণা ও বিক্ষোভ সমাবেশ হয় রাজধানী ঢাকাসহ অন্তত ১৬টি জেলা ও মহানগরে। এসব কর্মসূচিতে শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি কিছু জায়গায় শিক্ষক ও আইনজীবীরা অংশ নেন। তবে কোথাও কোথাও কর্মসূচিতে বাধা দেয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। কোথাও কোথাও পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। অনেক জায়গায় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের আটক করা হয়।

প্রতিবাদ, বিক্ষোভ

সেদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের সাতটি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকদের উদ্যোগে পৃথক সমাবেশ-মানববন্ধন ও মিছিল করা হয়। পাশাপাশি সেদিন দেশের বিভিন্ন স্থানে সড়ক ও মহাসড়ক অবরোধ করে ছাত্র-জনতা।

‘কোটা সংস্কার আন্দোলনে সরকারের কঠোর দমনপ্রক্রিয়া ও গুলিতে ছাত্র-জনতা হত্যা’র প্রতিবাদে ১ আগস্ট বেলা ১১টায় মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে জাতীয় সংসদের সামনে সমাবেশের কর্মসূচি ছিল শিল্পী ও কলাকুশলীদের। ‘দৃশ্যমাধ্যম শিল্পীসমাজ’-এর ব্যানারে তাঁরা প্রথমে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ–সংলগ্ন ইন্দিরা রোডের প্রান্তে সমবেত হন। সেদিন সকাল থেকেই প্রবল বৃষ্টি হচ্ছিল। বৃষ্টি উপেক্ষা করে শিল্পীরা ব্যানার-পোস্টার নিয়ে স্লোগান দিতে দিতে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউর দিকে এগিয়ে যেতে থাকলে পুলিশের বাধার মুখে পড়েন।

পরে শিল্পীরা ইন্দিরা রোড দিয়ে শোভাযাত্রা করে ফার্মগেটে আনন্দ সিনেমা হলের কাছে সমবেত হন। প্রবল বৃষ্টির মধ্যেই তাঁরা সেখানে সড়কের পাশে ব্যানার-পোস্টার নিয়ে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে স্লোগান দিতে থাকেন। শিল্পী, নির্মাতা ও কলাকুশলীরা ছাত্র-জনতার হত্যার প্রতিবাদ জানিয়ে বক্তব্য দেন। তাঁরা বলেন, যে বর্বর পন্থায় শিক্ষার্থীদের ন্যায়সংগত আন্দোলনকে দমন করা হচ্ছে, তা কোনো গণতান্ত্রিক সভ্য সমাজে ঘটতে পারে না।

দৃশ্যমাধ্যমের শিল্পীদের সমাবেশ থেকে সেদিন শিক্ষার্থীদের ৯ দফা দাবির প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানানো হয়। একই সঙ্গে হত্যাকাণ্ডের বিচার, গণগ্রেপ্তার, মামলা ও হয়রানি বন্ধের দাবি করা হয়। সমাবেশ থেকে আরও জানানো হয়, শিল্পীরা তাঁদের প্রতিবাদ কর্মসূচি অব্যাহত রাখবেন।

সেদিন বিকেলে ঢাকায় ডিবি কার্যালয়ের সামনে ‘বিক্ষুব্ধ নাগরিক সমাজ’–এর ব্যানারে মানববন্ধন করেন নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা। মানববন্ধনে অর্থনীতিবিদ দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেছিলেন, গুলি করে শিশুসহ নির্বিচার মানুষ হত্যার তদন্ত জাতিসংঘের অধীনে করতে হবে।

সেই মানববন্ধনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আসিফ নজরুল (এখন অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা) বলেন, হত্যার বিচার করতে হবে। হুকুমদাতাদেরও বিচার করতে হবে।

কূটনীতিকদের ‘ব্রিফ’

জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরকে রাজনৈতিক দল ও সংগঠন হিসেবে নিষিদ্ধ করে ১ আগস্ট বিকেলে প্রজ্ঞাপন জারি করেছিল তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার। সেদিন বিকেলে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় তৎকালীন সরকারের পক্ষ থেকে জাতিসংঘ ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধিসহ বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকদের ব্রিফ করা হয়। সেই ব্রিফিংয়ে বিদেশি কূটনীতিকেরা সহিংসতায় হতাহতের ঘটনা ও সম্পদের ক্ষয়ক্ষতির বিশ্বাসযোগ্য তদন্তের দাবি জানান।

সম্পর্কিত নিবন্ধ