যুক্তরাষ্ট্রে জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব পাওয়ার সুযোগ বাতিল করে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দেওয়া নির্বাহী আদেশকে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছে ডেমোক্র্যাট অধ্যুষিত ২২টি অঙ্গরাজ্য ও ২টি শহর। এছাড়া আইনি লড়াইয়ে শরিক হয়েছে বিভিন্ন নাগরিক অধিকার সংগঠন।

মঙ্গলবার (২১ জানুয়ারি) ট্রাম্পের সিদ্ধান্তকে আইনি উপায়ে মোকাবিলা করতে আদালতে একাধিক মামলা দায়ের করা হয়। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।

ম্যাসাচুসেটস অঙ্গরাজ্যের অ্যাটর্নি জেনারেল আন্দ্রেয়া জয় ক্যাম্পবেল এক বিবৃতিতে বলেছেন, অভিবাসনের ওপর ট্রাম্পের কঠোরতা হ্রাস করতে এসব মামলা করা হয়েছে। তার আদেশ বাস্তবায়িত হলে আধুনিক মার্কিন ইতিহাসে প্রথমবার বছরে দেড় লাখ শিশু নাগরিকত্ব বঞ্চিত হবে।

আরো পড়ুন:

চীনা পণ্যের ওপর ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপের কথা ভাবছেন ট্রাম্প

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করে নিলেন ট্রাম্প

ক্যাম্পবেল বলেন, “কারও সাংবিধানিক অধিকার কেড়ে নেওয়ার অধিকার প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নেই।”

সোমবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেওয়ার পরপরই ডোনাল্ড ট্রাম্প একের পর এক নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেন। এর মধ্যে নাগরিকত্ব সংক্রান্ত আদেশে বলা হয়েছে, কোনো শিশুর বাবা বা মা কেউই যদি মার্কিন নাগরিক না হন বা আইনত স্থায়ী বাসিন্দা না হন, তবে ওই শিশুকে নাগরিকত্ব প্রদানে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নিষেধ করা হচ্ছে।

তার এই আদেশকে মার্কিন সংবিধানের লঙ্ঘন বলে বোস্টন ও সিয়াটলের ফেডারেল আদালতে দুটি মামলা দায়ের করেছে ওয়াশিংটন ডিসি, সিটি অব স্যান ফ্র্যানসিসকো এবং ডেমোক্র্যাট নেতৃত্বাধীন ২২টি অঙ্গরাজ্য।

এছাড়া, আমেরিকান সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়ন, অভিবাসী সংগঠন এবং একজন প্রসূতি মায়ের পক্ষ থেকেও পৃথক দুটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।

ক্যালিফোর্নিয়ার অ্যাটর্নি জেনারেল রব বন্টা এক বিবৃতিতে বলেছেন, “প্রেসিডেন্ট জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব বাতিল বিষয়ক যে নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেছেন, তা অশোভন, অমার্জিত এবং পুরোপুরি অসাংবিধানিক।”

যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের ১৪তম সংশোধনীর প্রথম বাক্যেই ‘জন্মসূত্রে নাগরিকত্বের’ নীতির বিষয়টি রয়েছে। যেখানে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রে জন্ম নেওয়া বা নাগরিক অধিকার পাওয়া সব ব্যক্তিই যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক।

আইনি বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, জন্মসূত্রে মার্কিন নাগরিকত্ব বাতিলের আদেশটি সংবিধানের ১৪তম সংশোধনীর দীর্ঘকালীন আইনি ব্যাখ্যার বিরোধিতা করেছে এবং আদালতে এটি টিকবে না। ইয়েল ল স্কুলের অধ্যাপক আখিল রিড আমর বলেছেন, “এই আদেশ এতটাই চরম ও অবাস্তব যে আদালত এটি বাতিল করবে।”

ট্রাম্পের সমর্থিত কিছু বিচারপতি এই বিষয়ে সহানুভূতিশীল হতে পারেন, তবে বেশিরভাগ বিশেষজ্ঞের মতে, আদালত এই ধরনের সাংবিধানিক পরিবর্তন প্রেসিডেন্টের একতরফা ক্ষমতার বাইরে বলে রায় দেবে।

জন্মসূত্রে মার্কিন নাগরিকত্ব নিয়ে নতুন নিয়ম ট্রাম্প কীভাবে কার্যকর করতে চান, তা এখনও স্পষ্ট নয়। ট্রাম্প যদি সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে এ অধিকার কেড়ে নিতে চান, তাহলে কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদ ও উচ্চকক্ষ সিনেটের দুই-তৃতীয়াংশ ভোট এবং যুক্তরাষ্ট্রের তিন-চতুর্থাংশ রাজ্যের অনুমোদনের প্রয়োজন হবে।

ঢাকা/ফিরোজ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর

এছাড়াও পড়ুন:

রাজশাহীতে প্রতি কেজি আলুর হিমাগারভাড়া কমল ৭৫ পয়সা

রাজশাহীতে হিমাগারে আলু সংরক্ষণে নতুন ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে। আজ সোমবার আলুচাষি, ব্যবসায়ী ও হিমাগারমালিকদের উপস্থিতিতে এ সিদ্ধান্ত হয়। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, হিমাগারে প্রতি কেজি আলু রাখার জন্য ভাড়া দিতে হবে ৫ টাকা ৫০ পয়সা। এর সঙ্গে যুক্ত হবে শ্রমিকের খরচ ৫০ পয়সা। সেই হিসাবে প্রতি কেজি আলুর হিমাগারভাড়া কমেছে ৭৫ পয়সা।

এর আগে গত মার্চে সরকার প্রতি কেজি আলু রাখার ভাড়া ৬ টাকা ৭৫ পয়সা নির্ধারণ করে প্রজ্ঞাপন জারি করে। এর পর থেকে এ নিয়ে রাজশাহীর আলুচাষি ও ব্যবসায়ীরা বাড়তি ভাড়ায় আপত্তি জানিয়ে আসছিলেন। এ নিয়ে কয়েক দফা তাঁরা রাজপথে আন্দোলনও করেছেন। অন্যদিকে হিমাগারমালিকদের দাবি ছিল, প্রতি কেজি আলুর ভাড়া ৮ টাকা করা হোক।

রাজশাহী কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশন এবং রাজশাহী জেলা আলুচাষি ও আলু ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, রাজশাহীতে হিমাগার থেকে বাড়তি ভাড়া না দিলে আলু ছাড়া হবে না। এর প্রতিবাদে ঈদের পর নতুন করে আলুচাষি ও ব্যবসায়ীরা আন্দোলন করে আসছেন। তাঁদের দাবি, আলু রাখার খরচ আগের বছরের মতো চার টাকা করতে হবে। এ নিয়ে সড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেন তাঁরা। হিমাগার মালিকপক্ষ এ নিয়ে আলোচনায় বসার তাগিদ দিয়ে আসছিল।

এরই মধ্যে আলুচাষিনেতারা ১৪ জুন সেনাবাহিনীর কাছে এ নিয়ে একটি অভিযোগ দেন। পরে বিষয়টি আমলে নিয়ে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে আজ দুপুরে সভা ডাকা হয়। সভায় সব পক্ষের সম্মতিতে সিদ্ধান্ত হয় যে এ বছর সরকার নির্ধারিত প্রতি কেজি আলুর হিমাগারভাড়া ৬ টাকা ৭৫ পয়সার বদলে ৫ টাকা ৫০ পয়সা ও শ্রমিক খরচ ৫০ পয়সা রাখা হবে। আর পেইড বুকিংয়ের ক্ষেত্রে শুধু শ্রমিক খরচ ৫০ পয়সা দিতে হবে আলু রাখা চাষি ও ব্যবসায়ীদের। পরে বিকেলে ক্যান্টনমেন্টে হওয়া এই সিদ্ধান্ত প্রশাসনিকভাবে পাস করার জন্য রাজশাহী জেলা প্রশাসকের দপ্তরে সভা হয়।

সভায় আলুচাষি ও ব্যবসায়ী সমবায় সমিতি, হিমাগার মালিক সমিতি, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক, কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের কর্মকর্তা, রাজশাহী চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি, পবা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, আগামীকাল মঙ্গলবার রাজশাহী চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির পক্ষ থেকে নতুন ভাড়ার বিজ্ঞপ্তি সব হিমাগারে প্রচার করা হবে।

এ ব্যাপারে সেনাবাহিনীর এক কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, এবার আলুর দাম কম। আবার এ নিয়ে দুই পক্ষের সংঘাতের আশঙ্কা ছিল। এ নিয়ে একটি অভিযোগ পান তাঁরা। পরে দুই পক্ষকে নিয়ে সভা হয়। সভায় সবার সম্মতিতে সিদ্ধান্ত হয়। সেই সিদ্ধান্ত বিকেলে জেলা প্রশাসকের দপ্তরে আরেকটি সভার মাধ্যমে পাস হয়েছে।

রাজশাহীর আলুচাষি ও ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মিঠু আহমেদ বলেন, শুরু থেকেই তাঁরা বাড়তি ভাড়ার প্রতিবাদ জানিয়ে আসছিলেন। কয়েক দিন ধরে তাঁরা হিমাগার থেকে আলু নিতে পারছিলেন না। হিমাগারগুলোয় বাড়তি ভাড়া দিতে হচ্ছিল। এ নিয়ে আন্দোলনের পাশাপাশি সেনাবাহিনীকেও অবহিত করেন তাঁরা। শেষ পর্যন্ত একটি ভালো সিদ্ধান্ত হয়েছে।

রহমান সিডস স্টোরেজের ব্যবস্থাপক আবদুল হালিম বলেন, সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, প্রতি কেজি আলু রাখতে খরচ পড়বে ৫ টাকা ৫০ পয়সা আর শ্রমিক খরচ ৫০ পয়সা। এ ছাড়া যাঁরা আগে থেকেই টাকা দিয়ে অগ্রিম বুকিং দিয়েছেন, তাঁদের ক্ষেত্রে আলুর কেজিপ্রতি শ্রমিক খরচ ৫০ পয়সা দিতে হবে।

রাজশাহী চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মাসুদুর রহমান বলেন, নতুন সিদ্ধান্ত সব হিমাগারমালিকসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের জানানো হবে।

আরও পড়ুনরাজশাহীতে হিমাগারে ভাড়া বাড়ানোর প্রতিবাদে বিক্ষোভ-সমাবেশ১৫ জুন ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ