হোয়াইট হাউসে ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিজয়ী হয়ে ফিরে আসা আমেরিকান রাজনৈতিক থিয়েটার মঞ্চের মতোই ছিল। এটি অবশ্য প্রত্যাবর্তনকারী প্রেসিডেন্টের উদ্দেশ্যই ছিল। এই মুহূর্ত তুলে ধরার জন্য ট্রাম্প শিবিরে একটি প্রচলিত শব্দাংশ হলো– ‘বেদনা ও বিস্ময়’; যেহেতু ট্রাম্প প্রেসিডেন্টের নির্বাহী আদেশ ও এক দিনের পদক্ষেপে বাইডেন যুগের বিলুপ্তি ঘটাতে চেয়েছিলেন।
ট্রাম্পের দ্বিতীয় অভিষেক ব্যতিক্রম হিসেবে দারুণ হয়েছে। আয়োজনটি কোথায় বা কোন ঘটনার মধ্য দিয়ে নীতি গৃহীত হয়েছে, সেটি ভিন্ন বিষয়। কারও কারও কাছে মনে হতে পারে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সর্বশেষ ‘বেদনা ও বিস্ময়’ চর্চা হিসেবে ২০০৩ সালের ইরাক আক্রমণ ছাড়াও আমেরিকান শক্তির অমোচনীয় চিত্রের একটি ভোজ তৈরি করেছিল। কিন্তু নিশ্চিতভাবে এ ঘটনার পরিণতি ভালো হয়নি।
ট্রাম্পের প্রত্যাবর্তনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানটি পরিচিত কাঠামোর মধ্যে উঠে আসতে পারত। বাস্তব, তিক্ত আবহাওয়ায় আয়োজনটি বাড়ির অভ্যন্তরে এবং একই ক্যাপিটল ভবনে ঢুকে পড়ে, যেখানে ট্রাম্প ২০২১ সালে জনতাকে মিছিল করতে উৎসাহিত করেছিলেন। তবে সংবিধানের প্রয়োজনীয়তা অনুসারে আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করা হয়েছিল; অনেকেই ট্রাম্পকে ২০১৭ সালের বক্তৃতার তুলনায় এবার বেশি বিনীত বলেই মনে করেছেন। জর্জ ডব্লিউ বুশ আগের সেই বক্তৃতাকে ‘কিছু অদ্ভুত ফেলনা জিনিস’ বলে অভিহিত করেছিলেন।
তবুও পরিচিত আচার-অনুষ্ঠানের নেপথ্যে এটা বোঝা কঠিন ছিল না যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শাসন পদ্ধতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন অব্যাহত রয়েছে। ট্রাম্প প্রবৃত্তিগত কিংবা বা প্রমাণ সাপেক্ষে কোনোভাবে একজন প্রচলিত বা পূর্বসূরিদের মতো প্রেসিডেন্ট নন। তিনি একজন নার্সিসিস্ট বা স্বপূজারি, উৎপীড়ক ও চুক্তিসন্ধানী, যিনি অন্যদের প্রতি কোনো রকম দায়বদ্ধ হতে চান না।
সোমবারের অনুষ্ঠানজুড়ে আপনি এসব আবার অনুভব করতে পারেন। অধ্যাপক ও পাঠ্যপুস্তক সবসময় আমাদের বলেছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এমন একটি জাতি, যেখানে প্রেসিডেন্ট, কংগ্রেস ও আদালতের মধ্যে ক্ষমতার সুস্পষ্ট পৃথককরণের মাধ্যমে রাষ্ট্র পরিচালিত হয়। অনেক ক্ষেত্রে তাই এখনও বাস্তব। তবুও এই সপ্তাহে অনেক ইঙ্গিত সেই আদর্শ তুলনামূলক কমে আসার চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হওয়ার আভাস দিয়েছে, যা ট্রাম্পের অধীনে ত্বরান্বিত হবে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আদালতের প্রভাব স্পষ্ট। কিন্তু ‘গভর্নিং কোর্ট’ ও ‘কোর্ট অব ল’ এক জিনিস নয়। যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্টের শীর্ষ বিচারকদের ওপর ট্রাম্পের খবরদারি, যাদের মধ্যে অনেককে তিনি তাঁর প্রথম মেয়াদে নিয়োগ করেছিলেন। এই ধারা ইতোমধ্যে শক্ত এবং সম্ভবত এখন আরও জোরালো হবে। পরিবর্তে ট্রাম্প নিজেকে প্রেসিডেন্টের আদালতের কেন্দ্রে রেখে প্রায় রাজতান্ত্রিক মডেলে শাসন করেন।
এর সবকিছুই এককভাবে ট্রাম্পের মধ্য দিয়ে ঘটেছে, এমন নয়। বিগত শতাব্দীতে ফ্রাঙ্কলিন রুজভেল্টের মতো প্রেসিডেন্টরা অর্থনৈতিক ও আন্তর্জাতিক বিষয়ে প্রেসিডেন্টের হস্তক্ষেপ বিস্তৃত করেছিলেন। ভিয়েতনাম যুদ্ধের পর ইতিহাসবিদ আর্থুর শ্লেসিঞ্জার একে ‘সাম্রাজ্যিক প্রেসিডেন্সির উত্থান’ বলেছিলেন। কিন্তু তা এখনও বন্ধ হয়নি। ডেভিড ফ্রস্টের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে রিচার্ড নিক্সন যুক্তি দিয়েছিলেন, প্রেসিডেন্ট যদি কিছু অনুমোদন করেন, তবে তা অবৈধ নয়। গত বছর সুপ্রিম কোর্ট সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে এই দৃষ্টিভঙ্গিকে অকল্পনীয়ভাবে শক্তিশালী করেছে। রায়ে বলা হয়েছিল, সরকারি কাজে প্রেসিডেন্ট নিরঙ্কুশ দায়মুক্তি ভোগ করবেন। উদারপন্থি বিচারপতি সোনিয়া সোটোমায়র বলেছেন, এটি প্রেসিডেন্টকে ‘আইনের ঊর্ধ্বে একজন রাজা’ বানিয়েছে।
ঠিক এ কারণেই জর্জ ওয়াশিংটন হয়তো স্বীকার করতেন, আদালতের রাজনৈতিক ব্যবস্থা এখন ট্রাম্পের চারপাশে বিকশিত হচ্ছে রাজকীয় শাসনের মতো আনুমানিক কিছু বৈশিষ্ট্য নিয়ে, যার বিরুদ্ধে তিনি ২৫০ বছর আগে বিদ্রোহ করেছিলেন। আমেরিকান বিপ্লবের উৎস সম্পর্কে ১৯৬৭ সালে লেখা মার্কিন ইতিহাসবিদ বার্নার্ড বেইলিন যুক্তি দিয়েছিলেন, তৃতীয় জর্জের আশপাশের লোকেরা রাজার উৎসাহে সাংবিধানিক ভারসাম্য বিকৃত করেছে বলেই বিদ্রোহের সূত্রপাত হয়েছিল। বেইলিন যা যুক্তি দিয়েছিলেন তার বেশির ভাগই এই সপ্তাহে আমেরিকান রাজনীতিতে দেখা গেছে। ট্রাম্প ও জো বাইডেন উভয়ের ক্ষমতাচর্চা সুগভীর সামন্ত কায়দার চেয়ে কম কিছু নয়।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এখনও একটি সাংবিধানিক গণতন্ত্র বহাল। দেশটির বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠান সেভাবে কাজ করে। তবুও ট্রাম্প যদি মার্কিন সংবিধান থেকে জন্মগত নাগরিকত্ব বাতিল করার ব্যাপারে অনড় হন, তবে তিনি অন্য কোনো বিভাগকে বাতিল করার চেষ্টা করতে পারেন! এ ধরনের আলোচনার গুরুত্ব রয়েছে। কেননা, ক্ষমতা আলাদা করা ও সংবিধানকে মহিমান্বিত করার চেয়ে প্রেসিডেন্ট শাসিত দরবারি ব্যবস্থা শিকড় গাড়তে পারে। এ কারণে ট্রাম্প যতটা সম্ভব এভাবেই শাসন করবেন। সোমবার তিনি তাঁর আদালতে ঘোষণা করেছেন, আমেরিকার স্বর্ণযুগ এখনই শুরু হচ্ছে। তিনি যদি ক্যাপিটলে থাকতেন, তবে সূর্যসন্তান বুঝতে পারতেন, তিনি কী দেখছেন।
মার্টিন কেটল: কলামিস্ট; দ্য গার্ডিয়ান থেকে
সংক্ষেপিত ভাষান্তর ইফতেখারুল ইসলাম
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
অর্থ আত্মসাত: খুলনায় নারী ব্যাংক কর্মকর্তা গ্রেপ্তার
খুলনায় প্রবাসীর হিসাব থেকে জালিয়াতির মাধ্যমে অর্থ আত্মসাতের ঘটনায় দায়ের মামলায় আফসানা শাহিন মুন্নী (৩৬) নামে নারী ব্যাংক কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
বুধবার (৩০ এপ্রিল) দিবাগত মধ্যরাতে খুলনা থানা পুলিশ ঢাকার মুগদা এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে। দুপুরে তাকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। গ্রেপ্তার আফসানা শাহিন মুন্নী সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স ব্যাংক খুলনা শাখায় সিনিয়র অফিসার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তিনি খুলনা মহানগরীর ইস্পাহানি আবাসিক এলাকার বাসিন্দা।
আল হাদিস বাট্রি নামক একজন মালয়েশিয়া প্রবাসীর হিসাব থেকে জালিয়াতির মাধ্যমে ৭ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে গত ১৮ এপ্রিল তার স্ত্রী আফসানা ইয়াসমিন তৃষ্ণা বাদী হয়ে খুলনা সদর থানায় মামলা করেন। মামলায় গ্রেপ্তার আফসানা শাহিন মুন্নিসহ ৮-৯ জনকে আসামি করা হয়েছে।
আরো পড়ুন:
সিটি করপোরেশন ও পৌর এলাকায় যাচ্ছে গ্রামীণ ব্যাংক
গ্রামীণ ব্যাংকে সরকারের কর্তৃত্ব কমল, খসড়ার নীতিগত অনুমোদন
খুলনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাওলাদার মোহাম্মদ সানোয়ার হোসাইন মাসুম বলেন, মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই মোল্লা জুয়েল রানার নেতৃত্বে খুলনা থানার একটি টিম ঢাকা থেকে মুন্নিকে গ্রেপ্তার করেছে। তার বিরুদ্ধে প্রবাসীর পাঠানো রেমিটেন্সের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে মামলা রয়েছে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতে পাঁচ দিনের রিমান্ডের আবেদন করা হয়েছে।
নগরীর খালিশপুর খালিশপরস্থ গোয়ালখালী বাস্তহারা কলোনী এলাকার সোহরাব হোসেনের কন্যা আফসানা ইয়াসমিন তৃষ্ণা এজাহারে উল্লেখ করেন, তার স্বামী আল হাদিস বাট্রি মালয়েশিয়ায় প্রবাস জীবন যাপন করেন। তিনি প্রবাসে থেকে ২০২৩ সালের ১৩ নভেম্বর অনলাইনের মাধ্যমে নিজ নামে খুলনা মহানগরীর আপার যশোর রোডস্থ সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার এন্ড কমার্স ব্যাংক শাখায় হিসাব খোলেন। পরবর্তীতে ওই হিসাবে বিভিন্ন সময় মোট ১০ লাখ ২ হাজার টাকা জমা করা হয়। তার স্বামী চলতি বছরের ১৮ মার্চ দেশে ফিরে অর্থ উত্তোলনের জন্য ব্যাংকে গেলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা তার একাউন্টে মাত্র ৩ লাখ ২ হাজার টাকা রয়েছে এবং বাকি ৭ লাখ টাকা নেই বলে জানান। তাৎক্ষণিক তিনি ব্যাংক স্টেটমেন্ট বের করে দেখতে পান, গত বছরের ২৫ ফেব্রুয়ারি আরটিজিএসর মাধ্যমে তার হিসাব থেকে আসামিদের একজনের ব্র্যাক ব্যাংকের হিসাবে ৭ লাখ টাকা ট্রান্সফার করা হয়েছে।
এজাহারে আরো উল্লেখ করা হয়, আরটিজিএস এর মাধ্যমে অর্থ ট্রান্সফার করতে হলে অবশ্যই সংশ্লিষ্ট ব্যাংক হিসাবের দাতা বা হিসাবধারীর উপস্থিত থাকতে হয়। কিন্তু তার স্বামী তৎকালীন সময় বিদেশে অবস্থান করছিলেন। এ সুযোগে আসামিরা পরস্পর যোগসাজোসে ভুয়া লোক সাজিয়ে এবং কাগজপত্র জালিয়াতির মাধ্যমে অর্থ আত্মসাৎ করেছেন। এ বিষয়টি ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হলেও তারা সমাধান দেননি।
অভিযোগে জানা গেছে, এর আগেও আফসানা শাহিন মুন্নি জালিয়াতির মাধ্যমে একাধিক গ্রাহকের টাকা আত্মসাৎ করেন। সম্প্রতি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হস্তক্ষেপে তিনি জনৈক গ্রাহকের অর্থ ফেরত দেন। এ সব কারণে কর্তৃপক্ষ তাকে চাকরিচ্যুত করে।
সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার এন্ড কমার্স ব্যাংক খুলনা শাখার ম্যানেজার হাফিজ আহমেদ জানান, তিনি নতুন যোগদান করায় বিষয়টি তার জানা নেই। খোঁজখবর নিয়ে দেখছেন।
ঢাকা/নুরুজ্জামান/বকুল