Samakal:
2025-09-18@03:03:20 GMT

চীন দেশে কয়েকবার

Published: 23rd, January 2025 GMT

চীন দেশে কয়েকবার

পর্ব : ৭ 

গণচীন এখনও বিশুদ্ধ মার্ক্সবাদের প্রতিষ্ঠায় নিবেদিত। আমরাই প্রকৃত কমিউনিজম প্রতিষ্ঠায় নিরলসভাবে কাজ করছি।
মোহাম্মদুল্লা প্রায় একটা ছোটখাটো বক্তৃতা দিয়ে ফেললেন।
এন লিং সবার কথা শুনে বুঝতে পারল যে তার দেশ নিয়ে তর্ক হচ্ছে। সে ব্যস্ত হয়ে বলল, সময় হয়ে গিয়েছে। আমরা এখন ট্রেনের দিকে যেতে পারি।
আমরা উঠে ওয়েটিং রুম থেকে বেরিয়ে লম্বা করিডোর পার হয়ে স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে পৌঁছাই। সেখানে ক্যান্টনের ট্রেন দাঁড়িয়ে রয়েছে। চাইনিজ যাত্রীরা ব্যস্ত হয়ে প্রায় ছুটছে। দেখা গেল ট্রেনে দুটো ক্লাস, ফার্স্ট আর সেকেন্ড ক্লাস। ফার্স্ট ক্লাসে উঠছে শুধু বিদেশিরা। সেকেন্ড ক্লাস কম্পার্টমেন্ট সংখ্যায় বেশি হলেও সেখানে চাইনিজদের বেশ ভিড়। তাদের সঙ্গের মালপত্রের সংখ্যা এত বেশি যে কামরায় রাখাই মুশকিল হয়ে পড়েছে। যখন এন লিং বলল শুধু ফার্স্ট ক্লাসেই এয়ারকন্ডিশনার আছে, তখন বেশ একটা অপরাধবোধ এসে গেল মনে। গণচীনে এমন বৈষম্য দেখতে পাব ভাবিনি। বিদেশিদের জন্য যে আরাম-আয়েশের ব্যবস্থা, তা যে চীনের শাসকশ্রেণির ক্ষেত্রেও প্রয়োগ করা হবে না তার নিশ্চয়তা কী? এখনই যে হয়ে যায়নি, তা কে বলতে পারে? তাছাড়া বিদেশিদের তো তোয়াজ করার কোনো কারণ নেই এই দেশের। তারা চীনের দীর্ঘ বিপ্লবের সময়ে কোনো সাহায্য করেনি। একমাত্র ভারত থেকে ড.

কোটনিস ন্যাশনালিস্ট চীনে কলেরা মহামারিতে আক্রান্ত মানুষের সেবা করতে ছুটে এসেছিলেন এবং নিজের প্রাণ দিয়েছিলেন।
প্ল্যাটফর্মে হাঁটতে হাঁটতে দেখি ট্রেন আকারে বেশ বড়, লাইন পুরোনো আমলের ব্রডগেজের। সেকেন্ড ক্লাসের কামরাই বেশি। সেগুলো যাত্রীতে পরিপূর্ণ। তাদের কথাবার্তায় বেশ একটা কোলাহল সৃষ্টি হয়েছে। ইউনিফর্ম পরা একজন রেলওয়ে গার্ড হাতে লাল পতাকা নিয়ে হেঁটে গেল পাশ দিয়ে। একটু পর আমাদের কামরা যে বগিতে তার দরজার সামনে এসে এন লিং বলল, এই যে তোমাদের কম্পার্টমেন্ট।
মোহাম্মদুল্লা উদ্বিগ্ন হয়ে বলেন, মাই স্যুটকেস? আওয়ার ব্যাগেজ?
এন লিং বলে, তোমাদের কামরায় তুলে দেওয়া হয়েছে।
ট্রেনে উঠে প্রথমেই আমরা আমাদের কামরা পেয়ে যাই। চারজনের বসার ব্যবস্থা। ওপরে বার্থে আমাদের ব্যাগেজ রাখা হয়েছে। আলী হোসেন ভিতরে ঢুকেই হাত দিয়ে স্যুটকেসের লক দেখে বললেন, এই লকটা এখনও কাজ করছে।
আমি হেসে বললাম, না খুললেই-বা কী? দড়ির যে শক্ত বাঁধন সেটা খুলবে না।
দোরগোড়া থেকে এন লিং বিদায় নেওয়ার জন্য বলে, নাউ আই গো।
আমরা সবাই তাকে দরজা পর্যন্ত গিয়ে বিদায় জানাই। অনেকক্ষণ কষ্ট করার জন্য ধন্যবাদ দিই। যতক্ষণ ট্রেন না ছাড়ে সে প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়ে থাকে। ট্রেন চলতে শুরু করলে সে হাত তুলে কয়েকবার নেড়ে বিদায় জানায়। আমরাও হাত নাড়ি তার উদ্দেশে।
কামরায় এসে সিটে বসে আলী হোসেন বলেন, বড় ভালো মেয়ে। তারপর অভিজ্ঞের মতো মন্তব্য করেন, একটা দেশকে জানতে হলে তার সাধারণ মানুষের ব্যবহার দেখলেই চলে।
কামরার সিটগুলো প্রশস্ত, সামনে পা ছড়িয়ে রাখার মতো অনেক জায়গা। দেয়ালে দুটো পোস্টার। একটিতে এক তরুণী ছোট ছেলেমেয়েদের বই পড়ে শোনাচ্ছে। অন্যটিতে চীন দেশে নানা খাতে উন্নতি বিষয়ে স্লোগানের পাশে হাস্যোজ্জ্বল এক তরুণীর মুখ। হঠাৎ ট্রেন চলার শব্দ ছাপিয়ে কামরার সিলিং থেকে বেজে উঠল যন্ত্রসংগীত। শোনার পর বোঝা গেল চাইনিজ ইনস্ট্রুমেন্টাল। বেশ দ্রুত লয়ের আর উঁচু নাদের। সামরিক কুচকাওয়াজে যেমন শোনা যায়। সমস্ত কামরা গমগম করে উঠল সেই শব্দে।
একটু পর নীল প্যান্ট আর সাদা শার্টের ওপর সাদা ওভারঅল পরিহিত এক যুবতী এসে জানালার পাশের টেবিলে বড় ফ্ল্যাস্ক আর চারটি মগ রেখে চলে গেল। দেখে আলী হোসেন বললেন, চা ছাড়া এ দেশে এক পা এগোনো যাবে না। ভাগ্য ভালো ফ্রি।
মোহাম্মদুল্লা বললেন, ভুলে যাবেন না এটা গণচীন। এখানে তারা কলেরাকে নির্বাসনে পাঠিয়েছে।
সীমান্ত অতিক্রম হওয়ার পর থেকে ‘গণচীন’ নামটি প্রায়ই বলছি আমরা। মনে মনেও জানা আছে আমরা ‘গণচীন’ দেখতে এসেছি। চীন থেকে গণচীন, এই দীর্ঘ যাত্রার ইতিহাস একটু ঝালাই করে নিলে হয়তো দেশটাকে জানতে সুবিধা হবে। অতীতের দিকে না তাকিয়ে  বর্তমান জানার চেষ্টা অনেক ক্ষেত্রেই ব্যাহত হয়ে যেতে পারে।
ক্যান্টন
তেং বলল, দুই হাজার বছরের বেশি হবে এই শহরের বয়স। চীনা ভাষায় এর নাম গোয়াংঝু। বিদেশিরা উচ্চারণ করত কোয়াংচাও। তারপর প্রথম ওপিয়াম যুদ্ধের পর তারা নাম দেয় ক্যান্টন।
আমি বলি, ফার্স্ট ওপিয়াম ওয়ার এখানেই হয়েছিল?
তেং বলে, হ্যাঁ। ১৮৪০ সালে শুরু, যখন চীন সম্রাট ইংরেজদের অবৈধভাবে আফিম এনে এ দেশে বিক্রির ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। ইংরেজরা সেই নির্দেশ না মেনে যুদ্ধ শুরু করে। প্রায় দেড় বছর যুদ্ধের পর ১৯৪২ সালে চীন সম্রাট নানকিং চুক্তি করে তাদের আফিম ব্যবসায় অনুমতি দিতে বাধ্য হন। যুদ্ধের ক্ষতিপূরণ হিসেবে রৌপ্য মুদ্রা এবং হংকংয়ে কলোনি স্থাপনের অধিকার দেওয়া হয়। তারপর সে বলে, তোমার দেশ বেঙ্গল তো একসময় ইংরেজদের কলোনি ছিল।
আমি বললাম, শুধু বেঙ্গল নয়, পুরো ভারতবর্ষ ছিল। সে কথা আনছো কেন?
তেং হেসে বলল, চীনের সঙ্গে বাণিজ্যে ইংরেজরা লাভ করতে পারছিল না। সিল্ক, চা, পোর্সেলিন আমদানি করে বাণিজ্যে ঘাটতি হচ্ছিল তাদের। সেই ঘাটতি দূর করার জন্য তারা আফিম আনা শুরু করে ক্যান্টন বন্দর দিয়ে চীনের বাজারে বিক্রির জন্য। সেই আফিম উৎপাদন করেছে তারা বেঙ্গলে, তোমাদের দেশে। অবশ্য তোমরা তখন স্বাধীন ছিলে না।
শুনে আমি থ হয়ে যাই। তারপর হেসে বলি, সচেতনভাবে না হলেও ক্যান্টন আর চীন দেশের সঙ্গে তা হলে আমার দেশের একটা ঐতিহাসিক সম্পর্ক আছে।
কথা বলতে বলতে আমাদের ট্রেন ক্যান্টন স্টেশনে এসে পৌঁছাল। তাকিয়ে দেখি মস্ত বড় প্ল্যাটফর্মের অন্যপাশে রয়েছে সমান্তরাল আরেকটি প্ল্যাটফর্ম। তার ওপাশে একইভাবে আরও দুটি প্ল্যাটফর্ম রয়েছে। সবগুলোতেই এই মুহূর্তে ট্রেন দাঁড়িয়ে। প্ল্যাটফর্মে যাত্রীর বেশ ভিড়। বন্ধ কাচের জানালার জন্য তাদের কথাবার্তা অবশ্য আমাদের কামরায় এসে পৌঁছায় না। অনুমান করা যায় নিচু স্বরে কথা বললেও এত যাত্রীর কথা কোলাহল সৃষ্টি করেছে। যাত্রীদের অধিকাংশই যে চাইনিজ, তা তাদের দেখেই বোঝা যায়। পোশাকে তেমন বৈচিত্র্য নেই, সেই একই কালো না হয় নীল প্যান্ট আর সাদা শার্ট; যা হাওয়াই শার্টের মতো দেখায়। কিন্তু তাদের সঙ্গের মালপত্র বিচিত্র ধরনের। স্যুটকেট আছে। কিছু ব্যাগও দেখা যাচ্ছে, মালপত্র ঠেসে ভর্তি করার জন্য ফুলে আছে দুই দিকে। আছে অনেক মালবোঝাই বস্তা আর সেগুলো নেওয়ার জন্য কাঁধ থেকে ঝোলানো বাঁশ আর দড়ির ভার। এদের অধিকাংশ সেকেন্ড ক্লাসের সামনে ভিড় করেছে অথবা সেখানে যাওয়ার জন্য ছুটে চলেছে। ট্রেন হারানোর আশঙ্কায় চঞ্চল আর ভীত তারা। আমাদের মতো ফার্স্ট ক্লাসের যারা যাত্রী তাদের মধ্যে তাড়াহুড়া নেই। তাদের অধিকাংশই বিদেশি ট্যুরিস্ট। এই দৃশ্য যাত্রা শুরুর আগেও দেখেছি সীমান্তের স্টেশনে। এখন দেখে আবারও অস্বস্তির ভাবটা এসে গেল ভেতরে।
এখন দুপুর একটা বাজে। প্ল্যাটফর্মে নেমে দেখি আমাদের সঙ্গে অন্য দেশ থেকে যারা একই প্রোগ্রামে এসেছে তারাও নেমেছে। ফিলিপাইন, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়ার প্রতিনিধি। তবে একক ডেলিগেশন হিসেবে আমাদের দলই বড়।
প্ল্যাটফর্মে নেমে আমরা অভ্যর্থনাকারীদের খুঁজতে থাকি। বিদেশি ট্যুরিস্টদের একটা বড় দল নিয়ে একজন গাইড যাচ্ছে সামনে দিয়ে। তার হাতে একটা বুল হর্ন। সে তার সাহায্যে বিশাল বিদেশি ট্যুরিস্ট দলকে ভাঙা ইংরেজিতে জানাচ্ছে কী করতে হবে। তার তুলনায় আমাদের গাইড তেং বেশ ভালো ইংরেজি বলে। দেখতেও সে স্মার্ট। কিন্তু সেও এখানে এসে স্থানীয় গাইড খুঁজছে। আমাদের কাছে এসে আশ্বস্ত করে জানাল চিন্তার কিছু নেই। গাইড এসে যাবে।
একটু পর মাঝবয়সী একজন মহিলা আর একজন পুরুষ এসে সামনে দাঁড়াল। পুরুষটি আলী হোসেনের দিকে তাকিয়ে বললেন, ফ্রম ম্যানিলা?
আলী হোসেন বললেন, ফ্রম হংকং।
আমি পাশ থেকে বললাম, ফ্রম বাংলাদেশ। তারপর আলী হোসেনকে বললাম, হংকং বলছেন কেন? হংকং থেকে সবাই আসছে। সেটা কমন অ্যাড্রেস।
প্রৌঢ় হাতের কাগজ পড়ে মাথা নেড়ে সায় দিয়ে বললেন, ইয়েস। ফ্রম বাংলাদেশ। তার সঙ্গের প্রায় একই বয়সের মহিলা। তিনি হাসিমুখে বললেন, বাংলাদেশ? আমরা তোমাদের পিকিং নিয়ে যেতে এসেছি। তারপর পুরুষ সঙ্গীর দিকে দেখিয়ে বললেন, তিনি কৃষি মন্ত্রণালয়ের ডেপুটি ডিরেক্টর। তিনি পিকিং থেকে এসেছেন। আমি ক্যান্টনে কৃষি মন্ত্রণালয়ের পাবলিক রিলেশন্স অফিসার।
আমি বললাম, আমরা কি এখান থেকে সোজা পিকিং যাব?
ভদ্রমহিলা বললেন, তোমাদের প্রোগ্রাম একটু বদলানো হয়েছে। আগামীকাল পিকিং যাওয়া হবে না।

[ক্রমশ]

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: প ল য টফর ম র র জন য ক য ন টন ত রপর বলল ম বলল ন

এছাড়াও পড়ুন:

৫০ শয্যার থানচি হাসপাতাল চলছে একজন চিকিৎসকে

বান্দরবানের থানচি উপজেলার প্রায় ৩০ হাজার মানুষের একমাত্র ভরসার জায়গা ৫০ শয্যার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসক, নার্স ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির সংকটে এই হাসপাতাল কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। বর্তমানে পুরো হাসপাতাল চালাচ্ছেন মাত্র একজন চিকিৎসক। গত পাঁচবছরে চিকিৎসাধীন ও রেফার্ড করা ২৪ জন রোগী মারা গেছেন।

হাসপাতাল সূত্র জানায়, ১৯৯৫ সালে ৩১ শয্যার থানচি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স যাত্রা শুরু করে। পরে এটি ৫০ শয্যায় উন্নীত হয়। এই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১২ জন চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও কর্মরত আছেন মাত্র দুইজন। তাদের মধ্যে একজন ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন চিকিৎসাধীন। এ কারণে রোগীদের সেবা দিতে পারছেন না। ১৮ জন নার্স পদে রয়েছেন মাত্র চারজন। চারজন মিডওয়াইফ থাকার কথা, নেই একজনও।

আরো পড়ুন:

ফরিদপুরে পাগলা ঘোড়ার কামড়ে আহত ২০

বক্তব্য দেওয়ার সময় অসুস্থ হয়ে পড়লেন কাদের সিদ্দিকী

প্রাথমিক থেকে শুরু করে জরুরি চিকিৎসার জন্য এই হাসপাতালে ছুটে যান পাহাড়ি ও বাঙালিরা। তাদের অভিযোগ, হাসপাতালটি ৫০ শয্যায় উন্নীত হলেও আধুনিক চিকিৎসা সুবিধা যোগ হয়নি। প্রয়োজনীয় সংখ্যক চিকিৎসক না থাকায় গর্ভবতী নারী, শিশু ও বৃদ্ধ রোগীরা সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়ছেন। 

দুর্গম এলাকার রোগীরা অনেক সময় নদীপথ কিংবা পাহাড়ি রাস্তা পাড়ি দিয়ে হাসপাতালে এলেও কাঙ্ক্ষিত চিকিৎসা সেবা পান না। বরং তাদের বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। অনেক সময় বান্দরবানে যাওয়ার পথে রোগীরা মারা যান। এ কারণে জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসক, নার্স ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি সরবরাহের দাবি জানিয়েছেন তারা।

হাসপাতালের পরিসংখ্যানবীদ পঙ্কজ বড়ুয়া জানান, ২০২০ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত এখানে ভর্তি হয়েছেন ৫ হাজার ১৯৮ জন রোগী। এর মধ্যে ৪৫৬ জনকে রেফার্ড করা হয় বান্দরবান সদর হাসপাতালে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন ১৭ জন রোগী। 

থানচি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অ্যাম্বুলেন্স চালক মংক্যসিং মারমা বলেন, “২০১৯ সালে চাকরিতে যোগদান করার পর থেকে অন্তত সাতজন রেফার্ড করা রোগী মাঝপথে আমার গাড়িতেই মারা গেছেন।”

 

শৈসাই মং মারমা তিন বছর আগে বিনা চিকিৎসায় তার মাকে মারা যেতে দেখেছেন। তিনি জানান, তার মা শৈমেপ্রু মারমা (৩৪) অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। ২০২২ সালের ১৪ নভেম্বর হঠাৎ তিনি অচেতন হয়ে পড়েন। রেমাক্রী বাজার থেকে নদীপথে থানচি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান মাকে। কিছুক্ষণের মধ্যেই তাকে জেলা সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। ভাড়া গাড়িতে জেলা হাসপাতালে যাওয়ার সময় চিম্বুক বারো মাইল এলাকায় তার মা মারা যান।

লেংরু ম্রো নামে চার সন্তানের মা হারিয়েছেন স্বামীকে। তিনি জানান, তার স্বামী রেং য়ুং ম্রো (৪৫) কিডনি জটিলতা নিয়ে থানচি হাসপাতালে যান। সঙ্গে সঙ্গে সেখান থেকে তাকে বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। থানচি থেকে বান্দরবান যাওয়ার মাঝপথে মারা যান তার স্বামী।

স্থানীয় বাসিন্দা মংমে মারমা বলেন, ‍“হাসপাতালে চিকিৎসক, ওষুধ ও যন্ত্রপাতির সংকট দীর্ঘদিন ধরেই চলছে। বিশেষজ্ঞ ডাক্তার বদলি হলেও অনেকেই থানচিতে যোগ দেন না, ডিপুটেশনে থেকে যান সদর হাসপাতালে। ফলে এ অঞ্চলের পাহাড়ি ও বাঙালি প্রায় ৩০ হাজার মানুষ স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।”

রিয়েং ম্রো নামে অপর বাসিন্দা বলেন, “পাহাড়ে বসবাসকারীদের অধিকাংশ গরিব। জেলা সদর হাসপাতালে রোগী নিয়ে যাওয়া ব্যয়বহুল ও কষ্টকর। রেমাক্রি, বড় মোদক, তিন্দু থেকে থানচি সদরে রোগী আনতেই অনেক টাকা খরচ হয়ে যায়। এরপর আবার বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করলে সাধারণ মানুষ কীভাবে চিকিৎসা করাবে?” 

থানচি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ইউএইচএফপিও) ডা. মো. ওয়াহিদুজ্জামান মুরাদ বলেন, “বর্তমানে হাসপাতালে আমিসহ দুইজন চিকিৎসক রয়েছেন। একজন ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসাধীন। তিন রোগীদের সেবা দিতে পারছেন না। ফলে পুরো হাসপাতাল পরিচালনার দায়িত্ব আমাকে একাই সামলাতে হচ্ছে।”

তিনি আরো বলেন, “জনবল ও সরঞ্জাম সংকটের কারণে গুরুতর রোগীদের রেফার্ড করা ছাড়া উপায় থাকে না। দীর্ঘ পথের কারণে অনেকেই জীবিত অবস্থায় সদর হাসপাতালে পৌঁছাতে পারেন না।”

বান্দরবান জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ শাহীন হোসাইন চৌধুরী বলেন, “শুধু বান্দরবান নয়, পুরো তিন পার্বত্য জেলাতেই চিকিৎসক সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। নতুন করে ৪৮তম বিসিএসের ডাক্তার পদায়ন না হওয়া পর্যন্ত এই সংকট পুরোপুরি সমাধান করা সম্ভব হচ্ছে না। তারপরও বিভাগীয় প্রধানকে বিষয়টি চিঠির মাধ্যমে জানানো হয়েছে। ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজের আট-দশজন চিকিৎসককে বান্দরবানে বদলি করার জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।”

ঢাকা/মাসুদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • গাজায় ২৬ হাজার শিশু তীব্র অপুষ্টির শিকার: জাতিসংঘ
  • গ্রাহকের কাছে পেয়ারা খেতে চায় জনতা ব্যাংকের কর্মকর্তা
  • গল্পটা এই ক্লাসরুম থেকেই শুরু: ইরফান সাজ্জাদ
  • রাশিয়ায় এক বাঙালি বিপ্লবীর খোঁজে
  • আপনার এত সাহস হয় কী করে, সাংবাদিককে নায়িকা
  • দুবাইয়ে বিকৃত যৌন ব্যবসা চক্রের প্রধানকে চিহ্নিত করল বিবিসির এক অনুসন্ধান
  • মহানবী (সা.)–এর ইন্তেকালের পরে শাসন নিয়ে যা ঘটেছে
  • কুবিতে নতুন ১৮ বিভাগ ও ৪ ইনস্টিটিউট চালুর সুপারিশ
  • সংগীতশিল্পী দীপ মারা গেছেন
  • ৫০ শয্যার থানচি হাসপাতাল চলছে একজন চিকিৎসকে