Samakal:
2025-07-31@20:09:01 GMT

পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি বর্বরতা

Published: 23rd, January 2025 GMT

পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি বর্বরতা

ফিলিস্তিনের গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর হলেও ইসরায়েলি বর্বরতা থেমে নেই। তারা হামলা চালিয়ে মানুষ হত্যা অব্যাহত রেখেছে। সর্বশেষ অধিকৃত পশ্চিম তীরের জেনিনে হামলা চালিয়ে তারা ১০ জনকে হত্যা করেছে। বসতি স্থাপনকারীরা সেনাদের নেতৃত্বে ফিলিস্তিনি বাড়িঘর জ্বালিয়ে দিচ্ছে।

জেনিন ক্যাম্পে তাদের অভিযানে আহত হয়েছেন অন্তত এক ডজন লোক। গুরুতর আহতদের হাসপাতালে সেবা নিতেও বাধা দেওয়া হচ্ছে। একই সঙ্গে যুদ্ধে বিধ্বস্ত গাজায় পুনরুদ্ধার অভিযান চলছে। গত রোববার অভিযান শুরুর পর এ পর্যন্ত ২০০টি বিকৃত মরদেহ উদ্ধার হয়েছে। 

এএফপি জানিয়েছে, আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে পশ্চিম তীরে হামলার পরিণতির ব্যাপারে সতর্ক করেছেন জেনিনের গভর্নর কামাল আবু আল রুব। তিনি বলেন, দখলদার বাহিনী জেনিন ক্যাম্পের বাড়িঘর, স্থাপনা বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দিয়েছে। তারা গুলি করছে ও বিস্ফোরণ ঘটাচ্ছে। ‘পরিস্থিতি খুব কঠিন’ উল্লেখ করেন তিনি। 
এদিকে ব্যর্থতার দায় নিয়ে ইসরায়েলের সামরিক প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল হার্জি হালেভি পদত্যাগ করেছেন। তিনি স্বীকার করেছেন, ইসরায়েল প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) নাগরিকদের সুরক্ষা দিতে ব্যর্থ হয়েছে। এই ব্যর্থতা তাঁকে সারাজীবন পোড়াবে। প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু সেনাবাহিনীতে বহু বছরের সেবা ও নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ জানিয়েছেন। 

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের নিযুক্ত জাতিসংঘ রাষ্ট্রদূত দাবি করেছেন, ধর্মীয় বিবেচনায় অধিকৃত পশ্চিম তীরের ওপর ইসরায়েলের অধিকার রয়েছে। তবে জাতিসংঘের আরেকজন বিশেষ দূত সতর্ক করে দিয়েছেন, ইসরায়েলকে থামতে বাধ্য করা না হলে গণহত্যা কেবল গাজার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে না। 

অন্যদিকে, গাজায় যুদ্ধবিরতি বহাল থাকার ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন সৌদি আরবের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফয়সাল বিন ফারহান। সুইজারল্যান্ডের দাভোসে বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের বার্ষিক সভায় তিনি বলেন, যুদ্ধবিরতি ধরে রাখা এই অঞ্চলের নেতাদের সম্মিলিত দায়িত্ব।

গাজায় পুনরুদ্ধার অভিযানে ধ্বংসস্তূপের নিচে অন্তত ১১ হাজার লাশ মিলতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ধ্বংসস্তূপের নিচে কেবলই হাড়গোড় মিলছে। কারও মৃতদেহ শনাক্ত করার উপায় নেই। গাজার খান ইউনিসের অধিবাসী মুহাম্মদকে খুঁজছিলেন তাঁর বাবা। তিনি উদ্ধারকারীদের নাইলনের ব্যাগ, হাসপাতালের মর্গ সব জায়গায় খুঁজেও ছেলের সন্ধান পাননি। কাউকে চেনার উপায় নেই। মাথার খুলি, চেয়াল ও হাড়গোড় আলাদা হয়ে গেছে। 

মুহাম্মদের বাবা খুঁজে ফিরছেন হলুদ প্লাস্টিকের এক জোড়া স্যান্ডেল বা কমলা রঙের সোয়েটার, একটি কালো জ্যাকেট কিংবা ট্র্যাকস্যুট প্যান্ট। এসব পরা অবস্থায় মুহাম্মদ নিহত হয়েছিলেন। হত্যাযজ্ঞ দেখে তিনি শোক ও ক্লান্তিতে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। 

এদিকে যুদ্ধবিরতির সুবাদে ফিলিস্তিনের রাফাহসহ বিভিন্ন এলাকার মানুষ ধ্বংসপ্রাপ্ত বাড়িতে ফিরে এসেছে। ১৫ মাস ধরে অবিরাম গোলাবর্ষণের ফলে গাজার প্রায় ২০ লাখ ফিলিস্তিনি বাস্তুচ্যুত হন। তবে ধ্বংসপ্রাপ্ত গাজায় হামাসের শক্তিশালী উপস্থিতি এখনও রয়েছে। তারা উদ্ধার অভিযানের সময় সামরিক পোশাক পরে ও বন্দুক হাতে পাহারা দিচ্ছে। ইসরায়েলি কর্মকর্তাদের দাবি, গাজায় এখনও হামাসের শক্তিশালী অবস্থান স্থায়ী শান্তির পরিকল্পনাকে জটিল করে তুলছে।   

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর শুরু হওয়া যুদ্ধে এ পর্যন্ত অন্তত ৪৭ হাজার ১০৭ জন ফিলিস্তিনি নিহত এবং ১ লাখ ১১ হাজার ১৪৭ জন আহত হয়েছেন।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ইসর য় ল কর ছ ন

এছাড়াও পড়ুন:

গংগাচড়ায় হিন্দুদের ঘরবাড়ি মেরামতের উদ্যোগ, আতঙ্ক কাটেনি এখনও

রংপুরের গংগাচড়ায় ফেসবুকে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ ঘিরে সহিংসতার শিকার হিন্দু পরিবারের ঘরবাড়ি মেরামতের উদ্যোগ নিয়েছে প্রশাসন। তবে ঘটনার তিন দিন পরেও এলাকায় ফেরেনি অনেক পরিবার। আতঙ্কে এখনো আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে অনেকে।

গত ২৭ জুলাই রাতে ওই গ্রামের হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘরে হামলার আগে এলাকায় মাইকিং করে লোকজন জড়ো করা হয়।

পুলিশ, প্রশাসন ও হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন বলছেন, যারা হামলা করেছেন, তাদের মধ্যে অনেকে ছিলেন ‘বহিরাগত’। পাশের নীলফামারী জেলার কিশোরগঞ্জ উপজেলা থেকে লোকজন এসে হামলা চালিয়ে চলে যায়। হামলার সময় ২২টি ঘরবাড়ি তছনছ ও লুটপাট করা হয়। 

মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, এলাকায় অস্থায়ী সেনা ক্যাম্প বসানো হয়েছে, বাড়ানো হয়েছে পুলিশ টহল। প্রশাসন ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ঢেউটিন, কাঠ, চাল-ডাল ও শুকনো খাবার বিতরণ করেছে এবং ঘরবাড়ি মেরামতের কাজও শুরু হয়েছে। তবু আতঙ্কিত পরিবারগুলো। 

ক্ষতিগ্রস্তদের একজন অশ্বিনী চন্দ্র মোহান্ত বলেন, “সেদিনের ঘটনা ছিল এক ভয়াবহ। আমাদের পরিবারের পক্ষ থেকে ধর্ম অবমাননাকারী কিশোরকে থানা হেফাজতে দিয়েছি। কিন্তু তারপরও ঘরবাড়ি রক্ষা হয়নি। স্থানীয় এক জনপ্রতিনিধি এবং কিছু মুরুব্বি আমাদেরকে অভয় দিয়েছিলেন, কিন্তু রক্ষা হয়নি।” 

তিনি আরো বলেন, “আমরা নিজেরাই অভিযুক্ত কিশোরকে থানায় সোপর্দ করেছি। তারপরও মিছিল নিয়ে এসে দুই দফায় আমাদের ২০ থেকে ২৫টি ঘরবাড়ি তছনছ করে দিয়ে লুটপাট করেছে তারা। এদের মধ্যে অধিকাংশ লোকেই অপরিচিত।” 

আরেক ভুক্তভোগী দেবেন্দ্র চন্দ্র বর্মন জানান, “প্রথমে অল্পসংখ্যক কম বয়সী কিছু ছেলে আসে। পরে হাজারো লোকজন এসে আমাদের বাড়িঘরে তাণ্ডব চালায়। অনেকেই এখনো আত্মীয়দের বাড়িতে। আমরা চরম আতঙ্কে আছি।”

রবীন্দ্র চন্দ্রের স্ত্রী রুহিলা রানী বলেন, “ছোট ছেলেটা যদি ভুল করে থাকে, আমরা তাকে থানায় দিয়েছি। কিন্তু তারপরও এমন ধ্বংসযজ্ঞ কেন? আমাদের গরু, সোনা-টাকা সব লুটে নিয়েছে। শুধু চাল-ডাল আর টিনে কি জীবন চলে?”

গতকাল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন রংপুর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম ও সদস্য সচিব আনিসুর রহমান লাকুসহ একটি প্রতিনিধি দল। তারা ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মাঝে শাড়ি ও লুঙ্গি বিতরণ করেন এবং পাশে থাকার আশ্বাস দেন।

গংগাচড়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আল এমরান বলেন, “ঘটনার খবর পেয়ে কিশোরটিকে গ্রেপ্তার করে থানায় আনা হয় এবং পরে আদালতের মাধ্যমে শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানো হয়। এখন পর্যন্ত কেউ থানায় লিখিত অভিযোগ দেয়নি। তারপরও পুলিশ প্রশাসন সর্বাত্মক নিরাপত্তায় নিয়োজিত।”

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহামুদ হাসান মৃধা বলেন, “অপরাধীদের ধরতে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্তদের দেওয়া হচ্ছে সহায়তা। পুলিশ ও সেনাবাহিনী পুরো এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করেছে।” 

উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশের তথ্যমতে, হামলায় ১৫টি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যাতে ২২টি পরিবার বসবাস করতেন। ঘর মেরামতের পর কিছু পরিবার ফিরলেও অভিযুক্ত কিশোর ও তার চাচার পরিবারের কেউ এখনো ফিরে আসেনি।

ঢাকা/আমিরুল/ইভা 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ভারতের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের হুমকি ট্রাম্পের
  • মেসি বনাম ইয়ামাল: ফিনালিসিমার সময়-সূচি ঘোষণা
  • গংগাচড়ায় হিন্দুদের ঘরবাড়ি মেরামতের উদ্যোগ, আতঙ্ক কাটেনি এখনও