Samakal:
2025-09-18@08:24:06 GMT

গাজার হারানো শিশুরা

Published: 27th, January 2025 GMT

গাজার হারানো শিশুরা

গত এক সপ্তাহ ধরে গাজাবাসী তাদের বাড়িতে ফিরছেন, যদিও বেশির ভাগ এখন ধ্বংসস্তূপ। এখনও বহু লাশ ধ্বংসস্তূপের নিচে। এখনই আমরা এ যুদ্ধের প্রকৃত ক্ষয়ক্ষতির পুরো চিত্র পেতে শুরু করব। এখনই শুরু হতে পারে আসল শোক, যা প্রকাশেও ফিলিস্তিনিদের গত ১৫ মাস শারীরিক ও মানসিকভাবে বাধা দেওয়া হয়েছে। একবার চূড়ান্তভাবে পরিসংখ্যান স্পষ্ট হয়ে গেলে হয়তো শিশুর প্রকৃত মৃত্যুসংখ্যা বের হয়ে আসবে। 

ইতোমধ্যে বিভিন্নভাবে ইঙ্গিত পাওয়া গেছে, ক্ষয়ক্ষতির শিকার বেশির ভাগই শিশু। জাতিসংঘের বিশ্লেষণে গত পাঁচ মাসের মৃত্যুসংখ্যা উঠে এসেছে, যাদের মধ্যে ৪৪ শতাংশ শিশু। অধিকাংশ ক্ষেত্রে সেসব শিশুর বয়স ছিল ৫ থেকে ৯ বছর, যাদের ৪০ শতাংশকে নিজ বাড়িতে হত্যা করা হয়। 

বিভীষিকা শুধু এ কারণে নয় যে, তারা মারা গেছে, বরং কীভাবে তারা মারা গেল, সেটিই গুরুত্বপূর্ণ। সর্বোচ্চ মাত্রায় আতঙ্কগ্রস্ত করে তাদের হত্যা করা হয়েছে। এ হত্যাযজ্ঞ চলেছে অনেকের নিজ বাড়িতে, স্থল আক্রমণে কিংবা বোমার আওয়াজের মধ্যে চিৎকার করতে করতে তারা নিহত হয়েছে। এভাবে পুরোপুরি ধ্বংস করে তাদের মাটিতে মিশিয়ে দেওয়া কিংবা ধ্বংসস্তূপে পুঁতে ফেলা হয়েছে, যাতে ধূসর রঙের ধূলিকণার সঙ্গে তাদেরও প্লাস্টিক ব্যাগে ভর্তি করা যায়। কেউ কেউ চেতনানাশক ও চিকিৎসার অভাবে সর্বোচ্চ ব্যথায় ভুগতে ভুগতে মারা যান। অনেকে ব্যথানাশক ওষুধের এক ডোজ ছাড়াই অঙ্গহানির পরে হারিয়ে যান।  

আতঙ্ক ও যন্ত্রণার হাজারো মুহূর্ত তাদের মৃত্যুর দিকে ধাবিত করে, যা প্রায় নিশ্চিত ছিল। এই চূড়ান্ত মুহূর্তগুলোর বেশির ভাগেরই কোনো সাক্ষী নেই, যারা গল্পগুলো বলা কিংবা পত্রপত্রিকায় তুলে ধরার সময় পেয়েছিলেন। কিন্তু ৫ বছর বয়সী হিন্দ রজবের মতো কয়েকজনের কাছ থেকে ভয়াবহ পরিস্থিতির আভাস পাওয়া যায়। তাকে উদ্ধার করার জন্য জরুরি সেবায় ফোন করা হয়েছিল, কিন্তু গুলির শব্দে সে লাইন কেটে গিয়েছিল। আত্মীয়দের হত্যা করার সঙ্গে সঙ্গে তাকেও খুন করা হয়েছিল। 

আমরা এসব ঘটনার হাতেগোনা কয়েকটির গল্প শুনেছি। নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে পচনশীল শিশুদের দেখা গেছে, অনেকে হিমায়িত হয়ে মারা গেছে, স্টিলের ট্রেতে মৃত অবস্থায় পড়ে আছে। মৃতদেহে কালো কালিতে তাদের নাম লেখা রয়েছে, যাতে বাবা-মা সন্তানদের চিহ্নিত করতে পারেন। এ হত্যাকাণ্ডের প্রতিটি একেক ট্র্যাজেডি। 
গাজার শিশুদের প্রতি যা করা হয়েছে তার মধ্যেই সবচেয়ে ভয়ংকর অমানবিকতা লুকিয়ে আছে, যে কারণে ফিলিস্তিনি সবাই ভুগছেন। শিশুর চেয়ে নিষ্পাপ আর কেউ নয়। তাদের মৃত্যু এই যুদ্ধের অন্যায়ের সবচেয়ে অকাট্য প্রমাণ; কীভাবে এমন কাণ্ড ঘটানো হলো এবং অনুমোদন ও সমর্থন দেওয়া হলো। একটি শিশুর চেয়ে বেশি আর কেউ সবার সঙ্গে সম্পর্ক যুক্ত নয়। এ সম্পর্কে থাকে না কোনো রাজনীতি, দায়িত্ব; তাদের কাছে বিশ্ব কেবলই এক খেলার মাঠ। 

তাদের প্রতি সহানুভূতির অভাব হলে তা হবে বিপজ্জনক, বেঁচে থাকা শিশুদের জন্য এটি ঝুঁকিপূর্ণ। প্রায় ৪০ হাজার এতিম, হাজার হাজার অঙ্গহানি; যে লাখ লাখ শিশু বাস্তুচ্যুত এবং যাদের স্কুল ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে, সেসব শিশু ‘মানসিকভাবে পুরোপুরি বিধ্বস্ত’। এমনকি যুদ্ধবিরতির মধ্য দিয়ে যদি যুদ্ধ বন্ধও হয়, তবুও গাজার তরুণ প্রজন্মের ভবিষ্যৎ হবে অন্ধকার, যদি তারা বিশ্ববাসীর কাছ থেকে সহানুভূতি না পায় এবং গুরুত্বপূর্ণ সহায়তা ও সমর্থনের জন্য বিপুল প্রস্তুতি নিয়ে এগিয়ে না আসে। 

যাদের হত্যা করা হয়েছে তাদের সে প্রাপ্তিটুকুও দেওয়া হয়নি। অনেককে সুষ্ঠুভাবে দাফন করতেও দেওয়া হয়নি। ২০ হাজার শিশু এখনও নিখোঁজ। তারা এখনও ধ্বংসস্তূপের নিচে কিংবা গণকবরে পড়ে আছে। দেহগুলো স্তূপ করে বেনামে গণনার জন্য রাখা হয়েছে। তাদের জন্য বেশির ভাগই মৃত্যু-পরবর্তী কোনো আচার, প্রার্থনা পালিত হয়নি। নীরবতা পালনের কোনো মুহূর্ত ছিল না। জীবনের ছিল না কোনো উদযাপন। 

নাসরিন মালিক: গার্ডিয়ানের কলাম লেখক; দ্য গার্ডিয়ান থেকে ভাষান্তর ইফতেখারুল ইসলাম 
 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

হাইতিতে গ্যাং হামলায় ৫০ জনের বেশি নিহত

ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জের দেশ হাইতিতে গত সপ্তাহে একাধিক গ্যাং হামলায় ৫০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। জাতীয় মানবাধিকার প্রতিরক্ষা নেটওয়ার্কের (আরএনডিডিএইচ) তথ্যানুসারে, সংকটে জর্জরিত দেশটিতে সর্বশেষ ভয়াবহ গণহত্যার ঘটনা এটি।

মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) বার্তা সংস্থা এএফপির বরাত দিয়ে এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম ব্যারন’স। 

গতকাল সোমবার এএফপিকে পাঠানো এক প্রতিবেদনে আরএনডিডিএইচ জানায়, গত ১১ ও ১২ সেপ্টেম্বর রাজধানী পোর্ট-অ-প্রিন্সের উত্তর এলাকায় এই হামলাগুলো ঘটে।

ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘২০২৫ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত নিহত হওয়া বহু মানুষের লাশ এখনও পাওয়া যায়নি। লাশগুলো এখনও ঝোপের মধ্যে পড়ে আছে এবং কুকুর লাশগুলো খেয়ে ফেলেছে।’

পশ্চিম গোলার্ধের সবচেয়ে দরিদ্র দেশ হাইতি। দেশটির একটি অংশ ও রাজধানী পোর্ট-অ-প্রিন্সের বেশিরভাগ এলাকা সশস্ত্র গ্যাংগুলোর নিয়ন্ত্রণে থাকায় সহিংসতা বৃদ্ধি পাচ্ছে।

২০২৪ সালের শুরুর দিকে গ্যাংগুলোর একটি জোট লাগাতার হামলা শুরু করলে পরিস্থিতির চরম অবনতি হয়। যার ফলে প্রধানমন্ত্রী এরিয়েল হেনরি পদত্যাগ করেন এবং প্রেসিডেন্টের অন্তর্বর্তীকালীন পরিষদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন।

হাইতির পুলিশকে সমর্থন করার জন্য কেনিয়ার নেতৃত্বাধীন বহুজাতিক বাহিনী মোতায়েন করার পরও সহিংসতা দমন করা সম্ভব হয়নি।

আরএনডিডিএইচ জানিয়েছে, ভিভ আনসানম গ্যাং জোট, যারা ২০২৪ সালের মার্চ মাস থেকে ক্যাবারেট শহরের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে, তারা গত সপ্তাহে নিকটবর্তী ল্যাবোডেরি শহরে বেসামরিক জনগণের বিরুদ্ধে অত্যন্ত নিষ্ঠুর গণহত্যা চালিয়েছে। শহরটি রাজধানী পোর্ট-অ-প্রিন্স থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত।

সংস্থাটি আরো জানায়, ‘তারা ৫০ জনেরও বেশি মানুষকে হত্যা করেছে এবং বেশ কয়েকটি বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে।’

প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, ‘বেঁচে থাকা কয়েকজন পার্শ্ববর্তী এলাকায় পালিয়ে যেতে সক্ষম হন। অন্যান্যরা আক্রমণকারীদের হাত থেকে বাঁচতে নৌকায় করে সমুদ্রে পালিয়ে যায়।’ 

জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস গত মাসে সতর্ক করে বলেছেন, হাইতিতে ‘রাষ্ট্রীয় কর্তৃত্ব ভেঙে পড়ছে।’

তিনি নিরাপত্তা পরিষদকে সতর্ক করে বলেন, হাইতির রাজধানীর বাইরেও সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ছে। সেখানকার ৯০ শতাংশ অঞ্চলের ওপর গ্যাংগুলোর নিয়ন্ত্রণ রয়েছে।

রবিবার, তিনি ক্যাবারে কমিউনে হামলার নিন্দা জানিয়েছেন এবং দেশগুলোকে প্রয়োজনীয় ‘সরবরাহ, কর্মী ও তহবিল দিয়ে বহুজাতিক নিরাপত্তা সহায়তা মিশনকে শক্তিশালী করার প্রচেষ্টা ত্বরান্বিত করার’ আহ্বান জানিয়েছেন।

জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের তথ্যানুসারে, চলতি বছরের প্রথমার্ধে হাইতিতে কমপক্ষে ৩ হাজার ১৪১ জন নিহত হয়েছে।

ঢাকা/ফিরোজ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • শান্তি স্থাপনের লক্ষ্যে আত্মসমর্পণ ও অস্ত্রত্যাগের প্রস্তাব মাওবাদীদের
  • হাইতিতে গ্যাং হামলায় ৫০ জনের বেশি নিহত